গবেষণার ঘাটতি মেটাতে ব্যক্তি খাতের উদ্যোগ-'কথার দোকান' নয়, প্রকৃত গবেষণা করবে বিল্ড by রাজীব আহমেদ

শুল্কমুক্ত রপ্তানির জন্য দরকষাকষির সুবিধার্থে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার তালিকার ৬১ পণ্যে ভারত গত পাঁচ বছরে কী পরিমাণ শুল্ক আদায় করেছে, তার তথ্য চেয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান; কিন্তু কোথাও তিনি সে তথ্য পাননি। আক্ষেপ করে গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলছিলেন তিনি।তথ্যসংকট ও গবেষণার অভাব বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি নির্ধারণে একটা বিরাট সমস্যা। বেসরকারি খাতে এ সমস্যা আরো প্রকট। নিজেদের স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি নীতিনির্ধারণে সরকারকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এবার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি গবেষণা সংস্থা।


এটির কাজ হবে সত্যিকার গবেষণা, নীতিনির্ধারণে বেসরকারি অংশীদারত্ব বাড়ানো ও ব্যবসার সমস্যা সমাধানে গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরি করা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সংস্থাটি কোনো 'কথার দোকান' হবে না। সত্যিকারভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কাজ করবে।
'বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট বা বিল্ড' নামে গঠিত ওই সংস্থাটির উদ্যোক্তা ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি গঠনে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি অংশগ্রহণে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেটার বিজনেস ফোরাম গঠন করা হয়েছিল। ওই ফোরামের এখন কার্যকারিতা নেই। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছিল রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশন। বর্তমান সরকার সেটিও বিলুপ্ত করেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, এর চেয়েও শক্তিশালী সংস্থা তৈরি করা হবে। তা অবশ্য হয়নি। ফলে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে কার্যকর কোনো নীতিনির্ধারণী সংস্থা সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে এমন সংস্থা গঠন করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার নজির আছে। গত জুন মাসে ডিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত পরিষদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এমন একটি সংস্থা গঠনের পরামর্শ দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের বেসরকারি খাত উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে সরকার 'প্রাইভেট সেক্টর ডেভলপমেন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটি' নামে একটি কমিটি গঠন করে। এতে দেশের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বেসরকারি খাতের তিন সংস্থার প্রতিনিধিকে রাখা হয়। ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে জানান, এই কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি ও তার বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য 'বিল্ড' গঠন করা হয়েছে।
গ্রহণযোগ্য সুপারিশ তৈরির জন্য প্রয়োজন গবেষণা। ফলে গবেষণা কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিল্ড। গত সোমবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটি গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা জানান, এটির একটি শক্তিশালী সচিবালয় থাকবে। কার্যালয় হবে মতিঝিলের ডিসিসিআই ভবনে। কার্যালয়ে একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, গবেষণা কর্মকর্তা, গবেষণাদলের কর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। সংস্থাটির কাঠামো ও কর্মপরিধি নিয়ে গতকাল ওয়ার্কিং কমিটির এক সভায় সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা আলোচনা করেন।
বিল্ডের কাজ সম্পর্কে ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে জানান, সংস্থাটির কাজ হবে প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত করা, তা নিয়ে গবেষণা করা, সমাধানের উপায় নিয়ে সুপারিশ তৈরি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের কার্যক্রম তদারকি করা। প্রাথমিকভাবে এখানে কর, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে চারটি ওয়ার্কিং কমিটি থাকবে। এই কমিটিগুলোয় একজন সরকারি প্রতিনিধি ও একজন বেসরকারি প্রতিনিধি থাকবেন। বিল্ড নিজেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে। পাশাপাশি সরকার কোনো বিষয়ে চাইলে গবেষণা করে দেবে।
তিনি বলেন, বিল্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো বস্তুনিষ্ঠ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট বাণিজ্যিক সংস্কার এবং বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।

No comments

Powered by Blogger.