আইএমএফ-কঠিন পরীক্ষায় পাস, মিলেছে সেই ঋণ
দুই বছরের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অবশেষে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের ৯৮ কোটি ৭০ লাখ (৯৮৭ মিলিয়ন) ডলারের ঋণ সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনে বুধবার আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য তিন বছর মেয়াদি 'এঙ্টেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি' (ইসিএফ) কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঋণের প্রথম কিস্তির ১৪ কোটি ১০ লাখ (১৪১ মিলিয়ন) ডলার চলতি মাসের ২৪ তারিখে ছাড় করা হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে।
সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, বহিঃখাতের অবস্থা সুদৃঢ় করা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডের সমর্থনে এ ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে আইএমএফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আইএমএফের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'এটি কোনো দেশকে আইএমএফের দেওয়া সবচেয়ে বড় ইসিএফ। আমাদের আর্থিক খাত যে সুসংহত ও সঠিক পথে এগোচ্ছে- এটি তারই প্রমাণ। আইএমএফের এ সহায়তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রেটিংয়ের ইতিবাচক ধারা সমুন্নত রাখবে।'
প্রথম কিস্তি ছাড় হওয়ার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে গভর্নর জানান। এর ফলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে বলেও তিনি আশা করেন।
বৈদেশিক লেনদেনের চাপ সামলানোর জন্য আইএমএফের এক শ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রক্রিয়া চলে আসছিল ২০১০ সাল থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য চাপের মধ্যে পড়ায় এ সহায়তার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন নীতিনির্ধারকরা। এ ঋণ পেতে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়েছে আইএমএফের ১১টি 'পরামর্শ'।
এর মধ্যে ছিল জ্বালানি খাতের ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়ার অংশ হিসেবে তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো, কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ, সুদের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে ঋণের খরচ বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটের মধ্যেও রিজার্ভ আঁকড়ে থাকা, টাকার মান পড়তে দেওয়ার মতো অর্থনীতির জন্য কঠিন সব পরামর্শ। এ ছাড়া নতুন মূল্যসংযোজন কর ও আয়কর আইনও তৈরি হচ্ছে পরামর্শ অনুযায়ী।
আইএমএফের এ সহায়তা পাওয়ার আশায় এসব 'পরামর্শ' অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এ দেশের আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। সংস্থাটির অর্ধডজন দল দফায় দফায় এসে এসব পরামর্শ বাস্তবায়নের হিসাব নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে তাগিদ দিয়ে গেছে। সর্বশেষ প্রতিনিধিদল মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ঘুরে গিয়ে সন্তোষজনক প্রতিবেদন দেওয়ার পর বুধবার বাংলাদেশের জন্য ৯৮৭ মিলিয়ন ডলারের ইসিএফ অনুমোদন করল আইএমএফ বোর্ড।
এর দুদিন আগে লেসোটোর জন্য একই কর্মসূচির আওতায় ৭৮ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে আইএমএফ।
বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষার চাপে রয়েছে- এমন দেশগুলোর জন্য আইএমএফ আগে পোভার্টি রিডাকশন অ্যান্ড গ্রোথ ফ্যাসিলিটির (পিআরজিএফ) আওতায় ঋণ সহায়তা দিত। এর বদলে এখন ইসিএফ চালু করা হয়েছে। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ সুদমুক্ত। ঋণ পরিশোধের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর বাড়তি সময় (গ্রেস পিরিয়িড) পাওয়া যাবে। ২০০৬ সালে পিআরজিএফ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ সহায়তা পায়নি।
ইসিএফের আওতায় ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্য আর্থিক ও রাজস্ব খাতে অনেক অপ্রিয় ও সংবেদনশীল কঠিন নীতি প্রণয়ন করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, এসব পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপ সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে আইএমএফ।
বুধবার বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পর আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাওয়্যুকি শিনোহারা এক বিবৃতিতে বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও অবকাঠামো খাতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ে। বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়ায় ও তেলের দাম বাড়তে থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও রাজস্ব খাতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নীতি সমন্বয় ও কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কর নীতি ও প্রশাসন সংস্কার এবং আর্থিক খাতে তদারকি জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ করার মাধ্যমে সরকারের ঘাটতি কমানো ও সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কঠোর মুদ্রা নীতির আওতায় সুদ ও বিনিময় হার শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য উদারীকরণ ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নেও কাজ চলছে।
ধারাবাহিক এসব বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে অচিরেই বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য টেকসই পর্যায়ে আসবে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বাড়তি সহায়তা পাওয়ার পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইএমএফের ওই কর্মকর্তা।
সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, বহিঃখাতের অবস্থা সুদৃঢ় করা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের আর্থিক কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডের সমর্থনে এ ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে আইএমএফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আইএমএফের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'এটি কোনো দেশকে আইএমএফের দেওয়া সবচেয়ে বড় ইসিএফ। আমাদের আর্থিক খাত যে সুসংহত ও সঠিক পথে এগোচ্ছে- এটি তারই প্রমাণ। আইএমএফের এ সহায়তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের রেটিংয়ের ইতিবাচক ধারা সমুন্নত রাখবে।'
প্রথম কিস্তি ছাড় হওয়ার পর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে গভর্নর জানান। এর ফলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হবে বলেও তিনি আশা করেন।
বৈদেশিক লেনদেনের চাপ সামলানোর জন্য আইএমএফের এক শ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রক্রিয়া চলে আসছিল ২০১০ সাল থেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাড়তি জ্বালানি তেল আমদানির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য চাপের মধ্যে পড়ায় এ সহায়তার জরুরি প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন নীতিনির্ধারকরা। এ ঋণ পেতে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়েছে আইএমএফের ১১টি 'পরামর্শ'।
এর মধ্যে ছিল জ্বালানি খাতের ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়ার অংশ হিসেবে তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো, কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ, সুদের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে ঋণের খরচ বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটের মধ্যেও রিজার্ভ আঁকড়ে থাকা, টাকার মান পড়তে দেওয়ার মতো অর্থনীতির জন্য কঠিন সব পরামর্শ। এ ছাড়া নতুন মূল্যসংযোজন কর ও আয়কর আইনও তৈরি হচ্ছে পরামর্শ অনুযায়ী।
আইএমএফের এ সহায়তা পাওয়ার আশায় এসব 'পরামর্শ' অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে এ দেশের আর্থিক খাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। সংস্থাটির অর্ধডজন দল দফায় দফায় এসে এসব পরামর্শ বাস্তবায়নের হিসাব নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে তাগিদ দিয়ে গেছে। সর্বশেষ প্রতিনিধিদল মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা ঘুরে গিয়ে সন্তোষজনক প্রতিবেদন দেওয়ার পর বুধবার বাংলাদেশের জন্য ৯৮৭ মিলিয়ন ডলারের ইসিএফ অনুমোদন করল আইএমএফ বোর্ড।
এর দুদিন আগে লেসোটোর জন্য একই কর্মসূচির আওতায় ৭৮ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে আইএমএফ।
বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষার চাপে রয়েছে- এমন দেশগুলোর জন্য আইএমএফ আগে পোভার্টি রিডাকশন অ্যান্ড গ্রোথ ফ্যাসিলিটির (পিআরজিএফ) আওতায় ঋণ সহায়তা দিত। এর বদলে এখন ইসিএফ চালু করা হয়েছে। ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ সুদমুক্ত। ঋণ পরিশোধের জন্য সাড়ে পাঁচ বছর বাড়তি সময় (গ্রেস পিরিয়িড) পাওয়া যাবে। ২০০৬ সালে পিআরজিএফ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে কোনো ঋণ সহায়তা পায়নি।
ইসিএফের আওতায় ঋণ সহায়তা পাওয়ার জন্য আর্থিক ও রাজস্ব খাতে অনেক অপ্রিয় ও সংবেদনশীল কঠিন নীতি প্রণয়ন করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, এসব পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে এবং বিনিয়োগ ও উৎপাদনে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপ সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছে আইএমএফ।
বুধবার বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের পর আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাওয়্যুকি শিনোহারা এক বিবৃতিতে বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে নেতিবাচক ধারা, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও অবকাঠামো খাতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ে। বহির্বিশ্বে চাহিদা কমে যাওয়ায় ও তেলের দাম বাড়তে থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ও রাজস্ব খাতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। মূল্যস্ফীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নীতি সমন্বয় ও কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কর নীতি ও প্রশাসন সংস্কার এবং আর্থিক খাতে তদারকি জোরদার করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভর্তুকি যৌক্তিকীকরণ করার মাধ্যমে সরকারের ঘাটতি কমানো ও সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কঠোর মুদ্রা নীতির আওতায় সুদ ও বিনিময় হার শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য উদারীকরণ ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নেও কাজ চলছে।
ধারাবাহিক এসব বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে অচিরেই বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য টেকসই পর্যায়ে আসবে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের বাড়তি সহায়তা পাওয়ার পরিবেশ তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইএমএফের ওই কর্মকর্তা।
No comments