জনসভা রাজপথ একাকার by মাহাবুবুর রহমান,

ত্তরাঞ্চলে রোডমার্চে সাধারণ মানুষের জোয়ারে একাকার হয়ে গিয়েছিল রাজপথ। ব্যাপক জনসমর্থনে বিরোধীদলীয় ও চারদলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার এ কর্মসূচি সরকারবিরোধী আন্দোলনে সূচনা করেছে নতুন দিগন্ত। বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে দু’দিনের রোডমার্চে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমানুষের সম্পৃক্ততা রাজপথে প্রাণোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে। পথে পথে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের ঢল নামে। মঙ্গলবার বগুড়ার মানুষের মধ্যে যে অভাবনীয় উচ্ছ্বাস রচিত হয়েছিল তার প্রবল ঢেউ দিন পেরিয়ে গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে পৌঁছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ার পথে নেমে এসেছিল লাখো মানুষ।


পথের ধারে স্থানে স্থানে স্লোগানমুখর মানুষের ভিড় নেতাদেরও আপ্লুত করে। পৌনে দুশ’ কিলোমিটার পথ বেয়ে জনসমর্থনের ঢেউ নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকেও প্লাবিত করে।
ঢাকা থেকে মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া উত্তরাঞ্চল অভিমুখে রোডমার্চ জনসমুদ্রের পথ পেরিয়ে সন্ধ্যায় বগুড়া পৌঁছে। সেখানে মানুষের এক মহাসাগরে বেগম খালেদা জিয়া বক্তৃতা দেয়ার পর বগুড়া সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন। গতকাল সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে তার নেতৃত্বে নওগাঁর উদ্দেশে রোডমার্চ আবার যাত্রা শুরু করে। বগুড়া শহরের চৌমাথা থেকেই শুরু সাধারণ মানুষের স্বাগত জানানোর পালা। প্রতিটি হাটবাজার ও বাসস্ট্যান্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। তবে কিছুদূর পরপর সাধারণ নারী-শিশুরা খালেদা জিয়াকে দেখতে প্রখর রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। দাড়ি-টুপিওয়ালা ও সিঁদুর-ধুতি পরা মানুষ বগুড়ার বধূ এবং চারদলীয় জোটনেত্রী বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে ভিড় জমান। রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অগণিত মানুষের মুখে ছিল মৌলিক অধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিতে নানা স্লোগান। আর হাতে ছিল পুলিশের বুটের তলায় মানুষের ছবি, সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত ফেলানী, শুকিয়ে যাওয়া পদ্মার ধূধূ বালুচর, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অসংখ্য তোরণ, ব্যানার আর বিলবোর্ডে রোডমার্চকে স্বাগত জানানো হয়।
বগুড়ার এরুলিয়া বাজারে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ও মুরইল বাসস্ট্যান্ডে সংসদ সদস্য মোস্তফা আলী মুকুলের সমর্থকরা নেচে-গেয়ে রোডমার্চকে সমর্থন জানায়। কাহালুর দরগাহাট, বিবিরপুকুর বাজার, দুপচাঁচিয়া বাজারে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর জনতার এই ঢল ঠেলে সামনে এগোতে হিমশিম খায়। নসিমন, বাস, ট্রাক, সাইকেল ও মোটরসাইকেলে করে আশপাশ গ্রামের মানুষ বগুড়া-রাজশাহী মহাসড়কে ভিড় জমায়। সবুজ ধান ক্ষেতের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা সড়কে ভিড় জমায় ধানের শীষ, ফুল ও পোস্টার-ব্যানার নিয়ে অসংখ্য মানুষ। শিশু কোলে নিয়ে গৃহবধূ, স্কুলফেরা ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাত-আট বছরের শিশু ও ৭০ বছরের বৃদ্ধরাও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে পুরো মহাসড়কে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে চারদলীয় জোট নেতাকর্মীরা। সান্তাহারে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েক গাড়ি পুলিশকে রোডমার্চ বহরের প্রতিটি গাড়ির নম্বর লিখতে দেখা যায়। পথে পথে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, কারাবন্দি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের ছবিসংবলিত পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে নেতাকর্মীরা।
জনতার শুভেচ্ছার পথ বেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নওগাঁয় পৌঁছে পৌনে দুইটার দিকে। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় এটিএম মাঠ। মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের রাস্তা, খোলা জায়গা ও জনপদ মানুষে ভরে ওঠে। অচল হয়ে পড়ে পুরো নওগাঁ মহাসড়ক। সেখানে ৩৮ মিনিটের বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা তুলে ধরেন। প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষায় জীবন দিতেও প্রস্তুতির অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তিনি দেশরক্ষায় জনগণকে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। বেগম জিয়া বলেন, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ দেশকে ভারতের কাছে বন্ধক দিয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ দেশ রক্ষা করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নওগাঁয় উচ্ছ্বসিত জনতার ভিড়ে ছিল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আওয়াজ। স্লোগানে স্লোগানে সড়ক মুখরিত করে তোলে তারা। তাদের হাতে ছিল রঙবেরঙের ব্যানার ও ফেস্টুন। এতে লেখা ছিল—খালেদা জিয়া ডাক দিয়েছে আয়রে তোরা রাজপথে, দশ টাকা কেজি চাল দাও নইলে গদি ছেড়ে দাও, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-হত্যা-গুম শেখ হাসিনার চার গুণ, কথা কথায় চুক্তি করা চলবে না বন্ধ করো, ভোট চোরনীর গদিতে আগুন জ্বালাও একসঙ্গে, ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করো, ভারতীয় জলদস্যুদের হাত থেকে জলসীমা রক্ষা কর, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও সাঈদীকে মুক্তি দাও, পানি আমার অধিকার এ অধিকার দিতে হবে ইত্যাদি। বক্তৃতা শেষে বেগম খালেদা জিয়া বেলা দুইটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন।
এরপর মান্দায় সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কয়েক হাজার লোক রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে রোডমার্চের গাড়িবহরকে স্বাগত জানায়। অসংখ্য সাধারণ মানুষ ও জোটের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার পথ বেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সামনে এগোতে থাকে। মান্দা উপজেলা বিএনপির পর সতীহাটে নারী-শিশুদের লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এসব মানুষের হাতে ছিল না কোনো দলীয় প্রতীক, মুখে ছিল না কোনো স্লোগান। সবাই অপেক্ষায় দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে একপলক দেখতে। মান্দা ফেরিঘাটে পৌঁছলে দেখা যায় জনতার আরেকটি ঢল। কোনো জনসভা বা পথসভা না হলেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে নাচে-গানে উল্লাস করতে থাকে। মান্দা ব্রিজটিকে ধানের শীষ দিয়ে সাজানো হয় বর্ণাঢ্যরূপে। ‘কেন জড়ো হয়েছেন’—একজনের কাছে জানতে চাইলে উচ্ছ্বসিত জনতার একজন বলেন, ‘দেশরক্ষার আন্দোলনে অংশ নিতে এসেছি।’ এরপর দেলুয়াবাড়ী বাজার, কালিকাপুর ইউনিয়ন, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের উল্লসিত জনতার উষ্ণ অভিবাদন শেষে রাজশাহীর বাগমারা ও কেশরহাটে চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম দেখা যায়। মোহনপুরে পৌঁছলে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফার নেতৃত্বে আরেকটি বিশাল জমায়েত রোডমার্চের গাড়িবহরকে স্বাগত জানায়। নওহাটা এবং রাজশাহীর বাইপাসে মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে বিশাল গণজমায়েত বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানায়। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির ও বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ঢল নামে। রাজশাহীর পর পথে পথে কাশিয়াডাঙ্গা, রাজাবাড়ি, গোদাবাড়ি, বালিয়াঘাটায় অসংখ্য মানুষ রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে রোডমার্চে তাদের সমর্থন জানান। বিকাল পাঁচটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৌঁছলে জনতার ভিড়ে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহর জনসভাস্থলে পৌঁছতে বেগ পেতে হয়। র্যাব-পুলিশের সহায়তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল জনসমুদ্রে বেগম খালেদা জিয়া ৪০ মিনিট বক্তৃতা করেন। এতে তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে আরেকটি যুদ্ধে নামতে উপস্থিত জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
উত্তরাঞ্চলে দু’দিনে জনজোয়ার : উত্তরাঞ্চল অভিমুখে বেগম খালেদা জিয়ার রোডমার্চে জনজোয়ার নামে। দু’দিনের প্রথমদিনে ঢাকা থেকে বগুড়া দুশ’ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় দিন গতকাল বগুড়া থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পৌনে দুশ’ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়েই ছিল মানুষের মিছিল। সর্বত্র ছিল জনতার ঢল। রাজপথে নেমে আসা এসব মানুষের মুখে ছিল সরকারের ব্যর্থতা, দুঃশাসন এবং দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদী আওয়াজ। পথে পথে গণবিক্ষোভের প্রতিধ্বনিতে রোডমার্চ ও জনসভা রূপ নেয় এক অনন্ত প্রতিবাদের মিছিলে। ক্ষুধা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের অনাহারী মানুষের আহাজারি পরিণত হয় গণপ্রতিরোধে। এসব বিক্ষুব্ধ মানুষের দুর্ভোগ ও সরকারের ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে পথে পথে বক্তৃতা দেন বিরোধীদলীয় নেতা, চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। খাবার আর জীবনের নিশ্চয়তা ফিরে পেতে রাজপথে চলমান আন্দোলনকে গণবিস্ফোরণে পরিণত করার আহ্বান জানান তিনি। ঢাকা থেকে বগুড়ার পথে তিনটি পথসভা, বগুড়ায় জনসভা এবং গতকাল নওগাঁয় পথসভা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভায় বক্তৃতা করেন চারদলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। লাখো জনতার এসব পথসভা ও জনসভায় তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অসংখ্য মানুষ গুম, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন, পুলিশের বুটের নিচে মানবাধিকার, সম্পাদকদের গ্রেফতার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মামলা-হয়রানি, ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদান, ফারাক্কা বাঁধে পদ্মা শুকিয়ে মরুভূমির সৃষ্টি ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা ও খরা, গ্যাস সংযোগ না দেয়ায় শিল্পকারখানা বন্ধ হওয়া, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন, ভাঙা রাস্তায় মানুষের দুর্ভোগ, তাঁত ও টেক্সটাইল খাত ধ্বংস, অনাহারী মানুষের ডাস্টবিনে খাদ্যগ্রহণের বিবরণ তুলে ধরেন। নিপীড়িত মানুষের নিত্যদিনের কষ্টের অনুভূতি তার মুখে উচ্চারিত হওয়ায় আন্দোলিত হয় জনসমুদ্র।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ স্বৈরসরকারের পদত্যাগের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ও সমমনা দলগুলো রোডমার্চ করছে। গত ১০ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট রোডমার্চের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলে রোডমার্চ যাত্রা শুরু করে। পাজারো জিপে বেগম খালেদা জিয়া এবং কয়েক হাজার গাড়িতে বিএনপি, চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস এবং সমমনা রাজনৈতিক দল এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), এনপিপি, এনডিপি, লেবার পার্টি, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ন্যাপসহ ১৭টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চে অংশ নেন।
সিলেটে জনজোয়ারের পর দুই দিনের উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে আরও তীব্র জনস্রোত সৃষ্টি হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মঙ্গাপীড়িত এলাকার অনাহারী মানুষ বিরোধীদলীয় নেতার কাছে তাদের দুঃখ ভাগাভাগি করতে আসেন।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সভাপতি (অব.) অলি আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত্ হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও মহাসচিব খন্দকার লুত্ফর রহমান, এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, লেবার পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি ১৭টি দলের শীর্ষ নেতারা রোডমার্চ বহরে ছিলেন। অগ্রবর্তী টিম হিসেবে প্রতিটি স্পটে আগে থেকেই প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ ও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, বরকতউল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রফিক শিকদার প্রমুখ।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, এম ইলিয়াস আলী, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরব ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মাহবুবুল হক নান্নু, রফিক শিকদার, শাহজাহান সম্রাটসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা রোডমার্চের বহরে অংশ নেন।
জামায়াত ইসলামী : রোডমার্চে বেশ কিছু গাড়ি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদসহ শতাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি পথসভা ও জনসভায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোট : চারদলীয় জোটের রোডমার্চে ইসলামী ঐক্যজোট ১০টি গাড়িসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। তবে সরকারি বাধার কারণে দলের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী রোডমার্চে অংশ নিতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
রোডমার্চে জাসাস শিল্পীরা : রোডমার্চে অগ্রগামী দল হিসেবে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা, জাসাস শিল্পীরা পথসভার মঞ্চে গিয়ে গান পরিবেশন করেন। শিল্পীদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী মুনীর খান, কনা, বাদশা বুলবুল ও অভিনেতা উজ্জ্বল, সালাউদ্দিন শাহীন প্রমুখ ছিলেন।
রোডমার্চে যাত্রী দুর্ভোগ : রোডমার্চের হাজার হাজার গাড়ি ও অসংখ্য মানুষের স্রোতে মহাসড়কে সাধারণ পথযাত্রীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েন। গাড়িবহরের ভিড়ে গাড়ির জন্য দুই দিকে অসংখ্য বাস ও দূরপাল্লার গাড়ি আটকা পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের।
বারোটি মেডিকেল টিম : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ড্যাব মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, রোডমার্চের চিকিত্সা সহায়তার জন্য ১২টি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। অতিগরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শতাধিক ব্যক্তিকে চিকিত্সা দেয় এই মেডিকেল টিম। কয়েক হাজার খাবার স্যালাইন ও পানি সরবরাহও করে তারা। এতে ৬৬ জন চিকিত্সক ও বেশক’জন নার্স ছিলেন।
লাখো মানুষের পদভারে মুখর রাজশাহী : আমাদের রাজশাহী প্রতিনিধি সরদার এম আনিছুর রহমান জানান, হাজারও গাড়ির বহর আর পথে পথে লাখো মানুষের ঢলে গতকাল জেগে উঠেছিল ধানের রাজধানী নওগাঁ, রেশমনগরী রাজশাহী আর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কী যেন এক আকর্ষণে মানুষ ছুটে এসেছিল রাস্তার ধারে। হাত নেড়ে স্বাগত আর সমর্থন জানিয়েছে রোডমার্চের বহরকে। বিশেষ করে নওগাঁর মানুষের মধ্যে ছিল অন্যরকম আমেজ। প্রথমবারের মতো এখানকার মানুষ প্রত্যক্ষ করল রোডমার্চের বহর। কোনো রাজনৈতিক দলের এমন কর্মসূচি এই প্রথম। দু’পাশে সবুজ ধানের ক্ষেত মাঝখান দিয়ে কালো পিচঢালা পথ। এ পথ ধরে হাজারও গাড়ির বহর ছুটছে। বাতাসে আমন ধানের ক্ষেত দুলছে। রাস্তার দু’ধারে মানুষ ভিড় করেছে বহরকে স্বাগত জানানোর জন্য। সেই সকাল থেকে অপেক্ষার প্রহর গোনা। মাঠের কাম-কাজ তাড়াতাড়ি সেরে চলে এসেছে রাস্তার ধারে আর জনসভাস্থলে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সবাই উত্সুক নয়নে তাকিয়ে আছে কখন আসবে খালেদা জিয়া ও তার বহর। কার্তিকের তিনটে দিন পার হয়ে গেছে, তারপরও গরম কমেনি। গরমের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। রোডমার্চের বহর আসতে দেখে কৃষাণ-কৃষাণী ধানক্ষেত থেকে ছুটে এসেছে। বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ। ধানের গাছ ও সদ্য গজানো ধানের শীষ মুষ্টিবদ্ধ করে তুলে এনেছে। তা নাড়িয়ে স্বাগত আর সমর্থন জানিয়েছে কর্মসূচির প্রতি দাবির প্রতি। নওগাঁকে গুরুত্ব দেয়ায় ভীষণ খুশি হয়েছে মানুষ। গ্রামের পাশ দিয়ে ছুটে চলা রোডমার্চের এত গাড়ির বহর অবাক বিস্ময় নিয়ে চেয়ে দেখেছে। মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেক দূর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে জনসভার বক্তব্য শুনেছে। আসলে এটা জনসভা নয়, ছিল জনসমুদ্র।
নওগাঁয় সভা শেষে ফের যাত্রা শুরু। মান্দা, সাবাই, দেলুয়াবাড়ি, কেশরহাট, মোহনপুর, পবা হয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ। সর্বত্র রোডমার্চকে স্বাগত জানাচ্ছিল মানুষ আর মানুষ। রোডমার্চ বহরের কোথায় প্রথম গাড়ি, আর কোথায় শেষ তা মেলানো কষ্টকর। কেননা, পথে পথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে গাড়ির বহর। নওগাঁ সীমান্ত শেষে রাজশাহী জেলায় পৌঁছলে সেখানে স্বাগত জানায় জেলা নেতারা। এরপর নগরীর আমচত্বরে রোডমার্চের গাড়ির বহরকে রেশমনগরী রাজশাহীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও নগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ নগরীর নেতারা। রোডমার্চের বহর নওদাপাড়া, শালবাগান গোরহাঙ্গামোড় থেকে নগরভবন ছুঁয়ে সিটি বাইপাস দিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা হয়ে গোদাগাড়ীর দিকে ছুটে চলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে। সর্বত্র রাস্তার দু’ধারে মানুষ আর মানুষ—যেন রাস্তাজুড়ে মাইলের পর মাইল মানুষ মানববন্ধন করছে। রাজাবাড়ী, মাটিকাটা, বসন্তপুর, গোদাগাড়ী, সুলতানাগঞ্জে ছিল মানুষ আর মানুষ। মোড়ে মোড়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে নামানোর জন্য কিছু শোনার আকুতি ছিল সবার মাঝে। কিন্তু সময় তো থেমে থাকে না। এমনিতে নওগাঁ থেকে রাজশাহী আসতে সময় লেগেছে দ্বিগুণের বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপেক্ষা করছে লাখো মানুষ।
রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ এর আগে ১৯৭৬ সালে দেখেছে মাওলানা ভাষানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ। তখন এত ভালো রাস্তা ব্রিজ ছিল না। তারপর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে সেদিন যে লংমার্চ হয়েছিল তা এখনও স্মরণীয় হয়ে আছে। এরপর দেখছে বিএনপির লংমার্চ। এবার দেখল রোডমার্চ। গোদাগাড়ী ৮০ বছরের বৃদ্ধ আমজাদ শেখ অবাক বিস্ময়ে বলে ওঠেন, ‘জীবনে ম্যালা কর্মসূচি দেখনু। কিন্তু এডা কি গো। এত গাড়ি হামার বাপের জীবনে দেখিনি। আর মিটিংয়ে এতগুলান লোক আসল কুণ্ঠে থ্যাইকা।’
আহত নেতাকর্মীদের প্রতি খালেদা জিয়ার সমবেদনা : রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় গাড়িতে নেতাকর্মীদের আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সিলেটে রোডমার্চ কর্মসূচি সার্বিকভাবে সাফল্যমণ্ডিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চে অংশগ্রহণকারী বহরের কয়েকটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দলের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হওয়ায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়েছি। বেগম জিয়া আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।

No comments

Powered by Blogger.