স্মরণ-শাহ আবদুল করিম by শামস শামীম
মরমি সাধক লালন-হাছনের বিদায় দেখতে পারেনি মানুষ। তথ্যপ্রযুক্তির অনগ্রসরতার কারণে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বিদায়ও দেখতে পারেনি তৃণমূল মানুষ। কিন্তু তাঁদেরই উত্তরসূরি সাধকপুরুষ বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের বিদায় দেখে অশ্রুসিক্ত হয়েছিল দেশ-বিদেশের অগুনতি ভক্ত-শিষ্য।
লোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বৈষয়িকতাকে পায়ে দলে তিনি আমৃত্যু তাঁর ধ্যানের আকাশ হাওরভাটির জনপদ উজানধলে নিয়েছিলেন আশ্রয়, সেই গ্রামের মাটির বিছানায় প্রিয় সহধর্মিণী সরলার পাশেই ভক্ত-শিষ্যরা শুইয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে। বিদায় অনুষ্ঠানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ হাজির হয়েছিল। যারা আসতে পারেনি, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে মিডিয়ার কল্যাণে তারা ঘরে বসেই তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করে। তার বিদায়যাত্রায় দেখেছি দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল উজানধলের বাড়িতে। বিলম্বিত বর্ষার হাওর ও উজান-ভাটি পাড়ি দিয়ে ঝিলমিল ঝিলমিল নাও নিয়ে হাজির হয়েছিল তারা। অসংখ্য আশিকজন এসেছিলেন, ইমানের বৈঠাওয়ালার বিদায় বেলায়। লাঠিতে ভর দিয়ে এসেছিলেন অশীতিপর হাজারো বৃদ্ধ।
তাঁর বিদায়যাত্রায় বিভিন্ন ধর্ম, শ্রেণী, বর্ণ ও বয়সী নারী-শিশু-বৃদ্ধকে অশ্রুসিক্ত দেখে নিজেও হয়েছিলাম অশ্রুসিক্ত। তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল আপনজন হারানোর চেয়ে বেশি। দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্ত-শিষ্য তাঁকে বাউলসম্রাট হিসেবে জানলেও এলাকার প্রবীণ ভক্ত-শিষ্যরা 'পীরসাহেব' হিসেবে জানতেন। এলাকার নিম্নবর্গের অধিকারহারা মানুষ তাঁকে জানত প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে। যৌবনের শুরুতেই তিনি মহাজন-ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগরণের গান শুনিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে তিনি জাগরণের গান গেয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশের সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে প্রেরণা দিয়েছে তাঁর প্রতিবাদী গীত। এলাকার লোকজন এসব কথা মনে করে বিদায়যাত্রায় কান্নাভেজা কণ্ঠে খুলে দিয়েছিলেন স্মৃতির ঝাঁপি।
দেখেছি আগত ভক্ত-শিষ্যদের মধ্যে কবর খোঁড়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা ছিল। শেষমেশ ধল (আমিরপুর) গ্রামের শফি উদ্দিন, বাউলসম্রাটের ভগি্নপুত্র দিলোয়ার মিয়া, উকারগাঁও গ্রামের মাহমুদ আলী ও দাউদপুর গ্রামের কদ্দুছ আলী কবর খোঁড়েন ভক্ত-শিষ্যদের সিদ্ধান্তেই। তাঁরা কবর খুঁড়লেও অন্যরা তাঁদের সাহায্য করেছিল। কবর খোদক শফি উদ্দিন বলেছিলেন, 'বাউলসম্রাটের কবর তৈরির জন্য মাটিতে যতটা কোপ দিয়েছি, মনে হয়েছে নিজের বুকে ততটা কোপ বসিয়েছি।'
১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে সিলেটের একটি ক্লিনিকে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম দেহত্যাগ করেন। পরদিন উজানধলের বাড়িতে স্ত্রী সরলার পাশে তিনি সমাহিত হন। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দিরাই উপজেলার উজানধলে জন্মগ্রহণ করেন।
শামস শামীম
তাঁর বিদায়যাত্রায় বিভিন্ন ধর্ম, শ্রেণী, বর্ণ ও বয়সী নারী-শিশু-বৃদ্ধকে অশ্রুসিক্ত দেখে নিজেও হয়েছিলাম অশ্রুসিক্ত। তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল আপনজন হারানোর চেয়ে বেশি। দেশ-বিদেশের লাখো-কোটি ভক্ত-শিষ্য তাঁকে বাউলসম্রাট হিসেবে জানলেও এলাকার প্রবীণ ভক্ত-শিষ্যরা 'পীরসাহেব' হিসেবে জানতেন। এলাকার নিম্নবর্গের অধিকারহারা মানুষ তাঁকে জানত প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে। যৌবনের শুরুতেই তিনি মহাজন-ফড়িয়াদের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগরণের গান শুনিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে তিনি জাগরণের গান গেয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশের সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে প্রেরণা দিয়েছে তাঁর প্রতিবাদী গীত। এলাকার লোকজন এসব কথা মনে করে বিদায়যাত্রায় কান্নাভেজা কণ্ঠে খুলে দিয়েছিলেন স্মৃতির ঝাঁপি।
দেখেছি আগত ভক্ত-শিষ্যদের মধ্যে কবর খোঁড়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতা ছিল। শেষমেশ ধল (আমিরপুর) গ্রামের শফি উদ্দিন, বাউলসম্রাটের ভগি্নপুত্র দিলোয়ার মিয়া, উকারগাঁও গ্রামের মাহমুদ আলী ও দাউদপুর গ্রামের কদ্দুছ আলী কবর খোঁড়েন ভক্ত-শিষ্যদের সিদ্ধান্তেই। তাঁরা কবর খুঁড়লেও অন্যরা তাঁদের সাহায্য করেছিল। কবর খোদক শফি উদ্দিন বলেছিলেন, 'বাউলসম্রাটের কবর তৈরির জন্য মাটিতে যতটা কোপ দিয়েছি, মনে হয়েছে নিজের বুকে ততটা কোপ বসিয়েছি।'
১২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে সিলেটের একটি ক্লিনিকে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম দেহত্যাগ করেন। পরদিন উজানধলের বাড়িতে স্ত্রী সরলার পাশে তিনি সমাহিত হন। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি দিরাই উপজেলার উজানধলে জন্মগ্রহণ করেন।
শামস শামীম
No comments