কাবিখায় অনিয়ম-মর্যাদাহানিকর বাঁশের মাচা
কাজের বিনিময়ে খাদ্য, কাজের বিনিময়ে টাকা বা টেস্ট রিলিফের মতো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীমূলক কর্মসূচিগুলোতে যে ধরনের নয়ছয় হয়ে থাকে, রাজশাহীর চারটি উপজেলার অঘটনাবলি তা থেকে ভিন্ন নয়। এটা ওপেন সিক্রেটও যে কাবিখা বা কাবিটা অনেকাংশে প্রণীতই হয়ে থাকে কেন্দ্রে 'ক্ষমতাসীন' রাজনৈতিক দলের স্থানীয়
নেতাকর্মীদের অলিখিত উপার্জনের উৎস হিসেবে। যদিও এ ধরনের কর্মসূচির লিখিত লক্ষ্য হচ্ছে আকালের সময়ে খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার ছোটখাটো উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা; স্থানীয় কর্তারা বাস্তবতা অনুধাবন করেই এসবের তদারকিতে খুব একটা আগ্রহবোধ করেন না। তত্ত্বকথা হচ্ছে, আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুর্নীতি, অনিয়মও অগ্রাহ্য করার অবকাশ নেই; কিন্তু মাঠের বাস্তবতা যে ভিন্ন বলাই বাহুল্য। ফলে কেবল রাজশাহী নয়, দেশের সর্বত্রই কাবিখা, কাবিটা বাস্তবায়নের নজরদারি কিংবা নিয়ম এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কিন্তু এ নিয়ে বৃহস্পতিবারের সমকালে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটা আর দশটার মতো নয়। এর সঙ্গে কেবল স্থানীয় পর্যায়ের কিছু অর্থ ও গম সংক্রান্ত দুর্নীতি ও অনিয়ম নয়, ক্ষমতাসীন দল এবং বৃহত্তর অর্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ জড়িত। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১০-১১ অর্থবছরের মার্চ ও এপ্রিলে বাঘা উপজেলায় যে আড়াই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গম ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার অন্তত ৫০টি অনুমোদন কিংবা অস্তিত্বহীন। এর একটি হচ্ছে বাঘার তেঁথুলিয়া গ্রামে রাস্তার একপাশে একটি ছোট বাঁশের মাচা। চারদিক খোলা ও চারটি বাঁশের খুঁটির ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া ওই মাচাকে 'ফজিলাতুননেছা স্মৃতি সংসদ' বানিয়ে টেস্ট রিলিফের (টিআর) দুই টন গম বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। একই ধরনের বরাদ্দ আদায় করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের নাম ভাঙিয়ে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নামে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের অনেক খবর আমরা পেয়ে থাকি। কিন্তু বাঘা বিরল নজির সৃষ্টি করেছে। আর যাই হোক একটি বাঁশের মাচা জাতির জনকের সহধর্মিণী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মাতার স্মৃতি বহন করতে পারে না। এর সঙ্গে জড়িতরা কেবল দুর্নীতি নয়, জাতীয় আবেগ ও মর্যাদার সঙ্গে মশকরা করেছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদেরও উচিত হবে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পেলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকবে।
No comments