আজ আবিদের জন্মদিন-আবিদ একাই এক শ by মোহিত কামাল

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা আবিদ। আবিদ তাঁর কণ্ঠে সারা দেশের ভক্তকুলের মন ভরিয়ে দিয়েছিল। মাতিয়ে ছিল দর্শকশ্রোতা। আবিদ ছিল আমাদের বন্ধুসভারও বন্ধু। বন্ধুসভার প্রায় সব অনুষ্ঠানে ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। আজ জন্মদিনে তাকে আমরা স্মরণ করছি ভালোবাসায় বেদনায়।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আবিদকে প্রথম দেখি। প্রথম আলো মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার পর ইমদাদুল হক মিলন, মাহমুদুজ্জামান বাবু, সাইদুজ্জামান রওশনসহ বসে আছি হলঘরের সামনের সারিতে। মঞ্চে ডাক এল আবিদের। সঙ্গে সঙ্গে তুমুল করতালিতে মুখর হয়ে উঠল পুরো মিলনায়তন। ওর এত বিপুল জনপ্রিয়তা থাকতে পারে, তা মাথায় ছিল না। চমকে উঠলাম এক মিষ্টি তরুণকে দেখে। মায়াবী মুখ। সাদামাটা পাঞ্জাবি গায়ে মাইক্রোফোন হাতে ভরাট গলায় প্রথমে শ্রদ্ধা জানাল বড়দের। মিলনায়তনভর্তি তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে মাদকের কুফল নিয়ে নানা কথা বলল। মুগ্ধ হয়ে গেলাম তার কথা শুনে। চমৎকার ভোকাল থ্রো, মিষ্টি গলা, অসাধারণ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। দুর্দান্ত পারফর্ম করল আবিদ। এত মিষ্টি কণ্ঠের অধিকারী! এত সুন্দর গান গায়! এত সুন্দর বক্তব্য দেয় আবিদ! তার পারফরমেন্স দেখে মনে হলো, এসব অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন নেই। আবিদ একাই এক শ। গানে মাতোয়ারা করতে পারে সে তারুণ্যকে, শ্রোতার অন্তরের মর্মমূলে ঢুকিয়ে দিতে পারে মাদকবিরোধী সচেতনতাবোধ। মঞ্চ থেকে নেমে প্রথমে বন্ধুবর মিলনের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাল আবিদ। আমার দিকে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বুকে জড়িয়ে ধরলাম তাকে। সেই থেকে বয়সের ব্যবধান ঘুচে গেল। আমার ছোট্ট বন্ধুটি প্রায়ই ফোন করত আমাকে। আমরা একই গাড়িতে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছি—কক্সবাজার থেকে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল। আরও অসংখ্য অনুষ্ঠানে সে ছিল মাদকবিরোধী যুদ্ধে নিবেদিত সঙ্গী। আবিদ বসত আমাদের পেছনের সারিতে। গান শোনাত সে; যখনই আবদার করতাম, নির্দ্বিধায় গাইতে থাকত রবীন্দ্রসংগীত।
সাগর কেড়ে নিল আমাদের সঙ্গী সেই দৃপ্ত তরুণকে। সমুদ্রের পাড়ে গেলে আবিদকে মনে পড়ে। চোখ ভিজে ওঠে। নিষ্ঠুর সমুদ্র কেন কেড়ে নিল আমাদের আবিদকে! এখনো যখন কোথাও মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানে যেতে থাকি, মাইক্রোবাস চলতে থাকে, মনে পড়ে আবিদকে। বুক ভারী হয়ে ওঠে। কিছুদিন আগে যাচ্ছিলাম আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী অনুষ্ঠানে। গাড়িতে ছিল আরেক কিশোরী শিল্পী শাকিলা শুক্লা। আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পার হওয়ার সময় বললাম, আবিদের কথা মনে পড়ছে। চলমান গাড়ির ভেতরের সবার কণ্ঠ সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধ হয়ে গেল। শাকিলার চোখ গড়িয়ে নেমে এল অশ্রুকণা। বড়দের চোখও ভিজে উঠল।
আবিদ, ভুলিনি আমরা তোমাকে! তোমাকে অনুভব করি আমাদের পুরো সত্তায়। তোমার কথা আমরা প্রায়ই মনে করি। মনে মনে তোমাকে ডাকি। তুমি কি ওপার থেকে শুনতে পাও এপারের ডাক?
 প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলনের একজন উপদেষ্টা

No comments

Powered by Blogger.