সাকিবই সেরা by সারোয়ার সুমন,

সাকিবের দুই হাতে সুদৃশ্য র‌্যাপিং পেপারে মোড়া দুটি 'ধন্যবাদ বাক্স'। এর একটি নিয়ে গেলেন তিনি ড্যারেন স্যামির জন্য। আর অন্যটি তুলে দিলেন চট্টগ্রামের দর্শকদের হাতে। কল্পনার এ দৃশ্যটি সচক্ষে দেখতে হলে আপনাকে পড়তে হবে খবরের নিচের অংশও! ২০০৯ সালে ড্যারেন স্যামিদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেই অধিনায়কের ক্যাপ পরে প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। গ্রেনাডার সেই অভিষেকে বল হাতে ৮ উইকেট ও ব্যাট হাতে অপরাজিত ৯৬ রান করে বাংলাদেশকে সুখসাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কারণ তার এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সেবার টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।


ক্যারিবীয়দের জন্য অধিনায়ক সাকিবের উপহার নেওয়ার এটি প্রথম কারণ। এবার দেখুন দ্বিতীয় কারণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার বাংলাদেশে পা রাখার আগেই অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন সাকিব। তাই সাকিবের নিজেকে প্রমাণ করার সিরিজ ছিল এটি। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রতিপক্ষ হওয়ায় আবারও নিজের সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়ে দিলেন তিনি। করলেন ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং। উদযাপন করলেন ওয়ানডে ক্রিকেটে দেড়শ' উইকেট প্রাপ্তির আনন্দও। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নামার আগে সাকিবের ওয়ানডের সেরা বোলিং ছিল ৪/৩৩। কিন্তু কাল ড্যারেন স্যামিকে দিয়েই সেরা বোলিংয়ের ঘরে নতুন করে লিখিয়ে নেন ৪/১৬। ৫ উইকেটে ৩৮ রানে থাকা ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সাকিব কাল বোলিংয়ে আসেন ১৩তম ওভারে। ২ রানে থাকা ড্যারেন স্যামিকে আউট করেই খোলেন উইকেটের খাতা। এরপর একে একে তুলে নেন রামদিন, ব্রাথওয়েট ও মার্টিনের উইকেট। যার কারণে ৩৮ রানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬১ রানে যেতেই হয়ে যায় নিঃশেষ! তাই তো ড্যারেন স্যামিদের সামনেই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার বগলদাবা করলেন সাকিব। সাকিবের অন্য উপহারের বাক্স কেন চট্টগ্রামবাসীর জন্য_ এবার জেনে নিন সেটিও। ২০০৭ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের এই স্টেডিয়ামেই টেস্ট ডেব্যু হয় সাকিবের। এর পরের বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৩৬ রানের খরচায় ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলিং করেন সাকিব। আবার এই চট্টগ্রামেই সর্বশেষ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরপর দুটি ওয়ানডে ম্যাচ জয় পায় বাংলাদেশ। এ জয়ে পুনর্জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের। আবার এ জয়ে সাকিবের অধিনায়ত্বকেও টেনে নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত; কিন্তু জিম্বাবুয়ে গিয়ে আবারও সম্মান জলাঞ্জলি দেয় সাকিবের দল। তাই অধিনায়কত্বও হারাতে হয় সাকিবকে। অবশ্য ভাঙা মন জোড়া লাগাতে আবারও হাত বাড়িয়ে দেয় তার লাকি গ্রাউন্ড চট্টগ্রাম। কাল মাত্র ১৬ রানের খরচায় ৪ উইকেট নেওয়ায় সাকিবকে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি তুলে দেওয়া হয়। সাকিবকে ১১৯ ওয়ানডেতে ১৫০ উইকেট নেওয়ার আনন্দ উদযাপনের সুযোগও করে দেয় চট্টগ্রাম। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সর্বনিম্ন ৬১ রানে অল আউট করার লজ্জা ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগও দেয় চট্টগ্রাম। যে ভেন্যুতে সাকিবের এত প্রাপ্তি সেখানকার দর্শকরা তো উপহার হিসেবে একটা 'ধন্যবাদ বাক্স' পেতেই পারেন!

No comments

Powered by Blogger.