রাজনীতি-'মানুষের মুখে জয়, মানুষের মুখেই ক্ষয়' by মোনায়েম সরকার
আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ যেসব সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কঠোর মনোভাব
গ্রহণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য কয়েকটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা প্রকাশ একটি ভালো উদ্যোগ। যাত্রাবাড়ীর এক নারী বাসযাত্রী যাতায়াতের সমস্যার কথা জানানোর পর ওই রুটে নারীদের পৃথক দুটি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর পড়ে আমার মতো অনেকেই খুশি। মানুষের সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিক তার সমাধান করার ব্যাপারে আপনার আন্তরিকতার প্রশংসা করতেই হয়। এই ধারা অব্যাহত রাখুন। আমি একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী। ষাটের দশক থেকেই দেশের রাজনীতির নানা উত্থান-পতনের ঘটনা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখে আসছি। দীর্ঘকাল সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও এখন আর তা নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িত রাখাই আমার স্বপ্ন-সাধনা। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর 'সোনার বাংলা'র স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই যে কোনো ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য যেমন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মতো আমাকেও অনুপ্রাণিত করে, তেমনি কোনো ক্ষেত্রে সামান্য ব্যর্থতাও যথেষ্ট বিচলিত করে তোলে। আপনার একজন নিত্য শুভার্থী হিসেবে কয়েকটি কথা আপনার কাছে পেশ করা জরুরি মনে করছি।
এক. ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আপনার নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। আপনার জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। আজ সাড়ে তিন বছর পর পরিস্থিতি আর সেই জায়গায় নেই_ এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। অনেকেই বলছেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আপনার এবং আপনার সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আপনাকে 'মিডিয়াবান্ধব' প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। তারপরও কেন মিডিয়া আজ আপনার সরকারের প্রতি কিছুটা বৈরী_ সেটা এখনই খুঁজে বের করা দরকার। দ্রুত মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক লেখকের কাছেই আমি শুনেছি যে, তাদের লেখা দৈনিক পত্রিকাগুলো ছাপতে চায় না। বিশেষ করে সরকারের পক্ষের লেখা ছাপতে অনেক পত্রিকাই অনীহা প্রকাশ করে। আপনি সরকারে এসে যেসব দলীয় এমপি-মন্ত্রী কিংবা সমর্থকদের নামে টিভি লাইসেন্স দিয়েছেন, সেসব টিভি চ্যানেল দেখলে অনেকেরই মনে হয় যে, ওগুলো বোধহয় বিরোধী দলের মুখপত্র। আপনার প্রতি অনুরোধ, মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিন।
দুই. পরবর্তী নির্বাচনের আর বেশি সময় বাকি নেই। আপনি নিজেই সম্প্র্রতি দলীয় এক সভায় বলেছেন যে, ১৭০-১৭৫ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি যেমন ফল আশা করছেন, সে রকম না হওয়ার আশঙ্কাই নাকি বেশি। কেউ কেউ ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছেন। মানুষের মনে নানা কারণে কিছু ক্ষোভ ও হতাশা আছে, তবে তারা আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে_ সেটা এখন পর্যন্ত ঠিক নয়। তবে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষের মনোভাবের পরিবর্তনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কয়েকজন মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে নানা কারণে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। আবার কারও বিরুদ্ধে আছে অযোগ্যতা-অদক্ষতার অভিযোগ। মানুষের অভিযোগ কোনোভাবেই আমলে না নিলে মানুষ অপমান বোধ করে এবং নির্বাচন এলে নেতিবাচক ভোট দিয়ে থাকে। তাই যেসব মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে সমালোচনা ও অভিযোগ উঠেছে, তাদের এখনই বাদ দিতে হবে। ব্যক্তিবিশেষের জন্য দল ও সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। গত কাউন্সিলে যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা যে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি_ সেটা সারাদেশে দলের বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। সরকারের মধ্যে দল হারিয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলা যায়, চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্ব আর যা-ই হোক, কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ যেসব সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে, তাদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। বিতর্কিত ব্যক্তিদের আবার প্রার্থী করলে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা পেঁৗছবে। শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারী মার্কা ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে গত নির্বাচনে যেমন সুফল পাওয়া গেছে, পরবর্তী নির্বাচনেও তেমনি বিতর্কিত-সমালোচিতদের বাদ দিয়ে 'ক্লিন' ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দিলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মহাজোটের ঐক্য যাতে আগামী নির্বাচনেও অটুট থাকে, তার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা রাখতে হবে। শরিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ-অবিশ্বাস কিছু থাকলে সেগুলো অবিলম্বে দূর করতে হবে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী ঘৃণ্য ঘাতক-দালালদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা দূর করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে বিচারের রায় কার্যকর করা হলে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের উদ্দীপনা ও জাগরণ তৈরি হবে। বিচারের গতি শ্লথ হওয়ায় এ নিয়ে কারও কারও মনে কিছু সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। বিচার কাজ নিয়ে মানুষের মনে কোনো ধরনের সংশয় সৃষ্টি হয়_ এমন কিছু করা চলবে না।
পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন করে দেশে-বিদেশে শোরগোল শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দোলাচল চিত্তবৃত্তি পরিহার করে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে একমুখী নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কাছে নতজানু না হয়ে নিজস্ব সম্পদে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আপনি জাতির আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলেছেন। বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা নিশ্চয়ই অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে চলবে না। এ লক্ষ্যে সব দলমতের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আপনার নেতৃত্বে একটি পরামর্শ কমিটি করে কমিটির পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তার আহ্বান জানালে তা খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আমার মতো আরও অনেকেরই বিশ্বাস।
কথায় আছে_ 'মানুষের মুখে জয়, মানুষের মুখেই ক্ষয়।' কাজেই মানুষকে উপেক্ষা করা, মানুষের মতামতের প্রতি অবজ্ঞা দেখানো সমীচীন নয়। পরবর্তী নির্বাচনে যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে হয়, দেশকে যদি জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, সাম্প্র্রদায়িকতামুক্ত রাখতে হয়, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হয়, তাহলে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে আপনাকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কালক্ষেপণ হবে আত্মঘাতী।
মোনায়েম সরকার : রাজনৈতিক কর্মী
গ্রহণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য কয়েকটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা প্রকাশ একটি ভালো উদ্যোগ। যাত্রাবাড়ীর এক নারী বাসযাত্রী যাতায়াতের সমস্যার কথা জানানোর পর ওই রুটে নারীদের পৃথক দুটি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে পত্রিকায় খবর পড়ে আমার মতো অনেকেই খুশি। মানুষের সমস্যার কথা জেনে তাৎক্ষণিক তার সমাধান করার ব্যাপারে আপনার আন্তরিকতার প্রশংসা করতেই হয়। এই ধারা অব্যাহত রাখুন। আমি একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী। ষাটের দশক থেকেই দেশের রাজনীতির নানা উত্থান-পতনের ঘটনা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখে আসছি। দীর্ঘকাল সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও এখন আর তা নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িত রাখাই আমার স্বপ্ন-সাধনা। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর 'সোনার বাংলা'র স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই যে কোনো ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য যেমন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মতো আমাকেও অনুপ্রাণিত করে, তেমনি কোনো ক্ষেত্রে সামান্য ব্যর্থতাও যথেষ্ট বিচলিত করে তোলে। আপনার একজন নিত্য শুভার্থী হিসেবে কয়েকটি কথা আপনার কাছে পেশ করা জরুরি মনে করছি।
এক. ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আপনার নেতৃত্বে মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। আপনার জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। আজ সাড়ে তিন বছর পর পরিস্থিতি আর সেই জায়গায় নেই_ এটা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে। অনেকেই বলছেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে আপনার এবং আপনার সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আপনাকে 'মিডিয়াবান্ধব' প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। তারপরও কেন মিডিয়া আজ আপনার সরকারের প্রতি কিছুটা বৈরী_ সেটা এখনই খুঁজে বের করা দরকার। দ্রুত মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক লেখকের কাছেই আমি শুনেছি যে, তাদের লেখা দৈনিক পত্রিকাগুলো ছাপতে চায় না। বিশেষ করে সরকারের পক্ষের লেখা ছাপতে অনেক পত্রিকাই অনীহা প্রকাশ করে। আপনি সরকারে এসে যেসব দলীয় এমপি-মন্ত্রী কিংবা সমর্থকদের নামে টিভি লাইসেন্স দিয়েছেন, সেসব টিভি চ্যানেল দেখলে অনেকেরই মনে হয় যে, ওগুলো বোধহয় বিরোধী দলের মুখপত্র। আপনার প্রতি অনুরোধ, মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিন।
দুই. পরবর্তী নির্বাচনের আর বেশি সময় বাকি নেই। আপনি নিজেই সম্প্র্রতি দলীয় এক সভায় বলেছেন যে, ১৭০-১৭৫ আসনে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্বাচনে আপনি যেমন ফল আশা করছেন, সে রকম না হওয়ার আশঙ্কাই নাকি বেশি। কেউ কেউ ২০০১ সালের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছেন। মানুষের মনে নানা কারণে কিছু ক্ষোভ ও হতাশা আছে, তবে তারা আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছে_ সেটা এখন পর্যন্ত ঠিক নয়। তবে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতার কথা অস্বীকার করা যাবে না। বিভিন্ন নির্বাচনে মানুষের মনোভাবের পরিবর্তনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কয়েকজন মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে নানা কারণে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি-ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। আবার কারও বিরুদ্ধে আছে অযোগ্যতা-অদক্ষতার অভিযোগ। মানুষের অভিযোগ কোনোভাবেই আমলে না নিলে মানুষ অপমান বোধ করে এবং নির্বাচন এলে নেতিবাচক ভোট দিয়ে থাকে। তাই যেসব মন্ত্রী-উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে সমালোচনা ও অভিযোগ উঠেছে, তাদের এখনই বাদ দিতে হবে। ব্যক্তিবিশেষের জন্য দল ও সরকারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করে দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। গত কাউন্সিলে যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে, তারা যে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি_ সেটা সারাদেশে দলের বর্তমান অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। সরকারের মধ্যে দল হারিয়ে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলা যায়, চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্ব আর যা-ই হোক, কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে।
আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ যেসব সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অভিযোগ আছে, তাদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। বিতর্কিত ব্যক্তিদের আবার প্রার্থী করলে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা পেঁৗছবে। শামীম ওসমান, জয়নাল হাজারী মার্কা ব্যক্তিদের মনোনয়ন না দিয়ে গত নির্বাচনে যেমন সুফল পাওয়া গেছে, পরবর্তী নির্বাচনেও তেমনি বিতর্কিত-সমালোচিতদের বাদ দিয়ে 'ক্লিন' ইমেজের প্রার্থী মনোনয়ন দিলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
মহাজোটের ঐক্য যাতে আগামী নির্বাচনেও অটুট থাকে, তার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা রাখতে হবে। শরিক দলগুলোর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ-অবিশ্বাস কিছু থাকলে সেগুলো অবিলম্বে দূর করতে হবে।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী ঘৃণ্য ঘাতক-দালালদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সব ধরনের বাধা দূর করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে বিচারের রায় কার্যকর করা হলে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের উদ্দীপনা ও জাগরণ তৈরি হবে। বিচারের গতি শ্লথ হওয়ায় এ নিয়ে কারও কারও মনে কিছু সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে। বিচার কাজ নিয়ে মানুষের মনে কোনো ধরনের সংশয় সৃষ্টি হয়_ এমন কিছু করা চলবে না।
পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন করে দেশে-বিদেশে শোরগোল শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দোলাচল চিত্তবৃত্তি পরিহার করে সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে একমুখী নীতি নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কাছে নতজানু না হয়ে নিজস্ব সম্পদে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে আপনি জাতির আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলেছেন। বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা নিশ্চয়ই অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শুরু করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে চলবে না। এ লক্ষ্যে সব দলমতের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আপনার নেতৃত্বে একটি পরামর্শ কমিটি করে কমিটির পক্ষ থেকে অর্থ সহায়তার আহ্বান জানালে তা খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আমার মতো আরও অনেকেরই বিশ্বাস।
কথায় আছে_ 'মানুষের মুখে জয়, মানুষের মুখেই ক্ষয়।' কাজেই মানুষকে উপেক্ষা করা, মানুষের মতামতের প্রতি অবজ্ঞা দেখানো সমীচীন নয়। পরবর্তী নির্বাচনে যদি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে হয়, দেশকে যদি জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, সাম্প্র্রদায়িকতামুক্ত রাখতে হয়, যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হয়, তাহলে উপরের বিষয়গুলো নিয়ে আপনাকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কালক্ষেপণ হবে আত্মঘাতী।
মোনায়েম সরকার : রাজনৈতিক কর্মী
No comments