রাজউকের সঠিক সিদ্ধান্ত-প্লট নয়, ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হবে

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান গত বুধবার ঝিলমিল প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের লটারি অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখন থেকে রাজউক আর প্লট বরাদ্দ দেবে না। প্লটের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবে। আমরা মনে করি, রাজউকের এই সিদ্ধান্তই সঠিক এবং একে স্বাগত জানাই।


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের প্রধান কাজ হচ্ছে রাজধানীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের শৃঙ্খলা বিধান ও মান নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু সেই প্রধান কাজটিই নানাভাবে উপেক্ষিত হচ্ছিল। ঢাকা মহানগরীতে এমন বহু গলি-ঘুপচি রয়েছে যেখানে গাড়ি তো দূরে থাক, একটি রিকশাও প্রবেশ করতে পারে না। অগি্নকাণ্ড কিংবা অন্য কোনো দুর্যোগের সময় সেখানে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করার প্রশ্নই ওঠে না। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা থাকলেও অধিকাংশ ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই বিধিমালা মানা হয় না। বিধিমালায় বাড়িঘর তৈরির সময় রাস্তার জন্য জমি ছাড়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা করা হয় না। উপরন্তু রাস্তার জমিও দখল করে ভবন তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সমূহ আশঙ্কা করছেন। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী জাতীয় সংসদসহ বহু জায়গায় বলেছেন, ছয় মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ৭০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে কয়েক লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। এত বড় দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো সংগতি বাংলাদেশ আগামী ১০০ বছরেও অর্জন করবে কি না সন্দেহ আছে। সে ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হচ্ছে, ভূমিকম্পপ্রতিরোধী ভবন তৈরি করা। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এটিকে বাধ্যতামূলক করা হলেও ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণে তা সচরাচর মানা হয় না। গত মাসে ৪ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ঢাকায় দুটি ভবন হেলে গেছে বলে জানা যায়। ভূমিকম্প ছাড়াই তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ীতে পর পর দুটি ভবন ধসে যে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা আমাদের এখনো বেদনার্ত করে। কাজেই বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে কী পরিস্থিতি হবে, তা অনুমান করতেও কষ্ট হয়। আবার দেখা যায়, রাজউক যে নকশা অনুমোদন করে দেয়, সেই নকশাও যথাযথভাবে মানা হয় না। বাড়ির মালিক ইচ্ছামতো ভবন বাড়িয়ে দেয়। ঢাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই যে এক ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছে, তা থেকে নগরবাসীকে রক্ষার দায়িত্বও মূলত রাজউকের। কিন্তু রাজউক সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে না পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে। তাই রাজউকে যে পরিমাণ লোকবল আছে, তাদের সর্বতোভাবে অতি জরুরি সব কাজেই নিয়োগ করা প্রয়োজন।
কাজেই আমরা মনে করি, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী রাজউক আর প্লট বরাদ্দ দেবে না বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটিই যথার্থ সিদ্ধান্ত। বরং তারা ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পিত উন্নয়ন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাসহ অতি জরুরি কাজগুলো সম্পাদন করুক, যাতে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। হাউজিং ও ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কম্পানিগুলোর সংগঠন রিহ্যাব এবং বিএলডিএ-র পক্ষ থেকেও দীর্ঘদিন ধরেই এমন দাবি জানানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে মিলে ঢাকা মহানগরীকে আরো বেশি বসবাসযোগ্য করার কাজেই আমরা রাজউকের তৎপরতা দেখতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.