প্রতিযোগিতা আইনের খসড়া যাচ্ছে সংসদে-মাত্র কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ বন্ধ হবে

সিন্ডিকেট আর মজুদদারি ভেঙে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা আনতে প্রণয়ন করা হচ্ছে প্রতিযোগিতা আইন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (ভেটিং) আগেই পাওয়া গেছে। বাণিজ্যসংক্রান্ত আরো তিনটি প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা আইনের খসড়াটিও সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।


গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাবিরোধী সব কর্মকাণ্ড_বিশেষ করে সিন্ডিকেট, কার্টেল প্রতিরোধ করে বাজারে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করবে। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির ফলে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পোদ্যোক্তা সহজেই বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। মাত্র কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ এতে বন্ধ হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
মজুদদারি ও পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে অস্থিতিশীলতা রোধ এবং সিন্ডিকেট ভেঙে বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশক নিশ্চিত করতে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি প্রথমে বিভিন্ন দেশের 'কম্পিটিশন আইন' এবং 'আংটাড'-এর 'মডেল কম্পিটিশন ল' পর্যালোচনা করে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করে। খসড়াটি ২০১০ সালে প্রথম মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর আবার ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়ে। তারপর আইনটিকে যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কমপক্ষে ৪০ বার ও মন্ত্রীপর্যায়ে দুবার বৈঠক হয়। পরে গত সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করা হলে সেখানে অনুমোদন মেলে।
বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, গত সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটি আইনটির খসড়া অনুমোদন করেছে। ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয় ছাড়পত্রও মিলেছে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই আইনটি পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে।
এ আইন বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বা বাংলাদেশ কম্পিটিশন কমিশন গঠন করা হবে। উচ্চপর্যায়ের ওই কমিশনের হাতে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে। এ আইন লঙ্ঘন করাসহ কমিশনের বিভিন্ন নির্দেশ অমান্য করলে জেল-জরিমানা করতে পারবে কমিশন।
আইনের খসড়া অনুযায়ী, তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিশনের প্রধান হবেন অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্টের কোনো বিচারক বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, অর্থনীতি, প্রশাসন, আইনসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো দক্ষ ব্যক্তি। এ ছাড়া দুজন সদস্যও থাকবেন কমিশনে। এই তিনজনই দায়িত্ব পালন করবেন সার্বক্ষণিকভাবে।
সিন্ডিকেট বন্ধে আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো বাণিজ্য সংগঠন উৎপাদন, সরবরাহ বা সংরক্ষণে নিজেদের মধ্যে প্রকাশ্য বা গোপনে কোনো চুক্তি করবে না।

No comments

Powered by Blogger.