পরীক্ষামূলক ট্রানজিট চলবে না, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি হয়েছে শীর্ষ পর্যায়ে : খালেদা জিয়া by আসাদুজ্জামান ফিরোজ,
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিঘেরা বগুড়ায় স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা ও চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচনে আসতে হবে। দুর্নীতি ও লুটপাটে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সরকারের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আন্দোলনের স্রোত দানা বেঁধে উঠেছে। ঘরে ঘরে এ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে। জনগণের এ আন্দোলনের আগুনে পুড়ে ছারখার হবে সরকার। আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিবেশীদের হাতে তুলে দিতে চায় অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা নীতি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য একটি দেশ।
আর এজন্য তাদেরকে ফারাক্কার আদলে পরীক্ষামূলকভাবে করিডোর দেয়া হচ্ছে। এক ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলক শুরু হয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানিয়েছে, পদ্মাকে শুকিয়ে ফেলেছ। এবার করিডোর দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশের জনগণ করিডোর দেবে না। পরীক্ষামূলক কোনো ট্রানজিট-করিডোর দেয়া চলবে না। বিরোধী নেত্রী অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। আর সেই দুর্নীতি হয়েছে টপ লেভেলে; সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে।
গতকাল বিকালে বগুড়ার আলতাফুন্নেছা মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। জনতার মহাসমুদ্রে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, শান্তি চাইলে সময় থাকতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন। মানুষের কাছে অত্যাচারী সরকার পরাজয় মানতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া জনগণকে দেশরক্ষায় আরেকটি যুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বগুড়ার সন্তান মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করেছেন। এবার বগুড়া থেকে আওয়ামী দুঃশাসনে দেশরক্ষায় আরেকটি যুদ্ধে নামতে হবে। এ যুদ্ধে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। জনগণের এ আন্দোলনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। স্বৈরাচার ও তাঁবেদার পতনের আন্দোলন সফল করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
উত্তরাঞ্চলে ঐতিহাসিক রোডমার্চের প্রথমদিনে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছে শহীদ জিয়ার জন্মস্থান বগুড়ায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া সরকারের অত্যাচার-নিপীড়ন, ব্যর্থতা ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যতই নির্যাতন-নিপীড়ন করা হোক, জাতীয়তাবাদী শক্তি জালিম শাহীর পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না। নব্বইয়ে স্বৈরাচার হটানোর ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম, জনগণের বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরেছি। এবার ফ্যাসিবাদ হটানোর শপথ নিয়ে জনগণ মাঠে নেমেছেন। আমি তাদের সামনে থেকে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনবো। দেশবিরোধী সরকারকে না হটিয়ে ঘরে ফিরবো না।
খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে রোডমার্চ শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে পথসভায় লাখো জনতার সামনে সরকারের ব্যর্থতা ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বক্তৃতা করেন।
গতকাল রোডমার্চ শেষে বগুড়ার জনসভায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো শহর। অলিখিত হরতালের মতোই অচল ছিল বগুড়া। দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ গতকাল সকাল থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আর স্লোগান দিতে দিতে শহরের আলতাফুন্নেচ্ছা মাঠে আসে।
জনতার স্রোতের কারণে আগে থেকেই শহরের ১২টি পয়েন্টে পর্দা ও টিভির ব্যবস্থা করা হয়। সে কারণে শহরের সাতমাথা, বড়গোলা, ফতেহ আলী মোড়, জলেশ্বরীতলা, কোর্ট এলাকা, ইয়াকুবিয়ার মোড়সহ অন্যান্য স্থান থেকে সাধারণ মানুষ দেখেন চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে এবং শোনেন তার বক্তব্য।
সকাল সাড়ে ১০টায় সারিয়াকান্দি জামায়াতের মিছিল প্রথম প্রবেশ করে জনসভাস্থলে। এরপর একে একে আসতে থাকে মিছিল। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় পর্যন্ত শহরতলির মাটিডালী, তিনমাথা, চারমাথা, ফুলতলা, বনানী, সাবগ্রাম মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু মানুষের পদচারণায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বগুড়ায় যেন অলিখিত হরতাল পালিত হয়। লোকজন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ছুটে চলেন জনসভাস্থলে।
ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে মিউজিক দল নেচে গেয়ে প্রচারণা চালায় শহরজুড়ে। বাঁশের বাঁশিতে বাববার জানান দেয় জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আগমন বার্তা। পাশাপাশি তবলা ও হারমোনিয়ান নিয়ে গান গেয়ে শিল্পীরা মাতিয়ে তোলেন জনগণকে। যেন বগুড়ার পুত্রবধূকে স্বাগত জানাতেই তাদের এতো আয়োজন।
বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধুনট, শেরপুর, কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বাস ও ট্রাকযোগে জনসভায় অংশ নেয় লাখ লাখ মানুষ। পাশাপাশি জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী থেকে হাজার হাজ নারী-পুরুষ ছুটে আসেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনার জন্য। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তুলে ধরেন দেশের বর্তমান চিত্র।
খালেদা জিয়া ২৭ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের বক্তৃতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন দাবির পাশাপাশি লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনৈতিক ধ্বংসাবস্থা, সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ফারাক্কা বাঁধে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা জীবন, রাস্তার দুরবস্থা, মঙ্গাসহ দেশের মানুষের ভোগান্তি ও নিপীড়নের চিত্র বগুড়াবাসীর সামনে তুলে ধরেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে বিরোধী দলের যেসব নেতার আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এই সরকার যুবকদের মাদকদ্রব্য খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই যুবকদের বসে থাকলে চলবে না। তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে আগামী দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় তারা।
তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করেছে। এটা তাদের একটি ষড়যন্ত্র। সাজানো নির্বাচনে এরশাদকে বিরোধী দল বানানোর নাটক করতে চাচ্ছে। এতে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না। দেশের জনগণ এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ হতে দেবে না বলে তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর সব করেছিল। দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন মানবে না। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তার পরও তারা নির্বাচন করেনি। তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভরাডুবি হবে। তাদের বলে দিতে চাই দেশের সব মানুষের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রমাণ করেছে তারা নিরপেক্ষ নয়। তারা ২০০৮ সালে ব্যাপক কারচুপি করেছে। এ সরকার আর বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে স্বাধীনতা থাকবে না। তাই দ্রুত তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য কমছে না বেড়েই চলেছে। চালের দাম বিএনপির আমলের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। জনগণের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, আপনারা দশ টাকায় চাল ও পাঁচ টাকায় কাঁচা মরিচ পান? উপস্থিত জনতা উচ্চস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন। তিনি বলেন, এটা কৃষি প্রধান এলাকা। তাই কৃষকদের গুরুত্ব দিতে হবে। তারা বলেছিল বিনামূল্যে সার দেবে। কিন্তু দেয়নি। আমাদের সময় ইউরিয়া সারের বস্তা ছিল ২৬০ টাকা। তারা বিনামূল্যে দেয়ার কথা বলে ১ হাজার ৬০ টাকায় দিচ্ছে। তিনি বলেন, তারা বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু ঘরে ঘরে কী চাকরি দিয়েছে? প্রশাসনে ভালো ভালো অফিসারদের ওএসডি করে রেখেছে। প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করুন। আমরা সরকারে গেলে নিরপেক্ষ ও দলীয়করণমুক্ত করব। ৭০০ অফিসার রয়েছেন, তাদের বলতে চাই—ভয় পাবেন না। যারা ওএসডি হয়েছেন সবাই চাকরি ফিরে পাবেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুত্ পানি দিতে পারছে না। সেজন্য কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আরও ষড়যন্ত্র আছে। কলকারাখানা ভারতীয়রা কিনে নেবে। এদেশের মানুষ কোনো বড় অফিসার হতে পারবে না, একে একে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে সারা শহরে মানুষ দেখছি। এভাবে ঢাকা শহরের দিকে এগুতে হবে এ সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য। বিদ্যুত্ দেয়ার নাম করে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বসিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত্ পাওয়া যায় না। সব দলীয় লোকদের কাজ দিয়েছে টেন্ডার ছাড়াই। সরকারি অফিসাররা বলেছেন এটা ঠিক হচ্ছে না। এর জন্য পরে জেল হতে পারে। তাই সংসদে আইন পাসের সুযোগ করে দিয়েছে। আইন করলে কাজ হবে না। অবশ্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার পদ্মা সেতু করার জন্য ব্যাপক টাকা তুলেছে। বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। বিশ্ব ব্যাংক জেনে গেছে দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে পদ্মা সেতুতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। তাই টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে মিথ্যা বুঝিয়েছে। টপ লেভেলে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি হয়েছে। অন্যদের দুর্নীতির কথা বলে বেড়াবেন তাতে কাজ হবে না। আপনাদের প্রতিটি কাজে দুর্নীতি-দুর্নীতি-দুর্নীতি। এই বগুড়ায় আমাদের সময় রাস্তা হয়েছে। যমুনা সেতু বিএনপি সরকার করেছে। আমরা যেদিন যমুনা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করতে আসি সেদিন হরতাল ডেকেছিল তারা। যমুনা সেতুতে তাদের কোনো অবদান ও কৃতিত্ব নেই।
তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে শেয়ারবাজারে কীভাবে লুটপাট হয়েছে আপনারা দেখেছেন। একবার শেয়ার কেলেঙ্কারি হলো ’৯৬ সালে, এবার ক্ষমতায় এসে তার থেকে বেশি লুট করে ৩৩ লাখ মানুষের টাকা নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগের একজন বলেছেন বিড়ালকে শুঁটকির পাহারা দিতে দিয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, ভিকারুন্নেসা স্কুলে ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে মেয়েদের ধর্ষণ করে সেঞ্চুরি পালন করে ওরা। ইডেন কলেজের মেয়েদের মন্ত্রী-এমপিদের মনোরঞ্জনের জন্য দেয়। আমাদের সময় মহিলাদের সম্মান দেয়া হয়েছে। জনসংখ্যার অর্ধেক মহিলা, তাই মেয়েদের শিক্ষার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া বলেন, পাবনায় কারখানা বন্ধ হয়ে ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়েছে। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে শুধু বেকার বাড়াচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দলে দলে শ্রমিক ফিরে আসছে। বিডিআরের এত বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেল কোনো বিচার হয়নি। জনগণের কাছে সত্যি তথ্য আছে। বিডিআরের নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অবাধে চোরাচালান হচ্ছে। মাদকদ্রব্য আসছে। বর্ডারের ওপারে সব মাদকদ্রব্য কারখানা বসিয়েছে। যুব সমাজকে ঘুম পাড়ানোর জন্য এসব করছে। এ যুবসমাজকে ঘুম পাড়িয়ে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।
চারদলীয় জোট নেত্রী বলেন, বিএনপির ও জোটের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে। তারা নাকি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করবে। আমি বলতে চাই আপনারা মানবতাবিরোধী বিচার করবেন কোনো আপত্তি নেই। তবে বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছ। সেখানে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। দলীয় লোক দিয়ে ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। এতে কোনো স্বচ্ছ বিচার হবে না। তাদের দলে ও পরিবারে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে।
তিনি বলেন, এটা মানবতাবিরোধী বিচারের জন্য নয় জোটকে ধ্বংস করার জন্য। নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদেরসহ সবাইকে এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। তাই এদের মুক্তি দিয়ে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, নাসিরউদ্দিন পিন্টুর চোখ নষ্ট করেছে। আবদুস সালাম পিন্টুর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪ বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বাবরসহ কয়েকজনকে মিথ্যা অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ করতে হবে।
একজন ব্যারিস্টার প্রবীণ আইনজীবী বলেছেন, আদালতে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আদালতেই যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
তিনি বলেন, যুবকদের ভালো চাকরির ব্যবস্থা করব। পরে তারা যাতে দেশ চালানোর দায়িত্ব পায় সে ব্যবস্থা করে যাব। খালেদা জিয়া বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বগুড়ার সন্তান। সেদিন জিয়ার সঙ্গে যারা যুদ্ধ করেছেন তারা হয়তো অনেকে আছেন। আওয়ামী লীগ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হোটেলে বসে অপেক্ষা করেছে দেশ কবে স্বাধীন হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে একটি দেশের হাতে এ দেশকে তুলে দিতে চায়। সেজন্য ট্রানজিট করিডোর বন্দর সব দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। ফারাক্কা পরীক্ষামূলক চালু করে বন্ধ করেনি। আবার ট্রানজিট পরীক্ষামূলক চালু করেছে। এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি দরকার হলে দেশ রক্ষার জন্য আর একটি যুদ্ধ করব। পুলিশ যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ দিই। আর যারা অতি উত্সাহী হয়ে সরকারের চাটুকারী করছেন তাদের হুশিয়ার করতে চাই। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন রাজনীতিবিদদের ডাণ্ডাবেড়ি পরায়। তাদের বলতে চাই আপনারা যা শিখিয়ে যাচ্ছেন আপনাদের ওপর একইরকম হতে পারে। সাবধান হয়ে যান। নাহলে জনগণকে আটকাতে পারবেন না।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, জনগণ স্লোগান দেয় জেলের তালা ভাঙব অমুক ভাইকে আনব। আমি বলেছি জেলে তালা ভাঙবেন না। কারণ ওই জেলে তাদের ঢুকাতে হবে। যুবকদের বার বার তিনি বলেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ে দেব।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপিসহ চারদলীয় জোটের নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল, মোজাহার আলী, বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি খায়রুল বাসার, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক হিরু, গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম হেলাল, স্থানীয় যুবদল নেতা তাহাউদ্দীন নাহিন, বগুড়া জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুল হক, শহর শিবিরের সভাপতি জাকির হোসেন সেলিম প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কবির রিজভি, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ। পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহকারী মহাসচিব জাকির হোসেন, এনার্জি সল্যুশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম।
পথসভায় খালেদা জিয়া যা বললেন : সিরাজগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। আ’লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আর এ দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে মানবতার অপরাধের নামে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তবে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত লোকজন দিয়ে এ বিচার হতে পারে না। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীই মহাজোটে রয়েছে। তাদের দলের লোকজনকে না ধরে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো রাজনীতিবিদদের এই মানবতার অপরাধে গ্রেফতার করেছে। এ সরকার হত্যা লুটপাট ষড়যন্ত্রে মেতেছে। তিনি ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেন, তারা টেন্ডাবাজ, লুটপাট, ভর্তি বাণিজ্য করছে। শেয়ারবাজারের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে সরকার পুলিশ দিয়ে অনশনরত ব্যবসায়ীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। গরিব মানুষদের টাকা লুটেপুটে নিয়ে গেছে। তদন্তে সরকার দলীয় বড় বড় নেতাদের নাম আসায় তা প্রকাশ করেনি তারা। আবারও সেই চোরগুলোকে শেয়ারবাজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে লুটপাট করার জন্য।
টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, কথায় কথায় তারা চুরি ও দুর্নীতির কথা বলে। অথচ মহাজোট সরকারের আমলে চুরি নয় মহাচুরির হচ্ছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপা’র সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপিসহ চারদলীয় জোটের নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরো বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল, মোজাহার আলী, বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি খায়রুল বাশার, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক হিরু, গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম হেলাল, স্থানীয় যুবদল নেতা তাহাউদ্দীন নাহিন, বগুড়া জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আবদুল হক, শহর শিবিরের সভাপতি জাকির হোসেন সেলিম প্রমুখ।
বেগম জিয়া বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে দেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তা ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। একে একে ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিনাশুল্কে ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিচ্ছে। অথচ তিস্তায় পানি নেই। এসব চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বেগম জিয়া।
দেশে আজ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। জুলুম-নির্যাতন চলছে মানুষের ওপর। গত তিন বছরে ১২ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। খালেদা জিয়া জনগণের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি চাল, ঘরে ঘরে চাকরি ও কৃষককে বিনামূল্যে সার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আপনারা কি তা পেয়েছেন? যদি কিছু না পেয়ে থাকেন, তাহলে কি এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো সুযোগ আছে?
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজারে ধস নামে। মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘববোয়ালরা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, এ কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তি দাবি করে ভূঞাপুরের এ জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রেখে পিন্টুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার। তিনি আবদুস সালাম পিন্টু ও লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ মিথ্যা মামলায় আটক সবার মুক্তি দাবি করেন।
জোট ও সমমনা নেতারা যা বললেন : পথসভা ও জনসভায় চারদলীয় জোট এবং সমমনা দলের শীর্ষ নেতারাও বক্তৃতা করেন। চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, বগুড়ার পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণকারী শহীদ জিয়া দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাই শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিহিংসাপরায়ণ এ সরকারকে উত্খাত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, এখন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে কীভাবে কোন দেশের টাকার বস্তা নিয়ে ২০০৮ সালের ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচনে এই সরকার জয়ী হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নামে এ সরকার দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের নির্যাতন ও বেইজ্জতি করছে। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণতা অতীতেও কারও কল্যাণ করেনি, এখনও করবে না। তিনি বলেন, যারা সীমান্তে ফেলানীর মতো নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে, তাদের সঙ্গে এ সরকারের গভীর সম্পর্ক এই জাতি মেনে নেবে না।
এলডিপি চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, বগুড়ার সূর্যসন্তান মেজর জিয়া ’৭১-এ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ’৭৫-এ তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করেছিলেন, তাই বগুড়াবাসীর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। বগুড়ার এই বিশাল সমাবেশই প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র রক্ষায় বগুড়াবাসী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ আছে। তিনি বলেন, এ সরকার বিনা শুল্কে গোপনে ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকা ও এডিবি সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে। এ সরকারের প্রবীণ রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান ২২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছেন কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলা প্রত্যাহার করেননি। কাজেই আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত এবং ব্যর্থ সরকারকে বিদায় করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, এক বছর আগে যারা ঘড়ির কাঁটা ১১টা থেকে ১২টায় নিয়ে গিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছিল, দেশের বারোটা বাজিয়েছিল, তাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় দেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে আওয়াজ উঠেছে—‘শেখ হাসিনার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়া দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করেছিলেন, জাপানকে পরাজিত করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য পদে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধে মধ্যস্থতা করেছিলেন; তাই আলজেরিয়া, তুরস্ক এবং মালেতে জিয়ার নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিহিংসার বশে সরকার বাংলাদেশ থেকে এবং বাংলাদেশীদের মন থেকে জিয়ার স্মৃতি মুছে ফেলার চক্রান্ত করছে। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা কখনও সফল হবে না।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার সন্তান তারেক রহমান বগুড়ায় হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, রাস্তাঘাট তৈরি করে বগুড়াকে বদলে দিয়েছিলেন। তাই অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এসে তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। বর্তমানে তথাকথিত নির্বাচিত সরকার নতুন করে তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত করে হয়রানির অপচেষ্টা করছে। অথচ এই মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নান আদালতকে জানিয়েছেন—তারেক রহমানকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। কখনও তার কাছে তিনি যাননি। অথচ আদালত অদৃশ্য ইঙ্গিতে মুফতি হান্নানের এই জবানবন্দি গ্রহণ করছে না। এ সরকার ওয়াদা ভঙ্গ করে সারাদেশে হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ বাবুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকার চৌধুরী আলমকে এক বছর আগে গুম করে দেয়া হয়েছে। এভাবে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করছে। আগামী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তিনি খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানোর সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
চার দলের অপর শীর্ষনেতা খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসাহাক বলেন, রোডমার্চে লাখ লাখ লোকের সমাগমে এ সরকারের ভিত কেঁপে উঠেছে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে এদের এখন বিদায় নিতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এ সরকার ব্যর্থ সরকার। এদের ব্যর্থতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশ এক নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অবৈধ এবং গোপন চুক্তি করেছে। তাই এ সরকাকে অবিলম্বে বিদায় করে একটি গণতান্ত্রিক এবং দেশপ্রেমিক সরকার কায়েম করতে হবে।
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে এখন ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে নিয়মিতভাবে মানুষ খুন হচ্ছে। সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বর্ডার এখন উন্মুক্ত। আমাদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরকে তছনছ করা হয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসার নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবার-পরিজন নির্যাতিত হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সিলেটে সফল রোডমার্চের পর থেকেই সরকার বিভিন্নভাবে জেল-জুলুমের হুমকি দিচ্ছে। তবে জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন থেকে আমাদের বিরত রাখা যাবে না। আগামীতে চার দলকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বা নির্বাচন করতেও দেয়া হবে না।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, আজকের এই বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করে ব্যর্থ, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত এ সরকারের মরণঘণ্টা বেজে উঠেছে। এদের পতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু জনসভায় প্রশ্ন রেখে বলেন, এ সরকার কি ১০ টাকা সের চাল, বিনামূল্যে সার কিংবা ঘরে ঘরে চাকরি দিয়েছে? যদি না দিয়ে থাকে, তাহলে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমে পড়ুন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী আমানুল্লাহ আমান বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা হবে এবং আগামী দিনের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ফ্যাসিবাদের কারণে তারেক রহমান আজ বিদেশে; মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ এবং মাওলানা সাঈদী আজ কারাগারে। আন্দোলনের মাধ্যমে তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং প্রবীণ জাতীয় নেতাদের কারামুক্ত করা হবে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধে বগুড়াসহ সারাদেশে ৬৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় দেশ আজ ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছে। কাজেই আপনারা দেশনেত্রীর নেতৃত্বে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নৌকা এখন ফুটা-শেখ হাসিনার ভাগ্য টুটা’; তাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পার পাওয়া যাবে না। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে তারেক আসবেন বীরের বেশে।
বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এবং বগুড়া শহরে আজ যে বিশাল লোকসমাবেশ হয়েছে, অতীতে কোনোদিনই বগুড়ায় এত বিশাল সমাবেশ হয়নি। আগামীতে আরও একবার বগুড়ায় এ ধরনের জনসমাবেশ ঘটবে যেদিন বাংলাদেশের কৃতী সন্তান, বগুড়ার মানুষের আপনজন, জাতীয় উন্নয়নের রূপকার তারেক রহমান বগুড়ার মাটিতে পা রাখবেন।
গতকাল বিকালে বগুড়ার আলতাফুন্নেছা মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। জনতার মহাসমুদ্রে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, শান্তি চাইলে সময় থাকতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন। মানুষের কাছে অত্যাচারী সরকার পরাজয় মানতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে খালেদা জিয়া জনগণকে দেশরক্ষায় আরেকটি যুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বগুড়ার সন্তান মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে দেশকে মুক্ত করেছেন। এবার বগুড়া থেকে আওয়ামী দুঃশাসনে দেশরক্ষায় আরেকটি যুদ্ধে নামতে হবে। এ যুদ্ধে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। জনগণের এ আন্দোলনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। স্বৈরাচার ও তাঁবেদার পতনের আন্দোলন সফল করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
উত্তরাঞ্চলে ঐতিহাসিক রোডমার্চের প্রথমদিনে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছে শহীদ জিয়ার জন্মস্থান বগুড়ায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া সরকারের অত্যাচার-নিপীড়ন, ব্যর্থতা ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যতই নির্যাতন-নিপীড়ন করা হোক, জাতীয়তাবাদী শক্তি জালিম শাহীর পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবে না। নব্বইয়ে স্বৈরাচার হটানোর ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম, জনগণের বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরেছি। এবার ফ্যাসিবাদ হটানোর শপথ নিয়ে জনগণ মাঠে নেমেছেন। আমি তাদের সামনে থেকে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনবো। দেশবিরোধী সরকারকে না হটিয়ে ঘরে ফিরবো না।
খালেদা জিয়া ঢাকা থেকে রোডমার্চ শুরু করে গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে পথসভায় লাখো জনতার সামনে সরকারের ব্যর্থতা ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বক্তৃতা করেন।
গতকাল রোডমার্চ শেষে বগুড়ার জনসভায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো শহর। অলিখিত হরতালের মতোই অচল ছিল বগুড়া। দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ গতকাল সকাল থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আর স্লোগান দিতে দিতে শহরের আলতাফুন্নেচ্ছা মাঠে আসে।
জনতার স্রোতের কারণে আগে থেকেই শহরের ১২টি পয়েন্টে পর্দা ও টিভির ব্যবস্থা করা হয়। সে কারণে শহরের সাতমাথা, বড়গোলা, ফতেহ আলী মোড়, জলেশ্বরীতলা, কোর্ট এলাকা, ইয়াকুবিয়ার মোড়সহ অন্যান্য স্থান থেকে সাধারণ মানুষ দেখেন চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে এবং শোনেন তার বক্তব্য।
সকাল সাড়ে ১০টায় সারিয়াকান্দি জামায়াতের মিছিল প্রথম প্রবেশ করে জনসভাস্থলে। এরপর একে একে আসতে থাকে মিছিল। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় পর্যন্ত শহরতলির মাটিডালী, তিনমাথা, চারমাথা, ফুলতলা, বনানী, সাবগ্রাম মোড় পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু মানুষের পদচারণায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বগুড়ায় যেন অলিখিত হরতাল পালিত হয়। লোকজন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে ছুটে চলেন জনসভাস্থলে।
ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে মিউজিক দল নেচে গেয়ে প্রচারণা চালায় শহরজুড়ে। বাঁশের বাঁশিতে বাববার জানান দেয় জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আগমন বার্তা। পাশাপাশি তবলা ও হারমোনিয়ান নিয়ে গান গেয়ে শিল্পীরা মাতিয়ে তোলেন জনগণকে। যেন বগুড়ার পুত্রবধূকে স্বাগত জানাতেই তাদের এতো আয়োজন।
বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধুনট, শেরপুর, কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বাস ও ট্রাকযোগে জনসভায় অংশ নেয় লাখ লাখ মানুষ। পাশাপাশি জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী থেকে হাজার হাজ নারী-পুরুষ ছুটে আসেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনার জন্য। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তুলে ধরেন দেশের বর্তমান চিত্র।
খালেদা জিয়া ২৭ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের বক্তৃতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন দাবির পাশাপাশি লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, অর্থনৈতিক ধ্বংসাবস্থা, সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ফারাক্কা বাঁধে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দুঃখগাথা জীবন, রাস্তার দুরবস্থা, মঙ্গাসহ দেশের মানুষের ভোগান্তি ও নিপীড়নের চিত্র বগুড়াবাসীর সামনে তুলে ধরেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে বিরোধী দলের যেসব নেতার আটক রাখা হয়েছে তাদের মুক্তি দাবি করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এই সরকার যুবকদের মাদকদ্রব্য খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই যুবকদের বসে থাকলে চলবে না। তিনি বলেন, সরকার বুঝতে পেরেছে আগামী দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। সেজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায় তারা।
তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ সংবিধান পরিবর্তন করেছে। এটা তাদের একটি ষড়যন্ত্র। সাজানো নির্বাচনে এরশাদকে বিরোধী দল বানানোর নাটক করতে চাচ্ছে। এতে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না। দেশের জনগণ এ ধরনের নাটক মঞ্চস্থ হতে দেবে না বলে তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন জ্বালাও পোড়াও ভাংচুর সব করেছিল। দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন মানবে না। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তার পরও তারা নির্বাচন করেনি। তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ভরাডুবি হবে। তাদের বলে দিতে চাই দেশের সব মানুষের দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রমাণ করেছে তারা নিরপেক্ষ নয়। তারা ২০০৮ সালে ব্যাপক কারচুপি করেছে। এ সরকার আর বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে স্বাধীনতা থাকবে না। তাই দ্রুত তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য কমছে না বেড়েই চলেছে। চালের দাম বিএনপির আমলের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। জনগণের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, আপনারা দশ টাকায় চাল ও পাঁচ টাকায় কাঁচা মরিচ পান? উপস্থিত জনতা উচ্চস্বরে ‘না’ বলে ওঠেন। তিনি বলেন, এটা কৃষি প্রধান এলাকা। তাই কৃষকদের গুরুত্ব দিতে হবে। তারা বলেছিল বিনামূল্যে সার দেবে। কিন্তু দেয়নি। আমাদের সময় ইউরিয়া সারের বস্তা ছিল ২৬০ টাকা। তারা বিনামূল্যে দেয়ার কথা বলে ১ হাজার ৬০ টাকায় দিচ্ছে। তিনি বলেন, তারা বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। কিন্তু ঘরে ঘরে কী চাকরি দিয়েছে? প্রশাসনে ভালো ভালো অফিসারদের ওএসডি করে রেখেছে। প্রশাসনকে দলীয়করণমুক্ত করুন। আমরা সরকারে গেলে নিরপেক্ষ ও দলীয়করণমুক্ত করব। ৭০০ অফিসার রয়েছেন, তাদের বলতে চাই—ভয় পাবেন না। যারা ওএসডি হয়েছেন সবাই চাকরি ফিরে পাবেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুত্ পানি দিতে পারছে না। সেজন্য কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আরও ষড়যন্ত্র আছে। কলকারাখানা ভারতীয়রা কিনে নেবে। এদেশের মানুষ কোনো বড় অফিসার হতে পারবে না, একে একে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে সারা শহরে মানুষ দেখছি। এভাবে ঢাকা শহরের দিকে এগুতে হবে এ সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য। বিদ্যুত্ দেয়ার নাম করে রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বসিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুত্ পাওয়া যায় না। সব দলীয় লোকদের কাজ দিয়েছে টেন্ডার ছাড়াই। সরকারি অফিসাররা বলেছেন এটা ঠিক হচ্ছে না। এর জন্য পরে জেল হতে পারে। তাই সংসদে আইন পাসের সুযোগ করে দিয়েছে। আইন করলে কাজ হবে না। অবশ্য আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার পদ্মা সেতু করার জন্য ব্যাপক টাকা তুলেছে। বিদেশ থেকে টাকা এনেছে। বিশ্ব ব্যাংক জেনে গেছে দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে পদ্মা সেতুতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। তাই টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে মিথ্যা বুঝিয়েছে। টপ লেভেলে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি হয়েছে। অন্যদের দুর্নীতির কথা বলে বেড়াবেন তাতে কাজ হবে না। আপনাদের প্রতিটি কাজে দুর্নীতি-দুর্নীতি-দুর্নীতি। এই বগুড়ায় আমাদের সময় রাস্তা হয়েছে। যমুনা সেতু বিএনপি সরকার করেছে। আমরা যেদিন যমুনা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করতে আসি সেদিন হরতাল ডেকেছিল তারা। যমুনা সেতুতে তাদের কোনো অবদান ও কৃতিত্ব নেই।
তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে শেয়ারবাজারে কীভাবে লুটপাট হয়েছে আপনারা দেখেছেন। একবার শেয়ার কেলেঙ্কারি হলো ’৯৬ সালে, এবার ক্ষমতায় এসে তার থেকে বেশি লুট করে ৩৩ লাখ মানুষের টাকা নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগের একজন বলেছেন বিড়ালকে শুঁটকির পাহারা দিতে দিয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, ভিকারুন্নেসা স্কুলে ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে মেয়েদের ধর্ষণ করে সেঞ্চুরি পালন করে ওরা। ইডেন কলেজের মেয়েদের মন্ত্রী-এমপিদের মনোরঞ্জনের জন্য দেয়। আমাদের সময় মহিলাদের সম্মান দেয়া হয়েছে। জনসংখ্যার অর্ধেক মহিলা, তাই মেয়েদের শিক্ষার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া বলেন, পাবনায় কারখানা বন্ধ হয়ে ৫০ হাজার মানুষ বেকার হয়েছে। সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে শুধু বেকার বাড়াচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দলে দলে শ্রমিক ফিরে আসছে। বিডিআরের এত বড় দুর্ঘটনা হয়ে গেল কোনো বিচার হয়নি। জনগণের কাছে সত্যি তথ্য আছে। বিডিআরের নাম পাল্টে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অবাধে চোরাচালান হচ্ছে। মাদকদ্রব্য আসছে। বর্ডারের ওপারে সব মাদকদ্রব্য কারখানা বসিয়েছে। যুব সমাজকে ঘুম পাড়ানোর জন্য এসব করছে। এ যুবসমাজকে ঘুম পাড়িয়ে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চায়।
চারদলীয় জোট নেত্রী বলেন, বিএনপির ও জোটের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে। তারা নাকি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার করবে। আমি বলতে চাই আপনারা মানবতাবিরোধী বিচার করবেন কোনো আপত্তি নেই। তবে বিচার হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ও স্বচ্ছ। সেখানে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। দলীয় লোক দিয়ে ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। এতে কোনো স্বচ্ছ বিচার হবে না। তাদের দলে ও পরিবারে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে।
তিনি বলেন, এটা মানবতাবিরোধী বিচারের জন্য নয় জোটকে ধ্বংস করার জন্য। নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদেরসহ সবাইকে এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছে। তাই এদের মুক্তি দিয়ে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক মানের বিচার করতে হবে।
তিনি বলেন, নাসিরউদ্দিন পিন্টুর চোখ নষ্ট করেছে। আবদুস সালাম পিন্টুর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৪ বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বাবরসহ কয়েকজনকে মিথ্যা অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ করতে হবে।
একজন ব্যারিস্টার প্রবীণ আইনজীবী বলেছেন, আদালতে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আদালতেই যদি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
তিনি বলেন, যুবকদের ভালো চাকরির ব্যবস্থা করব। পরে তারা যাতে দেশ চালানোর দায়িত্ব পায় সে ব্যবস্থা করে যাব। খালেদা জিয়া বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি বগুড়ার সন্তান। সেদিন জিয়ার সঙ্গে যারা যুদ্ধ করেছেন তারা হয়তো অনেকে আছেন। আওয়ামী লীগ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে হোটেলে বসে অপেক্ষা করেছে দেশ কবে স্বাধীন হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে একটি দেশের হাতে এ দেশকে তুলে দিতে চায়। সেজন্য ট্রানজিট করিডোর বন্দর সব দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। ফারাক্কা পরীক্ষামূলক চালু করে বন্ধ করেনি। আবার ট্রানজিট পরীক্ষামূলক চালু করেছে। এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি দরকার হলে দেশ রক্ষার জন্য আর একটি যুদ্ধ করব। পুলিশ যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ দিই। আর যারা অতি উত্সাহী হয়ে সরকারের চাটুকারী করছেন তাদের হুশিয়ার করতে চাই। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন রাজনীতিবিদদের ডাণ্ডাবেড়ি পরায়। তাদের বলতে চাই আপনারা যা শিখিয়ে যাচ্ছেন আপনাদের ওপর একইরকম হতে পারে। সাবধান হয়ে যান। নাহলে জনগণকে আটকাতে পারবেন না।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, জনগণ স্লোগান দেয় জেলের তালা ভাঙব অমুক ভাইকে আনব। আমি বলেছি জেলে তালা ভাঙবেন না। কারণ ওই জেলে তাদের ঢুকাতে হবে। যুবকদের বার বার তিনি বলেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যত্ গড়ে দেব।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপিসহ চারদলীয় জোটের নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল, মোজাহার আলী, বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি খায়রুল বাসার, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক হিরু, গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম হেলাল, স্থানীয় যুবদল নেতা তাহাউদ্দীন নাহিন, বগুড়া জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আবদুল হক, শহর শিবিরের সভাপতি জাকির হোসেন সেলিম প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কবির রিজভি, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ। পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে ছিলেন ড্যাবের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহকারী মহাসচিব জাকির হোসেন, এনার্জি সল্যুশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম।
পথসভায় খালেদা জিয়া যা বললেন : সিরাজগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। আ’লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারাই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আর এ দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়ে মানবতার অপরাধের নামে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তবে তা হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। আওয়ামী লীগের বিতর্কিত লোকজন দিয়ে এ বিচার হতে পারে না। প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীই মহাজোটে রয়েছে। তাদের দলের লোকজনকে না ধরে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো রাজনীতিবিদদের এই মানবতার অপরাধে গ্রেফতার করেছে। এ সরকার হত্যা লুটপাট ষড়যন্ত্রে মেতেছে। তিনি ছাত্রলীগের উদ্দেশে বলেন, তারা টেন্ডাবাজ, লুটপাট, ভর্তি বাণিজ্য করছে। শেয়ারবাজারের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে সরকার পুলিশ দিয়ে অনশনরত ব্যবসায়ীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। গরিব মানুষদের টাকা লুটেপুটে নিয়ে গেছে। তদন্তে সরকার দলীয় বড় বড় নেতাদের নাম আসায় তা প্রকাশ করেনি তারা। আবারও সেই চোরগুলোকে শেয়ারবাজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে লুটপাট করার জন্য।
টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, কথায় কথায় তারা চুরি ও দুর্নীতির কথা বলে। অথচ মহাজোট সরকারের আমলে চুরি নয় মহাচুরির হচ্ছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান ইসাহাক আলী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপা’র সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপিসহ চারদলীয় জোটের নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরো বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, আসম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম, সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, অ্যাডভোকেট একেএম হাফিজার রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আলী মুকুল, মোজাহার আলী, বগুড়া জেলা যুবদলের সভাপতি খায়রুল বাশার, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক হিরু, গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম হেলাল, স্থানীয় যুবদল নেতা তাহাউদ্দীন নাহিন, বগুড়া জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আবদুল হক, শহর শিবিরের সভাপতি জাকির হোসেন সেলিম প্রমুখ।
বেগম জিয়া বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে দেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কল-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তা ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। একে একে ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিনাশুল্কে ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিচ্ছে। অথচ তিস্তায় পানি নেই। এসব চক্রান্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বেগম জিয়া।
দেশে আজ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। জুলুম-নির্যাতন চলছে মানুষের ওপর। গত তিন বছরে ১২ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। খালেদা জিয়া জনগণের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ ১০ টাকা কেজি চাল, ঘরে ঘরে চাকরি ও কৃষককে বিনামূল্যে সার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আপনারা কি তা পেয়েছেন? যদি কিছু না পেয়ে থাকেন, তাহলে কি এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো সুযোগ আছে?
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজারে ধস নামে। মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘববোয়ালরা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, এ কারণে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। টাঙ্গাইলের জনপ্রিয় নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তি দাবি করে ভূঞাপুরের এ জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রেখে পিন্টুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে সরকার। তিনি আবদুস সালাম পিন্টু ও লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ মিথ্যা মামলায় আটক সবার মুক্তি দাবি করেন।
জোট ও সমমনা নেতারা যা বললেন : পথসভা ও জনসভায় চারদলীয় জোট এবং সমমনা দলের শীর্ষ নেতারাও বক্তৃতা করেন। চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, বগুড়ার পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণকারী শহীদ জিয়া দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তাই শহীদ জিয়ার উত্তরসূরি খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিহিংসাপরায়ণ এ সরকারকে উত্খাত করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন, এখন ফাঁস হয়ে যাচ্ছে কীভাবে কোন দেশের টাকার বস্তা নিয়ে ২০০৮ সালের ডিজিটাল কারচুপির নির্বাচনে এই সরকার জয়ী হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নামে এ সরকার দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের নির্যাতন ও বেইজ্জতি করছে। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণতা অতীতেও কারও কল্যাণ করেনি, এখনও করবে না। তিনি বলেন, যারা সীমান্তে ফেলানীর মতো নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে, তাদের সঙ্গে এ সরকারের গভীর সম্পর্ক এই জাতি মেনে নেবে না।
এলডিপি চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেন, বগুড়ার সূর্যসন্তান মেজর জিয়া ’৭১-এ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, ’৭৫-এ তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করেছিলেন, তাই বগুড়াবাসীর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। বগুড়ার এই বিশাল সমাবেশই প্রমাণ করেছে গণতন্ত্র রক্ষায় বগুড়াবাসী খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে সম্পূর্ণ সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ আছে। তিনি বলেন, এ সরকার বিনা শুল্কে গোপনে ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকা ও এডিবি সরকারকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে। এ সরকারের প্রবীণ রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান ২২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করেছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছেন কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা কোনো মামলা প্রত্যাহার করেননি। কাজেই আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত এবং ব্যর্থ সরকারকে বিদায় করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, এক বছর আগে যারা ঘড়ির কাঁটা ১১টা থেকে ১২টায় নিয়ে গিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছিল, দেশের বারোটা বাজিয়েছিল, তাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় দেয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে আওয়াজ উঠেছে—‘শেখ হাসিনার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ’।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়া দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করেছিলেন, জাপানকে পরাজিত করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সদস্য পদে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধে মধ্যস্থতা করেছিলেন; তাই আলজেরিয়া, তুরস্ক এবং মালেতে জিয়ার নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিহিংসার বশে সরকার বাংলাদেশ থেকে এবং বাংলাদেশীদের মন থেকে জিয়ার স্মৃতি মুছে ফেলার চক্রান্ত করছে। কিন্তু তাদের সেই অপচেষ্টা কখনও সফল হবে না।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়ার সন্তান তারেক রহমান বগুড়ায় হাসপাতাল, স্টেডিয়াম, রাস্তাঘাট তৈরি করে বগুড়াকে বদলে দিয়েছিলেন। তাই অবৈধ ও অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এসে তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। বর্তমানে তথাকথিত নির্বাচিত সরকার নতুন করে তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত করে হয়রানির অপচেষ্টা করছে। অথচ এই মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নান আদালতকে জানিয়েছেন—তারেক রহমানকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। কখনও তার কাছে তিনি যাননি। অথচ আদালত অদৃশ্য ইঙ্গিতে মুফতি হান্নানের এই জবানবন্দি গ্রহণ করছে না। এ সরকার ওয়াদা ভঙ্গ করে সারাদেশে হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নাটোরের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ বাবুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকার চৌধুরী আলমকে এক বছর আগে গুম করে দেয়া হয়েছে। এভাবে তারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করছে। আগামী নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার ভয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে আগামীতে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তিনি খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানোর সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান।
চার দলের অপর শীর্ষনেতা খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসাহাক বলেন, রোডমার্চে লাখ লাখ লোকের সমাগমে এ সরকারের ভিত কেঁপে উঠেছে। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে এদের এখন বিদায় নিতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এ সরকার ব্যর্থ সরকার। এদের ব্যর্থতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশ এক নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অবৈধ এবং গোপন চুক্তি করেছে। তাই এ সরকাকে অবিলম্বে বিদায় করে একটি গণতান্ত্রিক এবং দেশপ্রেমিক সরকার কায়েম করতে হবে।
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে এখন ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে নিয়মিতভাবে মানুষ খুন হচ্ছে। সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার বর্ডার এখন উন্মুক্ত। আমাদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিডিআরকে তছনছ করা হয়েছে। ৫৭ সেনা অফিসার নিহত হয়েছেন। তাদের পরিবার-পরিজন নির্যাতিত হয়েছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সিলেটে সফল রোডমার্চের পর থেকেই সরকার বিভিন্নভাবে জেল-জুলুমের হুমকি দিচ্ছে। তবে জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন থেকে আমাদের বিরত রাখা যাবে না। আগামীতে চার দলকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বা নির্বাচন করতেও দেয়া হবে না।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, আজকের এই বিশাল সমাবেশ প্রমাণ করে ব্যর্থ, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত এ সরকারের মরণঘণ্টা বেজে উঠেছে। এদের পতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু জনসভায় প্রশ্ন রেখে বলেন, এ সরকার কি ১০ টাকা সের চাল, বিনামূল্যে সার কিংবা ঘরে ঘরে চাকরি দিয়েছে? যদি না দিয়ে থাকে, তাহলে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নেমে পড়ুন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী আমানুল্লাহ আমান বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা হবে এবং আগামী দিনের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ফ্যাসিবাদের কারণে তারেক রহমান আজ বিদেশে; মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ এবং মাওলানা সাঈদী আজ কারাগারে। আন্দোলনের মাধ্যমে তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং প্রবীণ জাতীয় নেতাদের কারামুক্ত করা হবে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার বিরুদ্ধে বগুড়াসহ সারাদেশে ৬৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতায় দেশ আজ ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছে। কাজেই আপনারা দেশনেত্রীর নেতৃত্বে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নৌকা এখন ফুটা-শেখ হাসিনার ভাগ্য টুটা’; তাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে পার পাওয়া যাবে না। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশে তারেক আসবেন বীরের বেশে।
বগুড়া জেলা বিএনপি সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এবং বগুড়া শহরে আজ যে বিশাল লোকসমাবেশ হয়েছে, অতীতে কোনোদিনই বগুড়ায় এত বিশাল সমাবেশ হয়নি। আগামীতে আরও একবার বগুড়ায় এ ধরনের জনসমাবেশ ঘটবে যেদিন বাংলাদেশের কৃতী সন্তান, বগুড়ার মানুষের আপনজন, জাতীয় উন্নয়নের রূপকার তারেক রহমান বগুড়ার মাটিতে পা রাখবেন।
No comments