ঐতিহ্য-পুরাকীর্তি ধ্বংসের প্রক্রিয়া রুখতে হবে by আবু সাঈদ খান
ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনে, নতুন প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা কতিপয় স্থানে আবহমান বাংলার গ্রামের মডেল রক্ষার উদ্যোগ নিতে পারি। সেই সঙ্গে গড়ে তোলা প্রয়োজন গ্রামীণ জাদুঘর, যেখানে কৃষক, জেলে, কুমার, কামার, তাঁতিসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র শোভা পাবে।
আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের আবিষ্কার এবং সংরক্ষণে আজ ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাপক লোকবল লাগবে
বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী জাতিগুলোর মতো আমরাও আজ গর্বভরে বলতে পারি, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। প্রত্নতাত্তি্বক আবিষ্কার ও গবেষণার মধ্য দিয়ে এ ইতিহাস ক্রমেই প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর কালে পাখা মেলছে। মহাস্থানগড় ও উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর আর কোনো সংশয় নেই যে, খ্রিস্টপূর্ব কালে অর্থাৎ যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে আমাদের পূর্বপ্রজন্ম সভ্যতার আলো জ্বেলেছিল এ ভূখণ্ডে। এ আলোকবর্তিকা কখনও কখনও ঔজ্জ্বল্য হারালেও নিভে যায়নি। বরং তা দ্যুতিময় হয়ে উঠেছে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে।
আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসের গৌরবগাথা বাঙ্ময় হয়ে আছে বিভিন্ন পুরাকীর্তি, শিলালিপি, এমনকি লোকগাথায়। বিদেশি পর্যটকদের গ্রন্থেও রয়েছে আমাদের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসের বয়ান বা মূল্যায়ন আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়, আমি ইতিহাসের স্মারক পুরাকীর্তি, শিলালিপিসহ নিদর্শনগুলো উৎখনন ও সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্তি্বক ও ঐতিহাসিক স্থান ও পুরাকীর্তির রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থাপনা-অযত্ন-অবহেলা নিয়ে সংবাদপত্রে বিভিন্ন প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে আকছার। এ প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরব। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শিলাইদহে গিয়েছিলাম। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার, আসবাব, ফাইল ক্যাবিনেট ইত্যাদি দেখে খুব আনন্দিত হলাম। এখনও প্রত্নবস্তুগুলো অক্ষত আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এভাবে থাকলে কত দিন আর এগুলো অক্ষত থাকবে? আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে এগুলো যে রক্ষা করা যাবে না, এ সত্য কি আমরা উপলব্ধি করছি? আশার কথা, কুঠিবাড়ির স্থাপত্যকীর্তি অবিকৃত রয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনকভাবে রঙ বদলে গেছে। সংস্কারের নামে সম্প্রতি লাল-খয়েরি রঙ মুছে অফহোয়াইট রঙ করা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে পীড়া দিয়েছে। বহুকাল ধরে যে কুঠিবাড়ির ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, তা যেন এই কুঠিবাড়ির সামনে দাঁড়ালে সহসা খানখান হয়ে যায়। তবে এ সংবাদ জেনে স্বস্তি জাগল যে, কুঠিবাড়ি আবার তার আদি রঙ লাল-খয়েরিতে শোভিত হবে। সংস্কারের নামে একইভাবে পাহাড়পুরের আদি সৌন্দর্যও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেখানকার টেরাকোটাগুলো সরিয়ে নতুন বানানো টেরাকোটা লাগানো হয়েছে। সংরক্ষণের নামে এই বিকৃতিকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
বহুদিন পর কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়ায় গিয়েও খানিকটা হতাশ হয়েছি। সেখানে বাউল সংস্কৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আখড়ার চরিত্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয় পাকিস্তান আমলেই, একে মাজারের রূপ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় লালনের সমাধি ঘেঁষে এখন সেখানে সংগ্রহশালা, অডিটরিয়াম নির্মিত হয়েছে। এসবের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আখড়ার মূল চরিত্র নষ্ট না করে খানিক দূরে তা নির্মিত হলে সেটি শোভন হতো। সংগ্রহশালায় গিয়ে লালনের প্রতিকৃতির পাশে লালন গবেষক বলে দাবিদার আমলাদের প্রতিকৃতি দেখে হতাশ হয়েছি। ছেউড়িয়ার আখড়ায় বাউলের সংস্কৃতি উপযোগী নৈসর্গিক পরিবেশ আদৌ কখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি-না জানি না। তবে লালনের জীবন ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে আখড়ার মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার দাবি যৌক্তিক।
সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি জমিদার দর্পণ, বিষাদসিল্পুব্দর কালজয়ী লেখক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটায় এসে। এখানে মীর মশাররফ হোসেনের নামে একটি মাধ্যমিক স্কুল আছে, আছে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার। কিন্তু সেখানে কী আছে_ কে জানে? কারণ রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, দেখাশোনার জন্য একজন মাত্র লোক আছে। রাতে পাহারা দিতে হয় তাকে, তাই সবসময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। মীরের ভিটায় দর্শনীয় হচ্ছে, স্কুলের সামনে মশাররফ হোসেনের লাগানো আমগাছের গুঁড়ি, ডালপালা ঝরে গেছে। কাণ্ডটি দাঁড়িয়ে এখন। সেটিও যে শিগগিরই ক্ষয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। আমার প্রশ্ন, এটিকে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা কি উচিত নয়? পাশেই মীরবাড়ি। সেখানে মীর মশাররফ হোসেনের ব্যবহৃত একটি কূপ আছে। প্রধান শিক্ষক বললেন, বাড়িটিতে অতিশয় এক দরিদ্র পরিবার বাস করে। পরিবারটিকে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা হলে এ বাস্তুভিটাটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
কুমারখালীতে কাঙাল হরিনাথের জন্মস্থান। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের হস্তচালিত প্রেস ও তার স্মৃতিবিজড়িত পাণ্ডুলিপিসহ বিভিন্ন সামগ্রী যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে আছেন তার প্রপৌত্র অশোক মজুমদার। তিনি এ সবকিছু সংরক্ষণের জন্য সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, কিন্তু অগ্রগতি সামান্যই। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ পাশে একটি পাঠাগার ও সংগ্রহশালা করেছে, সেটির চাবি সরকারি দফতরেই সংরক্ষিত। তাই সেটিও ঘুরে দেখার সুযোগ নেই। এ হলো পুরাকীর্তি সংরক্ষণের অব্যবস্থাপনা-অযত্ন-অবহেলার সামান্য কিছু বিবরণ।
কেবল অযত্ন-অবহেলা নয়, বেদখল হয়ে গেছে শিলাইদহের ঠাকুরবাড়ির বিরাট এলাকা, সেটি এখনও সরকার উদ্ধার করতে পারেনি। দখলদারির থাবা থেকে মুক্তি পায়নি খোদ রাজধানীর মোগল স্মৃতিবিজড়িত লালবাগ কেল্লাও। স্থানীয় প্রভাবশালীরা হাত বাড়িয়েছে খ্রিস্টপূর্ব কালে গাঙ্গেয় সভ্যতার অন্যতম নগরী মহাস্থানগড়ের ওপর। সেখানে প্রভাবশালী মহল মাজার কমিটির উদ্যোগে অজুখানাসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে, আদালতের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও সেখান থেকে ইটসহ মূল্যবান প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো পাইকারিভাবে চুরি বন্ধ হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশ, ৩২টি পুরাকীর্তির মধ্যে ২৬টিই অরক্ষিত। সেখানে ঢিবি কেটে সমতল করা হচ্ছে। এগুলো অধিগ্রহণ ও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগই রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্র নির্বিকার।
কেবল কি তাই? রাষ্ট্রযন্ত্র পুরাকীর্তি ধ্বংসের কারসাজি থেকে মুক্ত নয়। অভিযোগ আছে, ময়নামতি পুরাকীর্তি ধ্বংস করে সেখান থেকে ইট খুলে নিয়ে সরকারি ভবন নির্মিত হয়। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে যেমন নির্বোধ, তেমনি স্বেচ্ছাচারী। শুনেছি, বগুড়ার এক জেলা প্রশাসক নিজ উদ্যোগে মোগল মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। বাগেরহাটে খানজাহান আলী মাজার ঘেঁষে স্ত্রীর কবর বানিয়েছেন এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এক স্থানীয় সাংসদ খানজাহান আলী মাজারসংলগ্ন পুকুরটিকে আধুনিক টাইলস দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। এভাবেই দেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তি সংস্কারের নামে ধ্বংসলীলা চলছে। সংরক্ষিত এলাকায় অফিস, রেস্ট হাউস, বাসভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার সংরক্ষণ ও উৎখননে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় পুরাকীর্তি ধ্বংস ও বিকৃত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক আবিষ্কার উয়ারী-বটেশ্বর। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে উৎখনন প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে খ্রিস্টপূর্ব এক নগরীর সড়ক, ইমারত ও বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান মিলেছে। দেশীয় প্রত্নতাত্তি্বক ও শিক্ষার্থীদের হাতে এ এক অসাধ্য সাধন। প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. দীলিপ কুমার চক্রবর্তী এটিকে খ্রিস্টপূর্ব গঙ্গোত্রী সভ্যতার অন্যতম নগরী বলে অভিমত দিয়েছেন। এখানে এখন ব্যাপক উৎখনন কার্য পরিচালনা দরকার, সেই সঙ্গে দরকার আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা করাও।
এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, সারাদেশে আরও অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে, যা প্রত্নতত্ত্ব দফতরের হিসাবে নেই। যেগুলো চিহ্নিত আছে সেগুলোরও বেশিরভাগ অরক্ষিত। অরক্ষিত জাদুঘরে রাখা প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনও। সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেল, গত এক বছরে হারিয়ে গেছে জাতীয় জাদুঘরের ১৬টি প্রত্ন নিদর্শন। ৩০ বছরে হারিয়েছে ১৭২টি নিদর্শন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংগ্রহশালায় কী পরিমাণ প্রত্নসম্পদ আছে, তার তালিকা না থাকায় জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যাওয়া নিদর্শনের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদের একটি মাত্র তালিকা ২৫ বছর আগে করা হয়েছিল, সে নথিটিও হারিয়ে গেছে। এরপর আর কোনো নথি করা হয়নি (সমকাল, ২৯ মার্চ ২০১১)। এই চৌর্যবৃত্তির হাত অনেক লম্বা। কারও অজানা নয়, বছর তিনেক আগে প্যারিসের গিমে জাদুঘরে দেশের ১৮৭টি পুরাকীর্তি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের ফলে সে উদ্যোগ পুরোটা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। তবে খোয়া গেছে দুটি বিষ্ণুমূর্তি। ৪২টি নিদর্শন পাঠানো হয়েছিল, আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে সেগুলো ফেরত এসেছে। কিন্তু ফেরত পাওয়া নিদর্শনগুলো আসল না রেপ্লিকা, সে পরীক্ষা হয়নি আজও।
পুরাকীর্তি শুধু প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় হবে তা নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান যেমন বধ্যভূমি, যুদ্ধক্ষেত্র, গণকবর_ এ সবকিছুই আজ ইতিহাসের অংশ। এগুলো সংরক্ষণে কি আমরা যথেষ্ট মনোযোগী? তেভাগা আন্দোলনসহ বিভিন্ন কৃষক আন্দোলন, অগি্নযুগের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, লবণ বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, কৃষকদের ওপর অত্যাচারের স্মারক নীলকুঠি_ এসব কি আমাদের ইতিহাসের অংশ নয়? ঢাকা নগরীর কথাই ধরা যাক। আমরা আজ নগরীতে আর আলাদা করে দেখতে পারি না যে, কোনটি মোগলের স্থাপনা, কোনটি ব্রিটিশের স্থাপনা আর কোনটি আধুনিক স্থাপনা? আমরা সচেতন হলে ভিন্ন ভিন্ন স্থাপত্যরীতির শহর ধরে রাখতে পারতাম; তা হতো ইতিহাসের জাজ্বল্যমান সাক্ষী।
দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। এখন আর হাল-চাষ বা মাছ ধরার সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। আবহমান কালের যে গ্রাম-বাংলা ছিল, তা কি দু'চার দশক পর খুঁজে পাওয়া যাবে? ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনে, নতুন প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা কতিপয় স্থানে আবহমান বাংলার গ্রামের মডেল রক্ষার উদ্যোগ নিতে পারি। সেই সঙ্গে গড়ে তোলা প্রয়োজন গ্রামীণ জাদুঘর, যেখানে কৃষক, জেলে, কুমার, কামার, তাঁতিসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র শোভা পাবে। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের আবিষ্কার এবং সংরক্ষণে আজ ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাপক লোকবল লাগবে। প্রত্নতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, প্রত্নপ্রাণীবিদ, প্রত্নরসায়নবিদ, প্রত্নসংরক্ষণবিদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের দক্ষ লোকবল ছাড়া এ কাজ সম্ভব হবে না।
এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত ও ইতিহাসমনস্ক কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান, যারা প্রত্ন নিদর্শনগুলোকে সন্তানের মমতায় যত্ন করবে। এ ক্ষেত্রে পুরনো আইনও বাধা। তাই প্রত্নতত্ত্ব উৎখনন, গবেষণা ও সংরক্ষণে নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি। সব আয়োজনের সঙ্গে জনসম্পৃক্তি ও জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ, সচেতন জনগণকেই হতে হবে ঐতিহ্যের ধারক। গৃহ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ঐতিহ্য সচেতনতার বীজ বুনতে হবে; এর বিকল্প নেই।
আবু সাঈদ খান : সাংবাদিক
ask_bangla71@yahoo.com
www.abusayeedkhan.com
বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী জাতিগুলোর মতো আমরাও আজ গর্বভরে বলতে পারি, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। প্রত্নতাত্তি্বক আবিষ্কার ও গবেষণার মধ্য দিয়ে এ ইতিহাস ক্রমেই প্রাচীন থেকে প্রাচীনতর কালে পাখা মেলছে। মহাস্থানগড় ও উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর আর কোনো সংশয় নেই যে, খ্রিস্টপূর্ব কালে অর্থাৎ যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে আমাদের পূর্বপ্রজন্ম সভ্যতার আলো জ্বেলেছিল এ ভূখণ্ডে। এ আলোকবর্তিকা কখনও কখনও ঔজ্জ্বল্য হারালেও নিভে যায়নি। বরং তা দ্যুতিময় হয়ে উঠেছে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে।
আমাদের দীর্ঘ ইতিহাসের গৌরবগাথা বাঙ্ময় হয়ে আছে বিভিন্ন পুরাকীর্তি, শিলালিপি, এমনকি লোকগাথায়। বিদেশি পর্যটকদের গ্রন্থেও রয়েছে আমাদের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাসের বয়ান বা মূল্যায়ন আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়, আমি ইতিহাসের স্মারক পুরাকীর্তি, শিলালিপিসহ নিদর্শনগুলো উৎখনন ও সংরক্ষণের বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্তি্বক ও ঐতিহাসিক স্থান ও পুরাকীর্তির রক্ষণাবেক্ষণে অব্যবস্থাপনা-অযত্ন-অবহেলা নিয়ে সংবাদপত্রে বিভিন্ন প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে আকছার। এ প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরব। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শিলাইদহে গিয়েছিলাম। শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার, আসবাব, ফাইল ক্যাবিনেট ইত্যাদি দেখে খুব আনন্দিত হলাম। এখনও প্রত্নবস্তুগুলো অক্ষত আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এভাবে থাকলে কত দিন আর এগুলো অক্ষত থাকবে? আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে এগুলো যে রক্ষা করা যাবে না, এ সত্য কি আমরা উপলব্ধি করছি? আশার কথা, কুঠিবাড়ির স্থাপত্যকীর্তি অবিকৃত রয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনকভাবে রঙ বদলে গেছে। সংস্কারের নামে সম্প্রতি লাল-খয়েরি রঙ মুছে অফহোয়াইট রঙ করা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে পীড়া দিয়েছে। বহুকাল ধরে যে কুঠিবাড়ির ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, তা যেন এই কুঠিবাড়ির সামনে দাঁড়ালে সহসা খানখান হয়ে যায়। তবে এ সংবাদ জেনে স্বস্তি জাগল যে, কুঠিবাড়ি আবার তার আদি রঙ লাল-খয়েরিতে শোভিত হবে। সংস্কারের নামে একইভাবে পাহাড়পুরের আদি সৌন্দর্যও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। সেখানকার টেরাকোটাগুলো সরিয়ে নতুন বানানো টেরাকোটা লাগানো হয়েছে। সংরক্ষণের নামে এই বিকৃতিকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
বহুদিন পর কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়ায় গিয়েও খানিকটা হতাশ হয়েছি। সেখানে বাউল সংস্কৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আখড়ার চরিত্র ধ্বংসের প্রক্রিয়া শুরু হয় পাকিস্তান আমলেই, একে মাজারের রূপ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় লালনের সমাধি ঘেঁষে এখন সেখানে সংগ্রহশালা, অডিটরিয়াম নির্মিত হয়েছে। এসবের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আখড়ার মূল চরিত্র নষ্ট না করে খানিক দূরে তা নির্মিত হলে সেটি শোভন হতো। সংগ্রহশালায় গিয়ে লালনের প্রতিকৃতির পাশে লালন গবেষক বলে দাবিদার আমলাদের প্রতিকৃতি দেখে হতাশ হয়েছি। ছেউড়িয়ার আখড়ায় বাউলের সংস্কৃতি উপযোগী নৈসর্গিক পরিবেশ আদৌ কখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি-না জানি না। তবে লালনের জীবন ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে আখড়ার মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার দাবি যৌক্তিক।
সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছি জমিদার দর্পণ, বিষাদসিল্পুব্দর কালজয়ী লেখক মীর মশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটায় এসে। এখানে মীর মশাররফ হোসেনের নামে একটি মাধ্যমিক স্কুল আছে, আছে একটি স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার। কিন্তু সেখানে কী আছে_ কে জানে? কারণ রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, দেখাশোনার জন্য একজন মাত্র লোক আছে। রাতে পাহারা দিতে হয় তাকে, তাই সবসময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। মীরের ভিটায় দর্শনীয় হচ্ছে, স্কুলের সামনে মশাররফ হোসেনের লাগানো আমগাছের গুঁড়ি, ডালপালা ঝরে গেছে। কাণ্ডটি দাঁড়িয়ে এখন। সেটিও যে শিগগিরই ক্ষয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। আমার প্রশ্ন, এটিকে আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা কি উচিত নয়? পাশেই মীরবাড়ি। সেখানে মীর মশাররফ হোসেনের ব্যবহৃত একটি কূপ আছে। প্রধান শিক্ষক বললেন, বাড়িটিতে অতিশয় এক দরিদ্র পরিবার বাস করে। পরিবারটিকে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করা হলে এ বাস্তুভিটাটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান।
কুমারখালীতে কাঙাল হরিনাথের জন্মস্থান। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের হস্তচালিত প্রেস ও তার স্মৃতিবিজড়িত পাণ্ডুলিপিসহ বিভিন্ন সামগ্রী যক্ষের ধনের মতো আঁকড়ে আছেন তার প্রপৌত্র অশোক মজুমদার। তিনি এ সবকিছু সংরক্ষণের জন্য সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, কিন্তু অগ্রগতি সামান্যই। কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ পাশে একটি পাঠাগার ও সংগ্রহশালা করেছে, সেটির চাবি সরকারি দফতরেই সংরক্ষিত। তাই সেটিও ঘুরে দেখার সুযোগ নেই। এ হলো পুরাকীর্তি সংরক্ষণের অব্যবস্থাপনা-অযত্ন-অবহেলার সামান্য কিছু বিবরণ।
কেবল অযত্ন-অবহেলা নয়, বেদখল হয়ে গেছে শিলাইদহের ঠাকুরবাড়ির বিরাট এলাকা, সেটি এখনও সরকার উদ্ধার করতে পারেনি। দখলদারির থাবা থেকে মুক্তি পায়নি খোদ রাজধানীর মোগল স্মৃতিবিজড়িত লালবাগ কেল্লাও। স্থানীয় প্রভাবশালীরা হাত বাড়িয়েছে খ্রিস্টপূর্ব কালে গাঙ্গেয় সভ্যতার অন্যতম নগরী মহাস্থানগড়ের ওপর। সেখানে প্রভাবশালী মহল মাজার কমিটির উদ্যোগে অজুখানাসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে, আদালতের নির্দেশে নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও সেখান থেকে ইটসহ মূল্যবান প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো পাইকারিভাবে চুরি বন্ধ হয়নি। সংবাদপত্রে প্রকাশ, ৩২টি পুরাকীর্তির মধ্যে ২৬টিই অরক্ষিত। সেখানে ঢিবি কেটে সমতল করা হচ্ছে। এগুলো অধিগ্রহণ ও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগই রাষ্ট্রের নেই। রাষ্ট্র নির্বিকার।
কেবল কি তাই? রাষ্ট্রযন্ত্র পুরাকীর্তি ধ্বংসের কারসাজি থেকে মুক্ত নয়। অভিযোগ আছে, ময়নামতি পুরাকীর্তি ধ্বংস করে সেখান থেকে ইট খুলে নিয়ে সরকারি ভবন নির্মিত হয়। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে যেমন নির্বোধ, তেমনি স্বেচ্ছাচারী। শুনেছি, বগুড়ার এক জেলা প্রশাসক নিজ উদ্যোগে মোগল মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। বাগেরহাটে খানজাহান আলী মাজার ঘেঁষে স্ত্রীর কবর বানিয়েছেন এক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এক স্থানীয় সাংসদ খানজাহান আলী মাজারসংলগ্ন পুকুরটিকে আধুনিক টাইলস দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। এভাবেই দেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তি সংস্কারের নামে ধ্বংসলীলা চলছে। সংরক্ষিত এলাকায় অফিস, রেস্ট হাউস, বাসভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার সংরক্ষণ ও উৎখননে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় পুরাকীর্তি ধ্বংস ও বিকৃত হচ্ছে।
সাম্প্রতিক আবিষ্কার উয়ারী-বটেশ্বর। সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে উৎখনন প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে খ্রিস্টপূর্ব এক নগরীর সড়ক, ইমারত ও বৌদ্ধ মন্দিরের সন্ধান মিলেছে। দেশীয় প্রত্নতাত্তি্বক ও শিক্ষার্থীদের হাতে এ এক অসাধ্য সাধন। প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. দীলিপ কুমার চক্রবর্তী এটিকে খ্রিস্টপূর্ব গঙ্গোত্রী সভ্যতার অন্যতম নগরী বলে অভিমত দিয়েছেন। এখানে এখন ব্যাপক উৎখনন কার্য পরিচালনা দরকার, সেই সঙ্গে দরকার আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শনগুলো বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের ব্যবস্থা করাও।
এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, সারাদেশে আরও অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে, যা প্রত্নতত্ত্ব দফতরের হিসাবে নেই। যেগুলো চিহ্নিত আছে সেগুলোরও বেশিরভাগ অরক্ষিত। অরক্ষিত জাদুঘরে রাখা প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনও। সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেল, গত এক বছরে হারিয়ে গেছে জাতীয় জাদুঘরের ১৬টি প্রত্ন নিদর্শন। ৩০ বছরে হারিয়েছে ১৭২টি নিদর্শন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংগ্রহশালায় কী পরিমাণ প্রত্নসম্পদ আছে, তার তালিকা না থাকায় জাতীয় জাদুঘর থেকে প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যাওয়া নিদর্শনের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া প্রত্নসম্পদের একটি মাত্র তালিকা ২৫ বছর আগে করা হয়েছিল, সে নথিটিও হারিয়ে গেছে। এরপর আর কোনো নথি করা হয়নি (সমকাল, ২৯ মার্চ ২০১১)। এই চৌর্যবৃত্তির হাত অনেক লম্বা। কারও অজানা নয়, বছর তিনেক আগে প্যারিসের গিমে জাদুঘরে দেশের ১৮৭টি পুরাকীর্তি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের ফলে সে উদ্যোগ পুরোটা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। তবে খোয়া গেছে দুটি বিষ্ণুমূর্তি। ৪২টি নিদর্শন পাঠানো হয়েছিল, আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে সেগুলো ফেরত এসেছে। কিন্তু ফেরত পাওয়া নিদর্শনগুলো আসল না রেপ্লিকা, সে পরীক্ষা হয়নি আজও।
পুরাকীর্তি শুধু প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় হবে তা নয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান যেমন বধ্যভূমি, যুদ্ধক্ষেত্র, গণকবর_ এ সবকিছুই আজ ইতিহাসের অংশ। এগুলো সংরক্ষণে কি আমরা যথেষ্ট মনোযোগী? তেভাগা আন্দোলনসহ বিভিন্ন কৃষক আন্দোলন, অগি্নযুগের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, লবণ বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, কৃষকদের ওপর অত্যাচারের স্মারক নীলকুঠি_ এসব কি আমাদের ইতিহাসের অংশ নয়? ঢাকা নগরীর কথাই ধরা যাক। আমরা আজ নগরীতে আর আলাদা করে দেখতে পারি না যে, কোনটি মোগলের স্থাপনা, কোনটি ব্রিটিশের স্থাপনা আর কোনটি আধুনিক স্থাপনা? আমরা সচেতন হলে ভিন্ন ভিন্ন স্থাপত্যরীতির শহর ধরে রাখতে পারতাম; তা হতো ইতিহাসের জাজ্বল্যমান সাক্ষী।
দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম। এখন আর হাল-চাষ বা মাছ ধরার সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। আবহমান কালের যে গ্রাম-বাংলা ছিল, তা কি দু'চার দশক পর খুঁজে পাওয়া যাবে? ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনে, নতুন প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা কতিপয় স্থানে আবহমান বাংলার গ্রামের মডেল রক্ষার উদ্যোগ নিতে পারি। সেই সঙ্গে গড়ে তোলা প্রয়োজন গ্রামীণ জাদুঘর, যেখানে কৃষক, জেলে, কুমার, কামার, তাঁতিসহ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যবহৃত জিনিসপত্র শোভা পাবে। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের আবিষ্কার এবং সংরক্ষণে আজ ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাপক লোকবল লাগবে। প্রত্নতত্ত্ববিদ, ভূতত্ত্ববিদ, প্রত্নপ্রাণীবিদ, প্রত্নরসায়নবিদ, প্রত্নসংরক্ষণবিদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের দক্ষ লোকবল ছাড়া এ কাজ সম্ভব হবে না।
এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত ও ইতিহাসমনস্ক কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান, যারা প্রত্ন নিদর্শনগুলোকে সন্তানের মমতায় যত্ন করবে। এ ক্ষেত্রে পুরনো আইনও বাধা। তাই প্রত্নতত্ত্ব উৎখনন, গবেষণা ও সংরক্ষণে নতুন আইন প্রণয়ন জরুরি। সব আয়োজনের সঙ্গে জনসম্পৃক্তি ও জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ, সচেতন জনগণকেই হতে হবে ঐতিহ্যের ধারক। গৃহ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ঐতিহ্য সচেতনতার বীজ বুনতে হবে; এর বিকল্প নেই।
আবু সাঈদ খান : সাংবাদিক
ask_bangla71@yahoo.com
www.abusayeedkhan.com
No comments