চরাচর-অতীশ দীপংকরের স্মৃতিসৌধ by আলম শাইন
প্রাচীন বাংলার রাজধানীর নাম বিক্রমপুর। দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিক্রমপুর ছিল বাংলার রাজধানী। পরবর্তী সময়ে তা কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং মুছে যায় বাংলার বেশির ভাগ মানুষের হৃদয় থেকে। শুধু ছাপার অক্ষরে থেকে যায় ইতিহাসের শুকনো পাতায়।
যত দূর জানা যায়, বাংলার মানুষ বিক্রমপুরকে ভুলে গেলেও বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা, বিশেষ করে, চীন, জাপান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং তিব্বতের মানুষ ভুলতে পারেনি। তাঁদের কাছে সোনার হরফে লেখা আছে বিক্রমপুরের নির্জন একটি গ্রামের নাম। সবুজে আচ্ছাদিত এ গ্রামটির নাম বজ্রযোগিনী। যেখানে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের বার্তাবাহক (তিব্বতের জন্য) মহাচার্য শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকরের ভিটেমাটি। স্থানটিকে স্থানীয় লোকজন 'পণ্ডিতের ভিটে' নামে ডাকে। শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপংকরের স্মৃতি রক্ষার্থে চীন সরকার একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে। গত ১৪১০ সনের ১২ ফাল্গুন তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী যার ফলক উন্মোচন করেছেন। পণ্ডিতের ভিটের চারদিকে যে প্রাচীরটি নির্মাণ করা হয়েছে, এর ডিজাইন চীনের মহাপ্রাচীরের আদলে তৈরি। ঠিক মধ্যখানে নির্মাণ করা হয়েছে ছাতাকৃতি বড়সড় সৌধ। বিভিন্ন রঙের ছোঁয়ায় সৌধটি বেশ আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করেছে। এটি উঁচুও কম নয়। প্রায় একটি তালগাছ সমান। পুরো স্মৃতিস্তম্ভটি দামি পাথরের তৈরি। মসৃণ কারুকার্য স্থান পেয়েছে এতে। ঝকঝকে মেঝেতে পা রাখা কঠিন। পিছলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সিঁড়ির দুই পাশটাও দেখার মতো। সাদা পাথরের সিংহমূর্তি স্থান পেয়েছে। পর্যটকরা এখানে বসে একটু জিরিয়ে নেন। স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশটা দারুণভাবে সাজানো। এক পাশে জলাশয়। জলাশয়ের পাশেই পাথরের তৈরি ছোট একটি কৃত্রিম পাহাড়। এর পাশেই দুর্গম বাঁশবনের আদলে বাঁশঝাড় লাগানো হয়েছে। এসব দৃশ্য অবলোকন করলে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে অতীশ দীপংকরের দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দেওয়ার কথা। তিনি ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এখানে শুধু শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন। এরপর সোমপুর নামক স্থানে কিছুদিন কাটিয়ে জ্ঞান আহরণের জন্য হেঁটে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে বরফে ঢাকা দেশ তিব্বতে চলে যান। এরপর আজীবন কাটিয়ে দেন সেখানে। বাংলায় শুধু রেখে যান এই ভিটেমাটি, যা এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এটি অনেক ভিনদেশির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সক্ষম হয়েছে। প্রায়ই এখানে ভিনদেশিরা যাতায়াত করেন। শুধু সাধারণ পর্যটকই নন, বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূতরা অহরহ এখানে যাতায়াত করছেন। অথচ দুঃখের বিষয়, এ সৌধটি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা এলাকাবাসী- কেউই সংরক্ষণ করতে পারেনি। বর্তমানে এটির এতই বেহালদশা যে এখানে কোনো ভদ্রলোক সহজে যেতে আগ্রহী হন না। মাত্র কয়েক বছরেই এ স্মৃতিস্তম্ভটির সমাধি ঘটতে যাচ্ছে, যা বড়ই দুঃখজনক।
আলম শাইন
আলম শাইন
No comments