আমার শিক্ষক

২০০৩ সালের শেষের দিকের কথা। তখন আমি একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গ্রামের স্কুলের ছাত্র হওয়ায় তেমন কোনো সার্কেল ছিল না। ক্লাসের অন্যদের মতো সামনের সারিতে বসার তেমন সুযোগও ছিল না। তার পরও চেষ্টা করতাম প্রথম ১০টি সারিতে স্থান করে নেওয়ার। স্পষ্ট মনে আছে সেই রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের কথা।


তৃতীয় পিরিয়ডে একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে এলেন। শুরুতেই সামনের সারিতে বসা ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন তাদের মা-বাবার নাম। অদ্ভুত ব্যাপার, অধিকাংশ ছাত্রের বাবা অথবা মা তাঁর ছাত্রছাত্রী! এমনকি তিনি সেসব ছাত্রের পরিবারের অনেক সদস্যের নামও অকপটে বলে ফেললেন। তাঁরা কেমন আছেন, জানতে চাইলেন। রোল কলের পর ‘ম্যালেরিয়ার পরজীবী’ বিষয়ে প্রাণবন্ত এক পর্ব শেষে বেরিয়ে গেলেন।
স্যারের বাচনভঙ্গি ও পরিচিতির ব্যাপ্তি আমায় ভাবিয়ে তোলে। বাসায় ফিরে ব্যাপারটি নিয়ে ছোট মামার সঙ্গে আলাপ করি। তিনি বললেন, ‘ওই শিক্ষক তোমার নানার ছাত্র।’ পরে নানার নাম বলতেই স্যার আমাকে বলেন, ‘তুই কায়ছার স্যারের নাতি...!’
বর্তমানে আমার সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণার অনেকটা জুড়েই স্যারের নাম। নয় বছর যাবৎ তাঁকে কাছ থেকে দেখছি। সুযোগ হয়েছে স্যারের সৃজনশীল কাজের সঙ্গে থাকার, নিজেকে জড়িত করার। সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছি প্রতিকূল পরিবেশে সামনে এগোনোর। একজন শিক্ষক শুধু যে শ্রেণীকক্ষেই শেখান, এমন নীতির মধ্যে তিনি পড়েন না। পড়ালেখার বাইরে তাঁর কাছ থেকে যা শিখেছি, তা এই স্বল্প পরিসরে লেখা সম্ভব নয়। আমি গর্ববোধ করি এমন একজন শিক্ষকের ছাত্র হিসেবে। তিনি দক্ষ প্রশাসক, সফল সংগঠক, সংস্কৃতিমনা, ক্রীড়ানুরাগী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক—মো. শরিফুল ইসলাম খান। স্যার, আপনাকে হাজারো সালাম। আপনি দীর্ঘজীবী হোন।
 ফরহাদ হোসেন
নওগাঁসভা

No comments

Powered by Blogger.