‘হকির সুদিন ফিরবেই’
প্রশ্ন : ওয়ার্ল্ড হকি লীগে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠল। নিশ্চয়ই খুব খুশি আপনি?
জিমি : অবশ্যই খুশি। খুব ভাল লাগছে যে আমরা প্রথম পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছি। যদি সেকেন্ড রাউন্ডে ভাল করি তবে তৃতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হব।
জিমি : অবশ্যই খুশি। খুব ভাল লাগছে যে আমরা প্রথম পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং সেকেন্ড রাউন্ডে কোয়ালিফাই করেছি। যদি সেকেন্ড রাউন্ডে ভাল করি তবে তৃতীয় রাউন্ডে উত্তীর্ণ হব।
এটা ওয়ার্ল্ড কাপ খেলার জন্য সুন্দর একটা পথ আমাদের জন্য তৈরি করে দিতে পারে। এই পথে যদি আমরা ঠিকভাবে চলতে পারি তবে ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার দ্বার আমাদের জন্য খুলে যাবে।
আমরা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সেই দিকেই হাঁটছি।
প্রশ্ন : তিন ম্যাচের তিনটিতেই জয়। দলীয় এই সাফল্যের পেছনে কোন জিনিসটা প্রধান ভূমিকা রেখেছে?
জিমি : অনেকদিন ধরেই আমরা খেলার মধ্যে আছি। একটার পর একটা টুর্নামেন্ট খেলে যাচ্ছি। আগে যেটা হতো, একটা টুর্নামেন্ট হলে এক মাস আগে আমাদের ক্যাম্প শুরু হতো এবং তখন আমাদের একদম জিরো লেভেল থেকে শুরু করতে হতো। আমাদের ফিটনেসেরও অনেক সমস্যা থাকত। এবার সেটা ছিল না এবং আমাদের কোচের যে প্ল্যান ছিল সেই প্ল্যান অনুযায়ী আমরা খেলতে পেরেছি। একটা টিম ইউনিটি কাজ করেছে আমাদের মধ্যে। সবার মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া ছিল এবং ভাল করার আত্মবিশ্বাস ছিল। এটাই ভাল করার পেছনে কাজ করেছে।
প্রশ্ন : সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রস্তুতি কেমনছিল?
জিমি : প্রস্তুতি খুবই ভাল ছিল। কারণ আমরা খেলার মধ্যে ছিলাম। লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এবং আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমাদের সম্পূর্ণ গেমটা ছিল প্ল্যানিংয়ের ওপর এবং টিম ইউনিটির ওপর। সবাই একসঙ্গে খেলতে পেরেছি বলেই এই টুর্নামেন্টে আমরা জয়ী হয়েছি।
প্রশ্ন : এই সাফল্যের পেছনে ঘরোয়া হকি নিশ্চই ভূমিকা রেখেছে?
জিমি : অবশ্যই। ঘরোয়া হকি না হয়ে শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে কিন্তু হবে না। ঘরোয়া হকি যদি ভাল থাকে তবে প্লেয়ার বাড়বে এবং এখন দেখা যায় যে, হকি পুরোপুরি বিকেএসপির ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। ঘরোয়া লীগ নিয়মিত হলে বিকেএসপির ওপর চাপ কমবে। লক্ষ্য রাখতে হবে লীগ যেন বন্ধ হয়ে না যায়।
প্রশ্ন : অন্য প্রতিপক্ষের তুলনায় নিজেদের পার্থক্য কেমন দেখলেন?
জিমি : সিঙ্গাপুর খুব ভাল টিম ছিল, হংকংও খুব ভাল। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঙ্গে পারেনি আমাদের টিম ইউনিটি, আমাদের প্ল্যানিং এবং আমাদের খেলার জন্য। এখানেই মূলত প্রতিপক্ষের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমাদের মূল টার্গেট ছিল পেনাল্টি কর্নার। আমরা সেগুলোতে সফল হতে পেরেছি।
প্রশ্ন : ৫ গোল করে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার আপনি। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
জিমি : অবশ্যই ভাল লাগছে যে আমি এত বড় একটা লীগে। ৫ গোল করতে পেরেছি এবং টিমের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরেছি। সবসময়ই এটা আমার চেষ্টা থাকে ।
প্রশ্ন : আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী ছিল?
জিমি : আমার লক্ষ্য ছিল সেরা খেলোয়াড় হওয়া। সর্বশেষ এএইচএফ কাপের ফাইনাল ম্যাচেও আমি সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম এবং এর আগের টুর্নামেন্টেও আমি বেস্ট প্লেয়ার ছিলাম। সেটাকে আমি টার্গেট করেছিলাম।
প্রশ্ন : ভাল খেলেও টুর্নামেন্ট সেরার স্বীকৃতি পাননি। কোন আক্ষেপ কি কাজ করছে?
জিমি : না, কোন আক্ষেপ নেই। কোচ আমার খেলায় সন্তুষ্ট হয়েছে। বলেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তোমার পাওয়ার কথা ছিল। এটা ভেবে ভাল লাগছে যে কোচ আমার খেলায় সন্তুষ্ট হয়েছেন।
প্রশ্ন : ইউরোপে খেলতে যাচ্ছেন। ওখানকার কী ধরনের লীগে খেলেন আপনি?
জিমি : প্রথম খেলেছিলাম ডিভিশন ওয়ানে এবং তারপর ডিভিশন টুতে। আর এবার যেটা যাচ্ছি সেটা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত জানি না। হয়ত ডিভিশন ওয়ান বা টু এর যে কোন একটাতে খেলব। তবে জার্মানি এবং ভিয়েনা দুই জায়গাতেই আমার অফার আছে। পিটার গেরহার্ডের (বাংলাদেশের সাবেক কোচ) ওপর নির্ভর করছে সে আমাকে কোথায় দেবে।
প্রশ্ন : ইউরোপীয় হকি আর এশিয়ান হকির মাঝে তো কিছুটা পার্থক্য আছে। সেখানে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না?
জিমি : টোটাল একটা ডিফারেন্স হকি। আমাদের এশিয়ান হকি পুরোপুরি স্কিলের ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপের হকি পুরোটাই পাওয়ার হকি এবং ফিটনেসের। মানিয়ে নিতে তেমন সমস্যা হয় না। কারণ তাদের ট্রেনিং অনেক উন্নত এবং টিমমেটরা খুব সাপোর্ট করে। এ জন্য সেরকম কোন সমস্যা হয় না।
প্রশ্ন : এবার তো লীগ হলো, টুর্নামেন্ট হলো। এর বাইরে ক’জন খেলোয়াড় ইউরোপে লীগ খেলছেন। সব মিলিয়ে হকির পরিবেশ এখন কেমন মনে হচ্ছে?
জিমি : এটা কিন্তু একটা লক্ষণ। আগে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশী প্লেয়ারদের মানুষ চিনতে পারত না। বাংলাদেশেরও যে ভাল মানের প্লেয়ার আছে এটা কেউ জানত না। এখন বিষয়টা কন্টিনিউ হয়ে গেল। আমরা লীগ খেলতে যাচ্ছি, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি। ওয়ার্ল্ড হকি লীগে আমাদের খেলা দেখে সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড লীগের জন্য আমাদের তিন-চারজনকে পছন্দ করেছে। এটা অবশ্যই ভাল দিক এবং আমরা যদি ভাল খেলতে পারি তবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা ভাল হবে।
প্রশ্ন : হকি নিয়ে আগে দর্শকদের যে উন্মাদনা ছিল সেই উন্মাদনা এখন আর নেই। হকির হারানো দিন কি আর ফিরে আসবে?
জিমি : বর্তমানে হকি যেভাবে চলছে, যেমনÑ নয় মাস ধরে লীগ এবং টুর্নামেন্ট হচ্ছে। এসব যদি নিয়মিত হয় এবং আমরা যদি ভাল ফলাফল করি তবে অবশ্যই হকির আগের উন্মাদনা ফিরে আসবে। মিডিয়া যদি সাপোর্ট করে, ঘরোয়া হকি যদি নিয়মিত হয় এবং হকি ডে বাই ডে যেভাবে উন্নতি করছে সেটা যদি বজায় থাকে তবে অবশ্যই হকি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
প্রশ্ন : হকির হারানো দিন ফিরে পেতে কী করণীয় বলে আপনার মনে হয়?
জিমি : খেলাটা মাঠে রাখতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে স্পন্সরের জন্য। যে কোন টুর্নামেন্ট বা লীগ চালানোর স্পন্সর প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে লীগ এবং টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।
প্রশ্ন : নিজেকে হকি প্লেযার হিসেবে কতটুকু সার্থক মনে করেন?
জিমি : আমার জীবনের যা কিছু অর্জন তার সবই এসেছে হকি থেকে এবং আজকে লোকজন আমাকে চেনে হকির মাধ্যমেই। আমি মনে করি আমার হকি খেলাটা সার্থক হয়েছে। হয়ত বা আমরা আর্থিকভাবে সেভাবে সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে বলবÑ আমি অনেক কিছু অর্জন করেছি হকি থেকে।
প্রশ্ন : হকির প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে?
জিমি : আমার বাবা হকি প্লেয়ার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গে হকি মাঠে আসতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল ফুটবলার হওয়ার। ’৯৬-’৯৭ সালের দিকে যখন হকির ব্যাপক উন্মাদনা দেখলাম এবং ’৯৮ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ পেলাম তখন থেকে হকিকে পেশা হিসেবে নেয়ার ব্যক্তিগত আগ্রহ তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আসতে পারার পেছনে কাদের অবদানকে বড় করে দেখেন?
জিমি : অবশ্যই বাবা-মার সাপোর্ট ছিল বলে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। পরবর্তীতে আমি বলব আমার দুই কোচ নুরুল ইসলাম স্যার এবং কাওসার স্যারের কথা। তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি মনে করি তাদের এই প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন : ফেব্রুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড হকি লীগের পরবর্তী রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আপনাদের লক্ষ্য কী থাকবে?
জিমি : ফিজি এবং কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া লীগের প্রথম পর্ব থেকে একটি করে টিম আসবে। সেই সঙ্গে ইন্ডিয়া থাকছে। ইন্ডিয়ার সঙ্গে অবশ্যই আমাদের ভাল করতে হবে। অন্য দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অবশ্যই জয় টার্গেট থাকবে। সর্বোপরি আমরা তৃতীয় রাউন্ডে যাতে কোয়ালিফাই করতে পারি সেই টার্গেট নিয়ে খেলব।
প্রশ্ন : লক্ষ্য পূরণে কী করণীয় হওয়া উচিত?
জিমি : এখন থেকেই প্ল্যান করতে হবে। আমরা যে লীগ খেলতে যাচ্ছি এটা অনেক ভালমানের একটা লীগ। এর জন্য সে রকম প্রস্তুতিই প্রয়োজন। শুধু ক্যাম্প করলেই হবে না। এটার পাশাপাশি ম্যাচ খেলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে হতে পারে। যেহেতু ইন্ডিয়াতেই টুর্নামেন্টটা হবে। আমরা যদি একমাস আগে ওখানে যেতে পারি এবং কিছু প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে পারি তবে অবশ্যই আমাদের জন্য পজিটিভ হবে বিষয়টা।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের হকি নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
জিমি : স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপে খেলার। একবার হলেও বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপ খেলতে পেত তবে হকির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটত। যেমনটা ক্রিকেটে হচ্ছে।
আমরা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সেই দিকেই হাঁটছি।
প্রশ্ন : তিন ম্যাচের তিনটিতেই জয়। দলীয় এই সাফল্যের পেছনে কোন জিনিসটা প্রধান ভূমিকা রেখেছে?
জিমি : অনেকদিন ধরেই আমরা খেলার মধ্যে আছি। একটার পর একটা টুর্নামেন্ট খেলে যাচ্ছি। আগে যেটা হতো, একটা টুর্নামেন্ট হলে এক মাস আগে আমাদের ক্যাম্প শুরু হতো এবং তখন আমাদের একদম জিরো লেভেল থেকে শুরু করতে হতো। আমাদের ফিটনেসেরও অনেক সমস্যা থাকত। এবার সেটা ছিল না এবং আমাদের কোচের যে প্ল্যান ছিল সেই প্ল্যান অনুযায়ী আমরা খেলতে পেরেছি। একটা টিম ইউনিটি কাজ করেছে আমাদের মধ্যে। সবার মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া ছিল এবং ভাল করার আত্মবিশ্বাস ছিল। এটাই ভাল করার পেছনে কাজ করেছে।
প্রশ্ন : সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে আপনাদের প্রস্তুতি কেমনছিল?
জিমি : প্রস্তুতি খুবই ভাল ছিল। কারণ আমরা খেলার মধ্যে ছিলাম। লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এবং আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমাদের সম্পূর্ণ গেমটা ছিল প্ল্যানিংয়ের ওপর এবং টিম ইউনিটির ওপর। সবাই একসঙ্গে খেলতে পেরেছি বলেই এই টুর্নামেন্টে আমরা জয়ী হয়েছি।
প্রশ্ন : এই সাফল্যের পেছনে ঘরোয়া হকি নিশ্চই ভূমিকা রেখেছে?
জিমি : অবশ্যই। ঘরোয়া হকি না হয়ে শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে কিন্তু হবে না। ঘরোয়া হকি যদি ভাল থাকে তবে প্লেয়ার বাড়বে এবং এখন দেখা যায় যে, হকি পুরোপুরি বিকেএসপির ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। ঘরোয়া লীগ নিয়মিত হলে বিকেএসপির ওপর চাপ কমবে। লক্ষ্য রাখতে হবে লীগ যেন বন্ধ হয়ে না যায়।
প্রশ্ন : অন্য প্রতিপক্ষের তুলনায় নিজেদের পার্থক্য কেমন দেখলেন?
জিমি : সিঙ্গাপুর খুব ভাল টিম ছিল, হংকংও খুব ভাল। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঙ্গে পারেনি আমাদের টিম ইউনিটি, আমাদের প্ল্যানিং এবং আমাদের খেলার জন্য। এখানেই মূলত প্রতিপক্ষের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমাদের মূল টার্গেট ছিল পেনাল্টি কর্নার। আমরা সেগুলোতে সফল হতে পেরেছি।
প্রশ্ন : ৫ গোল করে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার আপনি। কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
জিমি : অবশ্যই ভাল লাগছে যে আমি এত বড় একটা লীগে। ৫ গোল করতে পেরেছি এবং টিমের জয়ে ভূমিকা রাখতে পেরেছি। সবসময়ই এটা আমার চেষ্টা থাকে ।
প্রশ্ন : আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী ছিল?
জিমি : আমার লক্ষ্য ছিল সেরা খেলোয়াড় হওয়া। সর্বশেষ এএইচএফ কাপের ফাইনাল ম্যাচেও আমি সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম এবং এর আগের টুর্নামেন্টেও আমি বেস্ট প্লেয়ার ছিলাম। সেটাকে আমি টার্গেট করেছিলাম।
প্রশ্ন : ভাল খেলেও টুর্নামেন্ট সেরার স্বীকৃতি পাননি। কোন আক্ষেপ কি কাজ করছে?
জিমি : না, কোন আক্ষেপ নেই। কোচ আমার খেলায় সন্তুষ্ট হয়েছে। বলেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তোমার পাওয়ার কথা ছিল। এটা ভেবে ভাল লাগছে যে কোচ আমার খেলায় সন্তুষ্ট হয়েছেন।
প্রশ্ন : ইউরোপে খেলতে যাচ্ছেন। ওখানকার কী ধরনের লীগে খেলেন আপনি?
জিমি : প্রথম খেলেছিলাম ডিভিশন ওয়ানে এবং তারপর ডিভিশন টুতে। আর এবার যেটা যাচ্ছি সেটা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত জানি না। হয়ত ডিভিশন ওয়ান বা টু এর যে কোন একটাতে খেলব। তবে জার্মানি এবং ভিয়েনা দুই জায়গাতেই আমার অফার আছে। পিটার গেরহার্ডের (বাংলাদেশের সাবেক কোচ) ওপর নির্ভর করছে সে আমাকে কোথায় দেবে।
প্রশ্ন : ইউরোপীয় হকি আর এশিয়ান হকির মাঝে তো কিছুটা পার্থক্য আছে। সেখানে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না?
জিমি : টোটাল একটা ডিফারেন্স হকি। আমাদের এশিয়ান হকি পুরোপুরি স্কিলের ওপর নির্ভরশীল। ইউরোপের হকি পুরোটাই পাওয়ার হকি এবং ফিটনেসের। মানিয়ে নিতে তেমন সমস্যা হয় না। কারণ তাদের ট্রেনিং অনেক উন্নত এবং টিমমেটরা খুব সাপোর্ট করে। এ জন্য সেরকম কোন সমস্যা হয় না।
প্রশ্ন : এবার তো লীগ হলো, টুর্নামেন্ট হলো। এর বাইরে ক’জন খেলোয়াড় ইউরোপে লীগ খেলছেন। সব মিলিয়ে হকির পরিবেশ এখন কেমন মনে হচ্ছে?
জিমি : এটা কিন্তু একটা লক্ষণ। আগে কিন্তু আমাদের বাংলাদেশী প্লেয়ারদের মানুষ চিনতে পারত না। বাংলাদেশেরও যে ভাল মানের প্লেয়ার আছে এটা কেউ জানত না। এখন বিষয়টা কন্টিনিউ হয়ে গেল। আমরা লীগ খেলতে যাচ্ছি, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি। ওয়ার্ল্ড হকি লীগে আমাদের খেলা দেখে সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড লীগের জন্য আমাদের তিন-চারজনকে পছন্দ করেছে। এটা অবশ্যই ভাল দিক এবং আমরা যদি ভাল খেলতে পারি তবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা ভাল হবে।
প্রশ্ন : হকি নিয়ে আগে দর্শকদের যে উন্মাদনা ছিল সেই উন্মাদনা এখন আর নেই। হকির হারানো দিন কি আর ফিরে আসবে?
জিমি : বর্তমানে হকি যেভাবে চলছে, যেমনÑ নয় মাস ধরে লীগ এবং টুর্নামেন্ট হচ্ছে। এসব যদি নিয়মিত হয় এবং আমরা যদি ভাল ফলাফল করি তবে অবশ্যই হকির আগের উন্মাদনা ফিরে আসবে। মিডিয়া যদি সাপোর্ট করে, ঘরোয়া হকি যদি নিয়মিত হয় এবং হকি ডে বাই ডে যেভাবে উন্নতি করছে সেটা যদি বজায় থাকে তবে অবশ্যই হকি আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
প্রশ্ন : হকির হারানো দিন ফিরে পেতে কী করণীয় বলে আপনার মনে হয়?
জিমি : খেলাটা মাঠে রাখতে হবে। সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে স্পন্সরের জন্য। যে কোন টুর্নামেন্ট বা লীগ চালানোর স্পন্সর প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে লীগ এবং টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।
প্রশ্ন : নিজেকে হকি প্লেযার হিসেবে কতটুকু সার্থক মনে করেন?
জিমি : আমার জীবনের যা কিছু অর্জন তার সবই এসেছে হকি থেকে এবং আজকে লোকজন আমাকে চেনে হকির মাধ্যমেই। আমি মনে করি আমার হকি খেলাটা সার্থক হয়েছে। হয়ত বা আমরা আর্থিকভাবে সেভাবে সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু প্লেয়ার হিসেবে বলবÑ আমি অনেক কিছু অর্জন করেছি হকি থেকে।
প্রশ্ন : হকির প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে?
জিমি : আমার বাবা হকি প্লেয়ার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর সঙ্গে হকি মাঠে আসতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল ফুটবলার হওয়ার। ’৯৬-’৯৭ সালের দিকে যখন হকির ব্যাপক উন্মাদনা দেখলাম এবং ’৯৮ সালে বিকেএসপিতে সুযোগ পেলাম তখন থেকে হকিকে পেশা হিসেবে নেয়ার ব্যক্তিগত আগ্রহ তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত আসতে পারার পেছনে কাদের অবদানকে বড় করে দেখেন?
জিমি : অবশ্যই বাবা-মার সাপোর্ট ছিল বলে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। পরবর্তীতে আমি বলব আমার দুই কোচ নুরুল ইসলাম স্যার এবং কাওসার স্যারের কথা। তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি মনে করি তাদের এই প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে।
প্রশ্ন : ফেব্রুয়ারিতে ওয়ার্ল্ড হকি লীগের পরবর্তী রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আপনাদের লক্ষ্য কী থাকবে?
জিমি : ফিজি এবং কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া লীগের প্রথম পর্ব থেকে একটি করে টিম আসবে। সেই সঙ্গে ইন্ডিয়া থাকছে। ইন্ডিয়ার সঙ্গে অবশ্যই আমাদের ভাল করতে হবে। অন্য দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অবশ্যই জয় টার্গেট থাকবে। সর্বোপরি আমরা তৃতীয় রাউন্ডে যাতে কোয়ালিফাই করতে পারি সেই টার্গেট নিয়ে খেলব।
প্রশ্ন : লক্ষ্য পূরণে কী করণীয় হওয়া উচিত?
জিমি : এখন থেকেই প্ল্যান করতে হবে। আমরা যে লীগ খেলতে যাচ্ছি এটা অনেক ভালমানের একটা লীগ। এর জন্য সে রকম প্রস্তুতিই প্রয়োজন। শুধু ক্যাম্প করলেই হবে না। এটার পাশাপাশি ম্যাচ খেলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে হতে পারে। যেহেতু ইন্ডিয়াতেই টুর্নামেন্টটা হবে। আমরা যদি একমাস আগে ওখানে যেতে পারি এবং কিছু প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে পারি তবে অবশ্যই আমাদের জন্য পজিটিভ হবে বিষয়টা।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের হকি নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
জিমি : স্বপ্ন দেখি বিশ্বকাপে খেলার। একবার হলেও বাংলাদেশ যদি বিশ্বকাপ খেলতে পেত তবে হকির মাধ্যমে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটত। যেমনটা ক্রিকেটে হচ্ছে।
No comments