দুর্নীতি-কালনেমির লংকাভাগ কাণ্ড by ইনাম আহমেদ চৌধুরী
সরকারের বদলে যদি মন্ত্রণালয় ধরে পদ্মাশ্রী খেতাব দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত ক্যাবিনেটের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা হবে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় অবশ্য মনে হচ্ছে, রেলমন্ত্রীই শক্ত দাবিদার হয়ে উঠবেন। কারণ এ ক্ষেত্রে ঘটনা, আয়োজন_ সবই ভিন্ন মাত্রার এবং চরম নাটকীয়।
আমরা জানতে পারলাম, মন্ত্রীর নিবাসে বৈঠকের পর তার এপিএসের নেতৃত্বে অত্যন্ত তুখোড় দু'জন কর্মকর্তা বের হলেন অর্থের সন্ধানে। সংগৃহীত হলো মাত্র ৭০ লাখ টাকা। তবে সম্ভবত আরও অনেক আড়ালে-আবডালে ছিল। কারণ শোনা যাচ্ছে নতুন মন্ত্রণালয়ে নাকি সতের হাজার নতুন চাকরি দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে ৭০ লাখ তো যৎসামান্য। তাতেও আবার রয়েছে নানা ভাগাভাগি
পাঠক-পাঠিকা, সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ! দুর্নীতির কত রঙ, কত ঢঙ, চেহারা, অবয়ব সম্ভব হতে পারে, তার শোকেস হচ্ছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ। সাবাস সরকার! সাবাস মন্ত্রিসভা! সাবাস ক্ষমতাসীন দল! এটা ঠিক যে, ক্ষমতায় না থাকলে দুর্নীতি করা যায় না এবং ইচ্ছা থাকলে প্রায় যে কোনো ক্ষমতাসীনই তা করতে পারেন। তবে দুর্নীতির আচারের বৈচিত্র্য নিয়ে এসে তাকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ নয়। আমাদের মনে হয়, বর্তমান সরকার সেই দুরূহ কাজটিই অবলীলায় সমাধা করে চলছে। বলিহারি! কুকাজে তাদের এই অসামান্য ক্ষমতার স্বীকৃতি না দিয়ে পারা যায় না!
এই তো দেখুন, শেয়ারবাজারের লুটপাটের কথা। বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় এলেই কিন্তু এটা হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে_ ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হচ্ছেন; কিন্তু কাউকেই ধরাছোঁয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের দাবি ছিল, তা পূরণ করা হয়েছে। তার সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে_ এ কেমন কথা! করতে গেলে যে সরকারপক্ষীয় রাঘববোয়ালরা ধরা পড়ে যাবেন! স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য_ ওই রাঘববোয়ালরা তার চেয়েও ক্ষমতাধর। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে একাধিক মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে। এই দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাসে, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে শেয়ার মার্কেটে সরকারি আনুকূল্যে মহাদুর্নীতির বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবাদ কখনও হয়নি। কিন্তু অসীম সাহসী সরকার অটল, অনড়। মানুষ মরেছে তো কী হয়েছে? মন্ত্রীরা তো বলছেনই যে, সীমান্তে নিরীহ নাগরিককে বিদেশি বৈরী সৈন্যরা মারছে, অত্যাচার করছে, তাতে সরকার কী করবে? তাদের ভাষ্য, এ তো হবেই। বেডরুমে সাংবাদিক হত্যা? তা তো হবেই। বেডরুমে হোক, রাস্তাঘাটে হোক, সীমান্তে হোক_ নাগরিকের প্রাণরক্ষার দায়িত্ব সরকার কেন নেবে? এ কেমন আবদার! সরকারের তো অন্যান্য উচ্চমার্গীয় কাজ রয়েছে! জাতির সেবা করার জন্য সরকার যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা তো দেখতে হবে।
এই তো নয়টি নতুন বেসরকারি ব্যাংক খোলার অনুমোদন দেওয়া হলো। ভেবে দেখুন, প্রত্যেক উদ্যোক্তা চারশ' কোটি টাকা মূলধন দিচ্ছেন, তারপর নতুন ব্যাংকের বাড়িঘর তৈরি করে, নিয়োগাদি দিয়ে চালু করতে আরও কয়েকশ' কোটি টাকার ধাক্কা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই তো এটা আদায় করতে হবে! টাকা তো আর গাছে ধরবে না! আফটার অল, নতুন ব্যাংক মানে তো জনগণেরই সেবা। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তার পেছনেও যুক্তি রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া, এত অল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আর কারা অর্থ আহরণ করতে পারেন? নেহায়েত দুর্মুখ ছাড়া একে কে আর দুর্নীতি বলবে?
প্রশ্নবিদ্ধ কুইক রেন্টাল পদ্ধতি চালু ছাড়া এত কম সময়ে বেশি মুনাফার সুযোগই-বা আর কীভাবে দেওয়া যেতে পারত, আপনারাই বলুন? এক্ষেত্রে টেন্ডার পরিহার করে টেন্ডারবাজির সুযোগই তো দেওয়া হচ্ছে না! দেখছেন না, টেন্ডারের সুযোগ দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কী কাণ্ডই না হলো! এ দেশে নাকি সেতু ও সড়ক বানাতে আগেও দুর্নীতি হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নকালীন। কিন্তু প্রকল্প শুরুর আগেই_ প্রি-টেন্ডারকালীন দুর্নীতি_ পদ্মা সেতু প্রকল্পের আগে দেশে কেন, বিশ্বের কোথাও কোনোকালে দেখা যায়নি। শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্য সব দাতা সংস্থাও পদ্মা সেতু প্রকল্পের অভিনব দুর্নীতিতে হতবাক হয়ে বলেছে_ আর নয়, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। এখন আবার যাওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে আঁতাত করতে। এবার সম্ভবত আমরা দেখতে পাব ভিন্নধর্মী কারসাজি। যা হোক, আমাদের সরকারের একটি উপাধিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা অন্তত তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে কীর্তিমানদের 'পদ্মশ্রী' খেতাব দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আমরা চালু করতে চাই 'পদ্মাশ্রী'। বিষয় অবশ্যই দুর্নীতি, তাতে যারা কীর্তিমান, তারাই এই খেতাব পাবেন। প্রথম খেতাবটি সম্ভবত বর্তমান সরকারেরই প্রাপ্য।
সরকারের বদলে যদি মন্ত্রণালয় ধরে পদ্মাশ্রী খেতাব দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত ক্যাবিনেটের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা হবে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় অবশ্য মনে হচ্ছে, রেলমন্ত্রীই শক্ত দাবিদার হয়ে উঠবেন। কারণ এ ক্ষেত্রে ঘটনা, আয়োজন_ সবই ভিন্ন মাত্রার এবং চরম নাটকীয়। আমরা জানতে পারলাম, মন্ত্রীর নিবাসে বৈঠকের পর তার এপিএসের নেতৃত্বে অত্যন্ত তুখোড় দু'জন কর্মকর্তা বের হলেন অর্থের সন্ধানে। সংগৃহীত হলো মাত্র ৭০ লাখ টাকা। তবে সম্ভবত আরও অনেক আড়ালে-আবডালে ছিল। কারণ শোনা যাচ্ছে নতুন মন্ত্রণালয়ে নাকি সতের হাজার নতুন চাকরি দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে ৭০ লাখ তো যৎসামান্য। তাতেও আবার রয়েছে নানা ভাগাভাগি। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত লংকাকাণ্ড হয়ে দাঁড়াল। ঠিক যেন কালনেমির লংকাভাগ! কয়েক দিন ধরে রেল আর কালো বিড়াল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যত কথাবার্তা। এই
কাহিনী তো সবারই জানা, পুনরাবৃত্তির
প্রয়োজন কী?
তার চেয়ে বরং চার-পাঁচ বছর আগের ঘটনা বলি। তখনকার মুখ্য বনরক্ষকের বাড়ির বালিশে, চালের বস্তায়, মুড়ির টিনে লাখ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমেই তখন তাকে খেতাব দেওয়া হয়েছিল 'বনভক্ষক'। কিন্তু গাড়িতে যে টাকা রাখা যায়, 'ব্যক্তিগত' সে টাকা নিয়ে এ বাড়ি, সে বাড়ি, মন্ত্রীর বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হাওয়াও খাওয়া যায়, সেটা সম্ভবত সেই অভাগার জানা ছিল না। তাহলে সে বেঁচেও যেতে পারত। আরেকটি কথা। বনে না হয় খাবার অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু রেল কীভাবে খাওয়া যায়! মুখ্য বন রক্ষককে না হয় সহজেই বনভক্ষক খেতাব দেওয়া গেছে। যারা রেলের মতো লোহালক্কড় খেয়ে চলছেন, তাদের কী খেতাব দেবেন, সুধীজনই বিবেচনা করুন।
তবে এপিএস পদের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে আমাকে আরও দু'কথা বলতেই হবে। তারা কত ক্ষমতাধর, কতরকম কাজের কাজি, মন্ত্রণালয়ে গেলেই দেখা যায়। যোগাযোগ, শিক্ষা প্রভৃতি কিছু মন্ত্রণালয়ের এপিএস, পিএস সাহেবদের সুনাম ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে। যাক, এসব দুদকের বিষয়। আমরা সাধারণ মানুষ বেশি নাক না গলানোই ভালো। আমি শুধু আশা করি, ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে এপিএস পদের চাহিদা। বিসিএস পরীক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন হতে পারেন।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী : সাবেক সচিব ও কলাম লেখক
পাঠক-পাঠিকা, সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ! দুর্নীতির কত রঙ, কত ঢঙ, চেহারা, অবয়ব সম্ভব হতে পারে, তার শোকেস হচ্ছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশ। সাবাস সরকার! সাবাস মন্ত্রিসভা! সাবাস ক্ষমতাসীন দল! এটা ঠিক যে, ক্ষমতায় না থাকলে দুর্নীতি করা যায় না এবং ইচ্ছা থাকলে প্রায় যে কোনো ক্ষমতাসীনই তা করতে পারেন। তবে দুর্নীতির আচারের বৈচিত্র্য নিয়ে এসে তাকে বিশ্বের শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ নয়। আমাদের মনে হয়, বর্তমান সরকার সেই দুরূহ কাজটিই অবলীলায় সমাধা করে চলছে। বলিহারি! কুকাজে তাদের এই অসামান্য ক্ষমতার স্বীকৃতি না দিয়ে পারা যায় না!
এই তো দেখুন, শেয়ারবাজারের লুটপাটের কথা। বর্তমান সরকারি দল ক্ষমতায় এলেই কিন্তু এটা হয়। হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে_ ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হচ্ছেন; কিন্তু কাউকেই ধরাছোঁয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধান কমিটি গঠনের দাবি ছিল, তা পূরণ করা হয়েছে। তার সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে_ এ কেমন কথা! করতে গেলে যে সরকারপক্ষীয় রাঘববোয়ালরা ধরা পড়ে যাবেন! স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য_ ওই রাঘববোয়ালরা তার চেয়েও ক্ষমতাধর। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে একাধিক মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছে। এই দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাসে, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে শেয়ার মার্কেটে সরকারি আনুকূল্যে মহাদুর্নীতির বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবাদ কখনও হয়নি। কিন্তু অসীম সাহসী সরকার অটল, অনড়। মানুষ মরেছে তো কী হয়েছে? মন্ত্রীরা তো বলছেনই যে, সীমান্তে নিরীহ নাগরিককে বিদেশি বৈরী সৈন্যরা মারছে, অত্যাচার করছে, তাতে সরকার কী করবে? তাদের ভাষ্য, এ তো হবেই। বেডরুমে সাংবাদিক হত্যা? তা তো হবেই। বেডরুমে হোক, রাস্তাঘাটে হোক, সীমান্তে হোক_ নাগরিকের প্রাণরক্ষার দায়িত্ব সরকার কেন নেবে? এ কেমন আবদার! সরকারের তো অন্যান্য উচ্চমার্গীয় কাজ রয়েছে! জাতির সেবা করার জন্য সরকার যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা তো দেখতে হবে।
এই তো নয়টি নতুন বেসরকারি ব্যাংক খোলার অনুমোদন দেওয়া হলো। ভেবে দেখুন, প্রত্যেক উদ্যোক্তা চারশ' কোটি টাকা মূলধন দিচ্ছেন, তারপর নতুন ব্যাংকের বাড়িঘর তৈরি করে, নিয়োগাদি দিয়ে চালু করতে আরও কয়েকশ' কোটি টাকার ধাক্কা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই তো এটা আদায় করতে হবে! টাকা তো আর গাছে ধরবে না! আফটার অল, নতুন ব্যাংক মানে তো জনগণেরই সেবা। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, তার পেছনেও যুক্তি রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া, এত অল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আর কারা অর্থ আহরণ করতে পারেন? নেহায়েত দুর্মুখ ছাড়া একে কে আর দুর্নীতি বলবে?
প্রশ্নবিদ্ধ কুইক রেন্টাল পদ্ধতি চালু ছাড়া এত কম সময়ে বেশি মুনাফার সুযোগই-বা আর কীভাবে দেওয়া যেতে পারত, আপনারাই বলুন? এক্ষেত্রে টেন্ডার পরিহার করে টেন্ডারবাজির সুযোগই তো দেওয়া হচ্ছে না! দেখছেন না, টেন্ডারের সুযোগ দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কী কাণ্ডই না হলো! এ দেশে নাকি সেতু ও সড়ক বানাতে আগেও দুর্নীতি হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নকালীন। কিন্তু প্রকল্প শুরুর আগেই_ প্রি-টেন্ডারকালীন দুর্নীতি_ পদ্মা সেতু প্রকল্পের আগে দেশে কেন, বিশ্বের কোথাও কোনোকালে দেখা যায়নি। শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্য সব দাতা সংস্থাও পদ্মা সেতু প্রকল্পের অভিনব দুর্নীতিতে হতবাক হয়ে বলেছে_ আর নয়, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। এখন আবার যাওয়া হচ্ছে মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে আঁতাত করতে। এবার সম্ভবত আমরা দেখতে পাব ভিন্নধর্মী কারসাজি। যা হোক, আমাদের সরকারের একটি উপাধিপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা অন্তত তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে কীর্তিমানদের 'পদ্মশ্রী' খেতাব দেওয়ার রেওয়াজ আছে। আমরা চালু করতে চাই 'পদ্মাশ্রী'। বিষয় অবশ্যই দুর্নীতি, তাতে যারা কীর্তিমান, তারাই এই খেতাব পাবেন। প্রথম খেতাবটি সম্ভবত বর্তমান সরকারেরই প্রাপ্য।
সরকারের বদলে যদি মন্ত্রণালয় ধরে পদ্মাশ্রী খেতাব দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত ক্যাবিনেটের মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা হবে। গত কয়েক দিনের ঘটনায় অবশ্য মনে হচ্ছে, রেলমন্ত্রীই শক্ত দাবিদার হয়ে উঠবেন। কারণ এ ক্ষেত্রে ঘটনা, আয়োজন_ সবই ভিন্ন মাত্রার এবং চরম নাটকীয়। আমরা জানতে পারলাম, মন্ত্রীর নিবাসে বৈঠকের পর তার এপিএসের নেতৃত্বে অত্যন্ত তুখোড় দু'জন কর্মকর্তা বের হলেন অর্থের সন্ধানে। সংগৃহীত হলো মাত্র ৭০ লাখ টাকা। তবে সম্ভবত আরও অনেক আড়ালে-আবডালে ছিল। কারণ শোনা যাচ্ছে নতুন মন্ত্রণালয়ে নাকি সতের হাজার নতুন চাকরি দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে ৭০ লাখ তো যৎসামান্য। তাতেও আবার রয়েছে নানা ভাগাভাগি। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত লংকাকাণ্ড হয়ে দাঁড়াল। ঠিক যেন কালনেমির লংকাভাগ! কয়েক দিন ধরে রেল আর কালো বিড়াল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যত কথাবার্তা। এই
কাহিনী তো সবারই জানা, পুনরাবৃত্তির
প্রয়োজন কী?
তার চেয়ে বরং চার-পাঁচ বছর আগের ঘটনা বলি। তখনকার মুখ্য বনরক্ষকের বাড়ির বালিশে, চালের বস্তায়, মুড়ির টিনে লাখ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমেই তখন তাকে খেতাব দেওয়া হয়েছিল 'বনভক্ষক'। কিন্তু গাড়িতে যে টাকা রাখা যায়, 'ব্যক্তিগত' সে টাকা নিয়ে এ বাড়ি, সে বাড়ি, মন্ত্রীর বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হাওয়াও খাওয়া যায়, সেটা সম্ভবত সেই অভাগার জানা ছিল না। তাহলে সে বেঁচেও যেতে পারত। আরেকটি কথা। বনে না হয় খাবার অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু রেল কীভাবে খাওয়া যায়! মুখ্য বন রক্ষককে না হয় সহজেই বনভক্ষক খেতাব দেওয়া গেছে। যারা রেলের মতো লোহালক্কড় খেয়ে চলছেন, তাদের কী খেতাব দেবেন, সুধীজনই বিবেচনা করুন।
তবে এপিএস পদের বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে আমাকে আরও দু'কথা বলতেই হবে। তারা কত ক্ষমতাধর, কতরকম কাজের কাজি, মন্ত্রণালয়ে গেলেই দেখা যায়। যোগাযোগ, শিক্ষা প্রভৃতি কিছু মন্ত্রণালয়ের এপিএস, পিএস সাহেবদের সুনাম ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে। যাক, এসব দুদকের বিষয়। আমরা সাধারণ মানুষ বেশি নাক না গলানোই ভালো। আমি শুধু আশা করি, ভবিষ্যতে চাকরির বাজারে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে এপিএস পদের চাহিদা। বিসিএস পরীক্ষার্থীরা এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন হতে পারেন।
ইনাম আহমেদ চৌধুরী : সাবেক সচিব ও কলাম লেখক
No comments