বন্যাদুর্গতরা বাঁধ ও রাস্তায়
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যার কবলে পড়েছে রংপুরের পীরগাছা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের হাজারো পরিবার। এখনো তারা সরকারি সাহায্য পায়নি। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে বাঁধসহ উঁচু এলাকায়। তাদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
পীরগাছায় বাঁধে ধস: ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় আকসিঞ্চক বন্যা দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ছয়টি চরাঞ্চলসহ ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সকালে পানির চাপে শিবদের চর এলাকায় তিস্তা প্রতিরক্ষা ক্রস বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আকস্মিক বন্যায় উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চর ছাওলা, শিবদেব চর, জুয়ানের চর, চর রাম শিং, চর দৌলত খাঁ, চর তাম্বুলপুর, চর রহমত, পাইকর জামাসহ ছয়টি চরাঞ্চল এবং ১২টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, বন্যায় চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তা প্রতিরক্ষা ক্রস বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল কুদ্দুস জানান, বন্যার্ত মানুষের সাহায্যের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারীতে ভোগান্তি: বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ভোগান্তিতে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুষ। তিস্তার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচে নামলেও বাড়ি-ঘর থেকে পানি না নামায় মানুষ ঘরে ফিরতে পারছে না।
সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ বরাদ্দ হলেও তা বিতরণ না হওয়ায় লোকজনকে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। অনেকে ভিটেমাটি হারিয়ে বাধ্য হয়ে তিস্তার ডান তীরের বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় খুঁজছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান বলেন, মঙ্গলবার পানি কিছুটা কমলেও বন্যাকবলিত অনেক লোক এখনো পানিবন্দী। সোমবার বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য কিছু চাল বরাদ্দ হয়েছে। তবে তা অপ্রতুল। ওই চাল বুধবার বিতরণ করা হবে।
ডিমলার ইউএনও আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ বলেন, উপজেলায় দুই হাজার ৩০০ পরিবারের জন্য ২৩ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাটে পানিবন্দী ২৩ হাজার পরিবার: জেলার ১৮টি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ২৩ হাজার ৯৪৭টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮টি ইউনিয়নের পানিবন্দী এসব পরিবারের জন্য শুকনা খাবার কিনে বিতরণ করতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে গতকাল মঙ্গলবার এক লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ পর্যন্ত সাত হাজার ১১৮টি বাড়ি পুরোপুরি, ১৬ হাজার ৯৯২টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৫৭ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি, ৫০৪ হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোখলেছার রহমান সরকার বলেন, নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় বন্যা-পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
No comments