উৎসব-ঢাকায় বিঝু উৎসব by মনিরুল আলম
বউ কথা কও আর কোকিলেরা বসন্তের শুরুতেই পাহাড়ে পাহাড়ে বৈসাবির আগমনবার্তা জানান দেওয়ার পরপরই আদিবাসীদের মনে জেগে ওঠে উৎসবের অন্য এক আনন্দধারা। পাহাড়ে পাহাড়ে শুরু হয়ে যায় বৈসাবি উৎসবের নানা আয়োজন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব কি শুধুই পাহাড়ে পাহাড়ে হবে? উত্তর—‘না’। যাঁরা জীবনের প্রয়োজনে নগরকেন্দ্রিক জীবনযাপন করছেন, তাঁরাই আয়োজন করলেন বৈসাবি উৎসব—এই ঢাকাতেই!
১২ এপ্রিল সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হলো এই উৎসবের। আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব পোশাক আর ফুল হাতে বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে চললেন। শোভাযাত্রার গন্তব্য জগন্নাথ হলের পুকুরঘাট। সেখানেই ভাসানো হবে ফুল। এই উৎসবকে আদিবাসী ভাষায় বলা হয় ‘ফুল বিঝু’। বিঝু উৎসবের এই দিনে চেঙ্গী-মাইনী-কাসালং-শঙ্খ-মাতামহুরী নদী ফুলে ফুলে ভরে যেত। কালের স্রোতে সেই ঐতিহ্যবাহী দিনগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
জগন্নাথ হলের পুকুরঘাটে ততক্ষণে শোভাযাত্রা চলে এসেছে। আয়োজন চলছে ফুল ভাসানোর। বাঁধানো ঘাটে একে একে ফুল হাতে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লেন। প্লাস্টিকের ছোট থালায় সাজানো নানা রঙের ফুল। কোনোটা গাঁদা, কোনোটা গোলাপ। তাই ভাসানো হলো খুব সুন্দর করে। সেই সঙ্গে পানিতে ছেটানো হলো গোলাপের কিছু পাপড়ি। বৈসাবি উৎসব সম্পর্কে আদিবাসী তরুণী মোনামি বলেন, ‘আজ আমাদের ফুল বিঝু। নদীতে ফুল ভাসিয়ে সারা বছরের জন্য শুভকামনা করি। আজকের দিনটি আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’ তারপর একটু থেমে বললেন, ‘পাহাড়ে গিয়ে সবার সঙ্গে এই উৎসব পালন করতে পারলে আরও ভালো লাগত।’
বৈসাবি শব্দটি মূলত ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, চাকমাদের ‘বিজু’, তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বিষু’, খিয়াংদের ‘সাংলান, ম্রোদের ‘সাংক্রান’ ও চাকদের ‘সাংগ্রাইং’ শব্দগুলো থেকে এসেছে। তবে এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ। আবহমান কাল ধরে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায় পালন করে আসছে তাদের নিজস্ব রীতিতে। চৈত্রের শেষ দুই দিন এবং বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনকে ঘিরে এই বৈসাবি উৎসব পালিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক শিবাশীষ চাকমা বলেন, ‘বৈসাবি মূলত তিন দিন ধরে পালন করা হয়। আজ আমরা পালন করছি “ফুল বিঝুু”। আগামীকাল পালন করা হবে “মূল বিঝুু” এবং নববর্ষের দিন পালন করা হবে “কুজ্জবিজ্জু”। বৈসাবির মূল প্রতিপাদ্য হলো, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে সব শ্রেণীর মধ্যে ঐক্যের সেতুবন্ধ রচনা করা, অতীতের সব ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরা এবং সব শ্রেণী ও জাতির মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন গড়ে তোলা। আজকের এই ফুল বিঝু উৎসব আমরা এখানে করছি মূলত যারা ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেনি তাদের জন্য। আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় এটাই প্রথম পালন করা হচ্ছে।’
জগন্নাথ হলের পুকুরঘাটে ফুল ভাসানোর পর সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এতে ছিল আদিবাসীদের নিজেদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পিঠা। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে ঐতিহ্যবাহী এই বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক সম্ভাষণ এবং সব ধরনের বৈষম্য, ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সব শ্রেণী ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পতাকা তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।
পুকুরে যখন ভাসছে ফুল, চারদিকে আদিবাসী তরুণ-তরুণী, তখন তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হতে ভালো লাগল আমাদেরও।
মনিরুল আলম
১২ এপ্রিল সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হলো এই উৎসবের। আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা নিজস্ব পোশাক আর ফুল হাতে বাদ্যের তালে তালে এগিয়ে চললেন। শোভাযাত্রার গন্তব্য জগন্নাথ হলের পুকুরঘাট। সেখানেই ভাসানো হবে ফুল। এই উৎসবকে আদিবাসী ভাষায় বলা হয় ‘ফুল বিঝু’। বিঝু উৎসবের এই দিনে চেঙ্গী-মাইনী-কাসালং-শঙ্খ-মাতামহুরী নদী ফুলে ফুলে ভরে যেত। কালের স্রোতে সেই ঐতিহ্যবাহী দিনগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
জগন্নাথ হলের পুকুরঘাটে ততক্ষণে শোভাযাত্রা চলে এসেছে। আয়োজন চলছে ফুল ভাসানোর। বাঁধানো ঘাটে একে একে ফুল হাতে সবাই দাঁড়িয়ে পড়লেন। প্লাস্টিকের ছোট থালায় সাজানো নানা রঙের ফুল। কোনোটা গাঁদা, কোনোটা গোলাপ। তাই ভাসানো হলো খুব সুন্দর করে। সেই সঙ্গে পানিতে ছেটানো হলো গোলাপের কিছু পাপড়ি। বৈসাবি উৎসব সম্পর্কে আদিবাসী তরুণী মোনামি বলেন, ‘আজ আমাদের ফুল বিঝু। নদীতে ফুল ভাসিয়ে সারা বছরের জন্য শুভকামনা করি। আজকের দিনটি আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’ তারপর একটু থেমে বললেন, ‘পাহাড়ে গিয়ে সবার সঙ্গে এই উৎসব পালন করতে পারলে আরও ভালো লাগত।’
বৈসাবি শব্দটি মূলত ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’, চাকমাদের ‘বিজু’, তঞ্চঙ্গ্যাদের ‘বিষু’, খিয়াংদের ‘সাংলান, ম্রোদের ‘সাংক্রান’ ও চাকদের ‘সাংগ্রাইং’ শব্দগুলো থেকে এসেছে। তবে এর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ। আবহমান কাল ধরে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ আদিবাসী সম্প্রদায় পালন করে আসছে তাদের নিজস্ব রীতিতে। চৈত্রের শেষ দুই দিন এবং বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনকে ঘিরে এই বৈসাবি উৎসব পালিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতি, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক শিবাশীষ চাকমা বলেন, ‘বৈসাবি মূলত তিন দিন ধরে পালন করা হয়। আজ আমরা পালন করছি “ফুল বিঝুু”। আগামীকাল পালন করা হবে “মূল বিঝুু” এবং নববর্ষের দিন পালন করা হবে “কুজ্জবিজ্জু”। বৈসাবির মূল প্রতিপাদ্য হলো, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে সব শ্রেণীর মধ্যে ঐক্যের সেতুবন্ধ রচনা করা, অতীতের সব ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরা এবং সব শ্রেণী ও জাতির মধ্যে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন গড়ে তোলা। আজকের এই ফুল বিঝু উৎসব আমরা এখানে করছি মূলত যারা ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেনি তাদের জন্য। আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় এটাই প্রথম পালন করা হচ্ছে।’
জগন্নাথ হলের পুকুরঘাটে ফুল ভাসানোর পর সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এতে ছিল আদিবাসীদের নিজেদের হাতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পিঠা। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমিতির পক্ষ থেকে ঐতিহ্যবাহী এই বৈসাবি উৎসব উপলক্ষে দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক সম্ভাষণ এবং সব ধরনের বৈষম্য, ভেদাভেদ, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সব শ্রেণী ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পতাকা তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।
পুকুরে যখন ভাসছে ফুল, চারদিকে আদিবাসী তরুণ-তরুণী, তখন তাঁদের সঙ্গে একাত্ম হতে ভালো লাগল আমাদেরও।
মনিরুল আলম
No comments