আমেন-রার অভিশাপ ও টাইটানিক
১০ এপ্রিল ১৯১২ সাউদাম্পটন বন্দরে পৃথিবীর বিস্ময়কর জাহাজ টাইটানিক ছেড়ে দেওয়ার সিটি বাজাল। বিদায় জানাতে আসা আত্মীয়, শুভানুধ্যায়ী এবং উৎসুক দর্শনার্থীর আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে বন্দর গমগম করছে। এই জাহাজটি ‘আনসিঙ্কেবল’—কখনো ডোবার নয়। দুদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। টাইটানিক তখন আটলান্টিকে।
সবই ঠিকঠাক। আনন্দ ও হুল্লোড়ের কমতি নেই। আটজনের একটি দল ঢুকল প্রথম শ্রেণীর ধূমপানকক্ষে। সিগারেট ফুঁকছেন আর জীবনের কী মানে, তা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন। তাঁদেরই একজন উইলিয়াম টি স্টেড ইংরেজ সাংবাদিক ও সুপরিচিত অধ্যাত্মবাদী। ভৌতিক গল্পটা তিনিই বললেন। তাঁর এই গল্পের মিথের সঙ্গে টাইটানিকের ডুবে যাওয়া কেমন করে যেন এক হয়ে গেল।
স্টেড গল্পটা শুরু করেন ১২ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, গল্পটা শেষ হয় রাত ১২টার পরে। টাইটানিকডুবির সূত্রপাত হয় ১৪ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, জাহাজটি আটলান্টিকের গর্ভে তলিয়ে যায় রাত দুইটার দিকে। তখন ১৫ এপ্রিল ১৯১২।
এই আটজনের দলের সাতজনই আটলান্টিকে তলিয়ে যান, উইলিয়াম স্টেডও। কেবল একজন ফ্রেড সিওয়ার্ড বেঁচে যান। সাক্ষ্য তাঁরই।
মমির অভিশাপ
যিশুর জন্মের ১৫০০ বছর আগে গ্রিক প্রিন্সেস আমেন-রা কথা জানা যায়। মৃত্যুর পর প্রিন্সেসকে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা চমৎকার একটি কাঠের কফিনে ভরে নীল নদের তীরে একটি সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে রেখে দেওয়া হয়।
১৮৯০ দশকের শেষ দিকে খননকাজের সময় মমির এই চমৎকার কফিন কিংবা আধারটি পাওয়া গেলে চারজন ধনী ইংরেজকে তা কিনে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কফিনে রয়েছেন প্রিন্সেস আমেন-রা।
বহু মূল্য দিয়ে তাঁদের একজন কিনে নিলেন। তিনি কয়েক হাজার পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে কেনা কফিনটি হোটেলে নিজ কক্ষে নিয়ে এলেন।
কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেল তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে মরুভূমির দিকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি আর কখনো ফিরে আসেননি।
অবশিষ্ট তিনজনের একজন তাঁর মিসরীয় ভৃত্যের বন্দুক থেকে দুর্ঘটনাক্রমে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে আসা গুলিতে জখম হলেন। জখমটা এতই গুরুতর ছিল তার গুলিবিদ্ধ হাতটি কেটে ফেলতে হলো।
তৃতীয়জন দেশে ফেরার পর দেখলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় যে ব্যাংকে রেখেছিলেন, সেই ব্যাংকটি সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে।
চতুর্থজনও টাকাপয়সা খোয়ালেন, অসুস্থ হয়ে পড়লেন, চাকরি হারালেন এবং বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে দেশলাই বিক্রি শুরু করতে হয়।
এত কিছুর পরও পথের অনেক দৈব-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রিন্সেস আমেন-রার কফিন লন্ডনে পৌঁছে এবং একজন ধনী ব্যবসায়ী তা কিনে নেন।
এর পরপরই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়, আগুন লেগে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগত্যা ব্যবসায়ী কফিনটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে দান করে দেন।
ট্রাক থেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আঙিনায় যখন কফিন নামানো হচ্ছিল, ট্রাকটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করে। একজন পথচারীকে বিপদাপন্ন করে তোলে। যে দুজন শ্রমিক এই কাসকেটটি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিল, হঠাৎ পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলে। অন্যজন বাহ্যত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও দুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মারা যায়।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘ইজিপশিয়ান রুম’-এ এটি স্থাপন করার পর একটার পর একটা বিপত্তি ঘটতে শুরু করল।
জাদুঘরের নৈশপ্রহরী কফিনের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে লাগল। অন্যান্য প্রদর্শিত দ্রব্য রাতের বেলা কেউ ছুড়তে শুরু করল। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলো। অন্য প্রহরীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইল। ক্লিনাররা প্রিন্সেসের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানাল।
শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এটাকে বেজমেন্টে রেখে আসে এই চিন্তা করে যে এখন থেকে আর কারও ক্ষতি করতে পারবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল। বেজমেন্টে পাঠানোর কাজটা যিনি তত্ত্বাবধান করছিলেন তাঁকে তাঁর ডেস্কেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল আর বহনে সহায়তাকারীদের একজন ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পড়ল।
এত দিনে মমির এই ভয়াবহ আচরণের খবর সংবাদপত্রগুলো পেয়ে গেল। একজন ফটোগ্রাফার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এসে কাসকেটের ছবি তুললেন। ছবিটা যখন হয়ে এল তিনি অবাক হয়ে দেখলেন কফিনের ওপর আঁকা ছবিটা আসলে মানুষের বীভৎস মুখাবয়ব। তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন। বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন।
কিছুদিন পর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই মমি একজন ব্যক্তিগত সংগ্রহকারীর কাছে বেচে দেয়। সেখানেও একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটতে থাকলে মমির ক্রেতা এটাকে চিলেকোঠায় আটকে রাখেন।
পরে তিনি এটা বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্রিটেনের কোনো মিউজিয়াম এই মমি নিতে আগ্রহী নয়। মমি নাড়াচাড়ায় নিয়োজিত কুড়িজন মানুষের দুর্ভাগ্যের কথা—বিপন্নতা, দুর্যোগ এবং এমনকি মৃত্যুর খবর এখন সবারই জানা।
শেষ পর্যন্ত গোঁয়াড় প্রকৃতির একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ এসব দুর্ভাগ্যের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এবং বেশ দাম দিয়ে এটাকে কিনে নিউইয়র্ক নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।
১৯১২-এর এপ্রিলে কফিনটা জাহাজে তোলা হলো, আমেরিকান মালিকও সঙ্গে আছেন। তিনি জানেন আমেরিকানরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়।
হোয়াইট স্টার লাইনের নতুন জাহাজ, এটাই জাহাজের উদ্বোধনী যাত্রা—সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক। বিলাসবহুল এই জাহাজের নাম টাইটানিক।
আমেরিকান মালিক এবং জাহাজের দেড় হাজার যাত্রী ও টাইটানিক জাহাজটিসহ আমেন-রা সমাহিত হলেন আটলান্টিকের গভীর তলদেশে।
কেউ কেউ বলেন উদ্ধারকারী জাহাজ কার্পাথিয়া যখন মানুষ উদ্ধার করছিল, তখনই জাহাজের ক্রুরা কফিনটা জাহাজে তুলে নেয়। আমেন-রা যথারীতি নিউইয়র্ক পৌঁছে।
আমেরিকায় এই কফিন একটার পর একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটিয়ে চলে। একসময় সিদ্ধান্ত হয় কফিন আবার ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেড় মাস তখনো পুরো হয়নি। ইউরোপের পথে এমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ড জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ১৯১২ সালের ২৯ মে ৮৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়।
মমিটি সে যাত্রায়ও রক্ষা পায়। এর মালিক ঠিক করলেন, তৃতীয় কোনো জাহাজে মমিটি মিসরে পাঠিয়ে দেবেন। সেই তৃতীয় জাহাজের নাম লুসিতানিয়া। জার্মান সাবমেরিনের আক্রমণে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর কী হলো আর জানা নেই।
প্রিন্সেস আমেন-রা টাইটানিকে ছিলেন?
না, ছিলেন না। পুরোটাই কল্পকাহিনি। আর এ কাহিনি তৈরির কৃতিত্ব দুজনের—উইলিয়াম স্টেড এবং ডগলাস মারে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রুম নম্বর ৬২-তে সংরক্ষিত এই মমি ১৮৮৯ সালে মিসেস ওয়ারউইক হান্ট তাঁর ভাই আর্থার এফ হুইলারের পক্ষে ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে উপহার দেন। ১৮৯০ সালের দিকে এই কাসকেট মিউজিয়ামের প্রথম ইজিপশিয়ান রুমে প্রদর্শিত হতো। স্টেড ও মারের অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ১৯৮৫ সালে টাইটানিক হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চার্লস হ্যাম টাইটানিকে পরিবহন করা মালামালের তালিকা দেখার সুযোগ পান। তাতে মমি কিংবা কফিনের কোনো উল্লেখও দেখতে পাননি।
অনুসৃতি: ইবনে মুতালিব
স্টেড গল্পটা শুরু করেন ১২ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, গল্পটা শেষ হয় রাত ১২টার পরে। টাইটানিকডুবির সূত্রপাত হয় ১৪ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, জাহাজটি আটলান্টিকের গর্ভে তলিয়ে যায় রাত দুইটার দিকে। তখন ১৫ এপ্রিল ১৯১২।
এই আটজনের দলের সাতজনই আটলান্টিকে তলিয়ে যান, উইলিয়াম স্টেডও। কেবল একজন ফ্রেড সিওয়ার্ড বেঁচে যান। সাক্ষ্য তাঁরই।
মমির অভিশাপ
যিশুর জন্মের ১৫০০ বছর আগে গ্রিক প্রিন্সেস আমেন-রা কথা জানা যায়। মৃত্যুর পর প্রিন্সেসকে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা চমৎকার একটি কাঠের কফিনে ভরে নীল নদের তীরে একটি সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে রেখে দেওয়া হয়।
১৮৯০ দশকের শেষ দিকে খননকাজের সময় মমির এই চমৎকার কফিন কিংবা আধারটি পাওয়া গেলে চারজন ধনী ইংরেজকে তা কিনে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কফিনে রয়েছেন প্রিন্সেস আমেন-রা।
বহু মূল্য দিয়ে তাঁদের একজন কিনে নিলেন। তিনি কয়েক হাজার পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে কেনা কফিনটি হোটেলে নিজ কক্ষে নিয়ে এলেন।
কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেল তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে মরুভূমির দিকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি আর কখনো ফিরে আসেননি।
অবশিষ্ট তিনজনের একজন তাঁর মিসরীয় ভৃত্যের বন্দুক থেকে দুর্ঘটনাক্রমে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে আসা গুলিতে জখম হলেন। জখমটা এতই গুরুতর ছিল তার গুলিবিদ্ধ হাতটি কেটে ফেলতে হলো।
তৃতীয়জন দেশে ফেরার পর দেখলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় যে ব্যাংকে রেখেছিলেন, সেই ব্যাংকটি সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে।
চতুর্থজনও টাকাপয়সা খোয়ালেন, অসুস্থ হয়ে পড়লেন, চাকরি হারালেন এবং বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে দেশলাই বিক্রি শুরু করতে হয়।
এত কিছুর পরও পথের অনেক দৈব-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রিন্সেস আমেন-রার কফিন লন্ডনে পৌঁছে এবং একজন ধনী ব্যবসায়ী তা কিনে নেন।
এর পরপরই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়, আগুন লেগে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগত্যা ব্যবসায়ী কফিনটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে দান করে দেন।
ট্রাক থেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আঙিনায় যখন কফিন নামানো হচ্ছিল, ট্রাকটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করে। একজন পথচারীকে বিপদাপন্ন করে তোলে। যে দুজন শ্রমিক এই কাসকেটটি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিল, হঠাৎ পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলে। অন্যজন বাহ্যত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও দুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মারা যায়।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘ইজিপশিয়ান রুম’-এ এটি স্থাপন করার পর একটার পর একটা বিপত্তি ঘটতে শুরু করল।
জাদুঘরের নৈশপ্রহরী কফিনের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে লাগল। অন্যান্য প্রদর্শিত দ্রব্য রাতের বেলা কেউ ছুড়তে শুরু করল। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলো। অন্য প্রহরীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইল। ক্লিনাররা প্রিন্সেসের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানাল।
শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এটাকে বেজমেন্টে রেখে আসে এই চিন্তা করে যে এখন থেকে আর কারও ক্ষতি করতে পারবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল। বেজমেন্টে পাঠানোর কাজটা যিনি তত্ত্বাবধান করছিলেন তাঁকে তাঁর ডেস্কেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল আর বহনে সহায়তাকারীদের একজন ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পড়ল।
এত দিনে মমির এই ভয়াবহ আচরণের খবর সংবাদপত্রগুলো পেয়ে গেল। একজন ফটোগ্রাফার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এসে কাসকেটের ছবি তুললেন। ছবিটা যখন হয়ে এল তিনি অবাক হয়ে দেখলেন কফিনের ওপর আঁকা ছবিটা আসলে মানুষের বীভৎস মুখাবয়ব। তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন। বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন।
কিছুদিন পর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই মমি একজন ব্যক্তিগত সংগ্রহকারীর কাছে বেচে দেয়। সেখানেও একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটতে থাকলে মমির ক্রেতা এটাকে চিলেকোঠায় আটকে রাখেন।
পরে তিনি এটা বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্রিটেনের কোনো মিউজিয়াম এই মমি নিতে আগ্রহী নয়। মমি নাড়াচাড়ায় নিয়োজিত কুড়িজন মানুষের দুর্ভাগ্যের কথা—বিপন্নতা, দুর্যোগ এবং এমনকি মৃত্যুর খবর এখন সবারই জানা।
শেষ পর্যন্ত গোঁয়াড় প্রকৃতির একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ এসব দুর্ভাগ্যের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এবং বেশ দাম দিয়ে এটাকে কিনে নিউইয়র্ক নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।
১৯১২-এর এপ্রিলে কফিনটা জাহাজে তোলা হলো, আমেরিকান মালিকও সঙ্গে আছেন। তিনি জানেন আমেরিকানরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়।
হোয়াইট স্টার লাইনের নতুন জাহাজ, এটাই জাহাজের উদ্বোধনী যাত্রা—সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক। বিলাসবহুল এই জাহাজের নাম টাইটানিক।
আমেরিকান মালিক এবং জাহাজের দেড় হাজার যাত্রী ও টাইটানিক জাহাজটিসহ আমেন-রা সমাহিত হলেন আটলান্টিকের গভীর তলদেশে।
কেউ কেউ বলেন উদ্ধারকারী জাহাজ কার্পাথিয়া যখন মানুষ উদ্ধার করছিল, তখনই জাহাজের ক্রুরা কফিনটা জাহাজে তুলে নেয়। আমেন-রা যথারীতি নিউইয়র্ক পৌঁছে।
আমেরিকায় এই কফিন একটার পর একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটিয়ে চলে। একসময় সিদ্ধান্ত হয় কফিন আবার ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেড় মাস তখনো পুরো হয়নি। ইউরোপের পথে এমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ড জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ১৯১২ সালের ২৯ মে ৮৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়।
মমিটি সে যাত্রায়ও রক্ষা পায়। এর মালিক ঠিক করলেন, তৃতীয় কোনো জাহাজে মমিটি মিসরে পাঠিয়ে দেবেন। সেই তৃতীয় জাহাজের নাম লুসিতানিয়া। জার্মান সাবমেরিনের আক্রমণে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর কী হলো আর জানা নেই।
প্রিন্সেস আমেন-রা টাইটানিকে ছিলেন?
না, ছিলেন না। পুরোটাই কল্পকাহিনি। আর এ কাহিনি তৈরির কৃতিত্ব দুজনের—উইলিয়াম স্টেড এবং ডগলাস মারে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রুম নম্বর ৬২-তে সংরক্ষিত এই মমি ১৮৮৯ সালে মিসেস ওয়ারউইক হান্ট তাঁর ভাই আর্থার এফ হুইলারের পক্ষে ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে উপহার দেন। ১৮৯০ সালের দিকে এই কাসকেট মিউজিয়ামের প্রথম ইজিপশিয়ান রুমে প্রদর্শিত হতো। স্টেড ও মারের অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ১৯৮৫ সালে টাইটানিক হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চার্লস হ্যাম টাইটানিকে পরিবহন করা মালামালের তালিকা দেখার সুযোগ পান। তাতে মমি কিংবা কফিনের কোনো উল্লেখও দেখতে পাননি।
অনুসৃতি: ইবনে মুতালিব
No comments