দেহ ব্যবসার ফাঁদ দুবাইয়ে বাংলাদেশীসহ ১৩ যুবতী উদ্ধার
এক খদ্দেরের সহানুভূতিতে বাংলাদেশী যুবতীসহ কয়েকটি দেশের ১৩ যুবতী রক্ষা পেয়েছেন। তাদেরকে দুবাইয়ের একটি ফ্লাটে আটকে রেখে দেহব্যবসায় বাধ্য করানো হচ্ছিল। অকস্মাৎ সেখানে খদ্দের হিসেবে উপস্থিত হন এক ভারতীয়।
বাংলাদেশী যুবতী (১৮)’র খদ্দের ছিলেন তিনি। ওই বাংলাদেশী যুবতীকে দেখে তার মন নরম হয়ে যায়। তিনি তাকে উদ্ধারের পরিকল্পনা আঁটেন। তাই তিনি ওই বাংলাদেশী যুবতীর ফোন নম্বর নিয়ে যান। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। এক পর্যায়ে তার আদ্যোপান্ত শুনে তিনি পুলিশে খবর দেন। পরের দিনই তিনি ছদ্মবেশধারী এক নিরাপত্তারক্ষীকে খদ্দের সাজিয়ে নিয়ে যান ওই যুবতীর কাছে।
সেখানে তারা কিছুটা সময় কাটান। ততক্ষণে পুলিশ ওই এপার্টমেন্ট ঘেরাও করে ফেলে। তারা যুবতীদের আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করানোর দায়ে রাজা ও সোহেল নামে দু’জনকে আটক করে। আর আটকে রাখা ১৩ যুবতীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপত্তা হেফাজতে। গতকাল অনলাইন গালফ নিউজ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশী ওই যুবতী দেশে একটি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করতেন। সেই চাকরির টাকায় সংসার চালাতেন। তার সংসারে ছিল দুই ভাইবোন ও মা। তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল তার ওপর। ওই যুবতীকে রহিম নামে এক ব্যক্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যদি তিনি আরবি জানেন তাহলে তাকে সেখানে ভাল বেতনের চাকরি দেয়া হবে। দেশে ওই যুবতী মাসে মাত্র ২৫০০ টাকা আয় করতেন। ফলে এমন প্রস্তাব পেয়ে তিনি রাজি হয়ে যান। তাকে বলা হয়, তাকে প্রথমেই ৭ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে, যদি তিনি আরবিতে দক্ষতা দেখাতে পারেন। তার এ প্রস্তাব পেয়ে ওই যুবতী রাজি হয়ে যান। এ সময় রহিম তার কাছে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও টিকিট বাবদ তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। অনেক কষ্ট করে ওই যুবতী সেই টাকা যোগাড় করে দেন তার হাতে। ফলে তার স্বপ্নের দুয়ার খুলে যায়। তিনি দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরই সেই স্বপ্ন পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। সেখানে দুবাই ক্রিমিনাল কোর্টের সামনে তিনি সোহেল নামে একজনকে দেখতে পান। এই সোহেল তাকে বিমানবন্দর থেকে নিতে এসেছেন। তাকে নিয়ে দিয়েরা এলাকায় একটি ফাঁকা ফ্লাটে ওঠে সোহেল। ওই যুবতী যখন তার চাকরি ক্ষেত্র কোথায় জানতে চান তাকে বলা হয়- আপনিতো সবেমাত্র এলেন। তাকে সপ্তাহান্তে কাজে যোগ দেয়ানো হবে। ততদিনে তাকে ওই এপার্টমেন্টেই অবস্থান করতে হবে। এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই যুবতী। তিনি দেশে রেখে যাওয়া মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। তাকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। ফোনে কথা শেষ হতেই তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়া হয়। এ সময় সোহেল তাকে জানিয়ে দেয়- তাকে দেহব্যবসা চালাতে হবে। এতে ওই যুবতী অস্বীকৃতি জানালে তাকে সোহেল ধর্ষণ করে ও তার কোমরের বেল্ট দিয়ে প্রহার করে। বাংলাদেশী ওই যুবতী অভিযোগ করেন, সোহেল তাকে বেল্ট দিয়ে প্রহার করতে করতে বেহুঁশ করে ফেলে। তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাওয়ার পর সোহেল তাকে ধর্ষণ করে। যখন তার চেতনা ফেরে তিনি দেখতে পান তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। এ সময় সামিরা নামে আরেক যুবতী তাকে খাবার এনে দেন এবং সোহেলের কথা মেনে নিতে বলেন। এরপর বাংলাদেশী ওই যুবতীকে আরেকটি এপার্টমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সশস্ত্র প্রহরায় রাখা হয়েছিল বাংলাদেশী, ভারতীয়, ইথিওপিয়ান ও ইন্দোনেশিয়ার আরও ১২ জন যুবতীকে। তাদের সবাইকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করানো হয়। ভারতীয় ওই খদ্দেরের সহানুভূতিতে যখন তারা মুক্তি পান তখন বাকিদের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
No comments