শেষ পর্যন্ত প্রণবেই আস্থা মমতার by সুব্রত আচার্য্য

নানা জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা, অনুরোধ, আপত্তির অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানালেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে জানান মমতা।


তৃণমূল কংগ্রেসের এই অবস্থান বদলের সপক্ষে মমতা ব্যানার্জির যুক্তি, 'রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নয়, সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার কারণে আমাদের সামনে বিকল্প প্রার্থী না থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। আমরা যে মন থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা নয়। আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। উনি (প্রণব) বাংলার মানুষ, সুযোগ পেয়েছি, সেটা কাজে লাগালাম।' তবে মমতা আরো বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত হাসিমুখে দিতে পারলে ভালো লাগত।'
মমতার এই সিদ্ধান্তকে 'স্বাগত' জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী প্রণব মুখার্জি। তিনি বলেন, 'মমতা আমাকে সমর্থন দিয়েছে, আমি তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'
লোকসভা, রাজ্যসভা, বিধানসভা মিলিয়ে ভোটসংখ্যার সামগ্রিক হিসাবে ৪.৫ শতাংশ ভোট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন এই দলটির হাতে। ইউপিএ শরিকদের মধ্যে একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসই প্রণব মুখার্জির বিরোধিতা করে সাবেক রাষ্ট্রপতি পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামকে প্রার্থী করার ঘোষণা করেছিল।
যদিও আবদুল কালাম নিজে এই দৌড়ে শামিল হতে চাননি। ফলে তৃণমূল কংগ্রেসও এই ইস্যুতে পিছিয়ে গিয়ে নতুন করে 'না-ছুঁই জল, না-ধরি মাছ' ধরনের একটি সুবিধাজন অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে দলীয় অবস্থানের কথা জানানো হবে বলে ঘোষণা করে রেখেছিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ৭২ ঘণ্টার কাউন্ট-ডাউন সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়। ফলে আশা করা হয়েছিল, সমর্থন কিংবা প্রত্যাখ্যান, যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, সেটি মঙ্গলবারের মধ্যেই পরিষ্কার করবে তৃণমূল। অবশেষে গতকাল দুপুরে মহাকরণে তৃণমূলের সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন দলের সভানেত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৈঠক হয় বিধানসভার সদস্যদের সঙ্গেও। এর পরই মহাকরণে সাংবাদিকদের কাছে মমতা ব্যানার্জি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ প্রার্থী প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান।
মমতা বলেন, 'এ নির্বাচনটি ভারতের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক নির্বাচন। তাই ভোট না দিলে সেটি নষ্ট হবে।' প্রধানমন্ত্রী, সোনিয়া গান্ধী সবাইকে এই সিদ্ধান্ত বিকেলেই টেলিফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মমতা জানান।
মঙ্গলবার বিকেলে মহাকরণে সংসদীয় দলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ছাড়াও দলের প্রায় সব সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মমতা ব্যানার্জি।
রাষ্ট্রপতি পদে সমর্থন প্রশ্নে গত ১৩ জুন থেকে কঠোর প্রণববিরোধী অবস্থান নেন মমতা। তাঁর পছন্দের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী এ পি জে আবদুল কালাম ওই পদে না দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করার পরই কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পরিস্থিতি সামাল দিতে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছিলেন মমতা। যদিও এর মধ্যেই প্রণব মুখ্যার্জি কিংবা কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে পরোক্ষভাবে খোঁচা দিয়ে ফেইসবুকে সমালোচনামূলক একাধিক মন্তব্য পোস্ট করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন করায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূল কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় দিলি্লতে কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীষ তিওয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রণব মুখার্জির জয়ের সম্ভাবনা আরো সুদৃঢ় হলো বলে দাবি করেন। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তবে কংগ্রেস ও তৃণমূলের এই ঘনিষ্ঠ অবস্থানে আবার বেজায় অখুশি হয়েছে ভারতের বামপন্থী দলগুলো। সিপিআইএম নেতা বাসুদেব আচার্য প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, এমন নাটক না করলেই ভালো হতো। তৃণমূলের রাজনৈতিক কোনো অবস্থান না থাকায় কংগ্রেসের সঙ্গে কখনো ঝগড়া, কখনো বন্ধুত্ব হবে- এমনটা খুব স্বাভাবিক বলে মনে করেন ওই বর্ষীয়ান বাম নেতা।
এদিকে মমতা গতকাল প্রণব মুখার্জিকে সমর্থনের কথা জানাতে গিয়ে এই ইস্যুতে বামফ্রন্টের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রণব বাবুকে সোনার বোতাম দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম। সিপিএমের নীতি-আদর্শ বলে কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএম বরাবরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেও এদিন দুই দলকেই কাঠগড়ার তোলেন মমতা।

No comments

Powered by Blogger.