৩৫৯ পরিচালককে পদ ছাড়তেই হচ্ছে by সুজয় মহাজন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০২ কোম্পানির ৩৫৯ জন পরিচালককে পদ ছাড়তেই হচ্ছে। যেসব পরিচালক গত ২১ মের মধ্যে নিজ নিজ কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের পদ থেকে বাদ দিতে কোম্পানিগুলোকে আদেশ দিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।


গতকাল মঙ্গলবার কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে সভাটি আজ বুধবার পর্যন্ত মুলতবি হওয়ায় কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই এসব পরিচালকের পদ কার্যত শূন্য হয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও নির্দেশনা অমান্য করে বেশির ভাগ কোম্পানিতেই পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন ওই পরিচালকেরা। কোনো কোনো কোম্পানি ইতিমধ্যে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকদের পর্ষদ থেকে বাদ দিয়েছে। কিন্তু এত দিন এসইসি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সংস্থাটি এত দিন কেবল কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে।
এসইসির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী চলতি বছরের ২১ মে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, কার্যত তাঁদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। তাই এ ক্ষেত্রে নতুন করে নির্দেশনার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন কোম্পানিগুলো এসইসির নির্দেশনাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছে কি না, সেটি নিশ্চিত করতে কোম্পানিগুলোতে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসইসির ওই সদস্য আরও বলেন, এখনো কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকেরা থাকলে অবিলম্বে তাঁদের বাদ দিতে হবে।
গতকালের বৈঠক সূত্র জানায়, দু-এক দিনের মধ্যেই চিঠি পাঠাবে এসইসি। সেই সঙ্গে পরিচালকদের বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে প্রতিটি কোম্পানির কাছ থেকে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) সত্যায়িত কপি জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে এই কপি এসইসিতে জমা দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কোনো ধরনের পরিবর্তন হলে তা আরজেএসসিকে অবহিত করতে হয়। এ জন্য কোম্পানিগুলোকে পিডি (পার্টিকুলার অব ডিরেক্টর) ফরম পূরণ করতে হয়।
এসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত যেসব পরিচালককে পদ ছাড়তে হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, সাংসদ আব্দুল জলিল, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক নুরুল ফজল বুলবুল, হাবিব উল্লাহ, আবদুল্লাহ আল জহির, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক শহিদুল ইসলাম, মোহাম্মদ দাউদ খানসহ আরও অনেকে। এঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে পদ ছেড়েছেন। আবার কেউ কেউ এখনো পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন।
এর আগে গত জুলাই মাসে এসইসি তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির কাছ থেকে পরিচালকদের শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষেই গতকাল কমিশন সভায় ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকদের পদ শূন্য ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত বছরের ২২ নভেম্বর এসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। তাতে বলা হয়, এখন থেকে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় নিজ নিজ কোম্পানির ৩০ শতাংশ এবং প্রত্যেক পরিচালককে এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। তবে স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালকদের এই নির্দেশনার বাইরে রাখা হয়েছিল।
নির্দেশনা জারির পরপর তা পরিপালনের জন্য ছয় মাস সময় বেঁধে দেয় এসইসি। এসইসির ওই নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। সব রিটের শুনানি শেষে আদালত এসইসির নির্দেশনাকে বৈধ বলে রায় দেন।

No comments

Powered by Blogger.