দ্বীন প্রচারের নানা অবলম্বন by এএসএম আজিজুল্লাহ

ইসলাম প্রচারমুখী ধর্ম। যেহেতু নবী-রাসূলের আগমনের সিলসিলা বন্ধ হয়ে গেছে, সেহেতু বর্তমানে ইসলাম প্রচারের গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর। আল্লাহ বলেন, 'তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ পথে আদেশ করবে এবং অসৎ পথ থেকে নিষেধ করবে।'


(আলে ইমরান-১০৪)। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আমার পক্ষ থেকে যদি একটি আয়াতও তোমার জানা থাকে, তবে তা অন্যের কাছে পেঁৗছে দাও।' (বুখারি)। সুতরাং দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।
দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিকল্পনার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবী ও রাসূল দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নানামুখী কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। উদাহরণস্বরূপ সূরা বুরুজে বর্ণিত 'আসহাবুল উখদুদের' কাহিনীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তৎকালীন বাদশা একটি ছেলেকে জাদুবিদ্যা শিক্ষার জন্য এক জাদুকরের কাছে পাঠিয়েছিল। সে পথিমধ্যে জাদুবিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি একজন পুরোহিতের কাছে ইলাহি ধর্মের জ্ঞানও অর্জন করে এবং একটি বিশেষ ঘটনার প্রভাবে সে মুসলমান হয়ে যায়। এ খবর বাদশা জানতে পেরে ছেলেটিকে হত্যা করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে। কখনও উঁচু পাহাড়ের ওপর তুলে, কখনও বিশাল সমুদ্রে নিয়ে তাকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু প্রতিবারই আল্লাহর অশেষ রহমতে যারা তাকে নিয়ে যায় তারাই মৃত্যুবরণ করে, আর ছেলেটি জীবিত অবস্থায় ফিরে আসে। এতে বাদশা খুবই চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে পড়ে। কেননা বাদশার ধারণা, 'একে মারতে না পারলে একদিন পুরো রাজ্যের মানুষ তার মত গ্রহণ করবে এবং আমার সব আভিজাত্য ও দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।' ছেলেটি বাদশার মনোভাব দেখে বুঝতে পারে যে, সে তাকে হত্যা না করে ক্ষান্ত হবে না। তখন ছেলেটি বাদশাকে ডেকে বলল, 'আপনি যদি নিতান্তই আমাকে মারতে চান, তবে আমার পরামর্শ মোতাবেক মারতে হবে, অন্যথা আপনি আমাকে মারতে পারবেন না।' তখন বাদশা বলে, 'কী তোমার পরামর্শ?' ছেলেটি বলে, 'বিশাল একটি ময়দানে আপনার রাজ্যের সব প্রজাকে একত্রিত করুন এবং ময়দানের মাঝখানে একটি উঁচু মঞ্চ তৈরি করুন।' বালকের পরামর্শ অনুযায়ী তখন বাদশা তা-ই করল। বালক বলল, "এবার আপনি আমার তীর-ধনুক নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে 'বিসমিল্লাহে রবি্ব হা-জাল গুলাম' অর্থাৎ এই গুলামের রবের নামে বলে তীর নিক্ষেপ করুন, তাহলে আমি মরে যাব।' বালকের কথামতো বাদশা ওই কথা বলে একটি তীর বালকের মাথায় মারল। বালকটি সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুমুখে পতিত হলো। এই দৃশ্য দেখে ময়দানে উপস্থিত সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল এবং বালকের ধর্ম তথা ইলাহি ধর্ম গ্রহণ করল। বাদশা তখন দেখল, 'যে আশঙ্কায় আমি তাকে মারলাম, কার্যত তা-ই হয়ে গেল।' মূলত এটি ছিল বালকের স্বীয় ধর্ম প্রচারের একটা বিরাট কৌশল।
দ্বীনের দাওয়াত দিতে কৌশল অবলম্বনের ক্ষেত্রে নবী (সা.) বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যদি কেউ কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখে, তবে সে যেন তা স্বহস্তে প্রতিহত করে। যদি সে ক্ষমতা না থাকে, তবে সে যেন মুখে নিষেধ করে। যদি তাও না পারে, তবে সে যেন অন্তর দ্বারা তা ঘৃণা করে।' (মুসলিম)। ওই হাদিসে রাসূল (সা.) অন্যায় প্রতিরোধে তিনটি স্তর তথা সুস্পষ্ট কৌশলের কথাই প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, 'আপনার পালনকর্তার পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করুন সুকৌশলে এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে।' (নহল-১২৫)। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের হঠকারী বা চরমপন্থি মনোভাব প্রকাশ না করে পরিবেশ ও সুযোগ বুঝে সুকৌশলে দ্বীনের দাওয়াতি কাজ করা।
drasmazizullah@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.