ঝুঁকির মুখে শ্রমবাজার-প্রবাসে বাজার হারানো যাবে না
জনবহুল ও স্বল্পোন্নত দেশের কাতারভুক্ত বাংলাদেশের ৭০-৮০ লাখ লোক 'জনশক্তি' হিসেবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে কাজ করছে। তাদের শ্রমে-ঘামে অর্জিত অর্থে সমৃদ্ধ থাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলেই বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছে ১২৮৪ কোটি ডলারের বেশি, যা ওই বছরের রফতানি আয়ের অর্ধেকের বেশি।
এই 'স্বর্ণখনিতুল্য' বাজার সংকটে পড়ূক_ এটা কাম্য হতে পারে না। এমনটি ঘটলে তার পরিণতিতে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে এবং রিজার্ভে টান পড়বে। বিশ্ব অর্থনীতির টানাপড়েন ও সংকট এবং যেসব দেশে বাংলাদেশিরা বেশি সংখ্যায় কাজ করছে, সেখানে বিশেষ কোনো সমস্যা সৃষ্টি কিংবা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটলে বাংলাদেশের তেমন কিছুই করার থাকে না। কিন্তু আমাদের সরকার, জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সি এবং প্রবাসে কর্মরতদের কারণে এ বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়লে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না। গত বুধবার থেকে সমকালে 'ঝুঁকির মুখে শ্রমবাজার' শিরোনামে যে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে কিন্তু দেখা যায়, 'নিজের বসা গাছের ডাল কেটে ফেলার' মতো অবিমৃষ্যকারী আচরণ সংশ্লিষ্ট কোনো না কোনো পক্ষ করে চলেছে। 'আমিরাতে শ্রমিক নিয়োগে তিন কারণে কড়াকড়ি', 'হাতছাড়া হচ্ছে লেবানন ও জর্ডানের সম্ভাবনা', 'বাহরাইনে সংকট :ওমানে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত জনবল' এবং 'সৌদি শ্রমবাজারে অশনিসংকেত, কাতারেও কোটা প্রায় শেষ' প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়_ স্থানীয় আইন না মানা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়া, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়াসহ বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের সমস্যা হচ্ছে এবং কখনও কখনও তা প্রকট রূপ নিচ্ছে। জনশক্তি রফতানিকারক কোনো কোনো এজেন্সি কর্মপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ নিচ্ছে এবং যে বেতন ও অন্যান্য শর্তে তাদের চাকরির জন্য পাঠানো হচ্ছে, তা থেকে নির্দিষ্ট সময়ে এ অর্থ উসুল করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। নিয়ম-কানুন না মেনে কর্মস্থল পরিবর্তন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলেও 'অবৈধ হওয়ার' ঝুঁকি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে থেকে যাওয়ার প্রবণতার এটা অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হয়। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার নেতৃবৃন্দ এ সমস্যা এবং তার পরিণতি ভালো করেই জানেন। 'মালয়েশিয়ায় মাইগ্রেশন লেবার কস্ট' সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের পেছনে এটাই ছিল প্রধান কারণ। মধ্যস্বত্বভোগী ও নানাধর্মী অসাধুতার কারণে এ ব্যয় আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত পড়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটেই ব্যয় কমিয়ে আনার তাগিদ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ উভয় সরকারের তরফ থেকে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা প্রকট। জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিগুলো যাতে বিদেশে কর্মী প্রেরণের ব্যয় সীমিত রাখে, সেজন্য অবশ্যই সরকারকে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য যে অশনিসংকেত দৃশ্যমান, তার সমাধানে সরকারকে আরও পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে। বিভিন্ন দেশের বাস্তব চিত্র পর্যালোচনা করে দ্রুত করণীয় নির্ধারণ করা চাই। এটা মনে রাখতেই হবে যে, আমরা কোনোভাবেই বাজার হারাতে পারব না। এমনকি তা সংকুুচিত হয়ে পড়াও সার্বিক অর্থনীতির জন্য গুরুতর হুমকিস্বরূপ। আমাদের মনোযোগী হতে হবে বাজার সম্প্রসারণের প্রতি। বিপুল উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি, বেকার সমস্যা এবং প্রবাসীদের প্রেরিত আয়ের ওপর বিপুল নির্ভরতা অন্য কোনো বিকল্প উপস্থিত করে না।
No comments