সফলদের স্বপ্নগাথা- নিজের সিদ্ধান্তই নিজের পরিচয়: জেফ বিজোস
মার্কিন উদ্যোক্তা জেফ বিজোস amazon.com.inc-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। অনলাইনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বই ও অন্যান্য পণ্যের বিশাল এক বিক্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালের ৩০ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি এ বক্তব্য দেন।
ছোটবেলায় গ্রীষ্মের ছুটি কাটত টেক্সাসে আমার দাদাবাড়িতে। সেখানে পশুর খামারে ঘুরে বেড়াতাম আমি। বিভিন্ন কাজে সাহায্যও করতাম। যেমন—বায়ুকল ঠিক করা, গবাদিপশুদের টিকা দেওয়া ইত্যাদি। প্রত্যেক বিকেলে যেতাম যাত্রা দেখতে, বিশেষ করে ডেইজ অব আওয়ার লাইফস। আমার দাদা-দাদি ক্যারাভান ক্লাবের সদস্য ছিলেন, যাঁরা ঘুরে বেড়াতেন আমেরিকা ও কানাডার নানা জায়গা। প্রায় প্রত্যেক গ্রীষ্মে আমরা সেখানে যোগ দিতাম। এমনি করে ঘুরে বেড়াতে আমি খুবই মজা পেতাম। একবার এ রকম এক ভ্রমণে আমি খেয়াল করলাম পুরো সময়টাতে আমার দাদি সিগারেট টেনে চলেছেন, সিগারেটের সেই গন্ধ আমার ভীষণ খারাপ লাগছিল। অল্প বয়স থেকেই আমি টুকটাক অঙ্ক কষতাম আর বিভিন্ন বিষয়ে অনুমান করার চেষ্টা করতাম। ধূমপান নিয়ে একটা প্রচারণা শুনেছিলাম আমি। মূলত সেখানে বলা হয়েছিল, সিগারেটের প্রতিটি টান জীবন থেকে দুই মিনিট করে সময় নিয়ে নেয়। যে হারেই হোক না কেন, ভাবলাম দাদিকে নিয়ে হিসাবটা করি। প্রতিদিন ধূমপানের জন্য তাঁর সিগারেটের সংখ্যা, প্রতিটি সিগারেটে টান দেওয়ার সংখ্যা ইত্যাদি অনুমান করে দাদিকে বললাম, ‘প্রতি টানে দুই মিনিট করে তোমার জীবনের নয় বছর তুমি হারিয়ে ফেলছ।’
স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি, এরপর কী হয়েছিল। পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল। ভেবেছিলাম, আমার বুদ্ধি ও গাণিতিক যুক্তির জন্য প্রশংসিত হব। কিন্তু তেমনটা হলো না। আমার দাদি খুব করে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি বুঝতেই পারছিলাম না কী করব। দাদা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হাইওয়েতে গাড়ি সাইড করে গাড়ির দরজা খুলে আমাকে নামতে বললেন। আমি কি কোনো বিপদে পড়লাম? দাদা বেশ জ্ঞানী ও চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ। কখনোই তিনি আমার সঙ্গে কঠিন করে কথা বলেননি। কিন্তু যদি এবারে বলেন? যদি বলেন গাড়িতে ফিরে দাদির কাছে ক্ষমা চাইতে? এমনি নানা চিন্তা মাথায় আসতে লাগল। দাদা আমার দিকে তাকালেন, কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘জেফ, একদিন তুমি বুঝতে পারবে যে বুদ্ধিমান হওয়ার চেয়ে স্নেহশীল হওয়াটা কঠিন।’
আজকে আমি তোমাদের সহজাত গুণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এই দুয়ের মধ্যে কী পার্থক্য তা নিয়ে বলতে চাই। বুদ্ধিমত্তা হলো একটা সহজাত গুণ, অপরদিকে স্নেহশীল হওয়া হচ্ছে এক ধরনের সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তের কাজটিই কিছুটা কঠিন। তুমি যদি সচেতন না হও, তবে তুমি তোমার সহজাত গুণ থাকা সত্ত্বেও ভুল পথে পা দিতে পারো; যেটা তোমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।
আমি নিশ্চিত তোমরা যারা এখানে আছো তারা বহু গুণসম্পন্ন, তোমাদের রয়েছে দারুণ বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক। তা না হলে এ পর্যন্ত তোমরা আসতে পারতে না।
আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে আমি ‘আমাজন’ তৈরির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি জেনেছিলাম যে ওয়েবের ব্যবহার প্রত্যেক বছরে শতকরা দুই ২,৩০০ হারে বাড়ছে। এর মতো এত দ্রুত হারে কোনো কিছুর ব্যবহার বাড়তে আমি কখনোই দেখিনি বা শুনিনি। অনলাইন বুকস্টোর তৈরি করার চিন্তা আমার জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল। কারণ, সে সময়ে এ ধরনের কিছু ছিল না। তখন আমার বয়স ৩০। মোটে এক বছর হয়েছে বিয়ে করেছি। আমার সহধর্মিণী ম্যাককেঞ্জিকে বললাম যে আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাচ্ছি আর নতুন একটা কাজে নিজেকে জড়াতে যাচ্ছি, যার ভবিষ্যৎ আমার জানা নেই। ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে উদ্ভাবন করার মানসিকতা ছিল। আমি সব সময়ই উদ্ভাবক হতে চেয়েছি। ম্যাককেঞ্জির কাছ থেকে আমি উৎসাহ ও সমর্থন পেলাম। আমি আমার আগ্রহের দিকে এগিয়ে যাই, সেটাই সে চেয়েছিল।
নিউইয়র্ক সিটিতে আমি একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শ্রদ্ধা করার মতোই বুদ্ধিমান ছিলেন। একদিন তাঁকে বললাম যে ইন্টারনেটে আমি বই বিক্রির একটা কোম্পানি শুরু করতে চাই। সেন্ট্রাল পার্কে বেশ অনেকক্ষণ আমরা হাঁটলাম। আমার সব কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। এরপর বললেন, এটা নিঃসন্দেহে খুব দারুণ একটা চিন্তা। তবে যার কোনো ভালো চাকরি নেই তার জন্যই এই চিন্তাটা অনেক বেশি ভালো। তাঁর যুক্তি আমাকে কিছুটা ভাবনার জগতে ঠেলে দিল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও দুই দিন আমাকে ভেবে দেখতে বললেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন ছিল আমার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত হলাম। আমার মনে হলো, চেষ্টা করা ও ব্যর্থতা বরণ করা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই বা হবে না। কম নিরাপদ পথটাকেই আমি বেছে নিলাম, যে পথে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমার সেই সিদ্ধান্তের জন্য আমি গর্বিত।
আগামীকাল থেকে তোমাদের নতুন জীবনের যাত্রা শুরু হবে, যে জীবনের রচয়িতা তুমি নিজে।
তোমার বয়স যখন ৮০ বছরের মতো হবে, একটা নীরব মুহূর্তে তুমি তোমার জীবনের প্রতিচ্ছবি তোমার সামনে দেখবে। তোমার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকেই সবচেয়ে অর্থপূর্ণ মনে হবে। আমরা হচ্ছি আমাদের সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন। নিজেই নিজের মহৎ গল্প তৈরি করো। তোমাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।
সূত্র: ওয়েবসাই, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফা ইসহাক
স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি, এরপর কী হয়েছিল। পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটে গেল। ভেবেছিলাম, আমার বুদ্ধি ও গাণিতিক যুক্তির জন্য প্রশংসিত হব। কিন্তু তেমনটা হলো না। আমার দাদি খুব করে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি বুঝতেই পারছিলাম না কী করব। দাদা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হাইওয়েতে গাড়ি সাইড করে গাড়ির দরজা খুলে আমাকে নামতে বললেন। আমি কি কোনো বিপদে পড়লাম? দাদা বেশ জ্ঞানী ও চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ। কখনোই তিনি আমার সঙ্গে কঠিন করে কথা বলেননি। কিন্তু যদি এবারে বলেন? যদি বলেন গাড়িতে ফিরে দাদির কাছে ক্ষমা চাইতে? এমনি নানা চিন্তা মাথায় আসতে লাগল। দাদা আমার দিকে তাকালেন, কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠান্ডা গলায় বললেন, ‘জেফ, একদিন তুমি বুঝতে পারবে যে বুদ্ধিমান হওয়ার চেয়ে স্নেহশীল হওয়াটা কঠিন।’
আজকে আমি তোমাদের সহজাত গুণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এই দুয়ের মধ্যে কী পার্থক্য তা নিয়ে বলতে চাই। বুদ্ধিমত্তা হলো একটা সহজাত গুণ, অপরদিকে স্নেহশীল হওয়া হচ্ছে এক ধরনের সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তের কাজটিই কিছুটা কঠিন। তুমি যদি সচেতন না হও, তবে তুমি তোমার সহজাত গুণ থাকা সত্ত্বেও ভুল পথে পা দিতে পারো; যেটা তোমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।
আমি নিশ্চিত তোমরা যারা এখানে আছো তারা বহু গুণসম্পন্ন, তোমাদের রয়েছে দারুণ বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক। তা না হলে এ পর্যন্ত তোমরা আসতে পারতে না।
আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে আমি ‘আমাজন’ তৈরির পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি জেনেছিলাম যে ওয়েবের ব্যবহার প্রত্যেক বছরে শতকরা দুই ২,৩০০ হারে বাড়ছে। এর মতো এত দ্রুত হারে কোনো কিছুর ব্যবহার বাড়তে আমি কখনোই দেখিনি বা শুনিনি। অনলাইন বুকস্টোর তৈরি করার চিন্তা আমার জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর ছিল। কারণ, সে সময়ে এ ধরনের কিছু ছিল না। তখন আমার বয়স ৩০। মোটে এক বছর হয়েছে বিয়ে করেছি। আমার সহধর্মিণী ম্যাককেঞ্জিকে বললাম যে আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চাচ্ছি আর নতুন একটা কাজে নিজেকে জড়াতে যাচ্ছি, যার ভবিষ্যৎ আমার জানা নেই। ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে উদ্ভাবন করার মানসিকতা ছিল। আমি সব সময়ই উদ্ভাবক হতে চেয়েছি। ম্যাককেঞ্জির কাছ থেকে আমি উৎসাহ ও সমর্থন পেলাম। আমি আমার আগ্রহের দিকে এগিয়ে যাই, সেটাই সে চেয়েছিল।
নিউইয়র্ক সিটিতে আমি একটা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলাম। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শ্রদ্ধা করার মতোই বুদ্ধিমান ছিলেন। একদিন তাঁকে বললাম যে ইন্টারনেটে আমি বই বিক্রির একটা কোম্পানি শুরু করতে চাই। সেন্ট্রাল পার্কে বেশ অনেকক্ষণ আমরা হাঁটলাম। আমার সব কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। এরপর বললেন, এটা নিঃসন্দেহে খুব দারুণ একটা চিন্তা। তবে যার কোনো ভালো চাকরি নেই তার জন্যই এই চিন্তাটা অনেক বেশি ভালো। তাঁর যুক্তি আমাকে কিছুটা ভাবনার জগতে ঠেলে দিল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও দুই দিন আমাকে ভেবে দেখতে বললেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন ছিল আমার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত হলাম। আমার মনে হলো, চেষ্টা করা ও ব্যর্থতা বরণ করা নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই বা হবে না। কম নিরাপদ পথটাকেই আমি বেছে নিলাম, যে পথে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমার সেই সিদ্ধান্তের জন্য আমি গর্বিত।
আগামীকাল থেকে তোমাদের নতুন জীবনের যাত্রা শুরু হবে, যে জীবনের রচয়িতা তুমি নিজে।
তোমার বয়স যখন ৮০ বছরের মতো হবে, একটা নীরব মুহূর্তে তুমি তোমার জীবনের প্রতিচ্ছবি তোমার সামনে দেখবে। তোমার নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকেই সবচেয়ে অর্থপূর্ণ মনে হবে। আমরা হচ্ছি আমাদের সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন। নিজেই নিজের মহৎ গল্প তৈরি করো। তোমাদের প্রতি আমার শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।
সূত্র: ওয়েবসাই, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মারুফা ইসহাক
No comments