সহকর্মীর গছিয়ে দেওয়া বোমায় নারী আহত

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল মঙ্গলবার বোমা বিস্ফোরণে আয়েশা সিদ্দিকা (২২) নামের এক নারী আহত হয়েছেন। তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত আয়েশা সিদ্দিকা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেন। বোমাটি তাঁর ব্যাগে ছিল।


মোবাইল ফোন সেটের কথা বলে মোড়কে ভরা বোমাটি তাঁকে দিয়েছিলেন এক সহকর্মী। তাঁর নাম জুবায়ের আহমেদ। তিনি কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রোগ্রামার। জুবায়ের ও তাঁর বন্ধু নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নুরুল ইসলামের কাছ থেকে বোমাটি কিনেছিলেন জুবায়ের।
শেরে বাংলানগর থানার ওসি জাকির হোসেন মোল্লা জানান, আয়েশা সিদ্দিকা গতকাল সকালে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সামনে দিয়ে নিজের কার্যালয়ে যাওয়ার সময় তাঁর হাতব্যাগে থাকা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে আহত অবস্থায় দ্রুত পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। বোমার আঘাতে আয়েশার কোমর থেকে শরীরের পেছনের অংশে বড় ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
ওসি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আয়েশার কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, গতকাল সকালে অফিসের সামনে জুবায়ের তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে একটি কালো প্যাকেট দিয়ে বলেন, এতে একটি মোবাইল ফোন সেট আছে। সেটি অফিসে তাঁর টেবিলে রাখতে বলেন জুবায়ের। আয়েশা ওই প্যাকেটটি তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগে রাখেন। অফিসে ঢোকার আগেই সেটি বিস্ফোরিত হয়। এরপর দুপুর ২টার দিকে আগারগাঁও এলাকা থেকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয় জুবায়েরকে। এরপর জুবায়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানান, নুরুল ইসলাম নামে তাঁর এক বন্ধুর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকায় বোমাটি কেনেন তিনি। পরে কাজীপাড়া এলাকা থেকে নুরুল ইসলামকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইমাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আহত আয়েশার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জুবায়ের আহমেদ ও তাঁর বন্ধু নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
জুবায়ের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে বলেছেন, আয়েশার সঙ্গে তাঁর দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে আয়েশার ক্ষতি করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। গতকাল সকালে আফিসের অদূরে অয়েশার সঙ্গে দেখা করে তিনি ওই প্যাকেটটি তাঁকে দেন মোবাইল ফোনের প্যাকেট বলে।
ফুটপাতের চা বিক্রেতা আবদুল মালেক, প্রত্যক্ষদর্শী মমিনসহ অনেকে জানান, তাঁরা দোকানে বসে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে অতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় পিকেএসএফ ভবনের সামনে থেকে এক মহিলা দৌড়ে এসে রাস্তায় পড়ে যান। ওই মহিলা 'আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান' বলে চিৎকার করতে থাকেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিকে ঘটনার পরপরই মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ও র‌্যাবের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে আলামত জব্দ করে।
ডিবির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সহকারী কমিশনার সানোয়ার হোসেন বলেন, এটি একটি পাইপ বোমা। এর সঙ্গে মোবাইল ফোনের কানেকশন থাকতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.