রোডমার্চে বগুড়া জনসমুদ্র by মাহাবুবুর রহমান,
রোডমার্চে বগুড়া জনসমুদ্র। না, শুধু বগুড়া নয়—ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত পুরো দুইশ’ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়েই ছিল জনজোয়ার। মানুষের এই উদ্দীপনা ও উজ্জীবনের ঢেউ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই। যেন জনসমুদ্রে নেমেছে জোয়ার। উত্তরাঞ্চল অভিমুখে খালেদা জিয়ার রোডমার্চ যখন বগুড়ায় পৌঁছে, তখন সেখানকার চিত্র সম্পূর্ণ বদলে যায়। এ যেন এক অন্য বগুড়া! যেন মানুষের এক সাগর! খালেদা জিয়ার জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে। সেখানে মানুষের ঢল। মাঠ ছাপিয়ে শহরের যত রাস্তা আছে, সবখানেই মানুষ আর মানুষ। অন্য কথায়—বগুড়া শহরজুড়েই মানুষ। কত মানুষ এসেছে বগুড়ায়।
কেউ বলেন পাঁচ লাখ, কেউ বলেন আরও অনেক অনেক বেশি। সংখ্যা বলা খুবই দুরূহ। শুধু এতটুকু বলা যায়, স্মরণকালে বগুড়ায় এতে মানুষ কেউ কখনও দেখেনি। এ দৃশ্য অভূতপূর্ব। রাজপথে নেমে আসা, শহরে আসা এসব মানুষের মুখে ছিল সরকারের ব্যর্থতা, দুঃশাসন এবং দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদী আওয়াজ। পথে পথে গণবিক্ষোভের প্রতিধ্বনিতে রোডমার্চ ও জনসভা-পথসভাগুলো রূপ নেয় মানুষের অনন্ত প্রতিবাদ মিছিলে।
চারদলীয় জোট আয়োজিত উত্তরাঞ্চলে দু’দিনের রোডমার্চের প্রথম দিনের কর্মসূচিতে যোগ দেয় লাখো সাধারণ মানুষ। ক্ষুধা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের অনাহারী মানুষের আহাজারি পরিণত হয় গণপ্রতিরোধে। এসব বিক্ষুব্ধ মানুষের দুর্ভোগ ও সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে পথে পথে বক্তৃতা দেন বিরোধীদলীয় নেতা, চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। খাবার আর জীবনের নিশ্চয়তা ফিরে পেতে রাজপথে চলমান আন্দোলনকে গণবিস্ফোরণে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি। নতুন প্রজন্মকে বলেন, ‘হুশিয়ার সাবধান, আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান। স্বৈরাচার ও তাঁবেদার এক হয়েছে। তাদের হটাতে ঘরে ঘরে আন্দোলন গড়ে তোলো।’ ঢাকা থেকে বগুড়ার পথে তিনটি পথসভায় বক্তৃতা করেন চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। লাখো জনতার এসব পথসভায় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অসংখ্য মানুষ গুম, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন, পুলিশের বুটের নিচে মানবাধিকার, সম্পাদকদের গ্রেফতার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হয়রানি, ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদান, ফারাক্কা বাঁধে পদ্মা শুকিয়ে মরুভূমির সৃষ্টি এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যা ও খরা, গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়া, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভাঙা রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ, তাঁত ও টেক্সটাইল খাত ধ্বংস, অনাহারী মানুষের ডাস্টবিনের খাদ্যগ্রহণের বিবরণ তুলে ধরেন। নিপীড়িত মানুষের নিত্যদিনের কষ্টের অনুভূতি তার মুখে উচ্চারিত হওয়ায় আন্দোলিত হয় জনসমুদ্র। গতকাল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চের শুরুতেই গাজীপুরে পথসভায় বক্তৃতা করেন তিনি। এরপর টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে দুটি পথসভা শেষে জনজোয়ারের পথ বেয়ে রোডমার্চ বগুড়ায় এসে পৌঁছায়। বগুড়া আলতাফুন্নেছা মাঠের জনসভা পরিণত হয় বিশাল জনসাগরে। লাখো মানুষের সামনে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেন, ‘জনজোয়ারের স্রোতে এ সরকারের গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে। জালিম সরকারকে না হটিয়ে ঘরে ফিরব না।’ জনসভা শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর নিয়ে খালেদা জিয়া বগুড়ায় রাতযাপন করেন। আজ সকালে রোডমার্চ করে নওগাঁয় পথসভা এবং বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা শেষে রাজশাহী ও নাটোরের পথ ধরে ঢাকায় ফিরবেন চারদলীয় জোটের নেতারা।
ঢাকা-রাজশাহী রোডমার্চের প্রথম দিনে তিনটি পথসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তৃতা করার কথা থাকলেও প্রিয় নেত্রীকে স্ব্বাগত জানাতে রাস্তার দু’ধারে ঢাকা থেকে বগুড়া মহাসড়কে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। আর এতে অগণিত মানুষের উচ্ছ্বাস মহাসড়কজুড়ে তৈরি করে মানবপ্রাচীরের। ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। গৃহিণীরা শিশু কোলে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তার দু’পাশে। দলীয় জমায়েতের বাইরেও কমপক্ষে এক ডজন স্থানে দেখা গেছে সাধারণ নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধদের লাইন। হাজার হাজার গাড়ি আর লাখো মানুষের মিছিলে লড়াইয়ের রাজপথে ছিল উত্সবের আমেজ। তিনটি পথসভায় বক্তৃতা দিলেও কমপক্ষে আটটি স্পটে থামাতে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে পিপাসার্ত মানুষ গগনবিদারী স্লোগান ও ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান রোডমার্চ কর্মসূচিকে। এ যেন মুক্তির বার্তা নিয়ে আসা পাঞ্জেরীর আগমনে সাধারণ মানুষের উল্লাসের মহাক্ষণ। প্রখর রোদের মাঝে ঘামঝরা শরীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে স্বাগত জানান খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন রোডমার্চের গাড়িবহরকে।
সকাল সোয়া ১০টায় গুলশানের বাসভবন থেকে চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চ শুরু হয়। তিনটি আনুষ্ঠানিক পথসভা ও অসংখ্য মানুষের সংগ্রামী শুভেচ্ছার পথ বেয়ে রোডমার্চ বগুড়া পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৪টায়। ২০০ কিলোমিটারের পিচঢালা পথে ছিল মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় গড়ে ওঠা আন্দোলন-সংগ্রামের পদধ্বনি। প্রতিবাদের আওয়াজে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের কাতারে জড়ো হয়েছিলেন অধিকারহারা লাখো মানুষ। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা রোডমার্চ কর্মসূূচিকে জনসমুদ্রে পরিণত করে। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো চারদিক থেকে ছুটে আসে মানুষ। প্রতিটি জেলা ও থানা থেকে রোডমার্চে যোগ হয় শত শত গাড়ি। ঢাকা থেকে দুই হাজার গাড়ির রোডমার্চ শুরু হলেও বগুড়া পৌঁছে এর সংখ্যা চার হাজারও ছাড়িয়ে যায়। রোডমার্চের আগাগোড়া ছিল কয়েক মাইলের বিনি সুতার মেলা। বিরোধীদলীয় নেতা ও চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ হটাতে শপথ নিয়ে মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান রোডমার্চে অংশ নেয়া জনতাকে।
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ স্বৈরসরকারের পদত্যাগের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলো রোডমার্চ করছে। গত ১০ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট রোডমার্চের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চ যাত্রা শুরু করেছে। পাজেরো জিপে খালেদা জিয়া এবং কয়েক হাজার গাড়িতে বিএনপি, চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস এবং সমমনা রাজনৈতিক দল এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), এনপিপি, এনডিপি, লেবার পার্টি, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ন্যাপসহ ১৭টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চে অংশ নিয়েছেন। এসব দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উত্তরা থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নাটোর মোড় হয়ে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অগণিত মানুষের মুখে ছিল মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবির নানা স্লোগান। আর হাতে ছিল পুলিশের বুটের তলায় মানুষের ছবি, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী, শুকিয়ে যাওয়া পদ্মায় ধু-ধু বালুচর, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার আর বিলবোর্ডে রোডমার্চকে স্বাগত জানানো হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শুরু হওয়া রোডমার্চকে খিলক্ষেত থেকেই হাজার হাজার মানুষ স্বাগত জানায়। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএ খালেক, বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল ও যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকরা উত্তরা পর্যন্ত, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, হাসান উদ্দিন সরকারের সমর্থকরা গাজীপুর এবং অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শামসুল আলম তোফা, আবুল কালাম সিদ্দিকী, দীপু হায়দার খানের সমর্থকরা বিভিন্ন স্পটে জড়ো হয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। তাদের ভিড়ে পুরো হাইওয়ে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা হেঁটে হেঁটে রাস্তার ভিড় সরান।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুপুর ১২টার দিকে প্রথম পথসভায় বক্তৃতা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে পথসভা পরিণত হয় বিশাল জনসভায়। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। লুটপাট ও দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্বদরবারে কলঙ্কিত করা হয়েছে। দেশের ইজ্জত রক্ষায় গণলড়াইয়ে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’ সমাবেশস্থলে পৌঁছলে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারসহ স্থানীয় নেতারা।
গাজীপুরের পথসভা শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর জনতার ভিড় ঠেলে টাঙ্গাইলে গিয়ে থামে। সেখানে এক পথসভায় বক্তৃতা করেন বেগম জিয়া। টাঙ্গাইলে পথসভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। টাঙ্গাইলে উপস্থিত জনতা অন্যান্য পোস্টার-ফেস্টুনের পাশাপাশি বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার বহন করে। খালেদা জিয়ার ফেস্টুন হাতে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে এসেছেন ৬৭ বছরের বৃদ্ধ কাসেম আলী। এত মানুষের ভিড়ে কেন এসেছেন—মধুপুর থেকে আসা এ ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার দেশটাকে শেষ করে ফেলতেছে। জিনিসের দাম এতো বেড়েছে যে, দু’বেলা খাওয়া জোটে না। আমাদের পিন্টুকে ওরা জেলে ভরে রেখেছে। মানুষের মুক্তির দাবি নিয়ে আমিও মিছিলে এসেছি।’
টাঙ্গাইলে পথসভা শেষে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চের গাড়িবহর যমুনা ব্রিজ পার হতেই জনজটে পড়ে যায়। সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৩০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী রোডমার্চের গাড়িবহরকে স্বাগত জানান। ছাত্রদলের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত মানুষ দেশ রক্ষায় খালেদা জিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। আর জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি বহনকারীরা ‘জেলের তালা ভাঙবো, চারদলের নেতাদের আনবো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চারদলীয় জোটনেত্রীকে স্বাগত জানান।
গাড়িবহর সিরাজগঞ্জে পৌঁছে আরেকটি পথসভায় মিলিত হয়। সেখানে খালেদা জিয়া বক্তৃতা করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পথসভায় সভাপতিত্ব করেন।
সিরাজগঞ্জে পথসভা শেষে জনতার উষ্ণ অভিবাদন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পথ বেয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বগুড়ায় পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৪টায়। সেখানে লাখো জনতার মাঝে মিলিয়ে যায় রোডমার্চের গাড়িবহর। মানুষের ভিড়ে বহরের অনেক গাড়িই বগুড়া শহরে ঢুকতে পারেনি।
রোডমার্চ ও জনসভায় জনজোয়ার : চারদলীয় জোটের উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চের প্রথম দিন ও বগুড়ায় জনসভায় জনজোয়ারের সৃষ্টি হয়। ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত পথে পথে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ও বগুড়ায় জনসমুদ্র কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। সিলেটে জনজোয়ারের পর গতকাল উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে আরও তীব্র গতির জনস্রোত সৃষ্টি হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মঙ্গাপীড়িত এলাকার অনাহারী মানুষ বিরোধীদলীয় নেতার কাছে তাদের দুঃখ ভাগাভাগি করতে আসেন। বগুড়ার জনসভায় যোগ দিতে আসা ৭০ বছরের কৃষক রহমত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ভীষণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। কোনো রাস্তাঘাট হচ্ছে না। কোথাও কাজ নেই। কৃষিজমির ফলনে পেট চলে না। সরকারের কোনো সহায়তা পান না তিনি। এভাবে অগণিত মানুষ খালেদা জিয়ার জনসভা ও পথসভায় যোগ দিয়ে চারদলীয় জোটের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে।
গতকাল ঢাকা-উত্তরাঞ্চল রোডমার্চে বিএনপির শীর্ষ নেতা, চারদলীয় জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস এবং সমমনা এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাগপার নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত্ হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও মহাসচিব খন্দকার লুত্ফর রহমান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানিসহ ২১টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চ বহরে রয়েছেন। অগ্রবর্তী টিম হিসেবে প্রতিটি স্পটে আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ ও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনকি সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, এম ইলিয়াস আলী, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ও সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মাহবুবুল হক নান্নু, রফিক শিকদার, শাহজাহান সম্রাটসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা রোডমার্চের বহরে অংশ নেন।
জামায়াতে ইসলামী : রোডমার্চে বেশ কিছু গাড়ি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ শতাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি পথসভা ও বগুড়ার জনসভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়েছে। গত সোমবার জামায়াতে ইসলামী বগুড়ার জনসভায় লাখো কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা দেয়। গতকাল মঞ্চের আশপাশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের স্লোগান ও হাততালি তাদের উপস্থিতিকে জানান দিয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোট : চারদলীয় জোটের রোডমার্চে ইসলামী ঐক্যজোট ১০টি গাড়িসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। তবে সরকারি বাধার কারণে দলের চেয়াম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনী রোডমার্চে অংশ নিতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
রোডমার্চে জাসাস শিল্পীরা : রোডমার্চে অগ্রগামী দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস শিল্পীরা পথসভার মঞ্চে গিয়ে গান পরিবেশন করে। এদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কণা, বাদশা বুলবুল ও অভিনেতা উজ্জ্বলসহ প্রমুখ ছিলেন। খালেদা জিয়ার পথসভায় পৌঁছানোর আগেই শিল্পীরা বগুড়া অভিমুখে রওনা হন।
রোডমার্চে যাত্রীদুর্ভোগ : রোডমার্চের হাজার হাজার গাড়ি ও অসংখ্য মানুষের স্রোতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন। গাড়িবহরের জন্য রাস্তার দুই দিকে অসংখ্য বাস ও দূরপাল্লার গাড়ি আটকা পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। রোডমার্চে বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালানোয় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হন। তবে মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়নি।
বারোটি মেডিকেল টিম : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, রোডমার্চে চিকিত্সা সহায়তার জন্য ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। অতিগরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিত্সা দেয় এ মেডিকেল টিম। কয়েক হাজার খাবার স্যালাইন ও পানি সরবরাহও করে তারা। এতে ৬৬ জন চিকিত্সক ও বেশ ক’জন নার্স রয়েছেন।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মহব্বত হোসেন ও ভুয়াপুর প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম বাবুল জানান, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ে জেলা বিএনপির পথসভাটি এক সময় বিশাল এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। লক্ষাধিক মানুষের এ জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেগম জিয়ার ভাষণ শুনতে অপেক্ষা করে। সভামঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ করতালি দিয়ে বেগম জিয়াকে বরণ করে নেয়। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গড়াই থেকে সভাস্থল পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়। শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয় সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভায় আসার পথে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পথসভায় আসার সময় গোপালপুর উপজেলার আলমনগর দাখিল মাদরাসার সামনে চারটি বাস ভাংচুর করা হয়। এছাড়াও গোপালপুর শহরে একটি বাস ভাংচুর করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. মঈন খান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপি নেতা লুত্ফর রহমান মতিন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রহমান খান সফিক প্রমুখ।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে এই পথসভায় বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, রোমানা মাহমুদ এমপি, আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আমিরুল ইসলাম আলীম, অ্যাড. মোকাদ্দেস আলী, আজিজুর রহমান দুলাল, আবদুল মান্নান তালুকদার, এম. আকবর আলী প্রমুখ।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) থেকে আবদুল আলীম অভি জানান, উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাইপাস বাসস্ট্যান্ডে খালেদা জিয়া এক পথসভায় বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করে ও মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেউ যখন অনশন, আন্দোলন, ধর্মঘট, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করতে চায় সরকার তখন তাদের দমন করতে পুলিশ ব্যবহার করছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ভাই, আপনারা এই দেশেরই নাগরিক আপনাদের ঐতিহ্য রয়েছে, তাই কারো আজ্ঞাবহ হয়ে মানুষদেরকে নির্যাতন করবেন না।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতা ও কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবীর খানের সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ্, এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, হেলাল উদ্দিন, আবদুল লতিফ, এবাদত হোসেন, হযরত আলী মিলন, আমজাদ হোসেন, শামসুল আলম সরকার প্রমুখ।
চারদলীয় জোট আয়োজিত উত্তরাঞ্চলে দু’দিনের রোডমার্চের প্রথম দিনের কর্মসূচিতে যোগ দেয় লাখো সাধারণ মানুষ। ক্ষুধা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের অনাহারী মানুষের আহাজারি পরিণত হয় গণপ্রতিরোধে। এসব বিক্ষুব্ধ মানুষের দুর্ভোগ ও সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে পথে পথে বক্তৃতা দেন বিরোধীদলীয় নেতা, চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। খাবার আর জীবনের নিশ্চয়তা ফিরে পেতে রাজপথে চলমান আন্দোলনকে গণবিস্ফোরণে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি। নতুন প্রজন্মকে বলেন, ‘হুশিয়ার সাবধান, আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান। স্বৈরাচার ও তাঁবেদার এক হয়েছে। তাদের হটাতে ঘরে ঘরে আন্দোলন গড়ে তোলো।’ ঢাকা থেকে বগুড়ার পথে তিনটি পথসভায় বক্তৃতা করেন চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। লাখো জনতার এসব পথসভায় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অসংখ্য মানুষ গুম, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন, পুলিশের বুটের নিচে মানবাধিকার, সম্পাদকদের গ্রেফতার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হয়রানি, ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদান, ফারাক্কা বাঁধে পদ্মা শুকিয়ে মরুভূমির সৃষ্টি এবং উত্তরাঞ্চলে বন্যা ও খরা, গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়া, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভাঙা রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ, তাঁত ও টেক্সটাইল খাত ধ্বংস, অনাহারী মানুষের ডাস্টবিনের খাদ্যগ্রহণের বিবরণ তুলে ধরেন। নিপীড়িত মানুষের নিত্যদিনের কষ্টের অনুভূতি তার মুখে উচ্চারিত হওয়ায় আন্দোলিত হয় জনসমুদ্র। গতকাল ঢাকা থেকে রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চের শুরুতেই গাজীপুরে পথসভায় বক্তৃতা করেন তিনি। এরপর টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে দুটি পথসভা শেষে জনজোয়ারের পথ বেয়ে রোডমার্চ বগুড়ায় এসে পৌঁছায়। বগুড়া আলতাফুন্নেছা মাঠের জনসভা পরিণত হয় বিশাল জনসাগরে। লাখো মানুষের সামনে খালেদা জিয়া ঘোষণা করেন, ‘জনজোয়ারের স্রোতে এ সরকারের গদি নড়বড়ে হয়ে গেছে। জালিম সরকারকে না হটিয়ে ঘরে ফিরব না।’ জনসভা শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর নিয়ে খালেদা জিয়া বগুড়ায় রাতযাপন করেন। আজ সকালে রোডমার্চ করে নওগাঁয় পথসভা এবং বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা শেষে রাজশাহী ও নাটোরের পথ ধরে ঢাকায় ফিরবেন চারদলীয় জোটের নেতারা।
ঢাকা-রাজশাহী রোডমার্চের প্রথম দিনে তিনটি পথসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তৃতা করার কথা থাকলেও প্রিয় নেত্রীকে স্ব্বাগত জানাতে রাস্তার দু’ধারে ঢাকা থেকে বগুড়া মহাসড়কে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। আর এতে অগণিত মানুষের উচ্ছ্বাস মহাসড়কজুড়ে তৈরি করে মানবপ্রাচীরের। ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। গৃহিণীরা শিশু কোলে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তার দু’পাশে। দলীয় জমায়েতের বাইরেও কমপক্ষে এক ডজন স্থানে দেখা গেছে সাধারণ নারী, শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধদের লাইন। হাজার হাজার গাড়ি আর লাখো মানুষের মিছিলে লড়াইয়ের রাজপথে ছিল উত্সবের আমেজ। তিনটি পথসভায় বক্তৃতা দিলেও কমপক্ষে আটটি স্পটে থামাতে হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে পিপাসার্ত মানুষ গগনবিদারী স্লোগান ও ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান রোডমার্চ কর্মসূচিকে। এ যেন মুক্তির বার্তা নিয়ে আসা পাঞ্জেরীর আগমনে সাধারণ মানুষের উল্লাসের মহাক্ষণ। প্রখর রোদের মাঝে ঘামঝরা শরীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে স্বাগত জানান খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন রোডমার্চের গাড়িবহরকে।
সকাল সোয়া ১০টায় গুলশানের বাসভবন থেকে চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চ শুরু হয়। তিনটি আনুষ্ঠানিক পথসভা ও অসংখ্য মানুষের সংগ্রামী শুভেচ্ছার পথ বেয়ে রোডমার্চ বগুড়া পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৪টায়। ২০০ কিলোমিটারের পিচঢালা পথে ছিল মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় গড়ে ওঠা আন্দোলন-সংগ্রামের পদধ্বনি। প্রতিবাদের আওয়াজে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীদের কাতারে জড়ো হয়েছিলেন অধিকারহারা লাখো মানুষ। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা রোডমার্চ কর্মসূূচিকে জনসমুদ্রে পরিণত করে। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো চারদিক থেকে ছুটে আসে মানুষ। প্রতিটি জেলা ও থানা থেকে রোডমার্চে যোগ হয় শত শত গাড়ি। ঢাকা থেকে দুই হাজার গাড়ির রোডমার্চ শুরু হলেও বগুড়া পৌঁছে এর সংখ্যা চার হাজারও ছাড়িয়ে যায়। রোডমার্চের আগাগোড়া ছিল কয়েক মাইলের বিনি সুতার মেলা। বিরোধীদলীয় নেতা ও চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ হটাতে শপথ নিয়ে মুক্তির লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান রোডমার্চে অংশ নেয়া জনতাকে।
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ স্বৈরসরকারের পদত্যাগের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলো রোডমার্চ করছে। গত ১০ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট রোডমার্চের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চ যাত্রা শুরু করেছে। পাজেরো জিপে খালেদা জিয়া এবং কয়েক হাজার গাড়িতে বিএনপি, চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস এবং সমমনা রাজনৈতিক দল এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), এনপিপি, এনডিপি, লেবার পার্টি, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ন্যাপসহ ১৭টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চে অংশ নিয়েছেন। এসব দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উত্তরা থেকে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নাটোর মোড় হয়ে বগুড়া পর্যন্ত মহাসড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে রোডমার্চকে স্বাগত জানায়। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অগণিত মানুষের মুখে ছিল মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবির নানা স্লোগান। আর হাতে ছিল পুলিশের বুটের তলায় মানুষের ছবি, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী, শুকিয়ে যাওয়া পদ্মায় ধু-ধু বালুচর, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার আর বিলবোর্ডে রোডমার্চকে স্বাগত জানানো হয়। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে শুরু হওয়া রোডমার্চকে খিলক্ষেত থেকেই হাজার হাজার মানুষ স্বাগত জানায়। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএ খালেক, বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল ও যুবদল নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের সমর্থকরা উত্তরা পর্যন্ত, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, হাসান উদ্দিন সরকারের সমর্থকরা গাজীপুর এবং অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, শামসুল আলম তোফা, আবুল কালাম সিদ্দিকী, দীপু হায়দার খানের সমর্থকরা বিভিন্ন স্পটে জড়ো হয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। তাদের ভিড়ে পুরো হাইওয়ে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা হেঁটে হেঁটে রাস্তার ভিড় সরান।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দুপুর ১২টার দিকে প্রথম পথসভায় বক্তৃতা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে পথসভা পরিণত হয় বিশাল জনসভায়। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে চারদলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। লুটপাট ও দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্বদরবারে কলঙ্কিত করা হয়েছে। দেশের ইজ্জত রক্ষায় গণলড়াইয়ে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’ সমাবেশস্থলে পৌঁছলে খালেদা জিয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারসহ স্থানীয় নেতারা।
গাজীপুরের পথসভা শেষে রোডমার্চের গাড়িবহর জনতার ভিড় ঠেলে টাঙ্গাইলে গিয়ে থামে। সেখানে এক পথসভায় বক্তৃতা করেন বেগম জিয়া। টাঙ্গাইলে পথসভায় সভাপতিত্ব করেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। টাঙ্গাইলে উপস্থিত জনতা অন্যান্য পোস্টার-ফেস্টুনের পাশাপাশি বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুর মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার বহন করে। খালেদা জিয়ার ফেস্টুন হাতে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে এসেছেন ৬৭ বছরের বৃদ্ধ কাসেম আলী। এত মানুষের ভিড়ে কেন এসেছেন—মধুপুর থেকে আসা এ ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকার দেশটাকে শেষ করে ফেলতেছে। জিনিসের দাম এতো বেড়েছে যে, দু’বেলা খাওয়া জোটে না। আমাদের পিন্টুকে ওরা জেলে ভরে রেখেছে। মানুষের মুক্তির দাবি নিয়ে আমিও মিছিলে এসেছি।’
টাঙ্গাইলে পথসভা শেষে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চের গাড়িবহর যমুনা ব্রিজ পার হতেই জনজটে পড়ে যায়। সেখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমের নেতৃত্বে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৩০ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী রোডমার্চের গাড়িবহরকে স্বাগত জানান। ছাত্রদলের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত মানুষ দেশ রক্ষায় খালেদা জিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। আর জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, শীর্ষ নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছবি বহনকারীরা ‘জেলের তালা ভাঙবো, চারদলের নেতাদের আনবো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে চারদলীয় জোটনেত্রীকে স্বাগত জানান।
গাড়িবহর সিরাজগঞ্জে পৌঁছে আরেকটি পথসভায় মিলিত হয়। সেখানে খালেদা জিয়া বক্তৃতা করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু পথসভায় সভাপতিত্ব করেন।
সিরাজগঞ্জে পথসভা শেষে জনতার উষ্ণ অভিবাদন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পথ বেয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বগুড়ায় পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৪টায়। সেখানে লাখো জনতার মাঝে মিলিয়ে যায় রোডমার্চের গাড়িবহর। মানুষের ভিড়ে বহরের অনেক গাড়িই বগুড়া শহরে ঢুকতে পারেনি।
রোডমার্চ ও জনসভায় জনজোয়ার : চারদলীয় জোটের উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চের প্রথম দিন ও বগুড়ায় জনসভায় জনজোয়ারের সৃষ্টি হয়। ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত পথে পথে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ও বগুড়ায় জনসমুদ্র কর্মসূচিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। সিলেটে জনজোয়ারের পর গতকাল উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে আরও তীব্র গতির জনস্রোত সৃষ্টি হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মঙ্গাপীড়িত এলাকার অনাহারী মানুষ বিরোধীদলীয় নেতার কাছে তাদের দুঃখ ভাগাভাগি করতে আসেন। বগুড়ার জনসভায় যোগ দিতে আসা ৭০ বছরের কৃষক রহমত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ভীষণ কষ্টে দিন কাটছে তাদের। কোনো রাস্তাঘাট হচ্ছে না। কোথাও কাজ নেই। কৃষিজমির ফলনে পেট চলে না। সরকারের কোনো সহায়তা পান না তিনি। এভাবে অগণিত মানুষ খালেদা জিয়ার জনসভা ও পথসভায় যোগ দিয়ে চারদলীয় জোটের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে।
গতকাল ঢাকা-উত্তরাঞ্চল রোডমার্চে বিএনপির শীর্ষ নেতা, চারদলীয় জোটভুক্ত জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস এবং সমমনা এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাগপার নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত্ হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও মহাসচিব খন্দকার লুত্ফর রহমান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানিসহ ২১টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চ বহরে রয়েছেন। অগ্রবর্তী টিম হিসেবে প্রতিটি স্পটে আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ ও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনকি সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, এম ইলিয়াস আলী, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব ও সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মাহবুবুল হক নান্নু, রফিক শিকদার, শাহজাহান সম্রাটসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা রোডমার্চের বহরে অংশ নেন।
জামায়াতে ইসলামী : রোডমার্চে বেশ কিছু গাড়ি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ শতাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি পথসভা ও বগুড়ার জনসভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়েছে। গত সোমবার জামায়াতে ইসলামী বগুড়ার জনসভায় লাখো কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা দেয়। গতকাল মঞ্চের আশপাশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের স্লোগান ও হাততালি তাদের উপস্থিতিকে জানান দিয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোট : চারদলীয় জোটের রোডমার্চে ইসলামী ঐক্যজোট ১০টি গাড়িসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। তবে সরকারি বাধার কারণে দলের চেয়াম্যান মুফতী ফজলুল হক আমিনী রোডমার্চে অংশ নিতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
রোডমার্চে জাসাস শিল্পীরা : রোডমার্চে অগ্রগামী দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস শিল্পীরা পথসভার মঞ্চে গিয়ে গান পরিবেশন করে। এদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কণা, বাদশা বুলবুল ও অভিনেতা উজ্জ্বলসহ প্রমুখ ছিলেন। খালেদা জিয়ার পথসভায় পৌঁছানোর আগেই শিল্পীরা বগুড়া অভিমুখে রওনা হন।
রোডমার্চে যাত্রীদুর্ভোগ : রোডমার্চের হাজার হাজার গাড়ি ও অসংখ্য মানুষের স্রোতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন। গাড়িবহরের জন্য রাস্তার দুই দিকে অসংখ্য বাস ও দূরপাল্লার গাড়ি আটকা পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। রোডমার্চে বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালানোয় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হন। তবে মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়নি।
বারোটি মেডিকেল টিম : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, রোডমার্চে চিকিত্সা সহায়তার জন্য ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। অতিগরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিত্সা দেয় এ মেডিকেল টিম। কয়েক হাজার খাবার স্যালাইন ও পানি সরবরাহও করে তারা। এতে ৬৬ জন চিকিত্সক ও বেশ ক’জন নার্স রয়েছেন।
আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মহব্বত হোসেন ও ভুয়াপুর প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম বাবুল জানান, যমুনা সেতুর পূর্বপাড়ে জেলা বিএনপির পথসভাটি এক সময় বিশাল এক জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। লক্ষাধিক মানুষের এ জনসভায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রচণ্ড গরমে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেগম জিয়ার ভাষণ শুনতে অপেক্ষা করে। সভামঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ করতালি দিয়ে বেগম জিয়াকে বরণ করে নেয়। বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গড়াই থেকে সভাস্থল পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়। শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয় সড়কের বিভিন্ন স্থানে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভায় আসার পথে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পথসভায় আসার সময় গোপালপুর উপজেলার আলমনগর দাখিল মাদরাসার সামনে চারটি বাস ভাংচুর করা হয়। এছাড়াও গোপালপুর শহরে একটি বাস ভাংচুর করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. মঈন খান, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, সাদেক হোসেন খোকা, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপি নেতা লুত্ফর রহমান মতিন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সফিকুর রহমান খান সফিক প্রমুখ।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে এই পথসভায় বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, রোমানা মাহমুদ এমপি, আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপি, নাজিম উদ্দিন আলম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আমিরুল ইসলাম আলীম, অ্যাড. মোকাদ্দেস আলী, আজিজুর রহমান দুলাল, আবদুল মান্নান তালুকদার, এম. আকবর আলী প্রমুখ।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) থেকে আবদুল আলীম অভি জানান, উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চে মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাইপাস বাসস্ট্যান্ডে খালেদা জিয়া এক পথসভায় বক্তৃতা করেন। সেখানে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, পুলিশ দিয়ে অত্যাচার করে ও মানুষকে ভয় দেখিয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। বর্তমান সরকার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেউ যখন অনশন, আন্দোলন, ধর্মঘট, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করতে চায় সরকার তখন তাদের দমন করতে পুলিশ ব্যবহার করছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ভাই, আপনারা এই দেশেরই নাগরিক আপনাদের ঐতিহ্য রয়েছে, তাই কারো আজ্ঞাবহ হয়ে মানুষদেরকে নির্যাতন করবেন না।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতা ও কালিয়াকৈর পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবীর খানের সভাপতিত্বে পথসভায় আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আসম হান্নান শাহ্, এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলি আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, হেলাল উদ্দিন, আবদুল লতিফ, এবাদত হোসেন, হযরত আলী মিলন, আমজাদ হোসেন, শামসুল আলম সরকার প্রমুখ।
No comments