দুজনেই প্রথম by শর্মিলা সিনড্রেলা

দুজনের লড়াইয়ে হারেননি কেউ। জিতেনওনি কেউ। দুজনেই হয়েছেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। পেয়েছেন সর্বোচ্চ নম্বর। তবে যৌথভাবে। তনুশ্রী হালদার ও খোরশেদা পারভীন হিরা দুজনেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কৃষি অনুষদ থেকে তাঁরা পেয়েছেন সিজিপিএ-৩.৯৬।


খোরশেদার জন্য এটা ছিল একটা উপহার। হ্যাঁ, পরিশ্রম করলে ফল তো মিলবেই। খোরশেদা শোনান তাঁর পথের গল্প, ‘তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে আমার বাবা মারা যান। একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম তখন। সবার উৎসাহে আবার নিজেকে শক্ত করি। বাবা তো চেয়েছিলেন আমি পড়ি। তাঁর স্বপ্নটাকেও তো পূরণ করতে হবে।’ এখন দুজনেই পড়ছেন মাস্টার্সে। তনুশ্রী ভর্তি হয়েছেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে এবং খোরশেদা পড়ছেন উদ্ভিদতত্ত্বে (এগ্রিকালচারাল বোটানি)।
বলা হয়ে থাকে, নিজে নিজেকে সাহায্য করাই নাকি সবচেয়ে বড় ভরসা। তবে আশপাশের সহায়তাও তো লাগে, তাই না? এই যেমন দুজনে পড়েছেন বেশ ভালোভাবে। কিন্তু তার পরও বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, পরিবার—সবার সহায়তা এতটা পথ আসতে সাহায্য করেছে তাঁদের। ‘আমাদের দুজনের মধ্যেও বোঝাপড়াটা বেশ। এই তো দেখুন, আমরা দুজনেই দুজনের প্রতিযোগী। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও বটে। একই হলে পাশাপাশি ঘরে থাকি। ওর পড়াশোনা বা যেকোনো সমস্যা আমি সমাধান দিতে চেষ্টা করি আবার আমার সমস্যা সমাধান করে ও। ঈর্ষাটা আমাদের মধ্যে নেই।’ নিজেদের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাচ্ছিলেন খোরশেদা। তিনি অবশ্য পরিবার ও বন্ধুমহলে হীরা নামে পরিচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা পড়েন, তাঁরা সবাই তো মেধাবী। এতজনের মধ্য থেকে নিজেকে অসাধারণ করে তোলার মূল মন্ত্রটা কী? জবাব আসে ‘বেশি সময় ধরে নয়, বরং বুঝে নিয়ে নিয়মিত মন দিয়ে পড়লেই হয়ে ওঠা যায় অসাধারণ।’
তনুশ্রীর বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে। সেখানকার কলেজিয়েট একাডেমি থেকে এসএসসি এবং পরে এইচএসসি হলিক্রস কলেজ থেকে। তনুশ্রীর মধ্যে রয়েছে বহুমুখী প্রতিভা। গান, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, উপস্থাপনা, রোভার স্কাউট—সবখানেই আছেন তিনি। আর খোরশেদার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে। সেখান থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি। টিউশনি করেন আর ভালোবাসেন গাছকে।
তনুশ্রী শোনাচ্ছিলেন তাঁদের কথা, ‘আমাদের এক শিক্ষক বলতেন, যারা মেধাবী হয় তারা নাকি ভালো মানুষ হতে পারে না। কেননা, তারা মনে করে, সময়টা অন্যদের সাহায্য করতে ব্যয় না করে সেটা আমি আমার পড়াশোনায় কাজে লাগাব। তবে আমাদের ক্ষেত্রে মোটেও এমন নয়। আমরা দুজনেই মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। আমি কাজ করতে চাই পথশিশুদের নিয়ে। এখনো আমরা নিজেরা টুকটাক করতে চেষ্টা করি।’
খোরশেদাও যোগ দেন কথার মাঝে, ‘ও শিশুদের নিয়ে কাজ করবে আর আমি কাজ করব বৃদ্ধদের নিয়ে। বেশ হবে, তাই না!’ সত্যিই বেশ হবে। কিন্তু দুজন হতে চান কী? উত্তর আসে, ‘বলতে পারেন আমরা এক স্বপ্ন দেখি বা স্বপ্ন ভাগ করে নিই। আমরা দুজনেই হতে চাই শিক্ষক। সারাটা জীবন তা হলে শিক্ষার্থী, পড়াশোনা আর গবেষণার মধ্যেই দারুণ কাটিয়ে দিতে পারব।’

No comments

Powered by Blogger.