মানব পাচারঃ অভিযোগ দায়ের ও শাস্তি
অপরাধ ও মানব পাচার একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের ভিতরে সীমাবদ্ধ নেই। দেশ ও দেশের বাইরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ অপরাধের সাথে জড়িত। এরা প্রায়ই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধগোষ্ঠীর সাথে জড়িত থাকে। অপরাধীদের শাস্তি বিধান ও মানব পাচার প্রতিরোধের জন্য আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে, আইনের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসে এসব অপরাধীচক্র।
পাচারকারীরা মানুষের আর্থ-সামাজিক দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অন্যত্র পাচার করে থাকে। এ মানব পাচার কেবল এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এক দেশ থেকে আরেক দেশেও এরা পাচার করে থাকে।
আমাদের দেশে মানব পাচার বিষয়ক কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছিলনা। সাধারণত দ-বিধি ও ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী মানব পাচার অপরাধের বিচার করা হতো।
এবছরই মানব পাচার প্রতিরোধ ও এসংক্রান্ত অপরাধের বিচার করার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ নামে পরিচিতি।
মানব পাচার বলতে কী বোঝায়?:
- ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করে কোনো ব্যক্তিকে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়া। অথবা
- প্রতারণা করে বা কোনো ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্যকোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে কোনো ব্যক্তিকে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়া; অথবা
- অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেন-পূর্বক কোনো ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করে কোনো ব্যক্তিকে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকিয়ে রাখা বা আশ্রয় দেওয়া;
উপরোক্ত মানব পাচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরেও হতে পারে।
যেসব কারণে একটি অপরাধ মানব পাচার হিসেবে গণ্য হবে তার মধ্যে রয়েছে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন, শ্রম শোষণ বা অন্যকোনো শোষণ বা নিপীড়ন।
অর্থাৎ যদি কেউ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে প্রতারণার মাধ্যমে, অসৎ উদ্দেশ্য এবং বাধ্যতামূলক শ্রম বা সার্ভিচিউড বা কোনো শোষণ বা নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে মর্মে জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে কাজ বা চাকরির উদ্দেশ্যে গমন, অভিবাসন বা বর্হিগমন করতে প্রলুব্ধ বা সহায়তা করে, তাহলে তা মানব পাচার হিসেবে গন্য হবে।
মানব পাচারের শাস্তি:
মানব পাচারকারী অনধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে এবং অন্যূন পাঁচ বছর কারাদণ্ডে এবং অন্যূন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এছাড়া অপরাধের ধরন, মাত্রা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মেয়াদের দণ্ডের বিধানও রয়েছে।
কোথায় অভিযোগ দায়ের করবেন:
এ আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে কোনো ব্যক্তি পুলিশ অথবা ট্রাইব্যুনালের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। পুলিশ এধরনের অভিযোগ আনয়নকারীকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করবে এবং প্রয়োজন না হলে তার নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করবে না।
No comments