স্মরণ-বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ : চিরস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব by জিয়া হাবীব আহসান
আজ বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিস্মৃতিপরায়ণ এ সমাজে সামাজিক অস্থিরতা ও মূল্যবোধের এই প্রবল সংকটের দিনে জাস্টিস মোর্শেদের মতো একজন মহান ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের স্মরণে আলোচনা আজ খুবই জরুরি।
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে তিনি অনার্সসহ বিএ ও এমএ পাস করেন যথাক্রমে ১৯৩০ ও '৩২ সালে। ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে আইন পাস করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি লিনকন্স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে যোগ দেন। একই বছর ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২-'৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ দূরে চলে যাননি, বরং চিন্তা এবং প্রত্যয়ের প্রতি তাঁর বিশ্বাস যে অক্ষুণ্ন ছিল তা প্রমাণ করার জন্য তিনি দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমে ১৯৬৮ সালে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের কেঁৗসুলি স্যার টম উইলিয়ামস ঢাকায় এলেন তখন বিচারপতি মোর্শেদ টম উইলিয়ামসের সবচেয়ে নিকটতম সহচর ও উপদেষ্টা হলেন। বিচারপতি মোর্শেদের জ্ঞান ও আইনের শাসনের প্রতি অনুরাগ দেখে টম উইলিয়ামস বহুবার তাঁর প্রশংসা করেছেন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কঠিন পর্যায়ে বিচারপতি মোর্শেদ এগিয়ে এসেছিলেন একজন নির্ভীক সৈনিকের মতো। তাঁর সোচ্চার ভূমিকার জন্য এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সব শ্রেণীর মানুষের, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী মহলের বিশাল সমর্থন লাভ করেছিল। বিচারপতি মোর্শেদের ভূমিকা ও অবস্থানের গুরুত্ব জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত হয়েছিল। আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৯৬৯) পুরো পাকিস্তানের যে ৩৫ নেতা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিচারপতি মোর্শেদ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। এই বৈঠকের সময় বিচারপতি মোর্শেদ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তা আমাদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বিচারকের প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। বিচারপতি মোর্শেদ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারাসনে বসে স্বৈরাচারী সরকার এবং সামরিক আমলে যে সিদ্ধান্ত ও রায় দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের আইনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারপতি মোর্শেদ বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্রই সর্বোচ্চ অধিকার। তিনি আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করতেন। ১৯৬৯ সালের ৩ এপ্রিল তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিস্মৃতিপরায়ণ এই সমাজের জন্য, মূল্যবোধের প্রবল সংকটের সময় বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের মতো ব্যক্তিত্বের আজ বড়ই প্রয়োজন।
বিচারপতি মোর্শেদ আজ জীবিত নেই। কিন্তু তিনি যে বিশাল প্রত্যয়, মূল্যবোধ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামী অবদান রেখে গেছেন, তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের দেশের মানুষকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করবে। শুধু বিচারক হিসেবেই নন, দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তিনি যে ভূমিকা পালন করে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জিয়া হাবীব আহসান
বিচারকের প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। বিচারপতি মোর্শেদ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারাসনে বসে স্বৈরাচারী সরকার এবং সামরিক আমলে যে সিদ্ধান্ত ও রায় দিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। শুধু যুক্তিতর্কই নয়, বলিষ্ঠ ভাষা ও তাঁর পাণ্ডিত্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের আইনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিচারপতি মোর্শেদ বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্রই সর্বোচ্চ অধিকার। তিনি আইনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করতেন। ১৯৬৯ সালের ৩ এপ্রিল তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিস্মৃতিপরায়ণ এই সমাজের জন্য, মূল্যবোধের প্রবল সংকটের সময় বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের মতো ব্যক্তিত্বের আজ বড়ই প্রয়োজন।
বিচারপতি মোর্শেদ আজ জীবিত নেই। কিন্তু তিনি যে বিশাল প্রত্যয়, মূল্যবোধ এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামী অবদান রেখে গেছেন, তা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের দেশের মানুষকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করবে। শুধু বিচারক হিসেবেই নন, দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তিনি যে ভূমিকা পালন করে গেছেন, তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জিয়া হাবীব আহসান
No comments