শাসকদের জন্য ঐশী দিকনির্দেশনা by আমীর মাহমুদ ভঁূইয়া

ইসলাম রাষ্ট্রীয় শাসন কার্যক্রম পরিচালনায়ও সঠিক নির্দেশনা প্রদান করেছে। পবিত্র কোরআন সরকার পরিচালনার বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে কোনোভাবেই কোনো পার্থক্য করেনি। একটি রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হবে এ সম্পর্কিত নির্দেশাবলি সবার জন্যই অভিন্ন, যদিও সে জন্য প্রাথমিকভাবে মুমিন-


মুসলমানদেরই সম্বোধন করা হয়েছে পবিত্র কোরআন মজিদে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন যে রাষ্ট্রশাসন পদ্ধতির কথা বলে, তা সব ধর্মের অনুসারীদের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য। জনগণ যে কোনো শাসন পদ্ধতির সরকার চাইতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ভালো। কোন ধরনের সরকার পদ্ধতির শাসন আমাদের জন্য কল্যাণকর তা জনসাধারণকে চিন্তা করে খুঁজতে হবে। প্রকৃত বিষয় হলো, আসলে যে ধরনের শাসন পদ্ধতির কথাই বলা হোক না কেন তা যদি জনগণের পছন্দের হয় তাহলে কোনো সংকট সৃষ্টি হয় না।
তবে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বৈরচারী কায়দায় ক্ষমতা দখল করে শাসনকার্য পরিচালনায় কেউ এগিয়ে এলে তার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। তখন দেশে বিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত হয়ে উঠতে পারে। রাষ্ট্রে অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো স্বৈরাচার একনায়ক শাসক রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে কি-না ভেবে দেখা দরকার। ক্ষমতায় আসীন শাসকদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, যারা শাসন করবে তাদের এমনভাবে শাসন করতে হবে, যাতে কোনো প্রকারের অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, দুর্ভোগ এবং দুঃখ-দৈন্যের সৃষ্টি না হয়; বরং তাদের এমন অধ্যবসায় সহকারে কার্যকরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হবে, যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে শান্তি স্থাপিত হয়। ন্যায়বিচারের মানদণ্ডকে সমুন্নত করে শাসনকার্য পরিচালনা করা সুশাসকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। ধর্মীয় অনুশাসন স্বাধীনভাবে মেনে চলার ব্যাপারে রাষ্ট্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। ধর্মের প্রতি বিশ্বাস এবং তা প্রকাশ ও পালনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
সুশাসক ও জনগণের দায়িত্বাবলির প্রতি অবশ্যই সচেতন ও সজাগ থাকা উভয়ের উচিত বলে ইসলাম গুরুত্ব আরোপ করেছে। পবিত্র কোরআনে খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলোর কথা; আন্তর্জাতিক সাহায্য সম্পর্কিত নীতির কথা, সরকার ও জনগণ উভয়ের প্রতি জবাবদিহিতার কথা, তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা, নিরঙ্কুশ সুবিচারের কথা এবং সমস্যার প্রতি জনসাধারণের স্পর্শকাতরতা, যাতে করে তাদের কোনো দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে আওয়াজ তুলতে না হয়, তার কথা। সরকার যদি সত্যিকারভাবে সুশাসক হয় তাহলে এটি সরকারেরই দায়িত্ব যে, তা সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে করে জনগণকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য হরতাল করতে না হয়, শিল্প-কলকারখানায় ধর্মঘট বা বিক্ষোভ করতে না হয় কিংবা অন্তর্ঘাতমূলক কাজে লিপ্ত হতে না হয়।
 

No comments

Powered by Blogger.