ব্যাংকার হতে চাই by ফয়সাল হাসান

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য এমবিএ শেষ করেছেন মনোয়ারুল ইসলাম। তাঁর পড়ার প্রধান বিষয় ছিল ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং। লক্ষ্য ব্যাংকার হওয়া। প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রতিযোগিতামূলক ব্যাংকে ভর্তি-পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার। তাঁর কাছে জানতে চাই, কেন অন্য সব পেশা ছেড়ে ব্যাংকার হতে চান?


উত্তর মেলে, ‘আসলে ব্যাংকে চাকরি করার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। ব্যাংকে চাকরি করার জন্য যে যোগ্যতা দরকার, তা আমার আছে বলে মনে করি। নিশ্চিত জীবন, ভালো বেতনের নিশ্চয়তা—এ সবকিছুই আমাকে ব্যাংকার হওয়ার জন্য উৎসাহ জোগায়।’ মনোয়ারুল ইসলামের মতো একই কথা জানালেন সদ্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের বেনাপোল শাখায় যোগ দেওয়া ইসমত রেজা। তাঁর মতে, ‘ব্যাংকিং পেশায় ভালো করলে অনেক দূর এগোনো সম্ভব। আর ভালো বেতনের সঙ্গে আরও অন্য সুবিধা তো আছেই।’
হ্যাঁ পাঠক, দেশের তরুণ প্রজন্ম, যাঁরা এখন চাকরির বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অথবা সবেমাত্র চাকরিতে ঢুকেছেন, তাঁদের কাছে ব্যাংকের চাকরি এখন অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আকর্ষণীয় বেতন, সামাজিক সম্মান, ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সব সুযোগ— এই সবকিছু যে গুটিকয় পেশায় মেলে, ব্যাংকিং তার মধ্যে একটি।
সদ্য অনুমোদন পাওয়া নয়টি ব্যাংকসহ বাংলাদেশে এখন মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৫৬টি। তার মধ্যে চারটি ব্যাংক সরকারি। বাকি ৫২টি ব্যাংকের মধ্যে বেসরকারি ৩৯টি, বিশেষায়িত চারটি ও বিদেশি নয়টি। প্রতিবছরেই বাজার চাহিদার কারণে ব্যাংকগুলো তাদের শাখা বিস্তৃত করে যাচ্ছে। দরকার হচ্ছে দক্ষ জনবলের। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সংখ্যা ও শাখা, কার্যক্রম বৃদ্ধি, উন্নত গ্রাহকসেবা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করছে বলে এখানে ক্যারিয়ার গড়ার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছরই ব্যাংকগুলোতে লোক নেওয়া হচ্ছে প্রচুরসংখ্যক। আর এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তরুণদের। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক এম এ হাশেম বলেন, ‘দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দরকার অনেক বেশি দক্ষ জনবলের। ব্যাংকগুলোতে তরুণেরা যোগ দিতে আগ্রহী। কারণ, সুন্দর কাজ করার পরিবেশ, সুন্দর ভবিষ্যৎ ও মেধার মূল্যায়ন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন মেধাবী ব্যাংকার অতি অল্প সময়ে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। আমাদের দেশে অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে ব্যাংকিং পেশায় চাকরির নিরাপত্তা অনেক বেশি। সাধারণত ব্যয় সংকোচনের জন্য ওই ধরনের কর্মী ছাঁটাই দেখা যায় না ব্যাংকিং সেক্টরে।’ শুধু যে চাকরির নিরাপত্তা তাই-ই নয়, এ ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য যত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা তাদের এ পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত করছে। এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা আদিত্য নারায়ণ সিংদেও জানালেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তরুণদের অগ্রাধিকার দেয় বেশি। কারণ, তাঁরা কাজ শিখতে পারেন অল্প সময়েই। আর তরুণদের কাছ থেকেই মূলত আসে ব্যতিক্রমী সব ধারণা। তাই আগামী দিনগুলোতেও ব্যাংকে তরুণদের চাহিদা বাড়তেই থাকবে বলে মনে করি। আমরা নিয়োগের সময় একাডেমিক ফলাফলের বাইরে শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কর্যক্রমের দিকেও গুরুত্ব দিই। কারণ, একটা মানুষের সুষ্ঠু বিকাশে এটার দরকার রয়েছে।’

এ পেশায় আসতে চাইলে
নিয়োগের আগে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় পত্রিকায়। সাধারণত দ্বিতীয় শ্রেণী থাকলেই ব্যাংকে চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। তবে কিছু কিছু ব্যাংক প্রথম শ্রেণী অগ্রাধিকার দেয়। সব বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এ পেশায় আবেদন করতে পারলেও সাধারণত এমবিএ, এমবিএম সম্পন্ন প্রার্থীরাই এ ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। সাধারণত অধিকাংশ ব্যাংকেই ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপ পেরোনোর পর প্রার্থীকে বসতে হবে লিখিত পরীক্ষায়। নৈর্ব্যত্তিক ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবার মুখোমুখি হতে হবে চূড়ান্ত সাক্ষাৎকারের।

যেভাবে প্রস্তুতি
এখানে পরীক্ষা হয়ে থাকে সাধারণত ইংরেজিতে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের জব কাউন্সেলর শাহনাজ ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের চাকরির প্রস্তুতির বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ব্যাংকভেদে প্রশ্নের ধরন কিছুটা আলাদা হলেও মূল কাঠামো একই থাকে। সাধারণত প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার, অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, পাজলস এবং ডেটা সাফিশিয়েন্সি অংশ থেকে। আর লিখিত বা বর্ণনামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে গণিত, ইংরেজি ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি অংশ থেকে। তাই ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে, টিভির খবর দেখতে হবে, সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। ইংরেজিতে দক্ষ হওয়াটা বেশ জরুরি। জি-ম্যাটের প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। আর সেই সঙ্গে সময় নিয়ে ব্যাংকে নিয়োগের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে অবশ্যই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা হক বিবিএ শেষ সেমিস্টারে রয়েছেন। ফারজানা বলেন, ‘ব্যাংকার হওয়া আমার স্বপ্ন। স্বপ্ন সফল করার প্রথম ধাপ অনার্স শেষের দিকে, তাই দ্বিতীয় ধাপ মানে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছি।’
তো পাঠক, বুঝতেই পারছেন, ব্যাংকিং পেশায় রয়েছে অপার সম্ভাবনা। একজন ভালো ব্যাংকার একই সঙ্গে কাজের সুন্দর পরিবেশ, সামাজিক মর্যাদা, কর্মক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ও নিশ্চিত জীবন পেয়ে থাকেন। তাই চোখ বন্ধ করে এই চমৎকার জীবন বেছে নিতে পারেন আপনিও। একটু কষ্ট সহ্য করে, কঠোর অধ্যবসায় দিয়ে ছোট্ট একটা লাফ দিন ব্যাংকের দিকে, এরপরে আর ভাবতে হবে না কিছু, ব্যাংকই আপনাকে নিয়ে যাবে সাফল্যের শিখরে।
ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা: এইচএসবিসি ব্যাংক

No comments

Powered by Blogger.