এখন সোনা জয়ের অপেক্ষা-গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সাফল্য

মাত্র আট বছরেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য রুপা, দুজন ব্রোঞ্জপদক ও দুজন সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করে বিশ্বজ্ঞানের অঙ্গনে বাংলাদেশকে বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করল। এর আগেও বাংলাদেশ দলের চারজন ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। পেয়েছে সম্মানজনক স্বীকৃতি। কিন্তু রুপা এই প্রথম।


এত অল্প সময়ে বাংলাদেশ যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে, তা বিরল। বিশ্বের অনেক দেশই এত সহজে রুপা পায় না। বাংলাদেশ পেয়েছে। এখন অপেক্ষা স্বর্ণপদকের। এটাও সম্ভব। হয়তো শিগগিরই বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে গৌরবের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে সারা দেশে গণিত উৎসবের আয়োজন করা হয়। এ বছর ১৭টি জেলা শহরে উৎসব হয়েছে। এসব উৎসবে জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সেরা প্রতিযোগীদের বাছাই করা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গণিত উৎসব। সেখানে সেরাদের মধ্য থেকে বাছাই করে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার জন্য দল বাছাই করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে সাধারণত জাতীয়ভাবে বাছাইয়ের উদ্যোগ দেখা যায় না। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে, ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সেদিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী। কারণ, সারা দেশে গণিত উৎসবের মধ্য দিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একদিকে যেমন গণিতভীতি দূর হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। বিজ্ঞানমনস্ক একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠছে।
গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর যে গণিত উৎসব হয়, সেটাও বিশ্বে বিরল একটি ঘটনা। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অন্যটি গণমাধ্যম। দেশের তরুণ সমাজকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর করে নিতে এ ধরনের উদ্যোগ দেশে আরও সৃষ্টি হোক, এটাই কাম্য।
গণিত উৎসব ও প্রতিযোগিতার এই পদ্ধতি অন্যান্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। ইতিমধ্যেই পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে। অনেক ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। এই ধারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.