রাজস্ব ফাঁকি-হলমার্কের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে by ফারজানা লাবনী
বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির দায়ে হলমার্ক গ্রুপের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ হচ্ছে। একই সঙ্গে জব্দ করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন ইসলামের ব্যাংক হিসাবও। তাঁদের দাখিল করা হিসাবে গরমিল আর নানা অনিয়ম খুঁজে পাওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের গোয়েন্দা বিভাগ সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) গত সপ্তাহে হলমার্ক গ্রুপের সব হিসাব যাচাইয়ের কাজ শুরু করে। তদন্তে তারা নিশ্চিত হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলাম ও হলমার্ক গ্রুপের নামে যে পরিমাণ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে, সেই হারে এনবিআরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়নি। তদন্তের স্বার্থে আগামীকাল বৃহস্পতিবার হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাঁর স্ত্রীকে এনবিআরে তলব করা হতে পারে।
এনবিআরের সদস্য কাদের সরকার কালের কণ্ঠকে জানান, দুদকের তদন্তের বিষয়টি সম্পর্কে এনবিআরের সিআইসি থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলছে সিআইসি। এরই মধ্যে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে কত টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দুদক থেকে পাওয়া সম্পদের হিসাব আবার খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে রাজস্ব বোর্ড থেকে পাওয়া রিপোর্ট গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা হবে। তিনি আরো জানান, রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি হলমার্কের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হতে পারে। কারণ তাদের নামে যে অর্থ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তা কোথায় আছে সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকে মেয়াদি আমানত হিসাবে (এফডিআর) তানভীর মাহমুদ ও জেসমিন ইসলামের নামে ১২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। অথচ এনবিআরে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে বিষয়টি গোপন করা হয়েছে।
গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের পর দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হলমার্ক গ্রুপের এমডি বলেছেন, তাঁর কাছে এই পরিমাণ অর্থের প্রায় ২০ গুণ সম্পদ আছে। অথচ এনবিআরে পাওয়া হিসাবে দেখা যায়, তিনি ব্যক্তিগত আয়কর দিয়েছেন মাত্র ৩৫ লাখ টাকা। এতেই বিষয়টি ধরা পড়ে যে তিনি বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, হলমার্ক গ্রুপের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে অনিয়ম রয়েছে। গ্রুপটি দাবি করেছে, তাদের ৭০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। অথচ এনবিআরের কাছে হলমার্ক গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন রয়েছে। তবে এগুলোর একটিরও আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হয়নি। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও তারা অভিযুক্ত হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তাঁর স্ত্রীর নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে কত টাকা এফডিআর হিসাবে রয়েছে, সে বিষয়ে আজ বিভিন্ন ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের বড় কেস স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করা হলে ভবিষ্যতে দেশে দুর্নীতির পরিমাণ কমে আসবে। একই সঙ্গে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবান মানুষের নানা অপকর্মের তদন্ত মাঝপথে থেমে যায়। এ ক্ষেত্রে যেন তা না হয়, সে বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে।
No comments