সমকালীন প্রসঙ্গ-ফতোয়াবাজি কেন অগ্রহণযোগ্য by ম. ইনামুল হক
কীভাবে ৯০% মুসলমান ও অজস্র মসজিদের বাংলাদেশে শিশুশ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি, অপহরণ, ধর্ষণ ও ধর্মের নামে নারীহত্যা বাড়বাড়ন্ত থাকে? বাংলাদেশে তাই ফতোয়াবাজি অবৈধ থাকাই দরকার। বরং বাংলাদেশে দরকার জাতিধর্ম নির্বিশেষে একই ধরনের ফৌজদারি এবং উত্তরাধিকার আইন। ধর্ম পালন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার
হওয়াই বাঞ্ছনীয় বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০% মুসলমান এবং ধর্মপ্রাণ। তাই বাংলাদেশ মুসলমানদের দেশ বলা যায়। তাহলে বাংলাদেশে ফতোয়াবাজি অবৈধ হবে কেন? বাংলাদেশে কি শরিয়া আইন প্রযোজ্য নয়? ইসলামী বিধানে সবকিছুরই সঠিক বিচার আছে নয় কি? ইসলামী বিধান আর প্রচলিত বিচারব্যবস্থা পরস্পরবিরোধী কেন? এ ধরনের প্রশ্ন এখন অনেকের মনেই। বিশেষ করে যখন গ্রামে গ্রামে প্রায় প্রতিদিনই কিশোরী মেয়েরা ধর্ষিত হয়ে হয় মরছে, নয় বেঁচে গেলেও আত্মহত্যা করছে। কোথাও কোথাও ইসলামী বিচারে দোররার আঘাতে মরছে। সারাদেশের পত্রপত্রিকায় খবরগুলো ছাপা হলে নানা স্থানে প্রতিবাদ হচ্ছে। বিষয়টি অমানবিক হতে পারে কি-না ধর্মভীরুদের মনে প্রশ্ন, তবে প্রকাশ্যে নয়। কারণ, পবিত্র কোরআনে ঘোষিত জেনার শাস্তি কীভাবে নাকচ করা যায়?
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো যতই সাফল্যের প্রচার করুক দেশব্যাপী দুর্নীতি, অনাচার, অব্যবস্থা যেহেতু কমছে না, তাই ইসলামবাদীরা এসব দূর করার জন্য ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ বলে প্রচার করেন। কিন্তু আধুনিক শিক্ষিত বাঙালি তা চায় না, তারা বাংলাদেশকে তালেবানের আফগানিস্তান বানাতে চায় না। এ শিক্ষিত বাঙালি সারা সপ্তাহ নামাজ যাই-ই পড়ূক, জুমার নামাজ নিয়মিত পড়ে। ওই নামাজের আগে খুতবায় হুজুররা মিম্বরে বসে যা বলার বলেন, যার অনেক কথাই আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না, কিন্তু শিক্ষিত বাঙালি মাথা হেঁট করে তা শোনে। অনেকে বাড়িতে ফিরে কিংবা অফিসে গিয়ে মোল্লাদের বুজরুকি আর গোঁড়ামির কথা নিয়ে সহাস্যে গল্প করেন। এভাবেই বাঙালি সমাজ ক্রমে এক জগাখিচুড়ি রূপ গ্রহণ করছে। যে সমাজে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি বাস্তবতার মতোই ফতোয়াবাজিও একটি বাস্তবতা হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করছে।
বাংলাদেশ যদি ইসলামী রাষ্ট্র হতো, যেমন ইরান একটি ইসলামী রাষ্ট্র, তাহলে এখানে ফতোয়া অবৈধ হতো না। তবে বাংলাদেশে যে কোনো মোল্লা ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে সক্ষম বলে মনে করে, ইরানে কিন্তু তা সম্ভব নয়। সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে সরকার মুফতি নিয়োগ করেন, কেবল তারাই ফতোয়া দিতে পারেন। ইরানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানে নারী নিপীড়নের কথা তেমন শোনা যায় না, তবে আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তালেবানরা সেখানে নারীদের ঘরবন্দি করে, পাকিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোশে দেশটিকে নরকে পরিণত করা হয়েছে। এককালের শান্তিপূর্ণ নগরী করাচিতে এখন মেয়েরা যখন-তখন ধর্ষিত হয়, কিন্তু উচ্চবাচ্য করে না; কারণ বিষয়টি প্রকাশিত হলে ইসলামী ফতোয়ায় বেত্রাঘাত খেয়ে মেয়েটিকে মরতে হবে। এসব মেয়ে হাসপাতালে যেতে পারে না। ফলে বছরে হাজার হাজার নবজাতক মৃত বা জীবিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ নানা ধর্মের দেশ। আজ এদেশে মুসলমান ৯০% হলেও ধর্মের নামে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় মুসলমানের সংখ্যা ৬০%-এর বেশি ছিল না। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে এ দেশের হিন্দুদের ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তাদের সংকুচিত করা হয়েছে; যার বিপরীতে মুসলমানের সংখ্যা বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তবুও এদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর ব্যাপারে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করা যায়নি।
বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর বিপক্ষে একটি বড় শক্তি কাজ করে নীরবে, এদেশের ঘরে ঘরে। কারণ বাংলাদেশের পরিবারগুলো মাতৃতান্ত্রিক। ইসলামের পুরুষতান্ত্রিক বিধান এদেশের হাজার হাজার বছর ধরে গড়া যে সংস্কৃতি তা পাল্টাতে পারেনি। তাই সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারার বেলায় ইসলামী বিধান কার্যকর হলেও সংসারে নারীরই প্রাধান্য থাকছে। ইসলামী কায়দায় এখানে হেরেম চলে না, কোনো পুরুষ একাধিক বিয়ে করে সমাজে মর্যাদাও পায় না। অথচ যেখান থেকে ইসলাম এসেছে সেই মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক স্ত্রী থাকা মর্যাদার ব্যাপার এবং সেখানকার পরিবারগুলো ঐতিহাসিকভাবে পুরুষতান্ত্রিক। বাংলাদেশের মুসলমান ও হিন্দুরা তাদের পরিবারে আদি মাতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধরে রাখলেও সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার বেলায় হিন্দুরা মধ্য এশিয়ার বৈদিক পুরুষতান্ত্রিক বিধান গ্রহণ করেছে। তাই মুসলমান সমাজে মেয়েরা ছেলেদের অর্ধেক সম্পত্তি পেলেও হিন্দু সমাজে মেয়েরা তা পায় না।
বাংলাদেশে আসলে ইসলাম চর্চা লাগামহীনভাবে হচ্ছে। যে যার মতো কোরআনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, ওয়াজ মাহফিলে ইচ্ছামতো আয়াত আওড়াচ্ছে এবং পরম করুণাময় দয়াশীল আল্লাহকে শাস্তি প্রদানকারী ভয়ানক শক্তিরূপে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চল নানা মতবাদের মাদ্রাসা, মসজিদ, দরবার ও হুজুরদের দাপট ও জলসায় প্রকম্পিত হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে এখন একজন দাড়ি-টুপি-আলখাল্লাধারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের সামনে একইসঙ্গে শক্তি ও ভয়ের প্রতিভূ। তাই একজন ধর্মপ্রাণ সাচ্চা মুসলমানের কাছে নিজের এই রূপ সবসময় স্বস্তিদায়ক হয় না।
হতে পারে, আল কোরআন নাজিলের সময় আরব দেশে ধর্ষণ বলে কোনো কিছু ঘটত না। নবীজীর যুগের একটি ঘটনার কথা অনেকেরই জানা, হিজরি ৬ সালে বনু মুস্তালিকে অভিযান শেষে ফিরতিপথে হজরত আয়েশা কাফেলা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি তার হারানো নেকলেস খুঁজতে উট থেকে নেমেছিলেন। সারারাত একাকী অন্ধকারে মাটিতে ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন সকালে এক মোহাজির তাকে উদ্ধার করে। আমরা কি এ ধরনের সমাজ এখন কল্পনা করতে পারি যখন একটি হারিয়ে যাওয়া নারী নির্ভয়ে একাকী অন্ধকার রাত কাটাতে পারে? সত্য বলতে কি, ইসলাম আসার সময় আরবে যে 'অন্ধকার যুগ' বিরাজ করত এখন তার চেয়েও গভীর অন্ধকার যুগ বিরাজ করছে। তখন কোরআনের বিচারে একজন ব্যভিচারীও বেঁচে থাকার সুযোগ পেত; কিন্তু এখন ইসলামের নামে নিরপরাধ নারী ও শিশুহত্যা হচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রনায়করা বা জননেত্রী ও দেশনেত্রীরা এ কথা স্বীকার করবেন কি?
একটি ধর্ম যত পুরনো হতে থাকে, ততই তার ভেতরে বিকৃতি ঢুকতে থাকে। এই বিকৃতিগুলো দূর করার জন্য আসেন সংস্কারক। তবে ধর্মগুরুরা সংস্কারকের কথা না মানলে সংস্কারকের অনুসারীরা একটি ভিন্ন ধারা বা ফেরকায় পরিচিত হতে থাকেন। এভাবে বাংলাদেশে তথা সারা পৃথিবীতে ইসলাম যতই বিকৃত হয়েছে, সংস্কারকের মাধ্যমে শত শত ফেরকাও সৃষ্টি হয়েছে। আজ তাই দেশে দেশে যে ইসলাম প্রচলিত তার অনেকটাই বিকৃত ইসলাম। তা না হলে অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা কীভাবে মসজিদের ইমামদের আনুকূল্য পান? কীভাবে ৯০% মুসলমান ও অজস্র মসজিদের বাংলাদেশে শিশুশ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি, অপহরণ, ধর্ষণ ও ধর্মের নামে নারীহত্যা বাড়বাড়ন্ত থাকে? বাংলাদেশে তাই ফতোয়াবাজি অবৈধ থাকাই দরকার। বরং বাংলাদেশে দরকার জাতিধর্ম নির্বিশেষে একই ধরনের ফৌজদারি এবং উত্তরাধিকার আইন। ধর্ম পালন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক : সাবেক মহাপরিচালক, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ও কলাম লেখক
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো যতই সাফল্যের প্রচার করুক দেশব্যাপী দুর্নীতি, অনাচার, অব্যবস্থা যেহেতু কমছে না, তাই ইসলামবাদীরা এসব দূর করার জন্য ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠাই একমাত্র পথ বলে প্রচার করেন। কিন্তু আধুনিক শিক্ষিত বাঙালি তা চায় না, তারা বাংলাদেশকে তালেবানের আফগানিস্তান বানাতে চায় না। এ শিক্ষিত বাঙালি সারা সপ্তাহ নামাজ যাই-ই পড়ূক, জুমার নামাজ নিয়মিত পড়ে। ওই নামাজের আগে খুতবায় হুজুররা মিম্বরে বসে যা বলার বলেন, যার অনেক কথাই আধুনিক সমাজে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না, কিন্তু শিক্ষিত বাঙালি মাথা হেঁট করে তা শোনে। অনেকে বাড়িতে ফিরে কিংবা অফিসে গিয়ে মোল্লাদের বুজরুকি আর গোঁড়ামির কথা নিয়ে সহাস্যে গল্প করেন। এভাবেই বাঙালি সমাজ ক্রমে এক জগাখিচুড়ি রূপ গ্রহণ করছে। যে সমাজে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি বাস্তবতার মতোই ফতোয়াবাজিও একটি বাস্তবতা হয়ে ভয়ঙ্কর রূপ পরিগ্রহ করছে।
বাংলাদেশ যদি ইসলামী রাষ্ট্র হতো, যেমন ইরান একটি ইসলামী রাষ্ট্র, তাহলে এখানে ফতোয়া অবৈধ হতো না। তবে বাংলাদেশে যে কোনো মোল্লা ফতোয়া দেওয়ার ব্যাপারে সক্ষম বলে মনে করে, ইরানে কিন্তু তা সম্ভব নয়। সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে সরকার মুফতি নিয়োগ করেন, কেবল তারাই ফতোয়া দিতে পারেন। ইরানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানে নারী নিপীড়নের কথা তেমন শোনা যায় না, তবে আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে তালেবানরা সেখানে নারীদের ঘরবন্দি করে, পাকিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জোশে দেশটিকে নরকে পরিণত করা হয়েছে। এককালের শান্তিপূর্ণ নগরী করাচিতে এখন মেয়েরা যখন-তখন ধর্ষিত হয়, কিন্তু উচ্চবাচ্য করে না; কারণ বিষয়টি প্রকাশিত হলে ইসলামী ফতোয়ায় বেত্রাঘাত খেয়ে মেয়েটিকে মরতে হবে। এসব মেয়ে হাসপাতালে যেতে পারে না। ফলে বছরে হাজার হাজার নবজাতক মৃত বা জীবিত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ নানা ধর্মের দেশ। আজ এদেশে মুসলমান ৯০% হলেও ধর্মের নামে পাকিস্তান সৃষ্টির সময় মুসলমানের সংখ্যা ৬০%-এর বেশি ছিল না। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে এ দেশের হিন্দুদের ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তাদের সংকুচিত করা হয়েছে; যার বিপরীতে মুসলমানের সংখ্যা বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তবুও এদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর ব্যাপারে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করা যায়নি।
বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানানোর বিপক্ষে একটি বড় শক্তি কাজ করে নীরবে, এদেশের ঘরে ঘরে। কারণ বাংলাদেশের পরিবারগুলো মাতৃতান্ত্রিক। ইসলামের পুরুষতান্ত্রিক বিধান এদেশের হাজার হাজার বছর ধরে গড়া যে সংস্কৃতি তা পাল্টাতে পারেনি। তাই সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারার বেলায় ইসলামী বিধান কার্যকর হলেও সংসারে নারীরই প্রাধান্য থাকছে। ইসলামী কায়দায় এখানে হেরেম চলে না, কোনো পুরুষ একাধিক বিয়ে করে সমাজে মর্যাদাও পায় না। অথচ যেখান থেকে ইসলাম এসেছে সেই মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক স্ত্রী থাকা মর্যাদার ব্যাপার এবং সেখানকার পরিবারগুলো ঐতিহাসিকভাবে পুরুষতান্ত্রিক। বাংলাদেশের মুসলমান ও হিন্দুরা তাদের পরিবারে আদি মাতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ধরে রাখলেও সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার বেলায় হিন্দুরা মধ্য এশিয়ার বৈদিক পুরুষতান্ত্রিক বিধান গ্রহণ করেছে। তাই মুসলমান সমাজে মেয়েরা ছেলেদের অর্ধেক সম্পত্তি পেলেও হিন্দু সমাজে মেয়েরা তা পায় না।
বাংলাদেশে আসলে ইসলাম চর্চা লাগামহীনভাবে হচ্ছে। যে যার মতো কোরআনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, ওয়াজ মাহফিলে ইচ্ছামতো আয়াত আওড়াচ্ছে এবং পরম করুণাময় দয়াশীল আল্লাহকে শাস্তি প্রদানকারী ভয়ানক শক্তিরূপে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চল নানা মতবাদের মাদ্রাসা, মসজিদ, দরবার ও হুজুরদের দাপট ও জলসায় প্রকম্পিত হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে এখন একজন দাড়ি-টুপি-আলখাল্লাধারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের সামনে একইসঙ্গে শক্তি ও ভয়ের প্রতিভূ। তাই একজন ধর্মপ্রাণ সাচ্চা মুসলমানের কাছে নিজের এই রূপ সবসময় স্বস্তিদায়ক হয় না।
হতে পারে, আল কোরআন নাজিলের সময় আরব দেশে ধর্ষণ বলে কোনো কিছু ঘটত না। নবীজীর যুগের একটি ঘটনার কথা অনেকেরই জানা, হিজরি ৬ সালে বনু মুস্তালিকে অভিযান শেষে ফিরতিপথে হজরত আয়েশা কাফেলা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি তার হারানো নেকলেস খুঁজতে উট থেকে নেমেছিলেন। সারারাত একাকী অন্ধকারে মাটিতে ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন সকালে এক মোহাজির তাকে উদ্ধার করে। আমরা কি এ ধরনের সমাজ এখন কল্পনা করতে পারি যখন একটি হারিয়ে যাওয়া নারী নির্ভয়ে একাকী অন্ধকার রাত কাটাতে পারে? সত্য বলতে কি, ইসলাম আসার সময় আরবে যে 'অন্ধকার যুগ' বিরাজ করত এখন তার চেয়েও গভীর অন্ধকার যুগ বিরাজ করছে। তখন কোরআনের বিচারে একজন ব্যভিচারীও বেঁচে থাকার সুযোগ পেত; কিন্তু এখন ইসলামের নামে নিরপরাধ নারী ও শিশুহত্যা হচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রনায়করা বা জননেত্রী ও দেশনেত্রীরা এ কথা স্বীকার করবেন কি?
একটি ধর্ম যত পুরনো হতে থাকে, ততই তার ভেতরে বিকৃতি ঢুকতে থাকে। এই বিকৃতিগুলো দূর করার জন্য আসেন সংস্কারক। তবে ধর্মগুরুরা সংস্কারকের কথা না মানলে সংস্কারকের অনুসারীরা একটি ভিন্ন ধারা বা ফেরকায় পরিচিত হতে থাকেন। এভাবে বাংলাদেশে তথা সারা পৃথিবীতে ইসলাম যতই বিকৃত হয়েছে, সংস্কারকের মাধ্যমে শত শত ফেরকাও সৃষ্টি হয়েছে। আজ তাই দেশে দেশে যে ইসলাম প্রচলিত তার অনেকটাই বিকৃত ইসলাম। তা না হলে অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা কীভাবে মসজিদের ইমামদের আনুকূল্য পান? কীভাবে ৯০% মুসলমান ও অজস্র মসজিদের বাংলাদেশে শিশুশ্রম, ভিক্ষাবৃত্তি, অপহরণ, ধর্ষণ ও ধর্মের নামে নারীহত্যা বাড়বাড়ন্ত থাকে? বাংলাদেশে তাই ফতোয়াবাজি অবৈধ থাকাই দরকার। বরং বাংলাদেশে দরকার জাতিধর্ম নির্বিশেষে একই ধরনের ফৌজদারি এবং উত্তরাধিকার আইন। ধর্ম পালন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক : সাবেক মহাপরিচালক, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ও কলাম লেখক
No comments