ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে তেতে উঠছে ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। এ দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ধর্মঘট ডেকেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, আদালতে রিট হয়েছে। বিষয়টি সেখানেই সুরাহা হবে।


কিন্তু আদালত রুল জারি করার পর চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও জবাব দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে। এরপর আর নির্বাচন হয়নি। এতে বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের পথ। রুদ্ধ হয়ে আছে সাংস্কৃতিক চর্চা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দীর্ঘ ২২ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ বন্ধ করে রেখেছে। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া না হলে ছাত্র-গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ'। এ সংগঠনের ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। ১৯ জুলাই বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের মুখপাত্র নুর বাহাদুর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ডাকসুসহ সব হল সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এটা শিক্ষার্থীদের অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামান ও সাংস্কৃতিক চর্চা ফিরিয়ে আনতেও ছাত্র সংসদ জরুরি।' তিনি জানান, ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. অহিদুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রথমত আমি ব্যথিত। ছাত্র সংসদ সচল করার জন্য শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটে যেতে হলো। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজেই মিডিয়ার সামনে বলেছিলেন, ডাকসু নির্বাচন দেওয়াই তাঁর প্রধান কাজ হবে। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেল, কই নির্বাচন?' তিনি বলেন, 'এটা শিক্ষার্থীদের অধিকার। সামগ্রিক কারিকুলামের অংশ। ছাত্র সংসদ না থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীরা অপরিপূর্ণভাবে বড় হচ্ছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নুর বাহাদুর বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো নেই। অধিকারহীনভাবে বেঁচে থাকা অসহ্য। সব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকলেই বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলে?'
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ আলী বলেন, 'সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলছে। ঘর্মঘট যৌক্তিক বলে মনে করছি না।'
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ ধর্মঘট দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য তারা দেবেই।' তিনি বলেন, 'ডাকসুর বিষয়ে মামলা হয়েছে। মামলার বাইরে কিছুই করতে পারি না।'
ডাকসু নির্বাচন চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শিক্ষার্থী গত ২১ মার্চ রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট দুটি রুল জারি করেন। চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর জবাব দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, 'এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী আছেন। তিনি বলতে পারবেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবদুল আলীম চাকলাদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রিট আবেদনটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জবাব আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।'
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক ওমর শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরাও ডাকসু নির্বাচন চাই। এটা ছাত্রদের অধিকার। এ অধিকার ক্ষুণ্ন করার ক্ষমতা কারো নেই। তবে অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।'

No comments

Powered by Blogger.