গুন্টার গ্রাস-যে কথা বলতেই হবে-অনুবাদ: সাজ্জাদ শরিফ
কেন আমি নিশ্চুপ, কেন চুপ করে আছি এতগুলি দিন
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় প্রকাশ্যে যা চলছে তা নিয়ে,
যার শেষে আমরা কেউ কেউ টিকে থাকব
বড় জোর পাদটীকা হয়ে।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় প্রকাশ্যে যা চলছে তা নিয়ে,
যার শেষে আমরা কেউ কেউ টিকে থাকব
বড় জোর পাদটীকা হয়ে।
ইরানিদের মুছে দেওয়ার মতো
‘আগাম যুদ্ধের’ এটি কোন অধিকার?
ইরানের শক্তিবলয়ে পরমাণু বোমা আছে এই অনুমানে
যা তারা আদায় করেছে হুংকারের বশ্যতায়,
জড়ো করা হুল্লোড়ের তোড়ায়।
বছরে বছরে যারা গোপনে স্তূপ করছে পরমাণু বোমা
নিন্দা নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই, তদন্ত নেই,
কেন আমি সে দেশের নাম নিতে এত দ্বিধান্বিত?
এ নিয়ে সবার যে মান্য নীরবতা,
যার নিচে আমারও নৈঃশব্দ মাথা নিচু,
সে তো এক অস্বস্তিকর মিথ্যা
তা আমাকে ছুড়ে দেয় অনুমেয় শাস্তির দিকে,
ছুটে আসে সহজেই ‘ইহুদিবিদ্বেষ’-এর গালাগাল।
নিজের তুলনাহীন গভীর অপরাধে
বারে বারে যার চলেছে জবাবদিহি,
আমার সে নিজের দেশের নাকি নিষ্ক্রান্তির কাল
(দিব্যি খেসারতের ছলে যা স্রেফ ব্যবসা)
আণবিক অস্ত্র নিয়ে আরেকটি ডুবোজাহাজ চলেছে ইসরায়েলে
কেবলই আতঙ্ক ছাড়া যার পরমাণু বোমার
কোনো প্রমাণ মেলেনি। আমি বলব, যে কথা বলতেই হবে।
কিন্তু কেন আমি এত দিন নীরব থেকেছি?
আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আমার নিজের অতীত
যে কালিমায় নোংরা তা তো কখনোই মুছে যাবে না।
যে ইসরায়েলের সাথে আমি এতটা নিবিড় কিংবা থাকব আগামীতে,
খোলামেলা সত্যের ঘোষণা সে যে মেনে নেবে, সে আশাও নেই।
কেন এখন, এই বুড়ো বয়সে,
দোয়াতের অবশিষ্ট কালি দিয়ে বলতে হবে:
ইসরায়েলের পরমাণুশক্তি বিপন্ন করে তুলবে
এরই মধ্যে ভঙ্গুর বিশ্বশান্তিকে?
কারণ যে কথা বলতেই হবে, কাল সেটা দেরি হয়ে যাবে।
কারণ জর্মন হিসেবে আজ কাঁধে এই বোঝা—
দৃশ্যমান ভবিষ্যৎ পাপের অস্ত্র আমাদেরই দেওয়া
কোনো উপায়েই আর মুছবে না দুষ্কর্মের এই দায়ভার।
মানি, আমি নৈঃশব্দ ভেঙেছি
কারণ পশ্চিমের ভণ্ডামিতে আমি ক্লান্তপ্রাণ;
এও আশা করি হয়তো অনেকেই নীরবতা থেকে মুক্তি পাবে
হয়তো তারা দাবি তুলবে খোলামেলা বিপদের জন্য যারা দায়ী
সেই সহিংসতা বর্জনের মুখোমুখি আমরা দাঁড়াই,
ইসরায়েল ও ইরানের সরকারকে বারবার এ কথা বোঝাবে হয়তো তারা
কোনো এক বিশ্বকর্তৃপক্ষকে তারা অনুমতি দিক
দুজনের পারমাণবিক সামর্থ্য ও সম্ভাবনা খোলামেলা তদন্ত করার।
বিভ্রমশাসিত এই এলাকায় শত্রুতায় পাশাপাশি বসবাস করা
ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের অন্য আর পথ খোলা নেই,
শেষমেশ, আমাদের কারোরই তা নেই।
গুন্টার গ্রাসের ‘যে কথা বলতেই হবে’ এখন এ সময়ে সবচেয়ে গরম বিশ্বসংবাদ। সুদ ডয়েচে যাইটুং পত্রিকায় জর্মন এই বামপন্থী কবি ও কথাসাহিত্যিকের কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কের প্রবল ঘূর্ণি তুলেছে। ইসরায়েলের কট্টর দক্ষিণপন্থী সরকার ইসরায়েলে গ্রাসের প্রবেশাধিকার রদ করেছে।
কবিতাটি নিয়ে এত বিতর্কের একটি কারণ অবশ্যই ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে এর তীব্র সমালোচনা। তবে কারণ আরও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের চালানো হলোকস্টের পর ইহুদি-গণহত্যার কালিমা জার্মানির ঐতিহাসিক আদিপাপ হয়ে দাঁড়ায়। এর পরের ইতিহাস সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতিবিদ্বেষী জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। তাদের আগ্রাসনে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা অকাতরে প্রাণ দিয়ে চলেছে। বিপজ্জনক পরমাণু বোমার সম্ভারও তারা বাড়িয়ে তুলছে ক্রমাগত। এসব নিয়ে অনেকে সোচ্চার হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই আদিপাপের ভারে কোনো জর্মন বুদ্ধিজীবী কখনো মুখ খোলেননি। এই কবিতার মধ্য দিয়ে গ্রাস সশব্দে সেই জাতিগত নীরবতা ভাঙলেন। সালমান রুশদী টুইটারে লিখেছেন, ‘বাধ্যতামূলকভাবে একটি বাহিনীতে ঢুকলেই কেউ নাৎসি হয়ে যায় না। দ্য টিন ড্রাম-এর লেখক হতে পারা বরং বিরাট এক সম্মানের যোগ্য কাজ।’
গ্রাসের নিজের জীবনও বেশ জটিল। বছর কয়েক আগে এক আত্মস্মৃতিতে গ্রাস স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন তাঁর বয়স ১৭, তিনি তখন যোগ দিয়েছিলেন হিটলারের কুখ্যাত বাহিনী ওয়াফেন-এসএসে। নিন্দুকেরা সেই ইতিহাস আবার সামনে নিয়ে আসছেন। তাঁরা ভুলে গেছেন, গুন্টার গ্রাস সাহিত্যে নাৎসি আমলের জার্মানির বেদনা ও তৎকালীন পশ্চিমা বিশ্বের আত্মিক শূন্যতার উজ্জ্বলতম চিত্রকর। তাঁর দ্য টিন ড্রাম উপন্যাস এ কারণে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। দুঃসাহসিক অকপট উক্তি করে তিনি শিল্পের দায়িত্বের কথা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন।
গার্ডিয়ান-এর ওয়েবসাইটে ব্রেয়ন মিচেলেরটা নিয়ে এ পর্যন্ত এ কবিতার তিনটি অনুবাদ পাওয়া গেছে। আরেক অনুবাদক আলেসান্দ্রো ঘেব্রেইগজিয়াবিহের। বাকিজন অনামা। এক অনুবাদের সঙ্গে অন্য অনুবাদের বহু ক্ষেত্রেই মিল নেই। তিনটি মিলিয়ে এই অনুবাদের চেষ্টা। সাম্প্রতিক উত্তেজনার তাপ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কবিতাটি অনুবাদের চেষ্টা করা হলো।
‘আগাম যুদ্ধের’ এটি কোন অধিকার?
ইরানের শক্তিবলয়ে পরমাণু বোমা আছে এই অনুমানে
যা তারা আদায় করেছে হুংকারের বশ্যতায়,
জড়ো করা হুল্লোড়ের তোড়ায়।
বছরে বছরে যারা গোপনে স্তূপ করছে পরমাণু বোমা
নিন্দা নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই, তদন্ত নেই,
কেন আমি সে দেশের নাম নিতে এত দ্বিধান্বিত?
এ নিয়ে সবার যে মান্য নীরবতা,
যার নিচে আমারও নৈঃশব্দ মাথা নিচু,
সে তো এক অস্বস্তিকর মিথ্যা
তা আমাকে ছুড়ে দেয় অনুমেয় শাস্তির দিকে,
ছুটে আসে সহজেই ‘ইহুদিবিদ্বেষ’-এর গালাগাল।
নিজের তুলনাহীন গভীর অপরাধে
বারে বারে যার চলেছে জবাবদিহি,
আমার সে নিজের দেশের নাকি নিষ্ক্রান্তির কাল
(দিব্যি খেসারতের ছলে যা স্রেফ ব্যবসা)
আণবিক অস্ত্র নিয়ে আরেকটি ডুবোজাহাজ চলেছে ইসরায়েলে
কেবলই আতঙ্ক ছাড়া যার পরমাণু বোমার
কোনো প্রমাণ মেলেনি। আমি বলব, যে কথা বলতেই হবে।
কিন্তু কেন আমি এত দিন নীরব থেকেছি?
আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম আমার নিজের অতীত
যে কালিমায় নোংরা তা তো কখনোই মুছে যাবে না।
যে ইসরায়েলের সাথে আমি এতটা নিবিড় কিংবা থাকব আগামীতে,
খোলামেলা সত্যের ঘোষণা সে যে মেনে নেবে, সে আশাও নেই।
কেন এখন, এই বুড়ো বয়সে,
দোয়াতের অবশিষ্ট কালি দিয়ে বলতে হবে:
ইসরায়েলের পরমাণুশক্তি বিপন্ন করে তুলবে
এরই মধ্যে ভঙ্গুর বিশ্বশান্তিকে?
কারণ যে কথা বলতেই হবে, কাল সেটা দেরি হয়ে যাবে।
কারণ জর্মন হিসেবে আজ কাঁধে এই বোঝা—
দৃশ্যমান ভবিষ্যৎ পাপের অস্ত্র আমাদেরই দেওয়া
কোনো উপায়েই আর মুছবে না দুষ্কর্মের এই দায়ভার।
মানি, আমি নৈঃশব্দ ভেঙেছি
কারণ পশ্চিমের ভণ্ডামিতে আমি ক্লান্তপ্রাণ;
এও আশা করি হয়তো অনেকেই নীরবতা থেকে মুক্তি পাবে
হয়তো তারা দাবি তুলবে খোলামেলা বিপদের জন্য যারা দায়ী
সেই সহিংসতা বর্জনের মুখোমুখি আমরা দাঁড়াই,
ইসরায়েল ও ইরানের সরকারকে বারবার এ কথা বোঝাবে হয়তো তারা
কোনো এক বিশ্বকর্তৃপক্ষকে তারা অনুমতি দিক
দুজনের পারমাণবিক সামর্থ্য ও সম্ভাবনা খোলামেলা তদন্ত করার।
বিভ্রমশাসিত এই এলাকায় শত্রুতায় পাশাপাশি বসবাস করা
ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের সাহায্যের অন্য আর পথ খোলা নেই,
শেষমেশ, আমাদের কারোরই তা নেই।
গুন্টার গ্রাসের ‘যে কথা বলতেই হবে’ এখন এ সময়ে সবচেয়ে গরম বিশ্বসংবাদ। সুদ ডয়েচে যাইটুং পত্রিকায় জর্মন এই বামপন্থী কবি ও কথাসাহিত্যিকের কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিতর্কের প্রবল ঘূর্ণি তুলেছে। ইসরায়েলের কট্টর দক্ষিণপন্থী সরকার ইসরায়েলে গ্রাসের প্রবেশাধিকার রদ করেছে।
কবিতাটি নিয়ে এত বিতর্কের একটি কারণ অবশ্যই ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে এর তীব্র সমালোচনা। তবে কারণ আরও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের চালানো হলোকস্টের পর ইহুদি-গণহত্যার কালিমা জার্মানির ঐতিহাসিক আদিপাপ হয়ে দাঁড়ায়। এর পরের ইতিহাস সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতিবিদ্বেষী জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। তাদের আগ্রাসনে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা অকাতরে প্রাণ দিয়ে চলেছে। বিপজ্জনক পরমাণু বোমার সম্ভারও তারা বাড়িয়ে তুলছে ক্রমাগত। এসব নিয়ে অনেকে সোচ্চার হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই আদিপাপের ভারে কোনো জর্মন বুদ্ধিজীবী কখনো মুখ খোলেননি। এই কবিতার মধ্য দিয়ে গ্রাস সশব্দে সেই জাতিগত নীরবতা ভাঙলেন। সালমান রুশদী টুইটারে লিখেছেন, ‘বাধ্যতামূলকভাবে একটি বাহিনীতে ঢুকলেই কেউ নাৎসি হয়ে যায় না। দ্য টিন ড্রাম-এর লেখক হতে পারা বরং বিরাট এক সম্মানের যোগ্য কাজ।’
গ্রাসের নিজের জীবনও বেশ জটিল। বছর কয়েক আগে এক আত্মস্মৃতিতে গ্রাস স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন তাঁর বয়স ১৭, তিনি তখন যোগ দিয়েছিলেন হিটলারের কুখ্যাত বাহিনী ওয়াফেন-এসএসে। নিন্দুকেরা সেই ইতিহাস আবার সামনে নিয়ে আসছেন। তাঁরা ভুলে গেছেন, গুন্টার গ্রাস সাহিত্যে নাৎসি আমলের জার্মানির বেদনা ও তৎকালীন পশ্চিমা বিশ্বের আত্মিক শূন্যতার উজ্জ্বলতম চিত্রকর। তাঁর দ্য টিন ড্রাম উপন্যাস এ কারণে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। দুঃসাহসিক অকপট উক্তি করে তিনি শিল্পের দায়িত্বের কথা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন।
গার্ডিয়ান-এর ওয়েবসাইটে ব্রেয়ন মিচেলেরটা নিয়ে এ পর্যন্ত এ কবিতার তিনটি অনুবাদ পাওয়া গেছে। আরেক অনুবাদক আলেসান্দ্রো ঘেব্রেইগজিয়াবিহের। বাকিজন অনামা। এক অনুবাদের সঙ্গে অন্য অনুবাদের বহু ক্ষেত্রেই মিল নেই। তিনটি মিলিয়ে এই অনুবাদের চেষ্টা। সাম্প্রতিক উত্তেজনার তাপ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কবিতাটি অনুবাদের চেষ্টা করা হলো।
No comments