স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পথে মিসর! by এনামুল হক
তিন দশকের স্বৈরশাসন থেকে বেরিয়ে আসা মিসরের পররাষ্ট্রনীতি কি এখন স্বাধীন? আর স্বাধীন হয়ে থাকলে তা কতখানি স্বাধীন? প্রশ্নগুলো উঠেছে এমন এক সময়ে যখন মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয়ী প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার নিয়েছেন এবং তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছেন এমন এক দেশকে যা
আনোয়ার সাদাতের সময় থেকে ছিল আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। অথচ ক্ষমতায় এসে মুরসি এ অঞ্চলের বাইরে তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন চীন ও ইরানকে।
রেডিক্যাল ইসলামী আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডের গভীর পাশ্চাত্য বিদ্বেষ কারোর অবিদিত নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাদারহুড ইসলামী সংহতির কথা প্রচার করে আসছে এবং সেই সঙ্গে আমেরিকাকে ইসরাইলপ্রীতি ও মুসলিম বিদ্বেষের জন্য দোষারোপ করেছে। এই পটভূমিতে ৭ জন মন্ত্রী ও ৮০ সদস্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল নিয়ে মুরসির চীন সফরে যাওয়ার ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। স্পষ্টতই আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি ও কূটনৈতিক প্রভাব সঙ্কুচিত হয়ে আসায় মিসরের এখন নতুন পৃষ্ঠপোষক খুঁজে বের করা বড়ই প্রয়োজন।
তাই বলে প্রেসিডেন্ট মুরসি আমেরিকাকে একেবারে খারিজ করে দিয়েছেন এমনও নয়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ কিছু সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। একটি মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলেরও শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৮০ কোটি ডলারের ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারেও তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে চীন মিসরের ক্রমবর্ধমান ব্যবসায় অংশীদার হয়ে উঠছে। গত বছর মিসরের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তথাপি মিসরে চীনের বিনিয়োগ খুব বেশি নয়Ñ মাত্র ৫০ কোটি ডলার, যা কিনা মার্কিন বিনিয়োগের অতি সামান্য অংশ। গণআন্দোলনের দীর্ঘ টালমাটাল অধ্যায়ে মিসরের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দারুণভাবে নেমে আসে। জ্বালানির মূল্য পরিশোধে বেশ বেগ পেতে হয় দেশটাকে। মন্দা ভারাক্রান্ত পশ্চিমা বিশ্বের ঋণের উৎস মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। এ অবস্থায় চীন স্বভাবতই এ দেশটির কাছে অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তার চীন সফরের আরেক উদ্দেশ্য ছিল চীনা নেতাদের আশ্বস্ত করা যে, মিসরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাদের উদ্বিগ্ন বোধ করার কোন কারণ নেই।
প্রেসিডেন্ট মুরসি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগ দিতে ইরান সফরে গিয়েছিলেন। সেটাও মিসরের নয়া সরকারের এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ যদিও এ নিয়ে কিছু বিতর্কেরও জন্ম হয়েছে। ইরানের সঙ্গে মিসরের ভবিষ্যত কূটনৈতিক সম্পর্ক কিরূপ ধারণ করছে সেটাই হবে মিসরের পররাষ্ট্রনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার বাস্তব লক্ষণ। দুদেশের সম্পর্ক গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন। খোমেনির মৃত্যুর পর ইরানীরা মিসরের সঙ্গে সমঝোতায় আসার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু মোবারক আগ্রহী ছিলেন না। এখন মোবারকের বিদায় ও মুরসির আগমনের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। সে সম্পর্ক কত তাড়াতাড়ি পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সেটা হলে পরিষ্কার বুঝা যাবে যে মুরসি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর। মুরসি ও তাঁর সরকার এটা অনুধাবন করেছেন যে, মিসরের আজ যতটা না ইরানের বন্ধুত্ব দরকার তার চেয়ে আন্তর্জাতিক অবরোধে একঘরে হয়ে পড়া ইরানের মিসরীয় সমর্থন আরও বেশি প্রয়োজন। তবে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেও মুরসি খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইরানের মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। সবকিছু হিসাবে নিয়ে বলা যায় মিসরের পররাষ্ট্র নীতির একটা বিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। এতদিনের মার্কিননির্ভর পররাষ্ট্র নীতি থেকে সরে এসে মিসর এখন অধিকতর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির দিকে পা বাড়াতে চলেছে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
রেডিক্যাল ইসলামী আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুডের গভীর পাশ্চাত্য বিদ্বেষ কারোর অবিদিত নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাদারহুড ইসলামী সংহতির কথা প্রচার করে আসছে এবং সেই সঙ্গে আমেরিকাকে ইসরাইলপ্রীতি ও মুসলিম বিদ্বেষের জন্য দোষারোপ করেছে। এই পটভূমিতে ৭ জন মন্ত্রী ও ৮০ সদস্যের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল নিয়ে মুরসির চীন সফরে যাওয়ার ব্যাপারটাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। স্পষ্টতই আমেরিকার অর্থনৈতিক শক্তি ও কূটনৈতিক প্রভাব সঙ্কুচিত হয়ে আসায় মিসরের এখন নতুন পৃষ্ঠপোষক খুঁজে বের করা বড়ই প্রয়োজন।
তাই বলে প্রেসিডেন্ট মুরসি আমেরিকাকে একেবারে খারিজ করে দিয়েছেন এমনও নয়। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ কিছু সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। একটি মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলেরও শীঘ্রই তাঁর সঙ্গে দেখা করার কথা। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৮০ কোটি ডলারের ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারেও তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে চীন মিসরের ক্রমবর্ধমান ব্যবসায় অংশীদার হয়ে উঠছে। গত বছর মিসরের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। তথাপি মিসরে চীনের বিনিয়োগ খুব বেশি নয়Ñ মাত্র ৫০ কোটি ডলার, যা কিনা মার্কিন বিনিয়োগের অতি সামান্য অংশ। গণআন্দোলনের দীর্ঘ টালমাটাল অধ্যায়ে মিসরের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দারুণভাবে নেমে আসে। জ্বালানির মূল্য পরিশোধে বেশ বেগ পেতে হয় দেশটাকে। মন্দা ভারাক্রান্ত পশ্চিমা বিশ্বের ঋণের উৎস মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। এ অবস্থায় চীন স্বভাবতই এ দেশটির কাছে অধিক আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। তার চীন সফরের আরেক উদ্দেশ্য ছিল চীনা নেতাদের আশ্বস্ত করা যে, মিসরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তাদের উদ্বিগ্ন বোধ করার কোন কারণ নেই।
প্রেসিডেন্ট মুরসি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যোগ দিতে ইরান সফরে গিয়েছিলেন। সেটাও মিসরের নয়া সরকারের এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ যদিও এ নিয়ে কিছু বিতর্কেরও জন্ম হয়েছে। ইরানের সঙ্গে মিসরের ভবিষ্যত কূটনৈতিক সম্পর্ক কিরূপ ধারণ করছে সেটাই হবে মিসরের পররাষ্ট্রনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার বাস্তব লক্ষণ। দুদেশের সম্পর্ক গত ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন। খোমেনির মৃত্যুর পর ইরানীরা মিসরের সঙ্গে সমঝোতায় আসার বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু মোবারক আগ্রহী ছিলেন না। এখন মোবারকের বিদায় ও মুরসির আগমনের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। সে সম্পর্ক কত তাড়াতাড়ি পুনর্প্রতিষ্ঠিত হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সেটা হলে পরিষ্কার বুঝা যাবে যে মুরসি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে বদ্ধপরিকর। মুরসি ও তাঁর সরকার এটা অনুধাবন করেছেন যে, মিসরের আজ যতটা না ইরানের বন্ধুত্ব দরকার তার চেয়ে আন্তর্জাতিক অবরোধে একঘরে হয়ে পড়া ইরানের মিসরীয় সমর্থন আরও বেশি প্রয়োজন। তবে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেও মুরসি খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইরানের মিত্র সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশারকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। সবকিছু হিসাবে নিয়ে বলা যায় মিসরের পররাষ্ট্র নীতির একটা বিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। এতদিনের মার্কিননির্ভর পররাষ্ট্র নীতি থেকে সরে এসে মিসর এখন অধিকতর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির দিকে পা বাড়াতে চলেছে।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
No comments