আকিজ বিড়ি কারখানায় গুলি, দুই শ্রমিক নিহত

কুষ্টিয়ায় আকিজ বিড়ি কারখানায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তাকর্মী ও মালিকপক্ষের সন্ত্রাসীরা। এতে দুজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১০ জন।
গতকাল রবিবার দুপুরে দৌলতপুর উপজেলার হোসনাবাদে অবস্থিত বিড়ি কারখানাটিতে এ ঘটনা ঘটে।


নিহত দুই শ্রমিক হলেন রাকিবুল ইসলাম (২৭) ও মনিরুল ইসলাম মিন্টু (৩০)। রাকিবুল দৌলতপুর উপজেলার বৈরাগীরচর রিফুজীপাড়া গ্রামের ভাদু শেখের ছেলে এবং মনিরুল বৈরাগীরচর ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের কচিমুদ্দিনের ছেলে।
গুলিবিদ্ধ শ্রমিকদের দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপক ও ১৩ নিরাপত্তা কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁরা কারখানা ত্যাগ করার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মীরা শ্রমিকদের আটকানোর চেষ্টা করেন। শ্রমিকরা বাধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মীরা প্রধান ফটক আটকে দেন। এরপর নিরাপত্তাকর্মী ও মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের ওপর হামলা চালান। জবাবে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় কারখানার কার্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে শ্রমিকদের ওপর গুলি করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, গত মে মাসে কারখানার প্রায় চার হাজার শ্রমিক বেতন বাড়ানোর জন্য মালিকপক্ষের কাছে দাবি জানান। মালিকপক্ষ থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী কয়েকজন শ্রমিক প্রতিনিধি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কারখানার ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন ব্যবস্থাপক তাঁদের গালাগাল করে তাড়িয়ে দেন।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কারখানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
শ্রমিকরা দাবি করেন, ওই সময় ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমের নির্দেশে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান রাকিবুল ও মনিরুল ইসলাম।
এ ছাড়া নজরুল (৩৬), মনি (২৬), পরেশ (৩৪), কালাচাঁদ (৩০), সাহাজুল (৩২), নিহারুল (৩৩), মোহন (২৮), জালাল (৩০), মতি (২৮) ও মহসীন (৩৫) গুলিবিদ্ধ হন।
বিড়ি কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, শ্রমিকদের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানার ব্যবস্থাপক ফাঁকা গুলির নির্দেশ দিলে নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি করেন।
কারখানার শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে মালিকপক্ষের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরাও ছিল।
তবে নিরাপত্তাকর্মী না সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন সেটা কেউই নিশ্চিত করতে পারেননি।
কারখানার ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'আমি কাউকে গুলির নির্দেশ দিইনি।'
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজউদ্দিন আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়েরের খবর পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার মফিজউদ্দিন আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, 'আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের উত্তেজনা নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'
পুলিশ জানায়, রাতে কারখানা এলাকায় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র‌্যাব-১২-এর কর্মকর্তা, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে বৈঠক চলছিল।
দৌলতপুর থানার ওসি লুৎফর রহমান জানান, আটক কারখানার ব্যবস্থাপক ও ১৩ আনসার সদস্যকে থানা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। রাত ৯টা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.