বিশেষ সাক্ষাৎকার : ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন-সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি অনড়। সংসদে না এলেও রাজপথের আন্দোলন গতি আনতে চাইছে দলটি। রমজানের পর এই আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হবে- এমন কথা বলা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলী হাবিব
কালের কণ্ঠ : সাড়ে তিন বছর পার করল মহাজোট সরকার। সরকারের এই সময়টাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : মহাজোট সরকার সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায়। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট যে প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছিল, তা পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখবে। আর বক্তব্যের মধ্যে আজকের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানো হবে। কৃষকদের বিনা মূল্যে সার দেওয়া হবে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া হবে। এ ধরনের সস্তা রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান মহাজোট সরকার। সাড়ে তিন বছরে তার একটিও পূরণ করতে পারেনি। উপরন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি- এসব ব্যাপারে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে সর্বক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় এসেছে। যেমন সংকট বিদ্যুতে, তেমনি বিদ্যুতের কারণে পানিসংকট শহরে এবং গ্যাস সরবরাহ ও উৎপাদনে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় গ্যাসের স্বল্পতার কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করছেন। তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এটাও একটা কারণ। সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারেনি। যেখানে নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে, সেটা রাখা সম্ভব হয়নি। এখানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। না, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এরাই যখন ক্ষমতার বাইরে ছিল, তখন এমন সমালোচনা করা হয়েছে, একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এই সিন্ডিকেট সরকার চিহ্নিত করতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বলতে হবে, এ ক্ষেত্রে সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে এসব ঘটনার রেশ অনেকটাই কাজ করছে বলে আমি মনে করি। গত সাড়ে তিন বছরে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনাগুলোর সুরাহা হয়নি বলেই আজকের দিনের রাজনীতি একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। যেমন- এ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিডিআর হেডকোয়ার্টার পিলখানায় যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়, সেটার ফলে আমাদের বিডিআর ধ্বংস হয়ে গেছে। বিডিআরের নাম পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তাঁদের পরিবার-পরিজনকে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করতে পারেনি। সরকার বিচার করছে বিডিআর বিদ্রোহের। পিলখানায়, যেখানে হত্যাকাণ্ড হলো, ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হলো- সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। পিলখানার ঘটনার সঙ্গে জড়িত করে সারা বাংলাদেশের বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহের বিচার করা হচ্ছে। এগুলোর একটা প্রতিক্রিয়া আছে।
আমরা দেখেছি, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার কয়েক মাসের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগ করার পরও প্রায় দুই বছর পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাঁকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সোহেল তাজ সরকার থেকে তো বটেই; সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। এটা কেন হলো? এটাকে রহস্যজনক ঘটনা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এবার আসুন এ সরকারের আমলের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে। সেখানে যে ধস নেমেছে, সেটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এই শেয়ারবাজার কেন এভাবে এত ওপরে তোলা হলো? দেশের মানুষকে শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট করার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রোড শো পর্যন্ত করা হয়েছে। যখন এই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, বাজারে ধস নামল, তখন আবার সরকারের অর্থমন্ত্রী বললেন, এটা দুষ্টু বাজার। এই বাজারের সঙ্গে ফটকাবাজরা জড়িত। এর ফাঁকে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। তাঁদের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে আসা যাক। আজকাল খুব জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে রেন্টাল-কুইক রেন্টালের কথা। এটাও এই সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। অথবা এটাও মনে করা যেতে পারে, পরিকল্পিতভাবে 'কুইক কমিশন' উপার্জনের জন্য এ ব্যবস্থা বেছে নেওয়া হয়। মূলত কুইক রেন্টাল হচ্ছে একটি সাময়িক বা আপৎকালীন ব্যবস্থা। সেখানে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমে উৎপাদন করা অর্থহীন। হ্যাঁ, কিছু বিদ্যুৎ অবশ্যই কুইক রেন্টাল থেকে আনা যেত। কিন্তু বেইজ লোডে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হতো। কিছু নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত করে উৎপাদন শত ভাগ নিশ্চিত করা যেত। তাতে এখন কুইক রেন্টাল থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, এটা বেইজ লোড থেকে পাওয়া সম্ভব ছিল। মানতে হবে, আজ কুইক রেন্টালের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু কয়েকটি কারণে সেই ক্ষমতার কাছাকাছিও তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। কথা ছিল, ভর্তুকি মূল্যে সরকার তাদের তরল জ্বালানি দেবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সরকার যদি ভর্তুকি মূল্যে সেটা দেয়, আর কুইক রেন্টাল যদি পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করে উৎপাদন করে, তাহলে সরকারকে বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এটা এড়াতেই এখন তারা উৎপাদন কম করছে। তাই স্থাপিত ক্ষমতার ১০ ভাগের এক ভাগও উৎপাদন হচ্ছে না। অন্যদিকে কুইক রেন্টাল আনা হয়েছে টেন্ডার ছাড়া, সেটাকে সংসদে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তখনই কেউ নতুন পাওয়ার প্লান্ট আনেনি, এমন সন্দেহ করা যেতে পারে। এর খেসারত আমাদের এখন দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও দিতে হবে। ব্যাংকগুলোতে যে তারল্য সংকট, তার একটা কারণ এই রেন্টাল-কুইক রেন্টাল। অর্থমন্ত্রীও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন, কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে আসা যাক। টিআর-কাবিখা থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
দীর্ঘ করে লাভ নেই। এখানে সংক্ষেপে এটাই বলা যায়, গত সাড়ে তিন বছরে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এমনকি কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সেগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আজ পদ্মা সেতু নিয়ে এত হৈচৈ হতো না। আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাংলাদেশকে আজ দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই সরকার। ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে মহাজোট বলেছিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। বরং সেটা আরো বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুম ও গুপ্তহত্যা। এসব কারণে বাংলাদেশের জনগণ বর্তমান সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে বলে আমি মনে করি। মানুষ এই সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। সাড়ে তিন বছরে সরকারের অর্জন জন-অনাস্থা ও জনগণের ক্ষোভ।
কালের কণ্ঠ : বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ অবস্থায় সরকার কী ব্যবস্থা নিতে পারত বলে আপনি মনে করেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : কয়েক দিনের মধ্যেই রোজা শুরু হচ্ছে। রমজান মাস সামনে রেখে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করেছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যে নেই, তা বলছি না। এই অসাধু চক্র সুযোগ নেবেই। কিন্তু সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। বাজার সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ ইত্যাদি ব্যাপারে অনেক বক্তৃতা-বিবৃতি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাজারে সরকারের বিবৃতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সব কিছুর দাম বাড়ছে। যে অদৃশ্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়, সেই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। টিসিবিকে সক্রিয় করার কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি। বরং আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যায়নি। আমদানিনির্ভর দেশ আমাদের। এখানে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে বেশি। কাজেই বাজারে তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কৃষিপণ্যেও পড়ছে। পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কৃষককে উৎপাদন-নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। তার প্রভাব পড়ছে বাজারে। পুরো চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তা সাধারণের ওপর।
কালের কণ্ঠ : বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের দক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। আপনার মূল্যায়ন কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : যখন এই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়, তখনই আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম। কী কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমন একটি 'কচিকাঁচার মেলা' নিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করলেন, সেটা তখন আমাদের কাছে রহস্যজনক ব্যাপার ছিল। তখন আমরা বলেছিলাম, আমাদের দেশের মতো একটি সমস্যাবহুল উন্নয়নশীল দেশে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগে অনেক অভিজ্ঞ নেতা থাকা সত্ত্বেও অনেক স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ে এমন অনেককে দেখা গেছে, যাঁদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এই অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বলতে গেলে, বিপর্যয় ঘটেছে। অনভিজ্ঞ, নতুন মুখ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চমক দেখিয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সরকার পরিচালনায় যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, তার অভাবে আজ সব ক্ষেত্রে, সব বিবেচনায় সরকারের পারফরম্যান্স যথোপযুক্ত নয়, সন্তোষজনক নয়। এটাই এখন সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : আপনার কি মনে হয় মন্ত্রীদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান হয়েছে বা হচ্ছে?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : এ প্রশ্নের জবাব আগের প্রশ্নেই সম্ভবত দেওয়া হয়ে গেছে। তবু বলি, সব মন্ত্রীকে এক কাতারে ফেলা ঠিক হবে না। তবে অনেক মন্ত্রীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে বলেই যেভাবে পারফর্ম করা প্রয়োজন, আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথাই ধরা যাক। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, সৌদি কূটনীতিক হত্যা- এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনার কিনারা হয় না; অথচ বিরোধী দলের ৪৬ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট ৯ দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়। অনভিজ্ঞতার কারণেই তো এমনটি ঘটে। মন্ত্রীদের ইমেজ ক্রাইসিস আছে। সেটা সরকারের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলে।
কালের কণ্ঠ : সামগ্রিক বিবেচনায় সরকার সফল না ব্যর্থ?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমার বিবেচনায় সরকার ব্যর্থ। কী কী কারণে বা কেন সরকার ব্যর্থ, সে বিষয়ে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি, জ্বালানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ- কোনো ক্ষেত্রেই তো সরকারের কোনো সাফল্য নেই। সাফল্যের বিপরীতে ব্যর্থতা আছে। সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কাজেই আমার সার্বিক মূল্যায়নে সরকার সম্পূর্ণভাবেই ব্যর্থ।
কালের কণ্ঠ : বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারছে? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারায় বিএনপির ভূমিকা কি যথার্থ?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। গত নির্বাচন প্রশাসন ও নির্বাচন পরিচালনাকারীদের সহায়তায় কিভাবে প্রভাবান্বিত করা হয়েছিল সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বিএনপির মতো একটি বড় দল কখনো ৩০টি আসন পেতে পারে না। তার পরও আমাদের নেত্রী সংসদের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, দেশ পরিচালনায় তিনি সরকারকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু পরবর্তী সময় সরকার জিযাউর রহমানের নাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুলে ফেলে, বেগম জিয়াকে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে, সে কারণে যথাযথ ভূমিকা আমাদের দল রাখতে পারেনি। সংসদে আমাদের যাওয়ার পরিবেশ সরকার রক্ষা করতে পারেনি। সে জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সংসদে আমাদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটা আমরা সংসদের বাইরে রাখব। আমরা জনগণের কাছে যাব। তাদের সংগঠিত করব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন করে আন্দোলনের সূচনা করতে যাচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এই বিচার-প্রক্রিয়াকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : শুরু থেকেই বলে এসেছি যে আমরা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এই বিচারটি প্রায় ৪০ বছর পর হচ্ছে। সে জন্য সাক্ষী-প্রমাণ কতটুকু সঠিক ও স্বচ্ছ, এ ব্যাপারে সন্দেহ ছিল। তাই প্রথম থেকেই আমরা বলেছি, বিচারের নামে যেন রাজনীতি করা না হয়। এটাকে যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। যে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে চাই সেটা হচ্ছে, সঠিক তথ্য ও সাক্ষী এখানে দেওয়া সম্ভব কি না। তার পরও আমরা আশা করি, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার হবে। প্রকৃত অপরাধীদেরই যেন শাস্তি দেওয়া হয়। এটাকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয়। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের রাজনীতি একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। কারণগুলো বলি। এখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার একটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের আশ্বাস না দিচ্ছে এবং তার রূপরেখা বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ করে তৈরি না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনটা অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে। নির্বাচন অনিশ্চিত থাকলে রাজনীতি অস্থির হতে বাধ্য। রাজনীতি অস্থির থাকলে দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। রাজনীতি অনিশ্চিত হলে দেশে বিনিয়োগও হবে না। এই অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তার জন্য সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি সমঝোতার ব্যবস্থা করতেই হবে। এটা করা না গেলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা মুশকিল। সেই অনিশ্চিত ও অস্থির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি অন্তত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
কালের কণ্ঠ : দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে সংলাপের বিকল্প নেই- এমন কথা বলছেন অনেকেই। আপনার কী মত?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেকোনো রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর নজির আছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনে। তখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাও ছিল না। সেই সময় এটা যদি সম্ভব হয়, এখন কেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না? আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার বিকল্প নেই। সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।
কালের কণ্ঠ : নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : প্রথম কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প আমরা যদি নিজেদের অর্থায়নে করতে পারতাম, তাহলে স্বাধীনতার পর থেকে বড় বড় প্রকল্পে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে দাতাদের সাহায্য আমরা নিতাম না। সেই ধারবাহিকতায় এখনো বিদেশি সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। বিদেশি সহায়তার আশ্বাস পাওয়ার পরই তো পদ্মা সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। আজকে বিষয়টি নিয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে ভাবতে হবে। শুধু কথার কথা বললে হবে না। যদি নিজেদের টাকায় এত বড় প্রকল্প করতে হয়, তাহলে নতুন করে প্রাক্কলন করতে হবে। ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। দেশের অর্থ নিতে হলেও তো সুদ দিতে হবে। সেই হিসাবটি করে রাখতে হবে। নতুন প্রকল্প একনেক থেকে পাস করাতে হবে। কিন্তু নতুন যে প্রকল্প হবে, 'কস্ট বেনিফিট রেশিও' দেখে একনেক সেটা পাস করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। তবে আমি মনে করি, পদ্মা সেতু হতে হবে। এই সেতুর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আবেগ শুধু নয়, দেশের উন্নয়ন জড়িয়ে আছে। দেশের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশকে আগামীতে কি অবস্থায় দেখতে চান? আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা বলুন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমি আগামীতে এই দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই। দেখতে চাই, আগামী প্রজন্ম এই দেশটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের দায়ী করে হলেও আগামী প্রজন্ম এই দেশটিকে বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। সরকারের কাছে প্রত্যাশা, দলীয় সংকীর্ণতা থেকে সরে এসে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালের কণ্ঠের পাঠকদের আমার অভিনন্দন।
কালের কণ্ঠ : সাড়ে তিন বছর পার করল মহাজোট সরকার। সরকারের এই সময়টাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : মহাজোট সরকার সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায়। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট যে প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছিল, তা পূরণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখবে। আর বক্তব্যের মধ্যে আজকের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানো হবে। কৃষকদের বিনা মূল্যে সার দেওয়া হবে। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া হবে। এ ধরনের সস্তা রাজনৈতিক স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান মহাজোট সরকার। সাড়ে তিন বছরে তার একটিও পূরণ করতে পারেনি। উপরন্তু বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি- এসব ব্যাপারে কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলে সর্বক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় এসেছে। যেমন সংকট বিদ্যুতে, তেমনি বিদ্যুতের কারণে পানিসংকট শহরে এবং গ্যাস সরবরাহ ও উৎপাদনে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় গ্যাসের স্বল্পতার কারণেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করছেন। তাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এটাও একটা কারণ। সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে পারেনি। যেখানে নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে, সেটা রাখা সম্ভব হয়নি। এখানে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। না, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এরাই যখন ক্ষমতার বাইরে ছিল, তখন এমন সমালোচনা করা হয়েছে, একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু এই সিন্ডিকেট সরকার চিহ্নিত করতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বলতে হবে, এ ক্ষেত্রে সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে। আজকের রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে এসব ঘটনার রেশ অনেকটাই কাজ করছে বলে আমি মনে করি। গত সাড়ে তিন বছরে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনাগুলোর সুরাহা হয়নি বলেই আজকের দিনের রাজনীতি একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। যেমন- এ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বিডিআর হেডকোয়ার্টার পিলখানায় যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়, সেটার ফলে আমাদের বিডিআর ধ্বংস হয়ে গেছে। বিডিআরের নাম পর্যন্ত বদলে ফেলা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হয়েছে। তাঁদের পরিবার-পরিজনকে দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করতে পারেনি। সরকার বিচার করছে বিডিআর বিদ্রোহের। পিলখানায়, যেখানে হত্যাকাণ্ড হলো, ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তাকে জীবন দিতে হলো- সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না। পিলখানার ঘটনার সঙ্গে জড়িত করে সারা বাংলাদেশের বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহের বিচার করা হচ্ছে। এগুলোর একটা প্রতিক্রিয়া আছে।
আমরা দেখেছি, সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার কয়েক মাসের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগ করার পরও প্রায় দুই বছর পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তাঁকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সোহেল তাজ সরকার থেকে তো বটেই; সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। এটা কেন হলো? এটাকে রহস্যজনক ঘটনা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এবার আসুন এ সরকারের আমলের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে। সেখানে যে ধস নেমেছে, সেটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক। এই শেয়ারবাজার কেন এভাবে এত ওপরে তোলা হলো? দেশের মানুষকে শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট করার জন্য বর্তমান সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রোড শো পর্যন্ত করা হয়েছে। যখন এই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, বাজারে ধস নামল, তখন আবার সরকারের অর্থমন্ত্রী বললেন, এটা দুষ্টু বাজার। এই বাজারের সঙ্গে ফটকাবাজরা জড়িত। এর ফাঁকে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। তাঁদের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া আছে।
বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে আসা যাক। আজকাল খুব জোরের সঙ্গে বলা হচ্ছে রেন্টাল-কুইক রেন্টালের কথা। এটাও এই সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত। অথবা এটাও মনে করা যেতে পারে, পরিকল্পিতভাবে 'কুইক কমিশন' উপার্জনের জন্য এ ব্যবস্থা বেছে নেওয়া হয়। মূলত কুইক রেন্টাল হচ্ছে একটি সাময়িক বা আপৎকালীন ব্যবস্থা। সেখানে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমে উৎপাদন করা অর্থহীন। হ্যাঁ, কিছু বিদ্যুৎ অবশ্যই কুইক রেন্টাল থেকে আনা যেত। কিন্তু বেইজ লোডে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হতো। কিছু নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মেরামত করে উৎপাদন শত ভাগ নিশ্চিত করা যেত। তাতে এখন কুইক রেন্টাল থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, এটা বেইজ লোড থেকে পাওয়া সম্ভব ছিল। মানতে হবে, আজ কুইক রেন্টালের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু কয়েকটি কারণে সেই ক্ষমতার কাছাকাছিও তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। কথা ছিল, ভর্তুকি মূল্যে সরকার তাদের তরল জ্বালানি দেবে। এখন দেখা যাচ্ছে, সরকার যদি ভর্তুকি মূল্যে সেটা দেয়, আর কুইক রেন্টাল যদি পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করে উৎপাদন করে, তাহলে সরকারকে বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এটা এড়াতেই এখন তারা উৎপাদন কম করছে। তাই স্থাপিত ক্ষমতার ১০ ভাগের এক ভাগও উৎপাদন হচ্ছে না। অন্যদিকে কুইক রেন্টাল আনা হয়েছে টেন্ডার ছাড়া, সেটাকে সংসদে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তখনই কেউ নতুন পাওয়ার প্লান্ট আনেনি, এমন সন্দেহ করা যেতে পারে। এর খেসারত আমাদের এখন দিতে হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও দিতে হবে। ব্যাংকগুলোতে যে তারল্য সংকট, তার একটা কারণ এই রেন্টাল-কুইক রেন্টাল। অর্থমন্ত্রীও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন, কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে আসা যাক। টিআর-কাবিখা থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
দীর্ঘ করে লাভ নেই। এখানে সংক্ষেপে এটাই বলা যায়, গত সাড়ে তিন বছরে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এমনকি কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও সেগুলো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আজ পদ্মা সেতু নিয়ে এত হৈচৈ হতো না। আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। বাংলাদেশকে আজ দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই সরকার। ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে মহাজোট বলেছিল, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। কিন্তু বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। বরং সেটা আরো বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গুম ও গুপ্তহত্যা। এসব কারণে বাংলাদেশের জনগণ বর্তমান সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে বলে আমি মনে করি। মানুষ এই সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। সাড়ে তিন বছরে সরকারের অর্জন জন-অনাস্থা ও জনগণের ক্ষোভ।
কালের কণ্ঠ : বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ অবস্থায় সরকার কী ব্যবস্থা নিতে পারত বলে আপনি মনে করেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : কয়েক দিনের মধ্যেই রোজা শুরু হচ্ছে। রমজান মাস সামনে রেখে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপারে আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করেছি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যে নেই, তা বলছি না। এই অসাধু চক্র সুযোগ নেবেই। কিন্তু সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। বাজার সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ ইত্যাদি ব্যাপারে অনেক বক্তৃতা-বিবৃতি সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাজারে সরকারের বিবৃতির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। সব কিছুর দাম বাড়ছে। যে অদৃশ্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়, সেই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। টিসিবিকে সক্রিয় করার কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি। বরং আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যায়নি। আমদানিনির্ভর দেশ আমাদের। এখানে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে বেশি। কাজেই বাজারে তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব কৃষিপণ্যেও পড়ছে। পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কৃষককে উৎপাদন-নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। তার প্রভাব পড়ছে বাজারে। পুরো চাপ গিয়ে পড়ছে ভোক্তা সাধারণের ওপর।
কালের কণ্ঠ : বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের দক্ষতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। আপনার মূল্যায়ন কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : যখন এই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়, তখনই আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম। কী কারণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমন একটি 'কচিকাঁচার মেলা' নিয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ গঠন করলেন, সেটা তখন আমাদের কাছে রহস্যজনক ব্যাপার ছিল। তখন আমরা বলেছিলাম, আমাদের দেশের মতো একটি সমস্যাবহুল উন্নয়নশীল দেশে অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগে অনেক অভিজ্ঞ নেতা থাকা সত্ত্বেও অনেক স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ে এমন অনেককে দেখা গেছে, যাঁদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। এই অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বলতে গেলে, বিপর্যয় ঘটেছে। অনভিজ্ঞ, নতুন মুখ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী চমক দেখিয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সরকার পরিচালনায় যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, তার অভাবে আজ সব ক্ষেত্রে, সব বিবেচনায় সরকারের পারফরম্যান্স যথোপযুক্ত নয়, সন্তোষজনক নয়। এটাই এখন সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : আপনার কি মনে হয় মন্ত্রীদের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ম্লান হয়েছে বা হচ্ছে?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : এ প্রশ্নের জবাব আগের প্রশ্নেই সম্ভবত দেওয়া হয়ে গেছে। তবু বলি, সব মন্ত্রীকে এক কাতারে ফেলা ঠিক হবে না। তবে অনেক মন্ত্রীর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব আছে বলেই যেভাবে পারফর্ম করা প্রয়োজন, আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথাই ধরা যাক। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, সৌদি কূটনীতিক হত্যা- এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনার কিনারা হয় না; অথচ বিরোধী দলের ৪৬ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট ৯ দিনের মধ্যে দিয়ে দিতে পারে। এগুলো হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়। অনভিজ্ঞতার কারণেই তো এমনটি ঘটে। মন্ত্রীদের ইমেজ ক্রাইসিস আছে। সেটা সরকারের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলে।
কালের কণ্ঠ : সামগ্রিক বিবেচনায় সরকার সফল না ব্যর্থ?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমার বিবেচনায় সরকার ব্যর্থ। কী কী কারণে বা কেন সরকার ব্যর্থ, সে বিষয়ে আগেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি, জ্বালানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ- কোনো ক্ষেত্রেই তো সরকারের কোনো সাফল্য নেই। সাফল্যের বিপরীতে ব্যর্থতা আছে। সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কাজেই আমার সার্বিক মূল্যায়নে সরকার সম্পূর্ণভাবেই ব্যর্থ।
কালের কণ্ঠ : বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারছে? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারায় বিএনপির ভূমিকা কি যথার্থ?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। গত নির্বাচন প্রশাসন ও নির্বাচন পরিচালনাকারীদের সহায়তায় কিভাবে প্রভাবান্বিত করা হয়েছিল সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বিএনপির মতো একটি বড় দল কখনো ৩০টি আসন পেতে পারে না। তার পরও আমাদের নেত্রী সংসদের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, দেশ পরিচালনায় তিনি সরকারকে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু পরবর্তী সময় সরকার জিযাউর রহমানের নাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তুলে ফেলে, বেগম জিয়াকে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে প্রতিহিংসার রাজনীতি শুরু করেছে, সে কারণে যথাযথ ভূমিকা আমাদের দল রাখতে পারেনি। সংসদে আমাদের যাওয়ার পরিবেশ সরকার রক্ষা করতে পারেনি। সে জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সংসদে আমাদের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটা আমরা সংসদের বাইরে রাখব। আমরা জনগণের কাছে যাব। তাদের সংগঠিত করব। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন করে আন্দোলনের সূচনা করতে যাচ্ছি।
কালের কণ্ঠ : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এই বিচার-প্রক্রিয়াকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : শুরু থেকেই বলে এসেছি যে আমরা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এই বিচারটি প্রায় ৪০ বছর পর হচ্ছে। সে জন্য সাক্ষী-প্রমাণ কতটুকু সঠিক ও স্বচ্ছ, এ ব্যাপারে সন্দেহ ছিল। তাই প্রথম থেকেই আমরা বলেছি, বিচারের নামে যেন রাজনীতি করা না হয়। এটাকে যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। যে বিষয়টি আমরা বিবেচনা করতে চাই সেটা হচ্ছে, সঠিক তথ্য ও সাক্ষী এখানে দেওয়া সম্ভব কি না। তার পরও আমরা আশা করি, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচার হবে। প্রকৃত অপরাধীদেরই যেন শাস্তি দেওয়া হয়। এটাকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা না হয়। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের রাজনীতি একটি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। কারণগুলো বলি। এখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার একটা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের আশ্বাস না দিচ্ছে এবং তার রূপরেখা বিরোধী দলের সঙ্গে আলাপ করে তৈরি না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনটা অনিশ্চিত থেকে যাচ্ছে। নির্বাচন অনিশ্চিত থাকলে রাজনীতি অস্থির হতে বাধ্য। রাজনীতি অস্থির থাকলে দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদন ব্যাহত হয়। রাজনীতি অনিশ্চিত হলে দেশে বিনিয়োগও হবে না। এই অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা প্রয়োজন। তার জন্য সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি সমঝোতার ব্যবস্থা করতেই হবে। এটা করা না গেলে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা মুশকিল। সেই অনিশ্চিত ও অস্থির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি অন্তত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
কালের কণ্ঠ : দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে সংলাপের বিকল্প নেই- এমন কথা বলছেন অনেকেই। আপনার কী মত?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেকোনো রাজনৈতিক সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর নজির আছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলোই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনে। তখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাও ছিল না। সেই সময় এটা যদি সম্ভব হয়, এখন কেন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না? আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার বিকল্প নেই। সেটা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল।
কালের কণ্ঠ : নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : প্রথম কথা হচ্ছে, পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প আমরা যদি নিজেদের অর্থায়নে করতে পারতাম, তাহলে স্বাধীনতার পর থেকে বড় বড় প্রকল্পে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে দাতাদের সাহায্য আমরা নিতাম না। সেই ধারবাহিকতায় এখনো বিদেশি সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। বিদেশি সহায়তার আশ্বাস পাওয়ার পরই তো পদ্মা সেতুর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। আজকে বিষয়টি নিয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে ভাবতে হবে। শুধু কথার কথা বললে হবে না। যদি নিজেদের টাকায় এত বড় প্রকল্প করতে হয়, তাহলে নতুন করে প্রাক্কলন করতে হবে। ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। দেশের অর্থ নিতে হলেও তো সুদ দিতে হবে। সেই হিসাবটি করে রাখতে হবে। নতুন প্রকল্প একনেক থেকে পাস করাতে হবে। কিন্তু নতুন যে প্রকল্প হবে, 'কস্ট বেনিফিট রেশিও' দেখে একনেক সেটা পাস করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। তবে আমি মনে করি, পদ্মা সেতু হতে হবে। এই সেতুর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আবেগ শুধু নয়, দেশের উন্নয়ন জড়িয়ে আছে। দেশের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশকে আগামীতে কি অবস্থায় দেখতে চান? আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশের কথা বলুন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আমি আগামীতে এই দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই। দেখতে চাই, আগামী প্রজন্ম এই দেশটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের দায়ী করে হলেও আগামী প্রজন্ম এই দেশটিকে বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। সরকারের কাছে প্রত্যাশা, দলীয় সংকীর্ণতা থেকে সরে এসে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালের কণ্ঠের পাঠকদের আমার অভিনন্দন।
No comments