কোহলির দিওয়ালির উপহার

কোটলার দর্শকদের দিওয়ালির উপহারই দিলেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় এই ব্যাটসম্যানের ঘরের মাঠ এটা। অথচ নিজের মাঠে খেলা দুই ওয়ানডের একটিতে ব্যাটিংই পাননি আর অপরটিতে করেছিলেন ১২ রান। পরশু অসাধারণ সেঞ্চুরিতে দূর করলেন আক্ষেপটা। গৌতম গম্ভীরের (৯০ বলে ৮৪*) সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ২০৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তাঁর অবদান ৯৮ বলে ১১২*। এই জুটির দৃঢ়তায় ইংল্যান্ডের ২৩৭ রানের চ্যালেঞ্জ ৮০ বল আর ৮ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়ে যায় ভারত। তাই নিজের মাঠে দলকে জেতানোর সন্তুষ্টিই ঝরল ম্যাচসেরা কোহলির কণ্ঠে, 'নিজের মাঠে এ ধরনের ইনিংস খেলাটা সব সময়ই বিশেষ কিছু।


এখানে ভালো কিছু করতে মুখিয়ে ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারায় দারুণ খুশি আমি। এ ধরনের উইকেটে ভালো ক্রিকেট শট খেললে আপনি বাউন্ডারি পাবেনই। সেটাই পেয়েছি আমি। এই ফর্মটা এখন ধরে রাখতে চাই।'
গত ১২ মাস অবশ্য দারুণ কেটেছে কোহলির। বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি এই ১২ মাসে ৩২ ওয়ানডেতে ৫ সেঞ্চুরিসহ ৪৮.৮৯ গড়ে করেছেন ১৩৬৯ রান। আর কেবল এ বছরই করেছেন ১০১৭। ফর্মটা তো ধরে রাখতে চাইবেনই কোহলি। কোহলির মতো গম্ভীরেরও নিজের মাঠ। ২৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর বিচলিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কোহলির সঙ্গে ইনিংসটা গড়েছেন তিনি। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ২০৯ রানের জুটিটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ আর ওয়ানডেতে যেকোনো দলের বিপক্ষে চতুর্থ সেরা। ৮০ বল বাকি থাকতে জয়টা আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা। ২০০৬ সালে জয়পুরে তারা জয় পেয়েছিল ১২৬ বল হাতে রেখে। এমন দাপুটে জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার পরও অবশ্য প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলছেন না ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনি প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন কৌশলে, 'আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটা একটা করে ম্যাচে জেতা। আর নিজেদের ক্রিকেটের আরো উন্নতি করা, বিশেষ করে দলটা যখন তারুণ্যনির্ভর।'
কোটলার উইকেটে সব সময় দাপট দেখান স্পিনাররা। কিন্তু পরশু এখানে সুইং পেয়েছেন পেসাররাও। ভারতীয় চার মিডিয়াম পেসারই পেয়েছেন ৭ উইকেট। ধোনি তাঁদের প্রশংসা করছেন এভাবে, 'এখানে আরো টার্ন আশা করেছিলাম। তবে শুরুতে যে সুইং পাওয়া গেছে সেটা দারুণ কাজে লাগিয়েছে বিনয়, প্রাভিনরা। ইংল্যান্ডকে বড় জুটি গড়তে দেইনি আমরা। দারুণ ব্যাটিং করেছে গৌতম আর কোহলি। তিন নম্বরে গৌতমের ইনিংসটা ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বল তখনো সুইং করছিল।'
পর পর দুটি ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারায় স্বভাবতই হতাশ ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক। হারের জন্য তিনি দায়ী করলেন ব্যাটসম্যানদের, 'আমাদের কয়েকজন ব্যাটসম্যান ৩০-৪০ রানের ইনিংস খেললেও সেটা টেনে নিয়ে যেতে পারেনি। ২৩৭ রানে থামতে হয়েছে যে কারণে। এ ধরনের উইকেটে রানটা অনেক কম। আমাদের ফিল্ডিংও ভালো হয়নি তেমন।'
ইংল্যান্ডে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মানসিকতার সমালোচনায় মুখর ছিলেন সাবেক দুই ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার ও সৌরভ গাঙ্গুলী। তাঁরাই এবার প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ধোনিদের। গাভাস্কার মনে করছেন, 'শুরুতে ভারতের দুই উইকেট নেওয়ার পরও ইংল্যান্ড যেভাবে হতোদ্যম হয়ে পড়ল তাতে আমি অবাক। দারুণ খেলেছে গৌতম-কোহলি। আমাদের তরুণরা বোলিংও ভালো করেছে।' সৌরভ গাঙ্গুলীর ভালো লেগেছে আবার ভারতের শরীরীভাষা, 'ভারতের তরুণ বোলারদের শরীরীভাষাটা দারুণ আক্রমণাত্মক ছিল। নিজেদের মাটিতে ভারত বরাবরই ভয়ংকর। এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল ইংল্যান্ডের।' সাবেক অধিনায়ক রবি শাস্ত্রী উচ্ছ্বসিত ৪ উইকেট নেওয়া বিনয় কুমারকে নিয়ে, 'এই পারফরম্যান্স ওর আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেবে। পুরো ম্যাচে যেভাবে লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বল করে গেল তার প্রশংসা করতেই হবে।' পিটিআই, টিএনএন

No comments

Powered by Blogger.