সালিশি রায় আর ফতোয়া এক নয় by জুনাইদ আল হাবিব

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাম্য সালিশকে পত্রপত্রিকায় ফতোয়া বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, যা মোটেও ঠিক নয়। এতে ইসলামকে কলুষিত করা হচ্ছে। কারণ এসব গ্রাম্য সালিশের কোনো বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং কোনো যোগ্য আলেম বা মুফতি দ্বারা এসব ঘটছে না। তারপরও সালিশকে ফতোয়া বলে প্রচার করা অনভিপ্রেত।


নারী-পুরুষের বিভিন্ন অনাচারমূলক কাজের বিচার করার ক্ষমতা একমাত্র রাষ্ট্রের। কোনো মাতবর এসবের বিচার করতে পারেন না। যদি সালিশের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করা হয় তাহলে এটিকে 'গ্রাম্য সালিশ' বলে আখ্যায়িত করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এ বিচারকে ফতোয়া বলা যাবে না বা এটি ফতোয়াও নয়। বরং এ রায় গ্রামের মাতবরদের।
গ্রাম্য সালিশের রায় ফতোয়া হতে পারে না। কোনো মুফতি ফতোয়া দিলেও তা কার্যকর করার বিধান তার নেই। বরং এটি ফৌজদারি অপরাধ। ইসলামী শরিয়তে আইনকে যার-তার হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার দেয় না। কোনো মাতবরকে দেওয়া হয়নি লাঠিপেটা বা দোররা মারার অধিকার।
ইসলামে ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি, মদ্যপান প্রভৃতি অপরাধের শাস্তিমূলক বিধান রয়েছে। কিন্তু এ দণ্ডবিধি রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তা শুধু রাষ্ট্র কর্তৃক কার্যকর হতে পারে। কোনো ব্যক্তিবিশেষ বা পঞ্চায়েত কর্তৃক নয়।
এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুহাইরিজ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, 'হুদুদ (বিভিন্ন অপরাধের জন্য নির্ধারিত শরিয়াহ দণ্ড প্রয়োগ), গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টন), জাকাত আদায় ও বণ্টন এবং জুমা প্রতিষ্ঠা দেশের শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর ন্যস্ত।' এ হাদিস উল্লেখ করে আল্লামা তাহাবি (রহ.) বলেন, এ বিষয়ে কোনো সাহাবি বিপরীত কিছু বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
গ্রাম্য সালিশকে বারবার 'ফতোয়া' বলে আখ্যায়িত করার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, গ্রাম্য সালিশকে 'ফতোয়া' না বলে 'সালিশ' নামেই অভিহিত করুন। কারণ ফতোয়া বলা হয়, ধর্মীয় আইন বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রদত্ত বিধানকে। আরেকটি কথা, দেশের প্রথিতযশা মুফতিরাও এমন গ্রাম্য সালিশ-বিচারের বিরোধিতা করেছেন। সম্প্রতি হাইকোর্টও ফতোয়া সম্পর্কে আলাদা একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেখানেও ফতোয়া ও গ্রাম্য বিচারকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফতোয়া হলো ইসলামের অলঙ্ঘনীয় বিধান।
junaidlahbib@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.