ঝুঁকি থাকলেও অর্থনীতি ভালোই চলছে : মুহিত

লতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে যে কিছু ঝুঁকি থাকবে, সে কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর বাজেট বক্তৃৃৃতাতেই বলেছিলেন। গতকাল বুধবার সে আশঙ্কার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনমতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অবশ্য দেশের অর্থনীতি এখন ভালোই চলছে বলে দাবি তাঁর।আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও ভোজ্য তেলের দাম কমাসহ কিছু সুলক্ষণও দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।ম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে দেশের অর্থনীতি ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে প্রচার হচ্ছে।


এর পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল অর্থমন্ত্রী হঠাৎ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।অর্থমন্ত্রী বলেন, 'দেশের অর্থনীতি ভালো। তবে কিছু ঝুঁকি আছে। বাজেট ঘোষণার সময়ই ঝুঁকির কথা বলেছি। তবে সংবাদমাধ্যম ও সুশীল সমাজ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে এমন প্রচার চালাচ্ছে, যা খুবই হতাশাজনক ও নেতিবাচক। কিন্তু আমরা লক্ষ্যচ্যুত হইনি।'
এ এম এ মুহিত বলেন, 'এ বছরও প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শতাংশ অর্জিত হবে। গত বছর ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর এ বছর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন তেমন কঠিন কিছু নয়। তবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির বড় একটা ধাক্কা আছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বেড়েছে। এটাও একটা সমস্যা। এসব সমস্যা দূর করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ বদল করছি।'
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'মূল্যস্ফীতি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে সেখান থেকে আরো নিচে নামার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণেই মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তবে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে এ দুটি পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। লিবিয়া পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমবে। তখন মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে। আর ভর্তুকি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। জ্বালানি তেল ও সারে এখনো বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। আর বিদ্যুৎ খাতেও ভর্তুকি অনেক।'
তবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৪ সালের পর এ খাতে আর কোনো ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না। এখন উচ্চমূল্যের ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও তা মোট চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ মেটাবে। সরকার বিদ্যুৎ সংকট দারুণভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। কুইক রেন্টাল ছাড়াও গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। বড় তিনটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতিমধ্যে দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে এ জন্য অর্থায়নও হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয় করার কারণে কিছু ভিন্ন পরিস্থিতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর কারণে রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। তবে অপ্রয়োজনীয় কিছু আমদানি কমবে। তাই মূল্যস্ফীতিও কমবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আইএমএফ এসব উদ্যোগের প্রশংসাও করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পিপিপির আওতায় বড় বড় প্রকল্প আসছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের কাজও চলছে। শিগগরিই এর বন্ড ইস্যু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও রাস্তাঘাট, যানবাহন ও রেলপথসহ অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই মোতাবেক অবকাঠামোর উন্নয়ন ও সংরক্ষণের বিষয়টি দেখভালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল সরকারি বিনিয়োগে তা সম্ভব নয়। এ জন্য বেসরকারি খাতসহ প্রবাসীদের জন্যও বন্ড ছাড়ার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.