লেনদেন কমে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞরাও বিস্মিত-চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন by রাশেদুল তুষার,

দুই বছরের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সর্বনিম্ন লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে চট্টগ্রাম পুঁজিবাজারে। এদিন চট্টগ্রাম স্টক এঙ্চেঞ্জে (সিএসই) মাত্র ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সর্বনিম্ন ৩৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গত দুই সপ্তাহে বেশ কিছু ঘোষণা, প্রণোদনা আর প্রজ্ঞাপন জারির পর গতকালের এ দরপতনকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।


বিশেষ করে অনেক সুবিধা দেওয়ার পরও বাজারে তারল্যপ্রবাহ বাড়ার পরিবর্তে উল্টো রেকর্ড পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন তাঁরা। তবে অনেকেই মনে করেন, পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোয় অর্থপ্রবাহ বাড়ার ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
গতকাল সিএসইতে সার্বিক ও সাধারণ সূচক কমেছে যথাক্রমে ২৫১ ও ১৬৬ পয়েন্ট। এ সময় লেনদেন হওয়া ১৭৮টি কম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠানের। আর কমেছে ১৬৪টি কম্পানির শেয়ারের। বাজার মূলধনও নেমে এসেছে দুই লাখ কোটি টাকার নিচে। গতকাল সিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮২১ কোটি টাকা।
বি-রিচ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন খালেদ গতকালের লেনদেনের ধরনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, 'আমার হাউজে আজ অনেককেই নতুন করে বিনিয়োগ করতে দেখেছি। আবার বিক্রেতার অভাব ছিল না; কিন্তু বাজারের লেনদেনে এর কোনো প্রভাব দেখলাম না।' তিনি বলেন, 'সোমবার একাধিক বাজারবান্ধব সিদ্ধান্তের পর খুব স্বাভাবিকভাবে বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা থাকার কথা ছিল; কিন্তু দেখলাম উল্টো চিত্র। ভালো বাজারের আশায় যেখানে হাতে থাকা শেয়ার ধরে রাখার কথা, সেখানে কেন শেয়ার ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে_সেটাই বুঝতে পারছি না।'
লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সিএসই সভাপতি ফখর উদ্দিন আলী আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্গে সঙ্গে অর্থের জোগানও বাড়াতে হবে; কিন্তু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো তারল্য বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা নেবে না।' তারল্য বাড়ানোর উপায় হিসেবে তিনি বলেন, 'আমরা সারা দেশে জরিপ চালিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তারল্য সংকট কাটাতে কিছু পরামর্শ পেয়েছি, যা ইতিমধ্যে এসইসির কাছে সুপারিশ আকারে জমা দিয়েছি। এর মধ্যে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের আর্থিক সমঝোতার (ফিন্যান্সিয়াল সেটেলমেন্ট) সময় ১২ দিন থেকে কমিয়ে চার-পাঁচ দিনে নামিয়ে আনার কথা বলেছি। হিসাব করে দেখেছি, তাতে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার সার্কুলেশন বাড়বে। এ ছাড়া আরো কিছু পরামর্শ আছে, যা এসইসি চাইলে বিবেচনায় নিতে পারেন।' তিনি মার্চেন্ট ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে বলেন, 'লেনদেনের ধরনই বলছে, বাজারে এ মুহূর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অংশগ্রহণ নেই, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের উচিত এ জায়গায় মনিটরিং বাড়ানো। কেন তারা বিনিয়োগে আসছে না, তা তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।'
শেয়ারবাজারে এই মুহূর্তে সাবোটাজ হচ্ছে বলে মনে করেন ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগাংয়ের আহ্বায়ক আছলাম মোরশেদ। এই সন্দেহের পেছনে যুক্তি উপস্থাপন করে তিনি বলেন, 'পতনের বাজারে গত সপ্তাহেও দুই শেয়ারবাজার মিলে গড়ে ৪০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। অথচ সেখানে গত দুই দিনে দুই বাজার মিলেও আড়াই শ কোটি টাকার কোঠা অতিক্রম করেনি, যা একেবারেই অস্বাভাবিক। কোনো একটি মহল ইচ্ছে করেই বাজারকে এভাবে অস্থিতিশীল করে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। এই বিষয়টিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।'

No comments

Powered by Blogger.