যে কথা বলতেই হবে’-গুন্টার গ্রাসের কবিতা নিয়ে কেন এই বিতর্ক by সরাফ আহমেদ
পৃথিবীর সব জাতির কিছু না কিছু ধূসর সময় থাকে, থাকে স্বর্ণ সময়। তবে জার্মান জাতির ধূসর সময়ের পাল্টাটা একটু বেশিই। অর্ধশতাব্দী সময়ের মধ্যে পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধের দায়ভার যে জাতির কাঁধে, তাদের সাবধানে থাকতে হয় বৈকি।
তার পরও সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার অধিকার তো সব জাতিরই আছে, আর তা-ই করেছেন সমকালীন জার্মান সাহিত্যের এবং বিশ্ববরেণ্য, নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস।
নয়টি পঙিক্ততে বিভক্ত ৬৯ লাইনের একটি কবিতা, কিন্তু কী প্রবল শক্তি, যেন একটি বদ্ধঘরের দরজার কপাট খুলে দেওয়া।
বনেদি জার্মান দৈনিক সুদ ডয়েচে যাইটুং-এর সাহিত্য পাতায় ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ‘ভাস গেসাগট ভেরডেন মুস’ বা বাংলায় ‘যে কথা বলতেই হবে’ শীর্ষক শিরোনামের ৬৯ লাইনের কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে, রাজনীতিবিদেরাসহ বিশ্বজুড়ে কবিতাটির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি পরমাণুশক্তির অধিকার প্রশ্নে ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের যে রাজনীতিক টানাপোড়েন চলছে এবং ইসরায়েল ইরানে আক্রমণের যে হুংকার দিচ্ছে, তা নিয়েই এই কবিতা।
১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি জার্মান রাষ্ট্রপতি হিন্ডেবুর্গের আনুকূল্য নিয়ে অ্যাডলফ হিটলারের ন্যাশনাল স্যোশালিজম দল ক্ষমতায় আসার পর ন্যাশনাল সোশ্যালিজমকে একটি জাতীয় সংস্কৃতির ধারক বা প্রবক্তা মনে হলেও আসলে তা ছিল জার্মান জাতির ঐতিহ্য ও জার্মান সংস্কৃতির শত্রু।
জার্মান ফ্যাসিবাদ ছিল বর্বর এক শক্তি, তাদের দানবীয় দর্শন বা ফ্যাসিস্ট হিটলারের রাজনীতি সম্পর্কে বলার কথার শেষ নেই, এই রাজনীতির বিরোধিতা যাঁরাই করেছেন, তাঁদের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচারই শুধু বেড়েছিল। তার ফলে কেউ বন্দী হয়েছিলেন, কেউ দেশত্যাগী হলেন বা হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে প্রাণ দিয়েছিলেন আর জার্মান সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটানো হয়েছিল।
ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বিরুদ্ধবাদীদের যেভাবে দমন-নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই একইভাবে সাংস্কৃতিক জীবনকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত করে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যেসব সাহিত্যকর্ম তাদের মতের সঙ্গে মিলল না বা ইহুদি লেখকদের বইপত্র ১৯৩৩ সালের মে মাসে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেসব লেখকের সাহিত্য-সৃষ্টি দগ্ধ হয়েছিল তাদের অন্যতম হলেন ব্রেথল্ট ব্রেশট, টমাস ম্যান, হাইনরিশ ম্যান, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, কুট টুখলস্কি প্রমুখ।
১৯৩৯ সালে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হিটলারের যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, ১৯৪৫ সালের ৮ মে বার্লিনে তার আত্মহননের মধ্য দিয়ে সেই মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছিল পাঁচ কোটি মানুষ। বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার ও তার সহযোগীরা জার্মানি তথা ইউরোপে যে বর্বরতা চালিয়েছিল, তা ইতিহাসের একটি নৃশংস অধ্যায়। হিটলারি বর্বরতার উদাহরণ পৃথিবীতে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে গুন্টার গ্রাসসহ যে জাতি গত শতাব্দীতে শুধু সাহিত্যেই সাতটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল, সেই দেশ ও জাতির ঘাড়ে হঠাৎ করে ফ্যাসিবাদ চেপে বসাটাও ছিল অবাক ব্যাপার আর তা ঘটেছিল জার্মানিতে সেই সময়কার অর্থনীতি এবং সামাজিক গণতন্ত্রী ও বাম রাজনীতিকদের অদূরদর্শিতার ফলেই।
এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, আমাদের উপমহাদেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারি শাসন এবং তার নাৎসি বাহিনী নিয়ে একটি মিথ আছে যে হিটলারই সেই বীর, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইহুদি জাতিসত্তাকে একটি উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছিলেন। আসলে হত্যা, ধ্বংসলীলা আর নিধন করে কোনো জাতিসত্তাকেই মুছে ফেলা যায় না। তা ছাড়া নাৎসি বাহিনী শুধু ইহুদি নিধনই নয়, জার্মানের প্রতিবেশী সব জাতিকেই ধ্বংসের অথবা করায়ত্তের চেষ্টা করেছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানে যুদ্ধ-পরবর্তী আর সব অন্য কিছুর মতো জার্মান সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন লড়াইয়ে এবং জার্মান সাহিত্যকে বিশ্বজনীন করার ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়ে আসা ৮৪ বছর বযস্ক বিশ্বখ্যাত এই জনপ্রিয় লেখককে জার্মান জাতির বিবেক বলে গণ্য করা হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান সাহিত্যকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সেই ১৯৫৫ সালে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী আর সাহিত্যিকদের দল গ্রুপ ৪৭-এ যোগ দিয়েছিলেন।
এককালীন জার্মান অধ্যুষিত এখনকার পোল্যান্ডের বন্দরনগর ডানজিগে জন্ম নেওয়া গ্রাস যুদ্ধের সাথি হয়েছেন এবং যুদ্ধের শিকার হয়েছেন। যুদ্ধকালীন ১৭ বছর বয়সে তিনি হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিজম দলের এসএস বাহিনীর সদস্য থাকলেও সেই তরুণ অপ্রাপ্ত বয়সের অতীতের জন্য ২০০৬ সালে তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
১৯৫৯ সালে তাঁর বিখ্যাত সাড়া জাগানো উপন্যাস টিনড্রামে জন্মস্থান ডানজিগের যুদ্ধকালীন ছবি চিত্রিত হয়েছে। ছোট ওসকারের ড্রাম পেটানো দিয়ে বিশ্ব বিবেককে শুনিয়েছিলেন নাৎসিদের যুদ্ধ বর্বরতার কাহিনি, ২৭টি ভাষায় অনূদিত এ বইটি নিয়ে সাহিত্য সমালোচকেরা বলেন, উপন্যাসটি বিংশ শতকের শাশ্বত সাহিত্যকর্মগুলোর একটি। যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান জাতির বিবেক এই লেখক সত্যকে কোনো দিন আড়াল করেননি।
তিনবার কলকাতা সফর করেছেন, সফর করেছেন ঢাকা শহরও। ভারতে সীমাহীন বৈভবের পাশে কলকাতার অভাব-দারিদ্র্য তাকে ব্যথিত করছে। এই দারিদ্র্যকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘জিব কাটি লজ্জায়’ বা ‘সুঙে সাইগেন’। কলকাতায় সমালোচনা হয়েছে তার। ঢাকায় গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী আর জেনেভা ক্যাম্পে বিহারিদের সমস্যার কথা বলেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মান সমাজের মূল সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ছিল না, ছিল আত্মশুদ্ধির সমস্যা। শুধু যুদ্ধের কারণে সভ্য একটি জাতির সব অর্জন বিসর্জিত হয়েছিল, তাই যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান রাজনীতিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা সম্মিলিতভাবে আদর্শ আর বিশ্বাসের মিলন ঘটিয়ে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। এই আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়াই দুই জার্মানের ঐক্য, ইউরোপীয় ঐক্য এবং অর্থনৈতিক মুক্তি এলেও নব্য নাৎসিদের উত্থান আর মাঝেমধ্যে তাদের বিদেশ-বিদ্বেষী হিংসাত্মক আচরণ একেবারে ঠেকানো যায়নি।
বিশ্বযুদ্ধের অপরাধবোধ আর পাছে নব্য নাৎসিরা উৎসাহিত হন এমন সব কথাবার্তা থেকে সব সময় বিরত থাকেন জার্মান রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরাসহ সজ্জনেরা। যুদ্ধ-পরবর্তী এই ধারার সঙ্গেই জার্মান জাতি পরিচিত।
তবে জায়নবাদের এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে যিনিই জার্মানিতে আলোচনা করতে চেয়েছেন, তিনিই চরমভাবে সমালোচিত হয়েছেন। ইতিপূর্বে জার্মান সাহিত্যিক মার্টিন ভালসার ১৯৯৮ সালে জার্মানের সব থেকে বড় সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে, বিশ্বযুদ্ধের অপরাধবোধ থাকলেও কথায় কথায় ইহুদি নির্যাতনের বিষয়টি সামনে টেনে আনা এবং বার্লিন শহরের মধ্যখানে বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ইহুদিদের স্মরণে স্টেডিয়ামসম এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সমালোচনা করেছিলেন। এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যিক মার্টিন ভালসার সমালোচকদের তোপের মুখে পড়ে যান।
জার্মানিতে এই প্রথাকেই ভাঙতে চেয়েছেন গুন্টার গ্রাস। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া এই জার্মান কবির সাম্প্রতিক এ কবিতাটি ইসরায়েল এবং জায়নবাদ নিয়ে ভিন্ন ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
‘যে কথা বলতেই হবে’ শিরোনামের কবিতাটি বনেদি জার্মান দৈনিক সুদ ডয়েচে যাইটুং-এর সাহিত্য পাতায় ৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। ৬৯ লাইনের এ কবিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে তা উঠে এসেছে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে। সম্প্রতি পরমাণুশক্তির অধিকার প্রশ্নে ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের যে রাজনীতিক টানাপোড়েন চলেছে এবং ইসরায়েল ইরানে আক্রমণের যে হুংকার দিচ্ছে তা নিয়েই এ কবিতা।
গুন্টার গ্রাস লিখেছেন, ‘যখন আরও অনেক দেশ এই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে, আর আমার দেশ জার্মানি যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের জন্য ডুবোজাহাজ তৈরি করছে।’ এই কবি আরও লিখেছেন, ‘ইসরায়েল যে বিশ্ব শান্তির অন্তরায়, আমি তা বলব।’ অন্য এক অংশে বলা হয়েছে, ‘ইহুদি রাষ্ট্রটিকে অবশ্যই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে দেওয়া হবে না। আমি আর নীরব হয়ে থাকব না, ইসরায়েলকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের ভণ্ড কপটতায় ভরা রাজনীতিতে ক্লান্ত আমরা, আর দেরি নয়, এখনই তা বলতে হবে।’
জার্মান টেলিভিশনের তিনটি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কবিতাটির প্রচণ্ড সমালোচনা হবে জেনেই তিনি তা লিখেছেন আর এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার এখনই সময়, আমাদের এই বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে হবে।’
তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর একপেশে আচরণের নিন্দা করে বলেছেন, কবিতাটির মূল বিষয়ে না গিয়ে প্রায় সব সংবাদমাধ্যম একই সুরে কথা বলছে, ইসরায়েল যে বহুদিন থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অনেক আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না, দৃশ্যত সেই অনালোচিত বিষয়গুলোকে নিয়েই তিনি বলতে চেয়েছেন।
তিনি নিজের দেশ জার্মানের সমালোচনা করে বলেছেন, জাতির স্কন্ধে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধের দায়ভারের বোঝা, তাদেরও উচিত নয় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের কাছে ডুবোজাহাজ বিক্রি করা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই কবিতাটির নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গুন্টার গ্রাসকে ইসরায়েলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এক সিদ্ধান্তে গুন্টার গ্রাসের ইসরায়েল সফরে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও গোঁড়া অর্থোডক্স ইহুদি পার্টির নেতা এলি ইসাই বলেছেন, গুন্টার গ্রাস একজন ইহুদি বিদ্বেষী, তাঁর কবিতায় ইসরায়েল ও এর জনগণের বিরুদ্ধে তিনি বিষোদ্গার করেছেন। এরপর আর তাঁকে ইসরায়েলের পবিত্র ভূমিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে প্রাপ্ত তাঁর নোবেল পুরস্কার বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন এই কট্টরপন্থী রাজনীতিক।
অবশ্য ইসরায়েল সরকারের ইসরায়েলের সফরে নিষেধাজ্ঞা রাজনীতি এই প্রথম নয়। প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদি ভাষাভাষীর শিক্ষক, বিখ্যাত মুক্তবুদ্ধির লেখক নোয়াম চমেসকিকে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দিয়ে জর্ডান-ইসরায়েল সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১০ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত আইরিশ মানবাধিকার নেত্রী মাইরেড মাগুয়েরের ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ে শান্তি মিশনের কাজে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। অবশ্য বিখ্যাত ইসরায়েলি ঐতিহাসিক টম সেভেক ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচক এবং ইসরায়েলের রাজনীতি ইরানের রাজনীতির মতোই বলে জার্মান সাপ্তাহিক ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক মোসে সীমারম্যান বলেছেন মূল আলোচনা থেকে সরে এসে গুন্টার গ্রাসের বক্তব্যকে বেশি রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে।
জার্মান লেখকদের সংগঠন পেন ক্লাবের সভাপতি লেখক যোয়্যাহান স্টাসার গ্রাসের কবিতার বিষয়কে সমর্থন করে অবিলম্বে জার্মান সরকারকে ইসরায়েলে সাবমেরিন রপ্তানি বন্ধের অনুরোধ করেছেন। তবে সরকারের মুখপাত্র স্টেফান সাইবারট বলেছেন, লেখকদের যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, সরকারেরও স্বাধীনতা রয়েছে সব ব্যাপারে মতামত না দেওয়ার। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুডো ভেস্টারভেলে বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানকে একই নৈতিক স্তরে রাখা বিচক্ষণ নয় বরং তা হবে উদ্ভট, হাস্যকর।’
গুন্টার গ্রাস ১৯৫৯ সালে তাঁর বিখ্যাত সাড়া জাগানো উপন্যাস টিনড্রামে যেমন বিশ্ব বিবেককে শুনিয়েছিলেন নাৎসিদের যুদ্ধ-বর্বরতার কাহিনি, তেমনি ৫২ বছর পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হবে জেনেও জীবনসায়াহ্নে এসে অত্যন্ত সাদামাটা ভাষার ‘যে কথা বলতেই হবে’ কবিতায় শোনাচ্ছেন ইসরায়েল আর জায়নবাদের আগ্রাসনের কথা। এখানেই এই মানবতাবাদী সাহিত্যিকের আসল সার্থকতা।
নয়টি পঙিক্ততে বিভক্ত ৬৯ লাইনের একটি কবিতা, কিন্তু কী প্রবল শক্তি, যেন একটি বদ্ধঘরের দরজার কপাট খুলে দেওয়া।
বনেদি জার্মান দৈনিক সুদ ডয়েচে যাইটুং-এর সাহিত্য পাতায় ৪ এপ্রিল প্রকাশিত ‘ভাস গেসাগট ভেরডেন মুস’ বা বাংলায় ‘যে কথা বলতেই হবে’ শীর্ষক শিরোনামের ৬৯ লাইনের কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে, রাজনীতিবিদেরাসহ বিশ্বজুড়ে কবিতাটির বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি পরমাণুশক্তির অধিকার প্রশ্নে ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের যে রাজনীতিক টানাপোড়েন চলছে এবং ইসরায়েল ইরানে আক্রমণের যে হুংকার দিচ্ছে, তা নিয়েই এই কবিতা।
১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি জার্মান রাষ্ট্রপতি হিন্ডেবুর্গের আনুকূল্য নিয়ে অ্যাডলফ হিটলারের ন্যাশনাল স্যোশালিজম দল ক্ষমতায় আসার পর ন্যাশনাল সোশ্যালিজমকে একটি জাতীয় সংস্কৃতির ধারক বা প্রবক্তা মনে হলেও আসলে তা ছিল জার্মান জাতির ঐতিহ্য ও জার্মান সংস্কৃতির শত্রু।
জার্মান ফ্যাসিবাদ ছিল বর্বর এক শক্তি, তাদের দানবীয় দর্শন বা ফ্যাসিস্ট হিটলারের রাজনীতি সম্পর্কে বলার কথার শেষ নেই, এই রাজনীতির বিরোধিতা যাঁরাই করেছেন, তাঁদের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচারই শুধু বেড়েছিল। তার ফলে কেউ বন্দী হয়েছিলেন, কেউ দেশত্যাগী হলেন বা হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে প্রাণ দিয়েছিলেন আর জার্মান সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটানো হয়েছিল।
ন্যাশনাল সোশ্যালিজমের বিরুদ্ধবাদীদের যেভাবে দমন-নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই একইভাবে সাংস্কৃতিক জীবনকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত করে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। যেসব সাহিত্যকর্ম তাদের মতের সঙ্গে মিলল না বা ইহুদি লেখকদের বইপত্র ১৯৩৩ সালের মে মাসে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যেসব লেখকের সাহিত্য-সৃষ্টি দগ্ধ হয়েছিল তাদের অন্যতম হলেন ব্রেথল্ট ব্রেশট, টমাস ম্যান, হাইনরিশ ম্যান, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, কুট টুখলস্কি প্রমুখ।
১৯৩৯ সালে প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হিটলারের যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, ১৯৪৫ সালের ৮ মে বার্লিনে তার আত্মহননের মধ্য দিয়ে সেই মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছিল পাঁচ কোটি মানুষ। বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার ও তার সহযোগীরা জার্মানি তথা ইউরোপে যে বর্বরতা চালিয়েছিল, তা ইতিহাসের একটি নৃশংস অধ্যায়। হিটলারি বর্বরতার উদাহরণ পৃথিবীতে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে গুন্টার গ্রাসসহ যে জাতি গত শতাব্দীতে শুধু সাহিত্যেই সাতটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল, সেই দেশ ও জাতির ঘাড়ে হঠাৎ করে ফ্যাসিবাদ চেপে বসাটাও ছিল অবাক ব্যাপার আর তা ঘটেছিল জার্মানিতে সেই সময়কার অর্থনীতি এবং সামাজিক গণতন্ত্রী ও বাম রাজনীতিকদের অদূরদর্শিতার ফলেই।
এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, আমাদের উপমহাদেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারি শাসন এবং তার নাৎসি বাহিনী নিয়ে একটি মিথ আছে যে হিটলারই সেই বীর, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইহুদি জাতিসত্তাকে একটি উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েছিলেন। আসলে হত্যা, ধ্বংসলীলা আর নিধন করে কোনো জাতিসত্তাকেই মুছে ফেলা যায় না। তা ছাড়া নাৎসি বাহিনী শুধু ইহুদি নিধনই নয়, জার্মানের প্রতিবেশী সব জাতিকেই ধ্বংসের অথবা করায়ত্তের চেষ্টা করেছিল।
যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানে যুদ্ধ-পরবর্তী আর সব অন্য কিছুর মতো জার্মান সাহিত্যের পুনরুজ্জীবন লড়াইয়ে এবং জার্মান সাহিত্যকে বিশ্বজনীন করার ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়ে আসা ৮৪ বছর বযস্ক বিশ্বখ্যাত এই জনপ্রিয় লেখককে জার্মান জাতির বিবেক বলে গণ্য করা হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান সাহিত্যকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সেই ১৯৫৫ সালে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী আর সাহিত্যিকদের দল গ্রুপ ৪৭-এ যোগ দিয়েছিলেন।
এককালীন জার্মান অধ্যুষিত এখনকার পোল্যান্ডের বন্দরনগর ডানজিগে জন্ম নেওয়া গ্রাস যুদ্ধের সাথি হয়েছেন এবং যুদ্ধের শিকার হয়েছেন। যুদ্ধকালীন ১৭ বছর বয়সে তিনি হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিজম দলের এসএস বাহিনীর সদস্য থাকলেও সেই তরুণ অপ্রাপ্ত বয়সের অতীতের জন্য ২০০৬ সালে তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করেন।
১৯৫৯ সালে তাঁর বিখ্যাত সাড়া জাগানো উপন্যাস টিনড্রামে জন্মস্থান ডানজিগের যুদ্ধকালীন ছবি চিত্রিত হয়েছে। ছোট ওসকারের ড্রাম পেটানো দিয়ে বিশ্ব বিবেককে শুনিয়েছিলেন নাৎসিদের যুদ্ধ বর্বরতার কাহিনি, ২৭টি ভাষায় অনূদিত এ বইটি নিয়ে সাহিত্য সমালোচকেরা বলেন, উপন্যাসটি বিংশ শতকের শাশ্বত সাহিত্যকর্মগুলোর একটি। যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান জাতির বিবেক এই লেখক সত্যকে কোনো দিন আড়াল করেননি।
তিনবার কলকাতা সফর করেছেন, সফর করেছেন ঢাকা শহরও। ভারতে সীমাহীন বৈভবের পাশে কলকাতার অভাব-দারিদ্র্য তাকে ব্যথিত করছে। এই দারিদ্র্যকে কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘জিব কাটি লজ্জায়’ বা ‘সুঙে সাইগেন’। কলকাতায় সমালোচনা হয়েছে তার। ঢাকায় গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী আর জেনেভা ক্যাম্পে বিহারিদের সমস্যার কথা বলেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মান সমাজের মূল সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক ছিল না, ছিল আত্মশুদ্ধির সমস্যা। শুধু যুদ্ধের কারণে সভ্য একটি জাতির সব অর্জন বিসর্জিত হয়েছিল, তাই যুদ্ধ-পরবর্তী জার্মান রাজনীতিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা সম্মিলিতভাবে আদর্শ আর বিশ্বাসের মিলন ঘটিয়ে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। এই আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়াই দুই জার্মানের ঐক্য, ইউরোপীয় ঐক্য এবং অর্থনৈতিক মুক্তি এলেও নব্য নাৎসিদের উত্থান আর মাঝেমধ্যে তাদের বিদেশ-বিদ্বেষী হিংসাত্মক আচরণ একেবারে ঠেকানো যায়নি।
বিশ্বযুদ্ধের অপরাধবোধ আর পাছে নব্য নাৎসিরা উৎসাহিত হন এমন সব কথাবার্তা থেকে সব সময় বিরত থাকেন জার্মান রাজনীতিক থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরাসহ সজ্জনেরা। যুদ্ধ-পরবর্তী এই ধারার সঙ্গেই জার্মান জাতি পরিচিত।
তবে জায়নবাদের এবং ইসরায়েলের আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে যিনিই জার্মানিতে আলোচনা করতে চেয়েছেন, তিনিই চরমভাবে সমালোচিত হয়েছেন। ইতিপূর্বে জার্মান সাহিত্যিক মার্টিন ভালসার ১৯৯৮ সালে জার্মানের সব থেকে বড় সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তি উপলক্ষে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তা হিসেবে, বিশ্বযুদ্ধের অপরাধবোধ থাকলেও কথায় কথায় ইহুদি নির্যাতনের বিষয়টি সামনে টেনে আনা এবং বার্লিন শহরের মধ্যখানে বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত ইহুদিদের স্মরণে স্টেডিয়ামসম এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সমালোচনা করেছিলেন। এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যিক মার্টিন ভালসার সমালোচকদের তোপের মুখে পড়ে যান।
জার্মানিতে এই প্রথাকেই ভাঙতে চেয়েছেন গুন্টার গ্রাস। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া এই জার্মান কবির সাম্প্রতিক এ কবিতাটি ইসরায়েল এবং জায়নবাদ নিয়ে ভিন্ন ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।
‘যে কথা বলতেই হবে’ শিরোনামের কবিতাটি বনেদি জার্মান দৈনিক সুদ ডয়েচে যাইটুং-এর সাহিত্য পাতায় ৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। ৬৯ লাইনের এ কবিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে তা উঠে এসেছে আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে। সম্প্রতি পরমাণুশক্তির অধিকার প্রশ্নে ইসরায়েল ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের যে রাজনীতিক টানাপোড়েন চলেছে এবং ইসরায়েল ইরানে আক্রমণের যে হুংকার দিচ্ছে তা নিয়েই এ কবিতা।
গুন্টার গ্রাস লিখেছেন, ‘যখন আরও অনেক দেশ এই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে, আর আমার দেশ জার্মানি যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের জন্য ডুবোজাহাজ তৈরি করছে।’ এই কবি আরও লিখেছেন, ‘ইসরায়েল যে বিশ্ব শান্তির অন্তরায়, আমি তা বলব।’ অন্য এক অংশে বলা হয়েছে, ‘ইহুদি রাষ্ট্রটিকে অবশ্যই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে দেওয়া হবে না। আমি আর নীরব হয়ে থাকব না, ইসরায়েলকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের ভণ্ড কপটতায় ভরা রাজনীতিতে ক্লান্ত আমরা, আর দেরি নয়, এখনই তা বলতে হবে।’
জার্মান টেলিভিশনের তিনটি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কবিতাটির প্রচণ্ড সমালোচনা হবে জেনেই তিনি তা লিখেছেন আর এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার এখনই সময়, আমাদের এই বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে হবে।’
তিনি সংবাদমাধ্যমগুলোর একপেশে আচরণের নিন্দা করে বলেছেন, কবিতাটির মূল বিষয়ে না গিয়ে প্রায় সব সংবাদমাধ্যম একই সুরে কথা বলছে, ইসরায়েল যে বহুদিন থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অনেক আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না, দৃশ্যত সেই অনালোচিত বিষয়গুলোকে নিয়েই তিনি বলতে চেয়েছেন।
তিনি নিজের দেশ জার্মানের সমালোচনা করে বলেছেন, জাতির স্কন্ধে দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধের দায়ভারের বোঝা, তাদেরও উচিত নয় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলের কাছে ডুবোজাহাজ বিক্রি করা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই কবিতাটির নিন্দা জানিয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা গুন্টার গ্রাসকে ইসরায়েলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে এক সিদ্ধান্তে গুন্টার গ্রাসের ইসরায়েল সফরে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও গোঁড়া অর্থোডক্স ইহুদি পার্টির নেতা এলি ইসাই বলেছেন, গুন্টার গ্রাস একজন ইহুদি বিদ্বেষী, তাঁর কবিতায় ইসরায়েল ও এর জনগণের বিরুদ্ধে তিনি বিষোদ্গার করেছেন। এরপর আর তাঁকে ইসরায়েলের পবিত্র ভূমিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ১৯৯৯ সালে সাহিত্যে প্রাপ্ত তাঁর নোবেল পুরস্কার বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন এই কট্টরপন্থী রাজনীতিক।
অবশ্য ইসরায়েল সরকারের ইসরায়েলের সফরে নিষেধাজ্ঞা রাজনীতি এই প্রথম নয়। প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদি ভাষাভাষীর শিক্ষক, বিখ্যাত মুক্তবুদ্ধির লেখক নোয়াম চমেসকিকে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দিয়ে জর্ডান-ইসরায়েল সীমান্ত থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১০ সালে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত আইরিশ মানবাধিকার নেত্রী মাইরেড মাগুয়েরের ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ে শান্তি মিশনের কাজে ইসরায়েলে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। অবশ্য বিখ্যাত ইসরায়েলি ঐতিহাসিক টম সেভেক ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচক এবং ইসরায়েলের রাজনীতি ইরানের রাজনীতির মতোই বলে জার্মান সাপ্তাহিক ডের স্পিগেলকে জানিয়েছেন। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক মোসে সীমারম্যান বলেছেন মূল আলোচনা থেকে সরে এসে গুন্টার গ্রাসের বক্তব্যকে বেশি রাজনীতিকীকরণ করা হচ্ছে।
জার্মান লেখকদের সংগঠন পেন ক্লাবের সভাপতি লেখক যোয়্যাহান স্টাসার গ্রাসের কবিতার বিষয়কে সমর্থন করে অবিলম্বে জার্মান সরকারকে ইসরায়েলে সাবমেরিন রপ্তানি বন্ধের অনুরোধ করেছেন। তবে সরকারের মুখপাত্র স্টেফান সাইবারট বলেছেন, লেখকদের যেমন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, সরকারেরও স্বাধীনতা রয়েছে সব ব্যাপারে মতামত না দেওয়ার। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুডো ভেস্টারভেলে বলেন, ‘ইসরায়েল ও ইরানকে একই নৈতিক স্তরে রাখা বিচক্ষণ নয় বরং তা হবে উদ্ভট, হাস্যকর।’
গুন্টার গ্রাস ১৯৫৯ সালে তাঁর বিখ্যাত সাড়া জাগানো উপন্যাস টিনড্রামে যেমন বিশ্ব বিবেককে শুনিয়েছিলেন নাৎসিদের যুদ্ধ-বর্বরতার কাহিনি, তেমনি ৫২ বছর পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হবে জেনেও জীবনসায়াহ্নে এসে অত্যন্ত সাদামাটা ভাষার ‘যে কথা বলতেই হবে’ কবিতায় শোনাচ্ছেন ইসরায়েল আর জায়নবাদের আগ্রাসনের কথা। এখানেই এই মানবতাবাদী সাহিত্যিকের আসল সার্থকতা।
No comments