ক্রান্তিলগ্নে বারবার আবির্ভূত by আবদুল্লাহ আল নোমান

ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সার্বক্ষণিকভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা। তখন এ ধরনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সশস্ত্র বিল্পবের বিকল্প আছে বলে মনে করিনি। তাই জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলাম। এ আন্দোলন করতে গিয়ে দেখেছি আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা।


দেখেছি জিয়াউর রহমানের সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তিনি বারবার আবির্ভূত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার ঘোষণা জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিল।
১৯৭১ সালে বাম প্রগতিশীলরা চেয়েছিল যুদ্ধ। অন্যদিকে ওই সময় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তারা চেয়েছিল মীমাংসা। আওয়ামী লীগের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না থাকায় তাদের পক্ষ থেকে কেউ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে পারেননি। জনগণ নেতৃত্বের কথা চিন্তা না করে যার যা আছে তা নিয়েই সংগ্রামে নেমে পড়ে। ঠিক ওই সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণার যে কাজটি দরকার, তা করেছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান। একজন সাধারণ মেজর হয়ে তিনি বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধের ঘোষণা না দিলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেধে যেত। তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি দেশ রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। তার ঘোষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল। তারপর রণাঙ্গনে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার ব্যক্তিগত কোনো লোভ-লালসা ছিল না। তাই যুদ্ধের পর আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান। একজন সাধারণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তারপর তাকে দেখা গেল ১৯৭৫ সালে। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্র-পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তারপর আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। '৭১ সালের জিয়াউর রহমানকে আমরা স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে চিনেছি। কিন্তু '৭৫ সালে আবার আবির্ভূত না হলে জাতি একজন রাষ্ট্রনায়ককে দেখত না। ওই সময় রাজনীতির পটপরিবর্তনে দিশেহারা জাতিকে আবারও পথ দেখিয়েছেন। এরপর রাজনৈতিক দল গঠন করে সমাজ ব্যবস্থায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা দেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে নানা কর্মসূচি হাতে নেন। খাল খনন শুরু করে দেশে উন্নয়নের বিপ্লব সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদতত্ত্ব দিয়ে জনগণকে রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ করেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে_ দেশ গড়ার ভূমিকায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেছিলেন জিয়া। তার উদ্দেশ্য ছিল গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো।
অল্প সময়ে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন, একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের আবির্ভাব অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। তাই দেশি-বিদেশি চক্রান্ত তাকে হত্যা করেছিল। তার মৃত্যু আমাদের শোকাহত করেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। তাই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জিয়ার আদর্শ নিয়ে আজও বেঁচে আছে।
কষ্ট পাই, যখন বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক মানে না। তারা জিয়ার অবদানকে খাটো করতে চায়। আদালতকে ব্যবহার করে অনেক কিছুই তারা করেছে। কিন্তু ইতিহাস মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়া যায় না। তারা জিয়াকে খাটো করতে গিয়ে নিজেরাই খাটো হচ্ছে_ তা কি বোঝে না? জিয়া তো সাধারণ কেউ নন। তার অবদান দেশকে যা দিয়েছে, তা কি ভোলা সম্ভব? তাই জাতি তাকে মনে রেখেছে। তার আদর্শ নিয়ে বিএনপিও বেঁচে আছে। দল আরও শক্তিশালী হয়েছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিয়াকে বিতর্কিত ও খাটো করতে এমন কোনো কাজ নেই যা করেনি। জীবিত জিয়ার চেয়ে মৃত জিয়াকে নিয়েই যেন তাদের যত ভয়। তাই ষড়যন্ত্র থেমে নেই। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগের চেষ্টার অন্ত নেই। সে জন্য ক্ষমতায় আসার পর আদালতকে ব্যবহার এবং তার ম্যুরাল ভাঙাসহ সবই করেছে। কিন্তু জিয়াকে জনগণের হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবেও না। বাংলাদেশ যত দিন বাঁচবে, জিয়াও বেঁচে থাকবেন। তার নীতি, আদর্শ ও দর্শন নিয়ে জনগণ দেশ রক্ষার সব আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

আবদুল্লাহ আল নোমান : ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি
 

No comments

Powered by Blogger.