জাহাজভাঙা কারখানার জন্য সবুজ বেষ্টনী উজাড়! by প্রণব বল
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ির ঘোড়ামারায় উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনীর অবশিষ্ট গাছও জাহাজভাঙা কারখানার (ইয়ার্ড) মালিকেরা কেটে ফেলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দুই মাস ধরে এক-দুটি করে গাছ কাটা হচ্ছিল।
গত শনিবার রাতে একসঙ্গে কাটা হয় আরও ৩০-৩৫টি কেওড়াগাছ। বর্তমানে ওই স্থানে মাত্র ১০টি কেওড়াগাছ অবশিষ্ট আছে।
প্রায় ১০ একর উপকূলীয় ভূমির ওপর গাছগুলো বেড়ে ওঠেছিল। এখানে প্রস্তাবিত পাঁচটি জাহাজভাঙার কারখানা করার কথা রয়েছে। এগুলোর মালিক হচ্ছেন, স্থানীয় সাংসদ এ বি এম আবুল কাশেমের ছেলে এস এম আল মামুন, আওয়ামী লীগের নেতা আজম নাছির, মো. রুমি, মো. বাবলু এবং চট্টগ্রামের তাহের ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদারেরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে সোনাইছড়ি উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরে বন বিভাগ ১২৫ একর বন সৃজন করে। এরপর জাহাজভাঙা কারখানা নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে পর্যায়ক্রমে এখানকার প্রায় ১৮ হাজার গাছ কাটা হয়। এসব ঘটনায় বন বিভাগ কয়েকটি মামলা করে। পরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সোনাইছড়ির বন ধ্বংসের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেখানে নতুন করে বনায়ন করার নির্দেশ দেন। এরপর মাত্র শ খানেক গাছ অবশিষ্ট ছিল।
এ প্রসঙ্গে বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উজাড় হওয়া বন নতুন করে সৃজন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পাশাপাশি বনাঞ্চলের জায়গায় কোনো শিপইয়ার্ড না দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিলও হয়নি।’
কিন্তু অবিশষ্ট সেই শ খানেক গাছ গত দুই মাস ধরে রাতের আঁধারে পর্যায়ক্রমে কেটে নেওয়া হয়। শনিবার রাতে একসঙ্গে ৩০-৩৫টি গাছ কেটে উপকূলে ফেলে রাখা হয়। পরে কাটা গাছগুলো বন বিভাগ নিয়ে যায়। গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাটা গাছের মূলসহ কাণ্ডের কিছু অংশ মাটির ওপর রয়ে গেছে। কিছু কিছু মূল মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধের ওপর ‘এমএসএস শিপ রিসাইক্লিং’ ও ‘নওশিন স্টিল’ নামে দুটি সাইনবোর্ড ও এক কক্ষবিশিষ্ট দুটি ঘর করে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন, মান্নান ও মোজাহের নামের দুই যুবক এই গাছ কাটার তদারকি করেন। বাঁধের ওপর দেখা হয় মান্নানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাকে এখানে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন মালিকেরা। এখানে রুমি সাহেব, এমপির ছেলে মামুন সাহেব, আজম নাছির, তাহের ব্রাদার্স ও বাবলু সাহেবের প্রস্তাবিত ইয়ার্ডের জায়গা রয়েছে। আদালতের ঝামেলার কারণে এটা করা যাচ্ছে না। গাছগুলো কে বা কারা কেটে ফেলেছে।’
গাছ কাটার কথা অস্বীকার করে সাংসদের ছেলে এস এম আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কিছু জায়গা ওখানে ছিল। কিন্তু আদালত যখন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, তখন আমি ওখানে ইয়ার্ড করার চিন্তা বাদ দিয়েছি। গাছগুলো কে কেটেছে আমি জানি না।’ সোনাইছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা মো. হাছান বলেন, ‘কাটা গাছগুলো আমি নিয়ে এসেছি। দুই মাস আগেও গাছ কাটার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।’ গাছ কাটার ঘটনায় বিট কর্মকর্তা বাদী হয়ে সোমবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেছেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই এলাকায় জাহাজভাঙা ইয়ার্ড নির্মাণের ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। আমার জানামতে, ওই জমি ইজারা দেওয়া হয়নি। গাছ কাটার ঘটনা আমি শুনেছি।’
No comments