ধর্ম-কোরআন নাজিলের মাস মাহে রমজান by আবদুস সবুর খান
আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস মাহে রমজান। এই মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ মাসেই মুসলমানদের ওপর সিয়াম সাধনা বা রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনেই উল্লেখ করেছেন, ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের
জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
শুধু কোরআনই নয়, অন্যান্য আসমানি গ্রন্থও এই রমজান মাসেই নাজিল হয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজান মাসের ১ তারিখে নাজিল হয়েছিল। আর রমজান মাসের ৬ তারিখে তাওরাত, ১২ তারিখে যাবুর এবং ১৩ তারিখে ইঞ্জিল নাজিল হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ)
কোরআন অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোরআন মানবজাতির মুক্তির দিশারি সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াতেই কোরআন পাঠের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত ১) এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন কোরআন পাঠের প্রতি বান্দাদের বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন।
রাসুলে পাকও (সা.) কোরআন তিলাওয়াতকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এক হাদিসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘নফল ইবাদতের মধ্যে কোরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ। কিয়ামতের দিন তা স্বীয় পাঠকদের জন্য সুপারিশ করবে।’ আর এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়, সে-ই সর্বোত্তম।’ (বুখারি) রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন কোরআন তিলাওয়াত করে।’ তিনি বলেন, ‘এর একটি হরফে দশটি নেকি।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) মোমিন-মুসলমানদের সর্বদাই কোরআন তিলাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে পবিত্র রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব ১০ থেকে ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেন। অপরদিকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদারেরা পানাহার ও অন্যান্য বৈধ কর্ম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আত্মসংযম সাধনা করে যে আত্মশুদ্ধির অনুশীলন করে, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত সেই সাধনায় সর্বোত্তম নিয়ামক। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, অন্তরের কলুষতা পরিষ্কার করার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কোরআন তিলাওয়াত করা। (মিশকাত) রাসুল (সা.) নিজেও রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.)-র খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়ই কোরআন তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি)।
হজরত ওসমান (রা.) রমজান মাসে প্রতিদিন একবার কোরআন খতম করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) প্রতি সাত রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোরআন পড়তেন। ইমাম আবু হানিফা রমজান মাসে রাতে এক খতম, দিনে এক খতম, তারাবি নামাজে এক খতম, আউয়াবিনে এক খতম, মোট ৬২ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ইমাম শাফিঈ রমজান মাসে ৬০ খতম করতেন। (আইম্মায়ে আরবাআহ্, পৃ ১৬৫)
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল কোরআনে সুদক্ষ ব্যক্তিরা সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গী। আর যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে এর উচ্চারণ করা তার পক্ষে কঠিন হওয়ার কারণে বারবার চেষ্টা করে, সেই ব্যক্তি দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করবে। (বুখারি, মুসলিম)
তিনি অন্য এক হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে এবং তদনুসারে আমল করে কিয়ামতের দিন তার বাবা-মাকে এমন উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে, যা দুনিয়ার কোনো ঘরের মধ্যে অবস্থানরত সূর্যালোকের চেয়ে অধিকতর উজ্জ্বল হবে।’ (আবুদাউদ, মুসনাদে আহ্মাদ)
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি না। কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা শুরু করার উত্তম সুযোগ পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে আমরা সারা দিনই তসবিহ-তাহলিল, জিকর-আজকার, দোয়া-দরুদ ইত্যাদি এবাদতে মশগুল থাকি। এর পাশাপাশি আমরা যদি একটি নির্দিষ্ট সময় করে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা শুরু করি, তাহলে এই এক মাসেই আমরা শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত শিখতে পারব। অপরদিকে যারা তিলাওয়াত করতে জানি, তারা আজই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, এই মাসে অন্তত আমি একটি খতম শেষ করব।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি এর অর্থ বুঝে অধ্যয়ন আরও অধিক উপকারী। আমরা অনেকেই আরবি ভাষা জানি না। তবে বর্তমানে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাসহ বাংলা অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আজই এর একটি কপি সংগ্রহ করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট অংশ পড়ার অভ্যাস শুরু করতে পারি। মহান আল্লাহ্ই আমাদের জন্য কোরআন তিলাওয়াত সহজ করে দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কোরআনেই এরশাদ করেন, ‘কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি করো। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সন্ধানে সফরে যাবে, আর কেউ আল্লাহ্র পথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে; কাজেই কোরআন থেকে যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, তোমরা ততটুকুই আবৃত্তি করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০)
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু কোরআনই নয়, অন্যান্য আসমানি গ্রন্থও এই রমজান মাসেই নাজিল হয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজান মাসের ১ তারিখে নাজিল হয়েছিল। আর রমজান মাসের ৬ তারিখে তাওরাত, ১২ তারিখে যাবুর এবং ১৩ তারিখে ইঞ্জিল নাজিল হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ)
কোরআন অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, কোরআন মানবজাতির মুক্তির দিশারি সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের প্রথম নাজিলকৃত আয়াতেই কোরআন পাঠের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, ‘পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আলাক, আয়াত ১) এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন কোরআন পাঠের প্রতি বান্দাদের বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছেন।
রাসুলে পাকও (সা.) কোরআন তিলাওয়াতকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এক হাদিসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন, ‘নফল ইবাদতের মধ্যে কোরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ। কিয়ামতের দিন তা স্বীয় পাঠকদের জন্য সুপারিশ করবে।’ আর এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়, সে-ই সর্বোত্তম।’ (বুখারি) রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে বাক্যালাপ করার ইচ্ছা করে, তাহলে সে যেন কোরআন তিলাওয়াত করে।’ তিনি বলেন, ‘এর একটি হরফে দশটি নেকি।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সা.) মোমিন-মুসলমানদের সর্বদাই কোরআন তিলাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে পবিত্র রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কারণ, মহান আল্লাহ এ মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রতিটি নেক কাজের সওয়াব ১০ থেকে ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেন। অপরদিকে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদারেরা পানাহার ও অন্যান্য বৈধ কর্ম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আত্মসংযম সাধনা করে যে আত্মশুদ্ধির অনুশীলন করে, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত সেই সাধনায় সর্বোত্তম নিয়ামক। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, অন্তরের কলুষতা পরিষ্কার করার উপায় হচ্ছে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করা এবং কোরআন তিলাওয়াত করা। (মিশকাত) রাসুল (সা.) নিজেও রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ‘রমজান মাসের প্রতি রাতে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.)-র খেদমতে হাজির হতেন এবং তাঁরা উভয়ই কোরআন তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’ (বুখারি)।
হজরত ওসমান (রা.) রমজান মাসে প্রতিদিন একবার কোরআন খতম করতেন। হজরত কাতাদা (রা.) প্রতি সাত রাতে একবার কোরআন খতম করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোরআন পড়তেন। ইমাম আবু হানিফা রমজান মাসে রাতে এক খতম, দিনে এক খতম, তারাবি নামাজে এক খতম, আউয়াবিনে এক খতম, মোট ৬২ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন। ইমাম শাফিঈ রমজান মাসে ৬০ খতম করতেন। (আইম্মায়ে আরবাআহ্, পৃ ১৬৫)
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল কোরআনে সুদক্ষ ব্যক্তিরা সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গী। আর যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে এর উচ্চারণ করা তার পক্ষে কঠিন হওয়ার কারণে বারবার চেষ্টা করে, সেই ব্যক্তি দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করবে। (বুখারি, মুসলিম)
তিনি অন্য এক হাদিসে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে এবং তদনুসারে আমল করে কিয়ামতের দিন তার বাবা-মাকে এমন উজ্জ্বল মুকুট পরানো হবে, যা দুনিয়ার কোনো ঘরের মধ্যে অবস্থানরত সূর্যালোকের চেয়ে অধিকতর উজ্জ্বল হবে।’ (আবুদাউদ, মুসনাদে আহ্মাদ)
আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি না। কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা শুরু করার উত্তম সুযোগ পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে আমরা সারা দিনই তসবিহ-তাহলিল, জিকর-আজকার, দোয়া-দরুদ ইত্যাদি এবাদতে মশগুল থাকি। এর পাশাপাশি আমরা যদি একটি নির্দিষ্ট সময় করে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত শিক্ষা শুরু করি, তাহলে এই এক মাসেই আমরা শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত শিখতে পারব। অপরদিকে যারা তিলাওয়াত করতে জানি, তারা আজই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, এই মাসে অন্তত আমি একটি খতম শেষ করব।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি এর অর্থ বুঝে অধ্যয়ন আরও অধিক উপকারী। আমরা অনেকেই আরবি ভাষা জানি না। তবে বর্তমানে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাসহ বাংলা অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আজই এর একটি কপি সংগ্রহ করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট অংশ পড়ার অভ্যাস শুরু করতে পারি। মহান আল্লাহ্ই আমাদের জন্য কোরআন তিলাওয়াত সহজ করে দিয়েছেন। তিনি পবিত্র কোরআনেই এরশাদ করেন, ‘কোরআনের যতটুকু তোমাদের জন্য সহজ, ততটুকু আবৃত্তি করো। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সন্ধানে সফরে যাবে, আর কেউ আল্লাহ্র পথে সংগ্রামে ব্যস্ত থাকবে; কাজেই কোরআন থেকে যতটুকু আবৃত্তি করা তোমাদের জন্য সহজ, তোমরা ততটুকুই আবৃত্তি করো।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত ২০)
ড. আবদুস সবুর খান: সহযোগী অধ্যাপক, ফারসি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments