সরকারের কারণেই চিনির বাজারে অস্থিরতা by ফারজানা লাবনী
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে দেশে প্রায় পাঁচ লাখ টন চিনির মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। তার পরও গত ১০ দিনে চিনির বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সরকার বাজার দরের প্রায় ১০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি শুরু করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর বিষয়টি নিয়ে চিনি ব্যবসায়ী ও সরকারের পক্ষ থেকে পরস্পরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। শিল্পমন্ত্রীর যুক্তি, রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর অতীত মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে বাজার দরের প্রায় ১০ টাকা বেশি দামে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি শুরু করেছে। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চিনি বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। সরকারি পর্যায়ে চিনির দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সেই ফায়দা নিতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে গত সাত দিনে কেজিতে চিনির দাম বেড়ে গেছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। তারপরও গতকাল রবিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সরবরাহ করা চিনির দাম ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিনির চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রমজান মাস সামনে রেখে বেসরকারি পর্যায়ের অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই কারসাজি করে চিনির দাম বাড়িয়ে থাকেন। বিষয়টি মাথায় রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় এ জন্য আগেভাগেই চিনির দাম বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সুতরাং বেসরকারি ব্যবসায়ীরা এ বছর কোনোভাবেই গতবারের মতো ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করতে পারবেন না।' শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, 'বেসরকারি অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি চিনি কলগুলো লোকসানে রাখতে নানা কৌশল নিচ্ছে। কেউ দাম বাড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই দাম কমিয়েও বিক্রি করছেন।'
শিল্পসচিব মাসুদ সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রমজানের আগেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক লাখ ৮৫ হাজার টনের ওপরে চিনির মজুদ তৈরি হবে। অন্যান্য সময় মাসে চিনির চাহিদা এক লাখ টনের মতো থাকলেও রমজানে চাহিদা দুই লাখ টন হয়। চিনির বাজার দরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেই এসব মজুদ চিনি বাজারে ছাড়া হবে।'
এদিকে বেসরকারি চিনি ব্যবসায়ীরা চিনির বাজার দরে অস্থিরতায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে দায়ী করছেন। চিনি উৎপাদনকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনায়েম সুগার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আলী আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিন মাস ধরে চিনির বাজারদর ছিল একই ধারায়। ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে। সাধারণত শবেবরাত থেকে চিনির চাহিদা বাড়তে থাকে। তাই দামের ক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকে। তবে আসন্ন রমজানের আগে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও চলতি মাসের ৪ তারিখ শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিনি বাজারে বিক্রির পরই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে কেউ কেউ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, যাতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।'
আলী আকবর আরো বলেন, 'দাম কমিয়ে বিক্রি করলেও খারাপ! সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হয়ে এমন কথা বললে তাঁর জবাবদিহিতা থাকা উচিত। সরকারি চিনি বেশি দামে বিক্রি করলে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অবশ্যই দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে। অথচ বিশ্বে বিভিন্ন দেশে জনগণের সুবিধায় সরকারি প্রতিষ্ঠান দাম কমিয়ে বিক্রি করে। আর আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র।'
আলী আকবর জানান, রমজানের আগে আবদুল মোনায়েম সুগার লিমিটেডের কাছে দেড় লাখ টনের মতো চিনির মজুদ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিনি সরবরাহ করায় রমজানের আগে বাজারে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
এদিকে গত এক বছরে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এক ছটাক চিনিও বাজারে ছাড়া হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে উৎপাদিত এবং আমদানি করা মজুদ চিনি রমজান মাস সামনে রেখে রাজধানীর তিনটি স্থানে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিনি শিল্প করপোরেশনের সামনে, জাতীয় প্রেসক্লাব ও কারওয়ান বাজার এলাকায় সরকারি চিনি বিক্রি হচ্ছে।
নিয়মানুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিএসএফআইসির চার হাজার ডিলারের মাধ্যমে এসব চিনি বিক্রির কথা। কিন্তু বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মিল গেটে চিনির দাম ৫৫ টাকা নির্ধারণ করায় গত এক বছরে এক ছটাক চিনিও ডিলাররা গ্রহণ করেননি। এখন রমজান মাস সামনে রেখে সেই চিনি বিএসএফআইসি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, 'বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চার হাজার ডিলার গত এক বছর বেকার রয়েছেন। অথচ ডিলারদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা জামানত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে বেশি দামে চিনি না কেনার মাসুল হিসেবে গরিব ডিলারদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা হিসাবে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হচ্ছে।'
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'লোকবলের অভাব ও দায় এড়াতে সীমিত পরিসরে চিনি বিক্রির আয়োজন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অথচ কেবল রাজধানীতেই জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। রমজান মাস সামনে রেখে রাজধানীর মধ্যে মাত্র তিনটি জায়গায় চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ মিলগেটে দাম কমিয়ে বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশের ডিলাররা চিনি বিক্রি করলে সাধারণ ভোক্তারা সুবিধা পেতেন। বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিত না।
এত সব সত্ত্বেও আপাতত চিনির দাম পরিবর্তনের সরকারি সিদ্ধান্ত নেই বলে কালের কণ্ঠকে জানান বিএসএফআইসির পরিচালক বিপণন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
শিল্প মন্ত্রণালয় চলতি মাসের ৪ তারিখ থেকে বাজার দরের প্রায় ১০ টাকা বেশি দামে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি শুরু করেছে। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের চিনি বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে। সরকারি পর্যায়ে চিনির দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও সেই ফায়দা নিতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে গত সাত দিনে কেজিতে চিনির দাম বেড়ে গেছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। তারপরও গতকাল রবিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে সরবরাহ করা চিনির দাম ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিনির চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রমজান মাস সামনে রেখে বেসরকারি পর্যায়ের অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই কারসাজি করে চিনির দাম বাড়িয়ে থাকেন। বিষয়টি মাথায় রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় এ জন্য আগেভাগেই চিনির দাম বাড়িয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ বছর শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সুতরাং বেসরকারি ব্যবসায়ীরা এ বছর কোনোভাবেই গতবারের মতো ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করতে পারবেন না।' শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, 'বেসরকারি অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি চিনি কলগুলো লোকসানে রাখতে নানা কৌশল নিচ্ছে। কেউ দাম বাড়াচ্ছেন। আবার অনেকেই দাম কমিয়েও বিক্রি করছেন।'
শিল্পসচিব মাসুদ সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রমজানের আগেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক লাখ ৮৫ হাজার টনের ওপরে চিনির মজুদ তৈরি হবে। অন্যান্য সময় মাসে চিনির চাহিদা এক লাখ টনের মতো থাকলেও রমজানে চাহিদা দুই লাখ টন হয়। চিনির বাজার দরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেই এসব মজুদ চিনি বাজারে ছাড়া হবে।'
এদিকে বেসরকারি চিনি ব্যবসায়ীরা চিনির বাজার দরে অস্থিরতায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগকে দায়ী করছেন। চিনি উৎপাদনকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনায়েম সুগার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আলী আকবর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তিন মাস ধরে চিনির বাজারদর ছিল একই ধারায়। ৫০ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে। সাধারণত শবেবরাত থেকে চিনির চাহিদা বাড়তে থাকে। তাই দামের ক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকে। তবে আসন্ন রমজানের আগে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও চলতি মাসের ৪ তারিখ শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিনি বাজারে বিক্রির পরই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা বা পাইকারি পর্যায়ে কেউ কেউ দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, যাতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।'
আলী আকবর আরো বলেন, 'দাম কমিয়ে বিক্রি করলেও খারাপ! সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হয়ে এমন কথা বললে তাঁর জবাবদিহিতা থাকা উচিত। সরকারি চিনি বেশি দামে বিক্রি করলে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অবশ্যই দাম বাড়ানোর চেষ্টা করবে। অথচ বিশ্বে বিভিন্ন দেশে জনগণের সুবিধায় সরকারি প্রতিষ্ঠান দাম কমিয়ে বিক্রি করে। আর আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র।'
আলী আকবর জানান, রমজানের আগে আবদুল মোনায়েম সুগার লিমিটেডের কাছে দেড় লাখ টনের মতো চিনির মজুদ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চিনি সরবরাহ করায় রমজানের আগে বাজারে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা নেই।
এদিকে গত এক বছরে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এক ছটাক চিনিও বাজারে ছাড়া হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে উৎপাদিত এবং আমদানি করা মজুদ চিনি রমজান মাস সামনে রেখে রাজধানীর তিনটি স্থানে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চিনি শিল্প করপোরেশনের সামনে, জাতীয় প্রেসক্লাব ও কারওয়ান বাজার এলাকায় সরকারি চিনি বিক্রি হচ্ছে।
নিয়মানুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বিএসএফআইসির চার হাজার ডিলারের মাধ্যমে এসব চিনি বিক্রির কথা। কিন্তু বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মিল গেটে চিনির দাম ৫৫ টাকা নির্ধারণ করায় গত এক বছরে এক ছটাক চিনিও ডিলাররা গ্রহণ করেননি। এখন রমজান মাস সামনে রেখে সেই চিনি বিএসএফআইসি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চিনি ডিলার সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, 'বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে শিল্প মন্ত্রণালয় স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় চার হাজার ডিলার গত এক বছর বেকার রয়েছেন। অথচ ডিলারদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা জামানত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে বেশি দামে চিনি না কেনার মাসুল হিসেবে গরিব ডিলারদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা হিসাবে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হচ্ছে।'
এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, 'লোকবলের অভাব ও দায় এড়াতে সীমিত পরিসরে চিনি বিক্রির আয়োজন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। অথচ কেবল রাজধানীতেই জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। রমজান মাস সামনে রেখে রাজধানীর মধ্যে মাত্র তিনটি জায়গায় চিনি বিক্রির সিদ্ধান্ত শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ মিলগেটে দাম কমিয়ে বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সারা দেশের ডিলাররা চিনি বিক্রি করলে সাধারণ ভোক্তারা সুবিধা পেতেন। বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিত না।
এত সব সত্ত্বেও আপাতত চিনির দাম পরিবর্তনের সরকারি সিদ্ধান্ত নেই বলে কালের কণ্ঠকে জানান বিএসএফআইসির পরিচালক বিপণন মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
No comments