প্রতিক্রিয়া-গণতন্ত্র, ক্রিকেট আর ক্রীড়া সংস্থায় গণতন্ত্র by আখতার হোসেন খান
গণতন্ত্র আর ক্রিকেটের কাকতালীয় সম্পর্ক নিয়ে এ কে এম জাকারিয়ার লেখা (প্রথম আলো, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১) আরেকবার প্রমাণ করল, একটা দেশে বা সমাজে যখন কোনো সুস্থ কাজ সুস্থিরভাবে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তাকে নিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য লেখার ভান্ডারও গড়ে উঠতে থাকে।
তার কিছুটা যেমন দৈনিক পাঠ্য হিসেবেই তার দায়িত্ব শেষ করে, তেমনি কিছুটা আবার ক্রীড়া-সাহিত্যের দীর্ঘস্থায়ী ভান্ডারেও জায়গা করে নেয়। প্রথম আলো এবং আরও কিছু বাংলা পত্রিকার নিয়মিত লেখক-সাংবাদিকদের বেশ খানিকটা লেখাই অনেক দিন পরও ক্রীড়ামোদীরা পড়েন তার মজাদার আবেশের জন্য, এক সুখস্মৃতিময় অতীতকে মনে ফিরিয়ে আনার জন্য।
ইংরেজি ভাষায় গড়ে উঠেছে বিপুল ক্রীড়াবিষয়ক এক প্রায় অথবা পুরো সাহিত্য পদমর্যাদার খনি। দুটো উদাহরণ মনে আসে। প্রাতঃস্মরণীয় ক্রিকেট-লেখক নেভিল কার্ডাস বলতেন, জ্যাক হবসের ব্যাট থেকে ‘স্নিক’ হলে মহাজাগতিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। এর চেয়ে বেশি সম্মান আর কীভাবে একজন ব্যাটসম্যানকে দেওয়া যেতে পারে?
শুরুতে বর্ণিত লেখার মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একমত হয়েও বলা যায়, আসলে ইংরেজরা দীর্ঘদিনের জন্য যেখানে উপনিবেশ গেড়েছে, সেখানেই ক্রিকেটের বিস্তার ঘটেছে। পৌনে দু শ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশ পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে মত্ততায় আর গণভিত্তিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সমান পর্যায়ের। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের বাইরে থেকে শুধু হল্যান্ডই আসে নিয়মিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। আর সেখানেও ছিল আজ থেকে অনেক দিন আগে ঘটে যাওয়া নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে অবস্থানরত ব্রিটিশ সৈন্যদের ক্রিকেটচর্চা।
ক্রিকেটের পরিচালক সংস্থা আইসিসির সঙ্গে এমসিসির সম্পর্ককে আইনসভা-নির্বাহী বিভাগের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা যুক্তিযুক্ত। শুধু ক্রিকেটেই নয়, ফুটবলেও আছে একই ধরনের এক বিধান এবং তা দিয়ে ক্রিকেটের মতো ফুটবলের উদ্ভাবক শ্বেতদ্বীপবাসীরা খেলার আইনকানুনে বাহ্য আধিপত্য বজায় রেখেছে। হয়তো এটার প্রয়োজন ছিল, নয়তো বিশ্বজোড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের হাতে পড়ে ক্রিকেট-ফুটবলের পুরো চেহারাই পাল্টে যেত।
এমসিসি যেমন একটা অসরকারি ক্লাব, কিন্তু সম্পূর্ণত এবং বিদেশি কিছু সদস্যত্ব সত্ত্বেও নিঃসংকোচে ব্রিটিশ, তেমনি ফুটবলের আদি আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (ইফাব) ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ছিল পুরোপুরি গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের চারটি অ্যাসোসিয়েশনের হাতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা ফুটবলের আইন সুষম করার প্রথম প্রয়াস পান। এর পরও ব্রিটেনে চার ধরনের আইন প্রযুক্ত হতে থাকে। ১৮৮২ সালে চার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় ঠিক হয় ফুটবলের জন্য সুষম আইন হবে, আর চার বছর পরে ১৯৮৬ সালে লন্ডনের আরেক সভায় এরা মিলে তৈরি করে ‘ইফাব’। শুরুতে এর প্রয়োজন ছিল ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপে সুষম আইন প্রয়োগের জন্য। ফুটবল অনেক দিন আগে থেকেই একেক জায়গায় একেকভাবে খেলা হচ্ছিল।
আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ইফাবের বিধিবিধান মানার অঙ্গীকার করে বটে, কিন্তু শুধু ১৯১৩ সালেই ইফাবের সদস্যত্ব পায়, তা-ও আবার উত্তর আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের সমান ভোটাধিকার নিয়ে। ১৯৫৮ সালে ইফাব বর্তমান ভোটক্ষমতা চালু করে, এতে ফিফা পায় চার ভোট আর মূল প্রতিষ্ঠাতারা একটি করে চার ভোট। আইনের সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ছয় ভোটের, অর্থাৎ ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সহযোগিতা ছাড়া আইন বদলানো সম্ভব নয়, যদি বা ফিফা গ্রহণ করার পরেই সংশোধিত আইনের প্রয়োগ হতে পারে। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে অবশ্য আইন ইংলিশ ক্লাব এমসিসিরই একক দায়। এবং মনে করা যেতে পারে, আইসিসিতে অশ্বেতাঙ্গদের দাপট বাড়ার পরে এবং লর্ডস-মন্টিকার্লো হয়ে সদর দপ্তর দুবাইয়ে সরে আসায় এমসিসি ক্রিকেটে নিজস্ব বিশ্বজনীনতা বজায় রাখতেই এমসিসি বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির গঠন হয়েছে।
ইফাবে যেমন ব্রিটিশদের প্রাধান্য, তেমনি ফিফাতেও আছে একধরনের ইউরোপীয় কর্তৃত্ব: ২০৮ সদস্যের ফিফাতে (লক্ষণীয় যে এ সংখ্যা জাতিসংঘের সদস্যসংখ্যার চেয়েও বেশি) নির্বাহী ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রাই প্রধান। সভাপতির পদে ২০৮ সদস্যের সবাই ভোট দেন বটে, কিন্তু ফিফার কার্যনির্বাহী পরিষদের ২৪ সদস্যের মধ্যে তিনটি সহসভাপতি আর পাঁচটি সদস্যের পদ ইউরোপের জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে একটি সহসভাপতি পদ আবার ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্য চিরদিনের রেখে দেওয়া। এ ছাড়া অন্যান্য মহাদেশের জন্যও পদ সংরক্ষিত আছে বটে, কিন্তু সভাপতি বাদে বাকি ২৩ পদের আটটিই ইউরোপের হাতে। আবার বিশ্বকাপ কোথায় হবে, তা-ও ঠিক করে কার্যনির্বাহী পরিষদ। অল্প বিছুদিন আগে রাশিয়া আর কাতারে ২০১৮ ও ২০২২-এর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় প্রাধান্য-সংবলিত নির্বাহী পরিষদই নেয়। তাই দৈনন্দিন ও প্রধান কাজে ইউরোপ যা চায়, তা-ই হয়।
আমরাই বা কম যাই কোথায়? জাতীয় শুটিং ফেডারেশন বাদে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের গঠন গণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতি একধরনের অবজ্ঞা বৈকি। রাজধানী ঢাকার ক্লাবগুলোর ভোট কমপক্ষে একটা, অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনার মতো ক্রীড়া কেন্দ্রগুলোর বড় ক্লাবগুলোর একটাও ভোট নেই; যেন ঘটনাচক্রে ঢাকার ভৌগোলিক অবস্থিতিই সব মুশকিল আসান করে, স্বর্গ সন্নিধির নিশ্চয়তা দেয়। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের পরামর্শে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে ভোটক্ষমতায় যে সমতাভিত্তিক পুনর্বিন্যাস এনেছে, তা-ই হওয়া উচিত অন্য সব ফেডারেশনের জন্য অনুকরণীয়।
অন্য অনেক খেলার মতো ক্রিকেটে ফাঁকি নেই: যতক্ষণ ভালো খেলা, ততক্ষণ ফললাভ। একসময়ের অবসরভোগী শ্রেণীর খেলা এখন বিবর্তনে এবং ৫০ ওভার ও টি-টোয়েন্টির কল্যাণে সাধারণ জনতারও দুঃখ-কষ্ট ভোলায়, অসীম আনন্দের কারণ হয়। এবং এ-ও এক এক গণতান্ত্রিক বিকাশ। এবং সে পথেই হয়তো দুনিয়াজোড়া ক্রীড়া সংস্থাগুলো প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে পা বাড়াবে।
বিশ্বকাপের আনন্দযজ্ঞে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিশুদ্ধতম বিকাশে কৃষক-শ্রমিকদের প্রকৃত অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানুষের চিরন্তন দাবি বিনোদনের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে ক্রিকেট বেঁচে থাকবে, এ আশা প্রত্যেকের। কৃষক আর শ্রমিকেরা শুধু দর্শকই জোগায় না, খেলোয়াড় বানানোর অফুরন্ত উৎস। ক্রিকেট ও গণতন্ত্রের কাকতালীয় সম্পর্ক খোঁজার জন্য লেখক এ কে এম জাকারিয়াকে ধন্যবাদ।
আখতার হোসেন খান: সাবেক সচিব।
ইংরেজি ভাষায় গড়ে উঠেছে বিপুল ক্রীড়াবিষয়ক এক প্রায় অথবা পুরো সাহিত্য পদমর্যাদার খনি। দুটো উদাহরণ মনে আসে। প্রাতঃস্মরণীয় ক্রিকেট-লেখক নেভিল কার্ডাস বলতেন, জ্যাক হবসের ব্যাট থেকে ‘স্নিক’ হলে মহাজাগতিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। এর চেয়ে বেশি সম্মান আর কীভাবে একজন ব্যাটসম্যানকে দেওয়া যেতে পারে?
শুরুতে বর্ণিত লেখার মূল প্রতিপাদ্যের সঙ্গে একমত হয়েও বলা যায়, আসলে ইংরেজরা দীর্ঘদিনের জন্য যেখানে উপনিবেশ গেড়েছে, সেখানেই ক্রিকেটের বিস্তার ঘটেছে। পৌনে দু শ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশ পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে মত্ততায় আর গণভিত্তিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সমান পর্যায়ের। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের বাইরে থেকে শুধু হল্যান্ডই আসে নিয়মিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। আর সেখানেও ছিল আজ থেকে অনেক দিন আগে ঘটে যাওয়া নেপোলিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের সময়ে অবস্থানরত ব্রিটিশ সৈন্যদের ক্রিকেটচর্চা।
ক্রিকেটের পরিচালক সংস্থা আইসিসির সঙ্গে এমসিসির সম্পর্ককে আইনসভা-নির্বাহী বিভাগের সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা যুক্তিযুক্ত। শুধু ক্রিকেটেই নয়, ফুটবলেও আছে একই ধরনের এক বিধান এবং তা দিয়ে ক্রিকেটের মতো ফুটবলের উদ্ভাবক শ্বেতদ্বীপবাসীরা খেলার আইনকানুনে বাহ্য আধিপত্য বজায় রেখেছে। হয়তো এটার প্রয়োজন ছিল, নয়তো বিশ্বজোড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের হাতে পড়ে ক্রিকেট-ফুটবলের পুরো চেহারাই পাল্টে যেত।
এমসিসি যেমন একটা অসরকারি ক্লাব, কিন্তু সম্পূর্ণত এবং বিদেশি কিছু সদস্যত্ব সত্ত্বেও নিঃসংকোচে ব্রিটিশ, তেমনি ফুটবলের আদি আইন প্রণয়নকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (ইফাব) ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত ছিল পুরোপুরি গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের চারটি অ্যাসোসিয়েশনের হাতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডের স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা ফুটবলের আইন সুষম করার প্রথম প্রয়াস পান। এর পরও ব্রিটেনে চার ধরনের আইন প্রযুক্ত হতে থাকে। ১৮৮২ সালে চার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এক সভায় ঠিক হয় ফুটবলের জন্য সুষম আইন হবে, আর চার বছর পরে ১৯৮৬ সালে লন্ডনের আরেক সভায় এরা মিলে তৈরি করে ‘ইফাব’। শুরুতে এর প্রয়োজন ছিল ব্রিটিশ হোম চ্যাম্পিয়নশিপে সুষম আইন প্রয়োগের জন্য। ফুটবল অনেক দিন আগে থেকেই একেক জায়গায় একেকভাবে খেলা হচ্ছিল।
আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ইফাবের বিধিবিধান মানার অঙ্গীকার করে বটে, কিন্তু শুধু ১৯১৩ সালেই ইফাবের সদস্যত্ব পায়, তা-ও আবার উত্তর আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের সমান ভোটাধিকার নিয়ে। ১৯৫৮ সালে ইফাব বর্তমান ভোটক্ষমতা চালু করে, এতে ফিফা পায় চার ভোট আর মূল প্রতিষ্ঠাতারা একটি করে চার ভোট। আইনের সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ছয় ভোটের, অর্থাৎ ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনগুলোর সহযোগিতা ছাড়া আইন বদলানো সম্ভব নয়, যদি বা ফিফা গ্রহণ করার পরেই সংশোধিত আইনের প্রয়োগ হতে পারে। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে অবশ্য আইন ইংলিশ ক্লাব এমসিসিরই একক দায়। এবং মনে করা যেতে পারে, আইসিসিতে অশ্বেতাঙ্গদের দাপট বাড়ার পরে এবং লর্ডস-মন্টিকার্লো হয়ে সদর দপ্তর দুবাইয়ে সরে আসায় এমসিসি ক্রিকেটে নিজস্ব বিশ্বজনীনতা বজায় রাখতেই এমসিসি বিশ্ব ক্রিকেট কমিটির গঠন হয়েছে।
ইফাবে যেমন ব্রিটিশদের প্রাধান্য, তেমনি ফিফাতেও আছে একধরনের ইউরোপীয় কর্তৃত্ব: ২০৮ সদস্যের ফিফাতে (লক্ষণীয় যে এ সংখ্যা জাতিসংঘের সদস্যসংখ্যার চেয়েও বেশি) নির্বাহী ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রাই প্রধান। সভাপতির পদে ২০৮ সদস্যের সবাই ভোট দেন বটে, কিন্তু ফিফার কার্যনির্বাহী পরিষদের ২৪ সদস্যের মধ্যে তিনটি সহসভাপতি আর পাঁচটি সদস্যের পদ ইউরোপের জন্য সংরক্ষিত; এর মধ্যে একটি সহসভাপতি পদ আবার ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনগুলোর জন্য চিরদিনের রেখে দেওয়া। এ ছাড়া অন্যান্য মহাদেশের জন্যও পদ সংরক্ষিত আছে বটে, কিন্তু সভাপতি বাদে বাকি ২৩ পদের আটটিই ইউরোপের হাতে। আবার বিশ্বকাপ কোথায় হবে, তা-ও ঠিক করে কার্যনির্বাহী পরিষদ। অল্প বিছুদিন আগে রাশিয়া আর কাতারে ২০১৮ ও ২০২২-এর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় প্রাধান্য-সংবলিত নির্বাহী পরিষদই নেয়। তাই দৈনন্দিন ও প্রধান কাজে ইউরোপ যা চায়, তা-ই হয়।
আমরাই বা কম যাই কোথায়? জাতীয় শুটিং ফেডারেশন বাদে বাংলাদেশের বেশির ভাগ জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের গঠন গণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতি একধরনের অবজ্ঞা বৈকি। রাজধানী ঢাকার ক্লাবগুলোর ভোট কমপক্ষে একটা, অন্যদিকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনার মতো ক্রীড়া কেন্দ্রগুলোর বড় ক্লাবগুলোর একটাও ভোট নেই; যেন ঘটনাচক্রে ঢাকার ভৌগোলিক অবস্থিতিই সব মুশকিল আসান করে, স্বর্গ সন্নিধির নিশ্চয়তা দেয়। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের পরামর্শে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভৌগোলিক এলাকার ভিত্তিতে ভোটক্ষমতায় যে সমতাভিত্তিক পুনর্বিন্যাস এনেছে, তা-ই হওয়া উচিত অন্য সব ফেডারেশনের জন্য অনুকরণীয়।
অন্য অনেক খেলার মতো ক্রিকেটে ফাঁকি নেই: যতক্ষণ ভালো খেলা, ততক্ষণ ফললাভ। একসময়ের অবসরভোগী শ্রেণীর খেলা এখন বিবর্তনে এবং ৫০ ওভার ও টি-টোয়েন্টির কল্যাণে সাধারণ জনতারও দুঃখ-কষ্ট ভোলায়, অসীম আনন্দের কারণ হয়। এবং এ-ও এক এক গণতান্ত্রিক বিকাশ। এবং সে পথেই হয়তো দুনিয়াজোড়া ক্রীড়া সংস্থাগুলো প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে পা বাড়াবে।
বিশ্বকাপের আনন্দযজ্ঞে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিশুদ্ধতম বিকাশে কৃষক-শ্রমিকদের প্রকৃত অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মানুষের চিরন্তন দাবি বিনোদনের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে ক্রিকেট বেঁচে থাকবে, এ আশা প্রত্যেকের। কৃষক আর শ্রমিকেরা শুধু দর্শকই জোগায় না, খেলোয়াড় বানানোর অফুরন্ত উৎস। ক্রিকেট ও গণতন্ত্রের কাকতালীয় সম্পর্ক খোঁজার জন্য লেখক এ কে এম জাকারিয়াকে ধন্যবাদ।
আখতার হোসেন খান: সাবেক সচিব।
No comments